আগে মুভির ট্রেইলার দেখুন ।
'দ্য ফ্লোটিং ম্যান', রোহিংগা ইস্যু নিয়ে জুবায়ের বাবুর প্রথম ফিচার ফিল্ম । রোহিংগা ইস্যু শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, সারা বিশ্বের জন্যই এক মানবিক ইস্যু । 'দ্য ফ্লোটিং ম্যান' একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত, যা বিশ্বের যেকোন প্রান্তের সংবেদনশীল মানুষের মনে দাগ কাটবে বলেই আমি বিশ্বাস করি ।
"দ্য ফ্লোটিং ম্যান' মুভিটির প্রথম প্রিমিয়ার হবে আগামি ১৯ অক্টোবর ২০১২, জেনেসিস সিনেমা, ৯৩-৯৫ মাইল এন্ড রোড, হোয়াইট চ্যাপেল, লন্ডন, ইউকে ।
'দ্য ফ্লোটিং ম্যান" ছবিটি পরিচালনা করেছেন জুবায়ের বাবু । জুবায়ের বাবু আমাদের মিডিয়া অংগনে অপরিচিত কেউ নন । নব্বইয়ের দশকে ব্যান্ড সংগীতের হাত ধরে তার মিডিয়ায় আগমন । তারপর দীর্ঘদিন কাজ করেছেন বাংলাদেশের প্রথম প্রাইভেট টিভি চ্যানেল 'ইটিভি'তে প্রযোজক হিসাবে ।
আসুন আগে জেনে নেই 'দ্য ফ্লোটিং ম্যান' সিনেমার স্টোরি লাইন । বাংলাদেশের কোস্টগার্ড বংগোপসাগরে একটি নিমজ্জমান ট্রলার দেখতে পায় এবং তারা ৩২ জন মৃত আর একজন জীবিত মানুষ সহ ট্রলারটি উদ্ধার করে । খবর পেয়ে ঢাকা থেকে টিভি রিপোর্টার ফারজানা এবং ক্যামেরা ক্রু লিয়াকত টেকনাফের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয় । জীবিত লোকটির নাম কাশেম, মিয়ানমারের নাগরিক । মারাত্মক অসুস্থ কাশেমকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় । কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠলে ফারজানা তার কাছে ঘটনা জানতে চায় । কাশেম জানায়, আমরা শুধু সাগরেরই বিপদে পড়িনি, আমাদের বিপদ শুরু হয়েছে আরও আগে, আমার দেশ মিয়ানমারে । কাশেম বলে যায়...
ক্রেনচং নামের বার্মার একটা ছোট্ট গ্রাম । একজন তরুন রোহিংগা আবুল হাশেম সদ্য বাবা হয়েছেন । ধাত্রী যখন জানালো তার ছেলে হয়েছে, তখন সে আযান দিতে শুরু করে । কিন্তু তার ভাই রইস তার মুখ চেপে ধরে, বলে 'চুপ, কি করছ তুমি ?
সেই রাতে ছিল ঘন অমানিশা, হাশেম মিস্টি আনার জন্য তখনই ঘর হতে বের হয়ে যায় । গ্রামের বাইরের পথে বার্মিজ মিলিটারি ক্যাম্প, অনুমতি ছাড়া কোন রোহিংগার বাইরে যাওয়া নিষেধ । হাশেম সেখানে মিলিটারিদের সামনে পড়ে, সন্দেহজনক ঘোরাফেরার জন্য তাকে সতের বছরের জেল দিয়ে অন্য একটি শহরে পাঠিয়ে দেয়া হয় ।
কাশেম তার চাচা রইসের কাছে বড় হতে থাকে । রইস তাকে স্কুলে ভর্তি করার সিদ্ধান্ত নেন, এর জন্য আর্মির অনুমতি পেতে ক্যাম্পে যায় । ক্যাপ্টেনের জেরার মুখে রইস জানায় একজন ভাল মানুষ হিসাবে গড়ে উঠার জন্য তার স্কুলে পড়া দরকার । ক্যাপ্টেন ক্রোর হেসে বলে, 'একজন রোহিংগা আবার মানুষ হবে কিভাবে' । কাশেমের বাবা একজন জেলখাটা ক্রিমিনাল, তাই তার স্কুলে পড়ার অনুমতি নেই । বাধ্য হয়ে রইস তাকে মাদ্রাসায় ভর্তি করে দেয়, সেখানে তার প্রিয় সহপাঠি হলো নার্গিস ।
একদিন খবর এলো আবুল হাশেম জেলে মারা গেছেন । কাশেমের মা খাদিজা তার স্বামীর লাশ দেখার জন্য শহরে যেতে মিলিটারি ক্যাম্পে অনুমতি চায়, কিন্তু ব্যর্থ হয় ।
ইতিমধ্যে কাশেম বড় হয়ে যায় । চাচার সাথে সে একটা মুদির দোকান চালায় । কাশেমের দোকানে কাজ করতে ভাল লাগেনা । তাই চাচা তাকে বিয়ে করানোর সিদ্ধান্ত নেয় এবং পাত্রী হিসাবে নার্গিস কে পছন্দ করে ।
বিয়ের অনুমতি নেয়ার জন্য রইস মিলিটারি ক্যাম্পে যায় । ক্যাম্পের ইনচার্জ মেজর কি অং রইসকে জানায়, আগে পাত্র-পাত্রী দুজনকে সে দেখবে, তারপর বিয়ের অনুমতি দিবে । কাশেম তার হবুবধু নার্গিসকে নিয়ে আবার মিলিটারি ক্যাম্পে যায় এবং মেজরের রুমে দেখা করে । কাশেমকে বলা হয় সে যেন বাইরে গিয়ে অপেক্ষা করে । একাকি ঘরে মেজর নার্গিসের কাছে জানতে চায় সে কাশেমকে বিয়ে করতে রাজী কিনা । তারপরই মেজর আমুদে দৃস্টিতে নার্গিসকে দেখতে থাকে এবং তার সৌন্দর্যের প্রশংসা করে । তারপর কাশেমকে ডেকে এনে বাড়ি চলে যেতে বলে, রাত্রে নার্গিসের ইন্টারভিউ নিয়ে পরের দিন সকালে পাঠিয়ে দিবে । কাশেম পরিস্থিতি খারাপ বুঝতে পেরে অফিসারের পা ধরে আকুতি করতে থাকে নার্গিসকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য । কিন্তু কাশেমকে জোড় করে ক্যাম্প থেকে বের করে দেওয়া হয় ।
কাশেম ক্যাম্প থেকে বের হয়ে সোজা গ্রামের দিকে দৌড়াতে থাকে । প্রথমে সে গ্রাম প্রধানের বাড়িতে যায় । অনেকক্ষন ডাকাডাকির পরেও কেউ দরজা না খুলায় সে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যাক্তি মেং শেইনের কাছে কিছু করার জন্য অনুরোধ করে । কিন্তু তার কাছে কোন সাহায্য মেলেনি ।
একটা দীর্ঘ দুঃসহ রাত্রি পার হয়ে আকাশে ভোরের আলো ফোটে উঠে । তখন গ্রামের বাইরে কোথাও থেকে একটা শোরগোল শোনা যায় । কাশেম ঐ শোরগোল লক্ষ্য করে এগিয়ে যায় । ভিড় ঠেলে কাছে যেতেই দেখতে পায় নার্গিসের মৃতদেহ, ঝুলে আছে একটা গাছে । কাশেমের ভিতরে কোন অনুভূতি কাজ করেনা, সে নার্গিসের মৃতদেহের সামনে পাথরের মত ঠায় দাড়িয়ে থাকে ।
এদিকে চাচা রইস প্রমোদ গুনেন, নার্গিস হত্যার দায় মিলিটারি সোজা কাশেমের উপর চাপিয়ে দিয়ে এবার কাশেমকেও মেরে ফেলতে চাইবে । তাই তিনি কাশেমকে বলেন, বেঁচে থাকতে চাইলে এখনি গ্রাম থেকে এমনকি বার্মা মুল্লুক থেকে পালাতে হবে । কাশেম প্রথমে আপত্তি করলেও পরে পালাতে রাজি হয় ।
একটা দীর্ঘ দুঃসহ রাত, হবুবধুর মৃত্যুশোক আর নিজের গ্রাম নিজের দেশকে ছেড়ে যাওয়ার যন্ত্রনা বুকে নিয়ে কাশেম পালাতে থাকে । সারাদিন লুকিয়ে লুকিয়ে পথ চলে কাশেম কোনরকম নাফ নদীর পাড়ে এসে দাড়ায় । নাফ নদী, এইপারে তার নিজের দেশ বার্মা আর ঐ পারে বাংলাদেশ । অনেক কস্টে কাশেম নাফ নদী পার হয়ে বাংলাদেশে আসতে সমর্থ হয় ।
বাংলাদেশে এসে সে স্থানীয় মাঝি কালামের বাড়িতে আশ্রয় নেয় । কাশেম তার চাচা রইসের কাছ থেকে কিছু টাকা এনেছিল, সেটা দিয়ে আর কালামের সহায়তায় একটা চক্রের সন্ধান পায় । এই চক্র ট্রলার দিয়ে রোহিংগা শরনার্থীদের বংগোপসাগর পারি দিয়ে থাইল্যান্ড পৌছে দেয় । ওখানে পৌছালে রাজনৈতিক আশ্রয়ের পাশাপাশি কিছু উপার্জনেরও সুযোগ তৈরি হয় এবং এক পর্যায়ে রোহিংগারা সেখান থেকে বিভিন্ন দেশে আশ্রয় লাভ করতে পারে ।
একদল রোহিংগার সাথে কাশেমও ট্রলার করে থাইল্যান্ডের দিকে রওয়ানা দেয় । এক ইন্জিনের ট্রলার, সাথে সীমিত খাবার আর পানি নিয়ে উত্তাল বংগোপসাগর পারি দেয় তারা । সবকিছু ভাল ভাবেই চলতে থাকে আর থাই উপকুলের খুব কাছাকাছি চলে আসে তারা । হঠাৎ মাঝরাতে তাদের ট্রলার থাই নেভি'র চ্যালেন্জের মুখে পড়ে ।
'দ্য ফ্লোটিং ম্যান' সিনেমার কাহিনি এভাবেই এগিয়ে যায়। শুধু আকর্ষনীয় গল্পই নয়, সিনেমার আধুনিক কলা কৌশলের সব কিছুই এখানে প্রয়োগ করা হয়েছে পরিচালক এবং একদল তরুন কিন্তু দক্ষ কুশলীর অপরুপ মুন্সিয়ানায় ।
'দ্য ফ্লোটিং ম্যান' সিনেমার প্রথম প্রিমিয়ার হবে আগামি ১৯ অক্টোবর লন্ডনের জেনেসিস সিনেমা হলে, তা আগেই উল্লেখ করেছি ।
'দ্য ফ্লোটিং ম্যান' সিনেমার প্রথম প্রিমিয়ার সফল হউক । জুবায়ের বাবু আমাদের তরুন প্রজন্মের প্রতিনিধি, তার প্রথম সিনেমা সফল হউক । বাংলা সিনেমার দিপ্তী ছড়িয়ে পড়ুক দেশ হতে দেশান্তরে, সারা বিশ্বে ।
সিনেমার নাম : দ্য ফ্লোটিং ম্যান ।
মূল গল্প, ডিরেক্টর : জুবায়ের বাবু ।
স্ক্রিপ্ট ডকটর : আনিসুল হক ।
স্ক্রিপ্ট রাইটার : নরিনা মেকেই, এ রহমান, জুবায়ের বাবু ।
ডাইরেক্টর অব ফটোগ্রাফি : সাইফুল ইসলাম বাদল ।
মিউজিক ডিরেক্টর : তমাল ।
ভাষা : ইংরেজি
অভিনয় কূশলী : স্বাধীন খসরু, মোমেনা চৌধুরী, জ.ই. মামুন, কৃষনেন্দু চট্টোপাধ্যায়, লাকী তৃপ্তি গোমেজ, বৃষ্টি, অনির্বান প্রমুখ ।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে নভেম্বর, ২০১২ সকাল ১১:৩৪