somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঈভ টিজার!

২৬ শে জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

-- ধুস্ শালা!

প্রচন্ড বিরক্ত জিসান তার বেন্ড করা লম্বা চুলের ভিতর থেকে সান-গ্লাসটা খুলে টি-শার্টের কোনা দিয়ে মুছতে থাকে । টি-শার্ট কিঞ্চিত উপরে উঠায় তার সদ্য গজানো ভূড়িটা থলথল করে দুলছে । আর পেছনে জিন্সের প্যান্ট কোমড় ছাড়িয়ে আরো ইঞ্চি কয়েক নেমে গুহ্যদ্বারের মুখে আটকে আছে । ভাগ্যিস আন্ডারওয়্যার প্যান্ট কে অনুসরণ করেনি, কোমড়ের সাথে লেপ্টে থেকে গুহ্যদ্বারের আব্রু রক্ষা করে চলেছে ।

সান-গ্লাস পরিষ্কার করে জিসান মাথায় বেন্ড করা চুলের ভিতর আবার গুজে দেয় । ভরদুপুরে অস্থির পায়চারি করতে করতে রাস্তার দিকে ইতিউতি তাকায় । ঠাসা ডাসা মালের খোঁজে এদিকে আসার পর তার স্টাইলিস্ট পালসার বাইকের পেছনের চাকা হঠাৎ পাংচার হয়েছে । সাগরেদ জইস্যা সাথেই ছিল, সে ধাক্কাতে ধাক্কাতে ভারী বাইকটাকে নিয়ে গেছে পাংচার সাড়িয়ে আনার জন্য । প্রায় ঘন্টা খানেক হয়ে গেল, তার ফেরার কোন নাম-গন্ধ নেই ।

অস্থিরতার আরও একটা কারণ আছে । আজ চাঁদ দেখা গেলে কাল ঈদ । ঈদের আগের দিন রাস্তাঘাটে খাসা ডাসা সব মাল মিছিল দিয়ে বেরুবার কথা । অথচ ঘন্টাখানেক রাস্তায় দাঁড়িয়ে থেকেও তেমন কোন পিসের দেখা মিলল না । রাস্তায় পড়ে থাকা আধলা ইটের উপর আক্রোশ মেটানো কিক দিয়ে সে চলল পাশের টং দোকানের দিকে । দোকানের সামনের দিকটা কালো পর্দায় মোড়ানো । রোজার মাসে পর্দার ভিতরে বসে খাওয়া-দাওয়া করার নিয়ম । চায়ের অর্ডার দিয়ে জিসান একটা বেঞ্চু ধরালো । ছোট জায়গায় অনেক মানুষের এক সাথে ধুমপান, নিকোটিনের তীব্র ধোঁয়ায় চোখটা খুব জ্বলছে ।

দ্রুত চা-সিগ্রেট খেয়ে টং থেকে বের হবার পর দুপুরের তীব্র সূর্যালোকে জিসানের চোখ ঝলসে উঠে । কিন্তু অত্যুজ্জ্বল এই সূর্যকিরণ জহুরীর চোখে বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারে নি । চোখের সামনে হাত দিয়ে রোদ ঢেকে জিসান সূর্যালোকের চেয়েও উজ্জ্বল কিছু দেখতে পায় । জিসান চোখ বড় বড় করে বিস্ফোরিত নয়নে দেখতে থাকে তার থেকে সামান্য দূরে রাস্তায় একটা খাসা মাল ! এই মাত্র মালডা রিক্সায় উঠলো । উজ্জ্বল হলুদ রঙের পায়ের পাতা দুটো রিক্সার পাটাতনে ছন্দ তুলে দুলছে । নিটোল পায়ের ছন্দে জিসানের লকলকে জিভে জল এসে যায় । রিক্সাওয়ালা রিক্সার হুড টেনে দেয় । হুডের এক পাশ কোমল করে ধরে আছে মায়াবী হাতের সুন্দর লতানো সেক্সি আঙুল । আর হুডের ফাঁক দিয়ে জিসান দেখতে পায় বাতাসে দোল খাওয়া উড়ন্ত চুলের ফাঁকে দুধে আলতা কামিনী যৌবন।

জিসান দ্রুত হেটে রিক্সার কাছে পৌছুতে চেষ্টা করে । কিন্তু ততক্ষনে রিক্সা চলতে শুরু করে বেশ সামনে চলে যায় । রিক্সার পেছনের পর্দা সড়ে গিয়ে কেবল উড়তে থাকে এলোমেলো বন্য কেশরাজি । নিজের উপর আক্রোশে এক হাত দিয়ে ঘুষি চালায় আরেক হাতের তালুতে । দিনের সেরা জিনিসটা একটুর জন্য হাতছাড়া হয়ে যাওয়ায় তার মুখ থেকে বেরিয়ে আসে তীব্র আক্ষেপ- শীট...

ঠিক এই সময়ে পিঁপ পিঁপ বাজিয়ে একটা বাইক জিসানের গায়ের উপর উঠতে উঠতে শেষ মূহুর্তে ব্রেক কষে । হার্ড ব্রেকের শব্দে ঘুরে দাঁড়িয়ে জইস্যা কে দেখতে পেয়ে খিস্তি ঝাড়ে,
-বাইনচোত, এত দেরি করলি ক্যা ? বাইক লইয়া কৈ গেছিলি ?
জইস্যা বাইক থেকে নেমে মিনমিন করে বলে,
-দুইটা লিক খাটানোর পরেও চাক্কায় বাতাস থাকে না । পরে ম্যালা খুইজ্জা আরেকটা ছুপা লিক পাইছে । বিশ্বাস না হয় যিসু মাম্মা, মেকানিক্স রে জিগায়েন ।
-হইছে, এত্ত কথা শুনার টাইম নাই । খাসা মালডা বুঝি মিস হইয়া যায় ! এখন পিছে উঠ, আওগাইয়া দেখি পাই কি না !!

জিসান তখনই বাইক স্টার্ট দেয় । পালসার সিংহের মত গর্জন করতে করতে ছুটতে থাকে । কিছুদুর যাবার পর জিসান চিৎকার দিয়ে উঠে,
-অই জইস্যা, সামনের রিক্সায় মালডা বসা!
-যিসু মাম্মা, আমি আছি! নো টেনছন!!
জইস্যা হেড়ে গলায় গান ধরে, "তেড়ি মেরি মেরি তেড়ি প্রেম কাহানী হে মুশকিল.. "
জইস্যার কর্কশ গলার গানের সাথে বাইকের বিকট পিঁপ পিঁপ আওয়াজে সামনের রিক্সা বাঁয়ে সরতে থাকে । রিক্সার ডান পাশে চেপে এসে জিসান বলে, "হাই ডার্লিং, কুলফি খাবা!!" তার পর রিক্সাটাকে দ্রুত ওভারটেক করে । জইস্যা তখনো বাইকের পেছনে হাত-পা ছুড়ে গেয়ে যাচ্ছে, "তেড়ি মেরি মেরি তেড়ি প্রেম কাহানী.. "

আর কিছুক্ষন যাওয়ার পর একটা মোড়ের আগে বাইক থামায় জিসান । দুজনে সেই রিক্সার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে..
-মালডা কেমুন দেখলিরে জইস্যা ?
-যিসু মাম্মা,চরম! হেভ্ভী জিনিস!! মালের ঘাড়-গলার রঙ যেন দুধে আলতা । মাগার বুকের সাইজটা মাপতে পারলাম না মাম্মা ।
-চুপ কর বাইনচোত! উস্তাদের মাল লইয়া খারাপ কথা কবি না ।
-মাম্মা! খারাপ কথা কমু না!! কি কউ মাম্মা.. হাঃহাঃহাঃ

এবার দুজনেই ইঙ্গিতপূর্ণ হাসিতে ফেটে পড়ে । এই সময় রাস্তার উল্টো দিকে রিক্সাটা থামে । জিসান-জইস্যা দুজনে একে অপরকে চোখ টিপি দেয় । তারা বাইক থেকে নেমে রাস্তা পার হয়ে রিক্সার দিকে এগুতে থাকে । রিক্সার যাত্রী সীটে বসে পার্টস থেকে ভাংতি টাকা বের করে ভাড়া মিটিয়ে দেয় । জিসান রিক্সার পাশে গিয়ে জইস্যার কাঁধে হাত রেখে সান-গ্লাস চোখ থেকে সরিয়ে কপালের উপর রাখে । তাদের কর্মকান্ড দেখে রিক্সাওয়ালা অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে । জিসান ভাব নিয়ে বলে,
-নাইম্যা আসেন ম্যাম, নাকি কোলে কইরা নামাইতে হইব !!
রিক্সা যাত্রীর উজ্জ্বল হলুদ রঙের কোমল পা দুটো রিক্সার পাটাতন থেকে ধীরে ধীরে মাটিতে নেমে আসে । সেই সাথে নূরানী দেহ খানি সন্তর্পনে রিক্সা থেকে নামিয়ে এনে কৌতুহলী চোখে দুজনের দিকে তাকায় । অত:পর কোমল মোলায়েম মিহিস্বরে সালাম জানায়,
-আসসালামুয়ালাইকুম । জনাব, আপনাদের কী খেদমতে আসতে পারি ??

জিসান-জইস্যা পরষ্পরের দিকে হা করে তাকিয়ে চোখ কপালে তুলে । কিন্তু তাদের কারো মুখ থেকে কোন কথা বের হয় না । কিংকর্তব্যবিমূঢ় দুই আগুন্তকের কাছ থেকে সালামের জবাব পাবার আশা ত্যাগ করে রিক্সাযাত্রী দ্রুত স্থানত্যাগ করে । রিক্সাওয়ালাও নিজের পথে চলতে শুরু করে । অবশেষে জইস্যার কথায় অসহ্য নীরবতা ভাঙ্গে,
-যিসু মাম্মা, এইডা কি হইল মাম্মা!! এইডা তো জোব্বা পড়া হুজুর!!
জিসান ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দেয় জইস্যার গালে,
-বাইনচোত! তোরে না ভাল কইরা খেয়াল করতে কইলাম!
-(চড় খেয়ে গাল ঘষতে ঘষতে) মাম্মা, তুমিই না কইলা মালডা খাসা!!
-হাত-পা-চুল আর গায়ের নরম চামড়া দেইখাতো মালই ভাবছিলাম!!
জিসান আবার জইস্যার দিকে কড়া চোখে তাকিয়ে বলে,
-তোর তো আবার পেট পাতলা স্বভাব । মহল্লার বেবাকরে তুই এই গল্প কইরা বেড়াইবি!
জইস্যা অপরাধীর মত চুপ করে থাকে । জিসান মাথাটা নিচু করে হনহন করে হেটে বাইকের দিকে এগিয়ে যায় । সেলফে স্টার্ট দিতেই জইস্যা এক লাফে বাইকের পেছনে চড়ে বসে । পিকআপ বাড়ানোর সাথে সাথে বাইক ভোঁ করে গর্জে উঠে । জিসান আপন মনে শ্রাগ করে, 'শালার, রাম ধরা...'




***************************সমাপ্ত****************************


গল্পটি ব্লগে 'হাসি-কান্নার এক জোড়া ঈদ গল্প' নামক পোস্টে পূর্বে প্রকাশিত হয়েছিল ।
৮২টি মন্তব্য ৬৮টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×