somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করতে চাই

২৪ শে জানুয়ারি, ২০১০ সকাল ১১:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করতে চাই

ঢাকার মোট জনসংখ্যা ১ কোটি ৩০ লক্ষের উপর। এই বিশাল জনগোষ্ঠির একটি অতি ক্ষুদ্র অংশ ছাড়া বাকি সবার চলাচলের প্রধান পরিবহন বাস। অথচ এই বিশাল জনগোষ্ঠির চলাচলের বাধা সৃষ্টি করছে যে জ্যাম নামের ভূত তার স্রষ্ঠা হচ্ছে সেই অতি ক্ষূদ্র অংশ। কিভাবে? এই দেখুনঃ

ঢাকার মোট যানবাহনের সংখ্যাঃ ৫ লক্ষ ৮২ হাজার (অটোরিকশা, হিউম্যান হলার, টেম্পো এই হিসাবের বাইরে)

এর মধ্যে প্রাইভেট কার, জিপ, ট্যাক্সিক্যাব ও মাইক্রোবাসের সংখ্যাঃ দুই লাখ ১১ হাজার যা মোট যানবাহনের ৩৬.২৫ ভাগ

আর সাধারন জনগনের ব্যবহারের বাস ও মিনিবাসঃ ১০ হাজারের কিছু ওপর যা কিনা মোট যানবাহনের মাত্র ১.৭ ভাগ

প্রাইভেট কার, জিপ, মাইক্রোবাস ব্যবহারকারী ঢাকার মোট জনসংখ্যার মাত্র ৪.৮ ভাগ। এই ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠি বাকি ৯৫.২ ভাগ জনগনের চলাচলে বাধা সৃষ্টি করছে। কিন্তু ওদের দোষ দিয়ে কি লাভ? রাস্তায় ঘন্টার পর ঘন্টা দাড়িয়ে থেকে যখন বাসের দেখা পাওয়া যায়না আর দেখা পেলেও সেটাতে উঠতে পারা যায়না তখন সামর্থবান যে কেউ চাইবে একটা গাড়ি কিনে নিতে। অন্তত প্রতিদিন গাড়িতে উঠার জন্য যুদ্ধ তো করতে হবে না। এবং ঠিক এই ভাবনা থেকেই ঢাকায় গাড়ির সংখ্যা বেড়ে চলেছে জ্যামিতিক হারে। শুনে অবাক হবেন জুন ২০০৮ থেকে জুন ২০০৯ পর্যন্ত এক বছরে ৩৭৭০৫ টি প্রাইভেট কার ঢাকার রাস্তায় নেমেছে। এবং প্রতিদিন রাস্তায় নামছে শত শত নতুন গাড়ি। অথচ বাড়ছেনা বাসের সংখ্যা।

একটা ব্যাপার চিন্তা করে দেখুন ছুটির দিন গুলোতে কিন্তু রাস্তায় জ্যাম থাকে না। সময় মত পৌছা যায় গন্তব্যে। কিভাবে? বাস তো অন্যান্য দিন যা চলে সেদিনও তাই চলে। তাহলে? তাহলে জ্যাম সেদিন যায় কোথায়? সেদিন তো রাস্তাও লম্বা হয়ে যায়না। কারন হচ্ছে সেদিন রাস্তায় প্রাইভেট কার থাকে কম। এটা স্পষ্ট।

যদি রাস্তায় পর্যাপ্ত পরিমান বাস থাকত তাহলে চলাচল করা যেত খুব সহজে। ফলে মানুষ প্রাইভেট কার কেনার দিকে ঝুকতনা। হাজার হলেও গাড়ী পোষা আর হাতি পোষা এক। এবং সবাই চায় পয়সা বাচাতে। একটা সময় ঢাকার প্রায় সব রুটে বিআরটিসির বাস চলত। এবং বেশির ভাগ বাস ছিল দ্বিতল। ফলে প্রচুর যাত্রী বহন করতে পারত এবং সহজেই বাসে উঠা যেত। কিন্তু কোন এক অজানা কারনে বিআরটিসির বাস এখন প্রায় কোন রাস্তায়ই চোখে পড়েনা (হাতে গোনা একটি দুটি ব্যতিক্রম ছাড়া)। সরকার যদি বিআরটিসির কলেবর সময়ের সাথে বৃদ্ধি করত এবং সেই সাথে প্রাইভেট বাস কোম্পানীগুলোকেও দ্বিতল বাস নামানোর কথা বলত তাহলে অবস্থা এত চরমে পৌছতনা।

প্রতিদিন বাসস্ট্যান্ড গুলোতে দেখা যায় হাজার হাজার মানুষ বাসের জন্য অপেক্ষা করে আছে। আধাঘন্টা একঘন্টা পর পর একটা বাস আসে অথচ সেই বাসে উঠার কোন উপায় থাকে না। যাদের শরীরে একটু বল আছে তারা ধস্তাধস্তি করে উঠতে সক্ষম হয়, থেকে যায় নারী আর বয়ষ্ক লোক। আর কাউন্টার সার্ভিস নামে যা চলছে তা তো রীতিমত ডাকাতি। টিকেটর বাসে ভাড়া নেওয়া হয় অনেক বেশি কিন্তু সার্ভিস লোকাল বাসের চেয়েও খারাপ। যেভাবে মানুষ এই বাসগুলোতে চড়ে দেখে মনে হবে কিছু জন্তু-জানোয়ার বুঝি খোয়াড়ে নেওয়া হচ্ছে। পুলিশের প্রিজন বাসেও আসামীরা এরচেয়ে অনেক আরামে চলাচল করে।

যারা খুব ভাগ্যবান তারা বাসে উঠতে পারেন এবং একসময় ঘরে পৌছেন। কিন্তু যারা উঠতে পারেন না তাদের কথা কি আমার এবার ভেবেছি? রাস্তায় যে ১০ হাজার বাস চলে সেগুলো কত যাত্রী বহন করতে পারবে? ৫,৬ কিংবা ৭ লাখ! আর বাকীরা কি করবে?

সরকার জানজট নিরসনে অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে এবং নিচ্ছে। কিন্তু কোনটা কি মানুষের কাজে এসেছে? না, আসেনি। এবং আসবেও না। কারন মাথা ব্যাথা হলে যদি গ্যাস্ট্রিকের ঔষধ খাওয়ানো হয় তাহলে সে মাথা ব্যথা কখনো কমবে না। জানজট এমন কোন সমস্যা না যে কেবল ঢাকা-ই প্রথম এই সমস্যায় পড়েছে। পৃথিবীর আরও অনেক শহরে এমন সমস্যা ছিল এবং তারা তার সমাধানও করেছে।

সরকার বলছে পাতাল রেলের কথা। কিন্তু একবারও কি ভেবে দেখেছে সেই পাতাল রেল হতে হতে ঢাকার অবস্থা কোথায় গিয়ে দাড়াবে? সরকারের হাতে আলাদিনের চেরাগ নেই যে রাতারাতি পাতাল রেল তৈরি করে ফেলবে। আর এদেশে যে আঠার মাসে বছর হয় সে খবর আমাদের নতুন করে দিতে হবে না।

ঢাকার মোট রাস্তার দৈর্ঘ হচ্ছে ২৩০০ কিলোমিটার। যার বেশির ভাগ হচ্ছে অলি গলি। যদি ধরি এর অর্ধেক পরিমান রাস্তা মূল সড়ক তাহলে দাড়ায় ১১৫০০ কিলোমিটার। আর ঢাকার সব গাড়ী যদি পর পর সাজানো যায় তাহলে তার দৈর্ঘ দাড়ায় প্রায় ৯০০ কিলোমিটার। অথচ তারপরও প্রতিদিন কিকরে সরকার শত শত নতুন গাড়ী রাস্তায় নামানোর অনুমতি দেয়? তার অর্থ হচ্ছে সরকার আসলে এই সমস্যা সমাধান করতে চায় না। এবং সরকারের এহেন অবহেলার কারনে প্রতিদিন ৩ ঘন্টা, মাসে ৯০ ঘন্টা এবং বছরে ১০৮০ ঘন্টা আমার জীবন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। যা নিশ্চিত ভাবে আমার মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। তাই আমি সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করতে চাই।
৮টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পরিণতি - ৩য় পর্ব (একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস)

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১২:২৮



( পরিণতি ৬১ পর্বে'র একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস ।)

তিন


আচানক ঘুম ভেঙ্গে গেলো ।

চোখ খুলে প্রথমে বুঝতে পারলাম না কোথায় আছি । আবছা আলোয় মশারির বাহিরে চারপাশটা অপরিচিত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইফতার পার্টি মানে খাবারের বিপুল অপচয়

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৩



গতকাল সরকারি ছুটির দিন ছিলো।
সারাদিন রাস্তাঘাট মোটামুটি ফাকাই ছিলো। ভাবলাম, আজ আরাম করে মেট্রোরেলে যাতায়াত করা যাবে। হায় কপাল! মেট্রো স্টেশনে গিয়ে দেখি গজব ভীড়! এত ভিড়... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×