somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বরফকুঁচি মিক্সড ফ্রুট ডেসার্ট বানিয়ে যেভাবে আমি জিতে নিলাম 'বেস্ট রেসিপি ফর ইফতার' অ্যাওয়ার্ড !:#P !:#P

২০ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ১০:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




(কিছু আপডেট আর সতর্কতা যুক্ত হয়েছে)
জীবনে যে কয়বার ডিম ভেজেছি প্রতিবারই পুড়িয়ে হাফ কয়লা বানিয়েছি । এমনকি ডিম সিদ্ধ করলেও ভিতরে কেমন যেন কাঁচা কাঁচা থেকে যায় । তারপরও সাহস করে 'বেস্ট রেসিপি ফর ইফতার' বানাতে লেগে গেলাম । দুর্দমনীয় ইচ্ছাশক্তি, উদ্ভট উদ্ভাবনী প্রতিভা আর প্রিয় দুই সহকারী মাশফি আর তাশফি কে সঙ্গী করে শুরু হলো আমার আইসি আইসি ফ্রুট ডেসার্ট বানানোর গল্প ।


বরফকুঁচি মিক্সডফ্রুট ডেসার্ট তৈরির উপকরণ সমূহঃ

১। পাকা আমঃ যেহেতু ফ্রুট ডেসার্ট, তাই ফলের রাজা আম সবার আগে । দুটি ফরমালিনমুক্ত পাকা আম চিপে একটা বাটিতে রাখলাম । ফলের বাজার থেকে অথবা দ্বিগুন দাম দিয়ে নামী সুপারস্টোর থেকেও আম কিনতে পারেন । তবে যেখান থেকেই কিনেন, সবাই বলবে তার আম ফরমালিনমুক্ত । যেহেতু টেস্ট করার উপায় নাই, তাই 'এলাহী ভরসা' ।

২। দুধঃ আমরা ছোট বেলায় খেতাম গাভীর দুধ, আর এখন খাই আড়ং দুধ । এক কাপ নিলাম ।

৩। কলাঃ নাহ, দুধের সাথে কলা থাকলে খাওয়ার জন্য 'সাপ' চলে আসতে পারে । তাই কার্বাইড দিয়ে পাকানো কলা বাদ দিলাম ।

৪। আঙুরঃ ৫/৬ টা আঙুর ব্লেন্ড করে কাপে রাখলাম । আমাদের ব্যবসাদারদের উদ্ভাবনী প্রতিভায় আঙুর আর পঁচে না । ঘরে ঝুলিয়ে রেখে দিয়ে সারা বছর পেড়ে খাওয়া যায় । আঙুর নিজে না পঁচলেও মানুষের স্টমাক-লিভার পঁচিয়ে দেবার মত যথেষ্ট গুন আছে । তাই আঙুর খাবেন নিজের রিস্কে ।

৫। বিট-লবনঃ মৈমনসিংয়ে এক বাসায় বিট-লবন দিয়ে ব্লেন্ড করা আমের জুস খেয়েছিলাম । মৈমনসিংহবাসি ইফতারে বিট-লবন মাখানো মাঠা খেতে ব্যাপক পছন্দ করে । খেতেও বেশ লাগে । তাই এক চামচ বিট-লবন নিলাম ।

৬। লেবুঃ সিলেটের লেবু লম্বাটে, অসম্ভব টসটসে রসবতী । চিপলে বেশুমার রস বেরোয়, কিন্তু ফ্লেভার নাই । তাই মৈমনসিংহ থেকে আনা ছোট ছোট গোল গোল সুগন্ধি কাগজি লেবুর রস এক চামচ ।

৭। চিনিঃ অপছন্দ করি । তবু দু-চামচ নিয়ে সহকারীদ্বয় কে বললাম, আরো দিব কিনা । দুজনে এক সঙ্গে কোরাস গেয়ে উঠলো, দিতে থাকো দিতে থাকো.. (টিভি'র একেকটা বিজ্ঞাপন বাচ্চাদের মাথা খেয়ে নেয়) ।

৮। গরম মসল্লাঃ সামান্য পরিমান দারচিনি-এলাচ-লবঙ্গ গুড়ো করে ভেজে নিতে হবে ।
(রাঁধিয়ে ব্লগারদের পরামর্শমত গরম মশল্লা বাদ দিতে পারেন । তবে কিছু পরিমান গুলমরিচ গুড়ো যোগ করে দিলে স্বাদে ভিন্নতা আসবে! )

৯। নারিকেলঃ ছোটবেলায় সাদা আইসক্রিম চারআনা আর নারকোলি আটআনায় কিনতাম । সামান্য পরিমান নারিকেলের শাস গুড়ো করে নিলাম ।
(হাতের কাছে রেডিমেট না থাকলে দরকার নেই )

১০। রুহ-আফজাঃ শতাব্দির সেরা পানীয়.. যাই হোক প্রাকৃতিক উৎস থেকে বানানো, তাই পছন্দ করি । অবশ্য পৃথিবীর উৎকৃষ্টতম মদিরা তৈরি হয় আঙুর থেকে । নাহ মদ হালাল জিনিস নয়, তাই এটা দিয়ে ইফতারি বানানো যাবে না । প্রাকৃতিক রঙ আর ফ্লেভারের আশায় রুহ-আফজা নিলাম দুই চামচ ।

১১। ধনেপাতাঃ ভালো ভাবে ব্লেন্ড করে নিলাম । খেয়ে সবাই ধইন্যা ধইন্যা করুক ।


রন্ধন প্রনালীঃ খুবই সোজা । সব উপকরণ ব্লেন্ডারে নিয়ে দশ মিনিট ব্লেন্ড করলাম । মিশ্রণ মাখো মাখো হয়ে গেলে আইসক্রিমের বাটিতে ভরে ডীপে রেখে দিলাম । ঘন্টা চারেক পর ওটা বরফ হয়ে গেলে চামচ দিয়ে চেপে চেপে বরফকুঁচি বানিয়ে রাখলাম ।

সতর্কতাঃ প্রতিটা উপকরণ পরিমানমত নিতে হবে । বিট-লবন, গরম মশল্লা বা রুহ-আফজার পরিমান বেশি হয়ে গেলে ডেসার্ট বিস্বাদ হয়ে যেতে পারে । এগুলি অতি অল্প পরিমানে দিবেন, অথবা রিস্ক মনে হলে দেয়ারই প্রয়োজন নেই । নতুন রাঁধিয়ে হলে প্রথমে টেস্ট বেসিসে অল্প পরিমান ডেসার্ট তৈরি করাই ভালো হবে ।

পরিবেশনের গল্পঃ

ইফতার করার জন্য ডাইনিংয়ে বসেছি । অন্যান্য আইটেমের সাথে আমার বানানো 'বরফকুঁচি মিক্সডফ্রুট ডেসার্ট'ও আছে । বরফকুঁচিগুলো উজ্বল গোলাপী বর্ণ ধারন করে চিকচিক করছে । চমৎকার একটা সুগন্ধে পুরো খাবার টেবিলে ছড়িয়ে পড়েছে । আযানের পর আমি আর আমার দুই সহকারী বরফকুঁচির উপর ঝাঁপিয়ে পড়লাম । আহ কি যে স্বাদ, বর্ণনা করতে পারবো না । নিজে বানিয়েছি বলেই না, সত্যি অসাধারণ হয়েছে । কিন্তু আমার গিন্নী ছোট চামচের আগায় একটু নিয়ে জিহবা দিয়ে চেখে রেখে দিলো । অন্যান্য আইটেম সামান্য খেয়ে টেবিল ছেড়ে চলে গেলো । আমার মনটাই খারাপ হয়ে গেছে । কতবার গিন্নীর রান্না ভদ্রতা করে ভালো হয়েছে বলেছি । কিন্তু সে কি একবার ভদ্রতা করেও কিছু বলতে পারতো না । মনটাই খারাপ হয়ে গেলো । মন খারাপ দেখে আমার দুই সহকারী কাছে এসে বসলো, তারপর বরফকুঁচির বাটি নিয়ে 'খেতে থাকো খেতে থাকো' বলে কোরাস গেয়ে উঠলো । তিন জনে মিলে চেটেপুটে বাটির সব অমৃত খেয়ে শেষ করলাম ।

কিছু সময় পর গিন্নী নামায পড়ে আবার ডাইনিংয়ে এসে বসলো । ইতিউতি করে এদিক ওদিক খোঁজে বললো, 'আমার জন্য রাখোনি ? তোমরা সব খেয়ে শেষ করে ফেলছ ?'

জৈষ্ঠ সহকারী আমার দিকে তাকিয়ে বিজয়ীর হাসি দিলো । কনিষ্ঠ সহকারী এই বিজয়ের মর্ম না বুঝে বলে দিলো, মা ডীপে আর এক বাটি আছে !

সেই বাটি টেবিলে আসার পর দুচামচ খেয়েই মোবাইল হাতে নিয়ে কারে যেন ফোন দিতে থাকে । 'ভাবী, জাহিদ ভাই আর বাচ্চাদের নিয়ে বাসায় আসেন । মাশফি'র বাবা নিজের হাতে খুব মজার ফ্রুট ডেজার্ট বানিয়েছে' ।

দুই তলা সিঁড়ি বেয়ে নিচের ফ্লাটে থাকা আমাদের বন্ধু পরিবার কিছু সময় পর বাসায় এসে হাজির হয় । বাসায় ঢুকতে ঢুকতে প্রোফেসর জাহিদ উচ্ছসিত স্বরে বললো, মামুন ভাই বানিয়েছে, নিশ্চয়ই অনেক ভালো হবে ! (ভদ্রলোকের সবকিছুতেই আমার উপর ব্যপক কনফিডেন্স ! )

উনাদের চারজনকেই বরফকুঁচি পরিবেশন করা হলো । শিউলী ভাবী না না করে উঠলো, 'না ভাবী আমি খাবোনা, আর বাচ্চা দুটার ঠান্ডা লাগার ধাত আছে ।' জাহিদ ভাই একাই খুব আনন্দ নিয়ে চেটেপুটে খেতে থাকে আর তার মেয়ে দুটো অসহায়ের ভঙ্গিতে বাবার বরফকুঁচি খাওয়া দেখতে থাকে । জাহিদ ভাই এক প্লেট শেষ করে বলে, "খুব মজা হয়েছে, আমাকে আর একটু দেন তো ভাই ।"

আমি উনার প্লেটে আরো ডেসার্ট দিচ্ছি, এমন সময় শিউলী ভাবি টিপ্পনী কেটে উঠে, "আল্লাহ জীবনেতো দেখলাম না জাহিদ কোন খাবার এক বারের বেশি চেয়ে খেতে । বাসায় কত কিছু যে বানাই, কই জোড়াজোড়ি করেও তো খাওয়াতে পারি না ।"

জাহিদ ভাই হেসে হেসে ভাবীকে বলে, "এত মজা হইছে, না খাইলে কিন্তু মিস করবা" !

"দেখিতো একটু চেখে" বলেই শিউলি ভাবী একটা বরফকুঁচির প্লেট কাছে নিলেন । চামচের আগা দিয়ে সামান্য একটু মুখে দিয়ে হঠাৎ চিৎকার করে উঠলেন, "ওয়াও সত্যিইতো অনেক মজা" ।
তারপর আমার গিন্নীর দিকে তাকিয়ে বললেন, "ভাবী আমার পিচ্চি দুটোকেও দেন । একদিন ঠান্ডা খেলে কিচ্ছু হবে না" !!

অতঃপর সবাই আমার বানানো আইস আইস 'বরফকুঁচি মিক্সডফ্রুট ডেসার্ট' দারুণ তৃপ্তি নিয়ে খেয়ে, শেষে আমাকে এই "বেস্ট রেসিপি ফর ইফতার" অ্যাওয়ার্ড খানা দিয়ে পুরস্কৃত করেন । B-) :-B :P




পুরস্কার পেয়ে আমি খুব খুশি হয়েছি । তাই সবার জন্য ভ্যানিলা আইসের সাড়া জাগানো বিখ্যাত গান 'আইস আইস বেবি' দিলাম । শুনুন আর মনকে ঠান্ডা করুন ।









********************************



উৎসর্গঃ ব্লগার 'কাল্পনিক_ভালোবাসা । ফেবুতে উনার এই আইস কুল স্ট্যাটাস দেখেই 'বরফকুঁচি মিক্সডফ্রুট ডেসার্ট' বানাতে উদ্বুদ্ধ হয়েছি ।






সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুলাই, ২০১৩ সকাল ১১:৩৫
৭৯টি মন্তব্য ৭৯টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×