যারা ঢাকা আছেন, হাতে সময় বের করে বদ্ধভূমি বা সেগুনবাগিচা মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর থেকে আজ একবার বেরিয়ে আসেন .... অনেক কিছু দেখতে পাবেন। অনেক জ্যান্ত কিছু চোখের সামনে দেখতে পাবেন। অনেক বাজে প্রোপাগান্ডার উত্তর পেয়ে যাবেন শুধু এই দুটো জায়গা থেকেই। আজ না পারেন , কাল বা পড়শুর মধ্যে একবার বেড়িয়ে আসেন ... আজ বা কালকের জন্য ব্লগিং বা ফেসবুকে বসে বসে লিংক পড়ার চেয়ে এটা বেশি কাজে দেবে।
আর যারা এখনো মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তর্ক করে তাদের কাউকে পারলে নিজের পকেটের টাকা খরচ করে হলেও সাথে নিয়ে যান। এরপর তাদের চোখ না খুললে তারা ওমন ই থাকুক। নষ্ট সার্কিট নিয়ে মাথাব্যথা না করলেও চলবে। যতবার আপনার আমার গোল্ডফিশ মেমরি ধূসর হয়ে আসবে, ঠিক ততবার এই জায়গাগুলোতে বেড়াতে যাবেন।
এটা ঢাকা শহর। এটা বায়ান্নর শহর। এটা বিপ্লবের শহর। এটা মুক্তিযুদ্ধের সূচনার শহর। একাত্তরের সূতিকাগার । প্রথম আঘাত টা এসেছিলো প্রাচ্যের অক্সফোর্ডে । জহুরুল হক হল থেকে শুরু করে পুরো বাংলাদেশ। ঢাকাবাসী ভুলে যেও না এটা রেসকোর্স এর শহর। এ শহরের পথে ঘাটে গণহত্যা হয়েছে। ইতিহাস ঐতিহ্য ধারণ করে আজ তোমরা ঝিমিয়ে পড়ো না।
স্মরণ করো সে সময়ের কথা, যখন এ শহরের ড্রেনগুলো ভর্তি হয়ে গিয়েছিলো লাশের পর লাশে। কাপুরুষের মতো ঝাপিয়ে পড়েছিলো, পেছন থেকে আক্রমণ করেছিলো হানাদার রা। তাদের অত্যাচারের স্মৃতিগুলো কালক্রমে কেমন যেনো ফিকে হয়ে আসছে। লজ্জা লজ্জা।
শুধু ধিকিধিকি জ্বলছে যারা হারিয়েছে সব।
আর স্মরণ রেখো সেই প্রবল প্রতিরোধ, যখন পাকিস্তানি বাহিনী এতো কিছু করেও টিকতে পারে নি । পিছু হটেছে। আর কাপুরুষের মতো বুদ্ধিজীবিদের হত্যা করেছে, নিরস্ত্র অবস্থায়, চোখ বাঁধা অবস্থায়, বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে, প্লায়ার্স দিয়ে হাতের আঙুল উঠিয়ে নিয়ে, পাজরে পিঠে বুথের লাথিতে। খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে তুলে নেয়া হয়েছে চোখ। গণধর্ষণের পর ফেলে রাখা হয়েছে, আজ তারা কংকাল। যাদের ভাগ্যে গণবকরও জোটে নি??? কীভাবে আজ তোমরা এতো ঝিময়ে পড়ো??? কীভাবে পারো ? মনে রেখো, এরপরও আমরা জিতেছি। খুব স্বাভাবিক যারা এগুলো প্রত্যক্ষ করে নি, যাদের কিছু হারায় নি, তারা এগুলো অনুভব করবে না। আজেবাজে কথা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করবে।
প্রতিশোধী হও, প্রতিরোধী হও। এটা ডিসেম্বর । সবকটা রাজাকার গর্তে ঢুকেছে । এই ডিসেম্বর আসলে ওদের মুখ চুপসে যায়। ওরা পায়ের নিচে মাটি পায় না। ওদের নীরবতাই বলে এ মাসে আর ধর্মের নামে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে পারবেনা। হিন্দু মুসলিম সবাই কাধে কাধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছে। এ মাসে ইন্দুরের জাত গর্তে লুকিয়ে থাকবেই। ধর্মনিরপেক্ষতা নাই বা থাকুক। যার যার ধর্ম রেখেও যে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করা যায়, এটা এইসব বেজন্মা শুয়োরের বাচ্চারা স্বীকার করবে না। দেশের মানুষ যত মত পথে বিভক্ত হবে, ততই তাদের সুবিধা হবে রুল করতে। সারাবছর প্রোপাগান্ডা চালিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করে, এই মাসে এসে তাদের আর কোনো কথা জোগায় না মুখে। নতুন করে তারা এখন সক্রিয় হয়েছে ফেবুতে , ব্লগে। এদের প্রতি সজাগ থেকো।
একটা দেশের মেধাসম্পন্ন মষ্তিষ্কগুলোকে সরিয়ে দিলে , তাদের লাইব্রেরি আর ডকুমেন্টস গুলো সরিয়ে নিয়ে নষ্ট করলে সেই জাতি অনেকটাই ভেঙে পড়ে। এটা শয়তানের বাচ্চারা ভালোমতোই জানতো। জাতির হয়ে যারা চিন্তা করবে, তাদের সরিয়ে দিলে জাতি পিছিয়ে পড়বে। মাথা তুলে দাঁড়াতে সময় লাগবে তাদের। একারণেই এক এক করে বদ্ধভূমিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো। সরিয়ে দেয়া হয়েছিলো ব্রাশফায়ার করে। কিমবা টুকরো টুকরো করে।
আমরা কত সহজেই সব ভুলে যাই এখন। একবারও লজ্জা হয় না। একটা ভালো বই পড়ি না আমরা, একটা ভালো গান শুনতে ইচ্ছে হয় না। কত আজাইরা সময় নষ্ট করি। হাতের কাছে এসব ডকুমেন্টস এলেও খুলে দেখি না। আমরা জানবো কোথ্থেকে ?? আমাদের লজ্জা হয় না? যারা ঘর সংসার বাপ মা বউ ছেলেমেয়ের টান উপেক্ষা করে পরিবারের চেয়ে দেশ বড় জেনে যুদ্ধে গিয়েছে। যেসব বাবামা তাদের সন্তানকে আগলে রাখেনি সেদিন আচলের তলায়। দেশের প্রয়োজনে বলেছে বাবা অস্ত্র ধর। আজ কত সহজেই তাদের আমরা ভুলে যাই। আমরা তাদের আত্নত্যাগ, তাদের কুরবানি ভুলে যাই। আমাদের লজ্জা হয় না। কতটা নির্লজ্জ হলে আমরা এসব ভুলে যাই???? আমরা লিংক খুজি, এন্টি লিংক খুজি। আমাদের শহরের আনাচে কানাচে যারা প্রবীণ তাদের কাছে গেলেই আমরা অনেক তথ্য পাবো। অনেককককককককক। আমরা তাদের কাছে কিছু জিগগেস করিনা??? মাঝে মাঝে বাস্তব অভিজ্ঞতা শোনার জন্য ফেবু ব্লগ উইকিপেডিয়া ছেড়ে সেইসব মানুষের কাছে যদি আমরা যাই, তাহলে এগুলোর চেয়েও ভালো তথ্য পাবো বলে আমার বিশ্বাস। আফসোস আমাদের সময় নাই। আমরা খুব ব্যস্ত। লজ্জা লজ্জা।
রাজাকার চামচিকা জামাত শিবিরের দল সব সময়ই "সংখ্যালঘু" হয়ে থাকবে এই বিশাল জনতার কাছে।
আজ যদি বদ্ধভূমিতে দাঁড়িয়ে , যোদ্ধা কিমবা নিরীহ অসহায় প্রতিরোধ না করতে পেরে হাত পা বাধা অবস্থায় মারা যাওয়া শহীদদের মাথার খুলির সামনে দাঁড়িয়ে কেউ বলে কোনো গনহত্যা হয়নি .. তাহলে সেইসব অন্ধ ফ্যানাটিক উন্মাদদের ব্যবস্থা আমাদের ই নিতে হবে।
একটা জিনিস সবাই মাথায় রাইখেন,
"আপনারা চাইলে এইসব দেশদ্রোহী রাজাকারদের ছাড় দিতে পারেন, হাউকাউ ভাইবা এড়াইয়া যাইতে পারেন। কিন্তু সময় হোক, আপনার ঘাড়েই প্রথম ছোবল টা বসাবে এরা। বেইমান সবসময়ই বেইমান। ""
এবার যত ইচ্ছা , যা খুশি ইচ্ছা হয় ভুলে যান।