somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন সাধারণ !

০৮ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৮:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এক

টানা ফিতা লাগানো সাদা পাজামা আর সফেদ পাঞ্জাবি পড়েই জীবনটা কাটিয়ে দিয়েছেন শাফায়েত সাহেব । পঞ্চাশের কোটা ছুঁতে না ছুঁতেই নানান অসুখে কাবু হয়ে তিনি শয্যাগত । তার স্কুল মিস্ট্রেস স্ত্রী রাবেয়া খানম পরম যত্ন আর ভালোবাসায় পঁচিশ বছর ধরে এই সংসার আগলে রেখেছেন । বিছানায় শুয়ে বিগত দিনের কথা ভেবে পুলকিত হোন তিনি । ইদানিং আরো কিছু ভাবনা স্মৃতিপটে উদয় হয় । তার ছেলেবেলা আর আরমানিটোলার জমজমাট বাড়িটার কথা মনে আসে খুব ।

সাফায়েত সাহবেবের দাদা গোলাম আলী বখত চৌধুরী যৌবন কাটিয়েছেন আসামে । আসাম-বাংলা রেলওয়ের একজন সাপ্লাইয়ার ছিলেন তিনি, সপরিবারে ঘাটি গেড়েছিলেন ডিমাপুর শহরে । চিত্তবান এই ভদ্রলোক ব্যাপক বিত্তেরও অধিকারী হয়েছিলেন । দেশভাগের পর স্থায়ী আবাস গড়েন ঢাকার আরমানিটোলায় । মৃত্যুর আগে অধঃস্তন দুই জেনারেশনের সাথে সুখী জীবন কাটিয়ে যান । অর্থবিত্তের পাশাপাশি বিদ্যার যথা মুল্যও তিনি বুঝেছিলেন । তার পাঁচ ছেলে এমএ পাশ করে সমাজে এবং রাষ্ট্রে গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হয়েছিলেন ।

শাফায়েত সাহবের ছেলেবেলা কাটে আরমানিটুলার সেই একান্নবর্তী বাড়িতে । বিভিন্ন বয়সী 'তো তো' ভাইদের একটা বিশাল দল এই বড় দোতলা বাড়িটাকে জমজমাট করে রাখতো । তাদের প্রায় সবাই ছাত্র হিসেবে ছিল তুখোড় । খেলাধুলায়ও বখত চৌধুরী পরিবার বেশ নাম কুড়িয়েছিল । আরমানিটোলা স্কুলের মাঠে সারা বছরই কোন না কোন খেলা লেগে থাকত । কিন্তু শাফায়েত সাহেব ছোটবেলা থেকেই ছিলেন পাটকাঠির মতো হ্যাংলা, দুর্বল স্বাস্থ্যের মানুষ । খেলাধুলা আর দুরন্তপনা থেকে তিনি শত হাত দুরে থাকতেন । ছাত্র হিসাবেও তিনি ছিলেন মধ্যম মানের । তার এক জেঠাত ভাই স্কুলে মারামারি করে রাসটিকেট পেয়েছিল । গুন্ডা হিসাবে পাড়ায় তার বেশ নাম হয়েছিল । কিন্তু পেশীবিহীন ঋজু শরীর আর ভীতু মন নিয়ে শাফায়েত সাহবের পক্ষে গুন্ডা হওয়াও সম্ভব ছিল না । অসাধারণ সব ভাইদের মাঝে তিনি নিতান্ত একজন সাধারণ হয়েই থেকে গেলেন ।

এতো এতো মেধাবী ছাত্র, তুখোড় খেলোয়ার আর পেশীবহুল ভাইদের মাঝে তিনি গুটিশুটি মেরে থাকতেন । নিজেকে আড়াল করে রাখার অভ্যাস তখন থেকেই রপ্ত করেছিলেন । মাঝে মাঝেই তাকে নিয়ে বাবা-কাকাদের মুখে হাহাকার উঠত, তার ভবিষ্যত নিয়ে সবাই শঙ্কিত বোধ করতেন । এই বাড়ির ছেলে মেয়েরা বড় হয়ে কেউ ডাক্তার কেউ ইঞ্জিনিয়ার আর কেউবা স্কলার্সশীপ বাগিয়ে অভিবাসী হবে । কিন্তু শাফায়েত সাহেব জগন্নাথ কলেজে ফিলসফি নিয়ে পড়তে গেলেন । সেখান থেকে সরকারি কলেজে চাকুরির সুবাদে শুরু হয় তার সিলেটবাস ।

আরমানিটোলার বাড়িটা আরো এক যুগ আগে ডেভেলপারের কল্যানে বহুতল ফ্ল্যাটবাড়িতে রুপ নিয়েছে । অংশিদারেরা যার যার মত কেউ নতুন ঢাকায় নিজের বাড়িতে আর কেউ প্রবাসে সেটল করেছেন । তার নিজের এবং কাকাত-ফুফাত ভাই বোনেরা সবাই আজ সমাজে প্রতিষ্টিত । অন্তর্মুখী স্বভাবের কারণে ছেলেবেলা থেকেই তাদের সাথে একটা দুরত্ব ছিল । আর আপন মানুষও যখন সমাজে অপেক্ষাকৃত উঁচু পর্যায়ে আরোহন করে, সে চায় নিচে থাকা স্বজনেরা তার সাথে যোগাযোগ রাখুক । সবকিছু মিলিয়ে শাফায়েত সাহেব আত্মীয়স্বজন থেকে দুরে অনেকটা আড়ালেই জীবন কাটিয়ে দিলেন ।

দুই

জীবন এবং সময় এমনিতে মানুষকে তার স্বজন থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখে, আর কেউ হয়ত বেছে নেয় স্বেচ্ছা আড়ালবাস । কিন্তু মৃত্যু অনেক সময় সেই বিচ্ছিন্নতা ঘুচিয়ে দেয় । শাফায়েত সাহেবের মৃত্যও তেমনি একদা আরমানিটোলার বখত চৌধুরী পরিবারের আশু মিলন মেলায় পরিণত হবার সুযোগ করে দেয় । যে স্বজনদের অস্তিত্বে শাফায়াত সাহেব হয়ত মৃতবৎ ছিলেন, তাঁর অকাল মৃত্যুতে সেই স্বজনদের বুক হাহাকার করে উঠে । ঢাকা থেকে, চট্রগ্রাম থেকে, লন্ডন নিউইয়র্ক অটোয়া সিডনি থেকে স্বজনেরা ফোন দিয়ে কেঁদে উঠে । কেউ কেউ জরুরী ফ্লাইটে দেশে ফেরার প্ল্যান করে । তাদের কথা বিবেচনা করে মৃতদেহ মরচুয়ারিতে রাখা হয়েছে । দুদিন পর শুক্রবারে নামাজের পর মৃতদেহ সৎকার করা হবে ।

শুক্রবার সকালেই শাফায়েত সাহেবের ছেলে আর কয়েকজন প্রতিবেশী মিলে মেডিকেলের মরচুয়ারি থেকে মৃতদেহ বাড়িতে নিয়ে আসেন । বাড়ির ভেতরে অনেকটুকু খালি জায়গা, তার এক কোণায় ত্রিপল টাঙ্গিয়ে মৃতদেহ ধোয়ার কাজ শুরু হয় । শাফায়াত সাহেবের কিছু সহকর্মী, স্টুডেন্ট আর প্রতিবেশীরা এসে ভিড় জমিয়েছেন । ডেকোরেটর থেকে চেয়ার এনে সবার বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে । ইতিমধ্যে ঢাকা থেকেও স্বজনেরা আসতে শুরু করেছেন । কিছু সময় পরেই সিলেটের এই মধ্যবিত্ত পাড়াটি নানান রঙ আর ডিজাইনের ভিআইপি গাড়িতে ভরে যায় । তাদের কেউ নির্বাহী প্রকৌশলী, স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের আমলা, পিজি'র অধ্যাপক, কয়েকজন শিল্পপতি-ব্যবসায়ী । আর আছেন একজন প্রাক্তন মাননীয় সাংসদ, শাফায়াত সাহেবের সেই গুন্ডা জেঠাত ভাই । পরের জেনারেশনের কয়েকজন এসেছেন, মৃতপুরীতেও তারা কর্পোরেট স্যুটেড বুটেড খোমা বজায় রেখেছেন । শাফায়েত সাহেবের বোন সম্পর্কের দুজন এসেছেন, তাদের আহাজারিতে অন্তঃপুরের বিষাদময় পরিবেশ আরো ভারী হয়ে উঠেছে ।

শাফায়েত সাহেবের ভাই যিনি নির্বাহী প্রকৌশলী, তিনি একজন আমলা ভাইকে ডেকে বললেন, "শুনেছি শাফায়েত অনেকদিন অসুস্থ ছিল! চিকিৎসা-টিকিৎসা কিছু করিয়েছিল তো! নাকি বিনা চিকিৎসায়.." আমলার মাথা নাড়ানো দেখে বোঝা গেল নির্বাহী প্রকৌশলীর মত তিনিও দ্বিধান্বিত । একজন শিল্পপতি ভাই এসে যোগ করেন, "আমাকে জানালেই তো পারত! ব্যাংকক-সিঙ্গাপুর থেকে চিকিৎসা করিয়ে আনতাম.." শিল্পপতির কথা শুনে স্বাস্থ্য বিভাগের মহাপরিচালক বিরক্তি না ঢেকেই বললেন, "আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা এখন কোন অংশে খারাপ নয়, এ্যাপোলো-স্কয়্যার-ইউনাইটেড.. আর ইসমত তো পিজি'র অধ্যাপক ।" অধ্যাপক সাহেব এবার ফ্লোর পেলেন । তিনি মুখে চিন্তা ফুটিয়ে বললেন, "শাফায়েত ভাইয়ের ট্রিটমেন্টের হিস্ট্রিটা চেক করা দরকার! এই কেউ একজন ইয়ামিন কে ডাকো তো!"

প্রাক্তন মাননীয় সাংসদের হাত আর কান সেঁটে আছে মোবাইলে । পুরো উঠোন জুড়ে পায়চারি করছেন আর সিলেটের বিভিন্ন পলিটিশিয়ান, আমলা, পুলিশ, চেম্বারের নেতাদের কাছে তার প্রিয় ছোট ভাইয়ের মৃত্যুর খবর জানাচ্ছেন । মৃতদেহ ধোয়ার কাজ শেষ করে শাফায়েত সাহেবের ছেলে ইয়ামিন চাচাদের কাছে আসে । অধ্যাপক ডাক্তার সাহেব কোন ভনিতা না করে সরাসরি জানতে চাইলেন, "তোমার বাবার ট্রিটমেন্ট কি হয়েছিল বলো তো!" ইয়ামিন সংক্ষেপে সবকিছু জানায় । অসুস্থ বোধ করায় তার বাবাকে ওসমানী মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয় । ডাক্তাররা জানায় উনার মাইল্ড স্ট্রোক করেছে । পরে কিছুটা সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরে আসেন । কিছুদিন ভালো যাবার পর আবার অসুস্থ বোধ করলে উনার ইচ্ছায় ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয় । সেখান থেকে মোটামুটি সুস্থ হয়েই তিনি বাসায় ফিরেছিলেন ।

দুপুরের ভেতরে বাকি আত্মীয় স্বজনও চলে এসেছেন । ইতিমধ্যে কবর কোথায় হবে, কোথায় হওয়া উচিত- বনানী, মীরপুর বুদ্ধিজীবি নাকি আজিমপুর- এটা নিয়েও ভাইদের মধ্যে এক পশলা বিতর্ক হয়ে গিয়েছে । শেষে ইয়ামিন এসে জানিয়ে যায়, জানাজার পরে তার মা এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিবেন । তবে প্রতিবেশীরা ইতিমধ্যে স্থানীয় সিটি কর্পোরেশন কবরস্থানে সব ব্যবস্থা করে রেখেছেন ।

দুপুরে জানাজা পড়ানোর পর লাশবাহী খাটিয়া আবার বাসায় নিয়ে আসা হয়েছে । উঠোনে স্কুলড্রেস পড়া একদল কিশোর-কিশোরী বসে আছে । খাটিয়া নামানোর পর উপস্থিত সবাই শেষ বারের মত শাফায়েত সাহেবকে দেখে নিলেন । তারপর স্কুলের বাচ্চারা একে একে সারিবদ্ধভাবে মৃতদেহের কাছে যায় এবং খাটিয়ার উপর সবাই একটা করে সাদা ফুল রেখে আসে । খাটিয়ার পেছনে ছেলে ইয়ামিনের পাশে রাবেয়া খানম আঁচলে মাথা-মুখ ঢেকে নীরবে দাঁড়িয়ে আছেন । বাচ্চাগুলো ফুল দেয়া শেষ করে রাবেয়া খানমের কাছে যায় এবং তাকে ঘিরে ধরে বুক ফাটিয়ে কান্নাকাটি শুরু করে । রাবেয়া খানম তাদের মাথা কাঁধে হাত বুলিয়ে সান্তনা দেবার চেষ্টা করেন । তাদের সমবেত কান্নায় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সূচনা হয়, ইয়ামিন তার মাকে জড়িয়ে ধরে ঢুকরে কেঁদে উঠে । রাবেয়া খানমের চোখ দিয়েও নিঃশব্দে অঝোর ধারায় অশ্রু গড়িয়ে পড়ে । ইয়ামিন তার মাকে ধরে বাসায় ভেতরে নিয়ে যায় ।

উপস্থিত সবাই স্বাভাবিক কারনেই বিমর্ষ হয়ে পড়েন । এর মাঝেও শাফায়েত সাহেবের কিছু স্বজন বাচ্চাদের ব্যাপারটা জানতে উদগ্রীব হয়ে উঠেন । তাদের জানা মতে শাফায়েত ছিলেন কলেজের মাস্টার, স্কুলের নয় । পরে ইয়ামিন এসে সবকিছু বুঝিয়ে বলে । আরমানিটোলার ফ্ল্যাটবাড়ির অংশ থেকে শাফায়েত সাহেব প্রায় চল্লিশ লক্ষ টাকা পেয়েছিলেন । সেই টাকায় তিনি ছিন্নমুল পথশিশুদের জন্য শহরের উপকন্ঠে একটা টেকনিকেল স্কুল গড়ে তুলেছেন । তার স্বপ্ন ছিলো, এই শিশুরা কারিগরি বিদ্যা অর্জন করে সমাজে অবদান রাখবে এবং সসম্মানে বেঁচে থাকবে । এই বাচ্চাগুলো সেই স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী ।

ঘটনা শুনে শাফায়েত সাহেবের স্বজনেরা চুপ মেরে যায় । ইয়ামিন সেখান থেকে চলে যাবার পর একজন আহাজারি করে উঠেন, "পুরো টাকাটা যে রাস্তার বাচ্চাদের দিয়ে দিলি, নিজের ছেলের জন্য কি রাখলি? এই ভাঙ্গা টিনশেড বাড়ি..!" পাশের জন যোগ করেন, "ছেলের ভবিষ্যতটা তার ভাবা উচিত ছিল!" মহাপরিচালক সাহেব তখন বলেন, "কত করে বললাম, আরমানিটোলায় ফ্ল্যাট না রাখতে চাইলে উত্তরায় কিনে রাখ, আমার কথা শুনলো না!" এবার প্রাক্তন মাননীয় সাংসদ এসে গলা চড়ালেন, "আরে, বখত চৌধুরী পরিবার সেই ব্রিটিশ যুগ থেকে সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি পে করে আসছে । শাফায়েত যা করেছে, তা এই পরিবারের ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতার অংশ মাত্র!"

তিন

উপস্থিত সমাগত স্বজন এবং অভ্যাগত প্রতিবেশীরা উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন, ভেতর থেকে রাবেয়া বেগম লাশ দাফনের ব্যাপারে কিছুই জানাচ্ছেন না । 'মারা যাওয়ার পর লাশ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কবর দিতে হয়, নইলে মৃতব্যক্তি কষ্ট পায়'- একজনের এই মন্তব্যে আরো কয়েকজন সায় দেন । খাটিয়ার পাশে ইয়ামিন চুপ করে বসে আছে । তার পাশে দুজন হুজুর এক নাগাড়ে কোরআন শরীফ পড়ে যাচ্ছেন । ঘরের বারান্দায় স্কুলের বাচ্চারা বসে আছে । গাছের ছায়ায় রাখা ডেকোরেটরের চেয়ারে শাফায়েত সাহেবের স্বজন আর অভ্যাগতরা উদ্বিগ্ন সময় পার করছেন । শাফায়েত সাহেবের ভাইদের সাথে আসা পরের জেনারেশন গভীর মনযোগের সাথে এনড্রয়েড ফোনে আঙুল চালিয়ে যাচ্ছে । এমন সময় বাইরে থেকে এ্যাম্বুলেন্সের অবিরাম সাইরেন বাজার শব্দ শোনা গেল ।

পাড়ার ছোট রাস্তায় পার্ক করে রাখা নামিদামী গাড়ি কাটিয়ে একটা লাশবাহী গাড়ি শাফায়েত সাহেবের বাড়ির ভেতর এসে প্রবেশ করে । শাফায়েত সাহেবের স্বজনেরা গাড়িটির দিকে এগিয়ে যান, ইয়ামিন এগিয়ে গিয়ে গাড়ি থেকে নেমে আসা আরোহী দুজনকে রিসিভ করে । বাসার ভেতর থেকে রাবেয়া খানম ছুটে আসেন । তার পেছনে বাসায় থাকা অন্যান্য মহিলারাও বেরিয়ে আসেন । সবার চোখে জল । মৃত্যু অমোঘ নিয়তি । তবু একজন মানুষ বেঁচে থাকতে অন্য মানুষের সাথে যে সম্পর্ক, যে ভালোবাসা, যে আত্মিক টান গড়ে তুলে- সেটা মৃত্যুকে মেনে নিতে বাঁধা দেয় ।

লাশবাহী গাড়ির একজন আরোহী তাদের আসতে কিছুটা দেরি হওয়ার জন্য বিনীত দুঃখ প্রকাশ করেন । ইয়ামিন তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানায় । অন্য আরোহী তখন বলেন, "নব্বোই সালের ফাইল, খুঁজে পেতে কষ্ট হয়েছে । তার উপর গাড়ি রিকোজিশন পাওয়া যে কত ঝামেলা, তা আপনারা নিশ্চয়ই বুঝবেন । আপনাদের ফরমালিটি শেষ হয়ে গেলে ডেডবডি গ্রহন করতে আমরা প্রস্তুত ।"

পেছন থেকে অধাপক ডাক্তার সাহেব তাদের দিকে এগিয়ে এলেন । আরোহীদের তিনি নিজের পরিচয় দিয়ে জানতে চাইলেন, কিসের ফাইল? দুজনের মাঝে যিনি সিনিয়র, ডাক্তার হবেন হয়ত, তিনি বললেন, "স্যার, শাফায়েত সাহেব ১৯৯০ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজের জন্য মরণোত্তর শরীর দান করেছিলেন । আমরা ঢাকা মেডিকেল থেকে এসেছি উনার ডেডবডি নেয়ার জন্য!"

উপস্থিত স্বজন, প্রতিবেশী এবং অন্যান্য অভ্যাগতরা বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে গেলেন । হয়ত জীবনে এই প্রথম বারের মত শাফায়েত সাহেবের অসাধারণ ভাইয়েরা শাফায়েত সাহেবের মত একজন সাধারণের প্রতি শ্রদ্ধায় মাথা নুয়ালেন !
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১:২৫
৭৩টি মন্তব্য ৭৩টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×