somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পতাকা সমাচার

২৯ শে জুন, ২০১০ দুপুর ২:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বিশ্বকাপ ফুটবল শুরু হতে না হতেই পত্রিকা, টকশো, ব্লগ সব জায়গায় আরেক আলোচনা বেশ জোড়েশোরে চলচে এবং তা হচ্ছে পতাকা উড়ানো নিয়ে। ফুটবল বিশ্বকাপের মৌসুমে সারাদেশে বাড়ির ছাদে, গাছের আগায়, রাস্তায়, দোকানে, গাড়িতে সর্বত্র শোভা পায় নানা দেশের রং-বেরঙের পতাকা।যুগ যুগ ধরে এই রেওয়াজ চলে আসছে। প্রতিবারই এ নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক হয়। এবারও এর ব্যতিক্রম নয়।

কয়েকদিন আগে প্রথম আলোতে অভিমত ভিন্নমত বিভাগে ড. সাইফুদ্দীন চৌধুরীর ‘ঘটনা ক্ষুদ্র কিন্তু তুচ্ছ নয়’ শিরোনামে একটা লেখা ছাপা হয়েছে। সেখানে লেখক তার একজন বিদেশী বন্ধুর উদ্ধৃতি দিয়ে বোঝাতে চেয়েছেন এভাবে পতাকা উড়ানো নিয়মসিদ্ধ নয়। এবং তারই রেশ ধরে আজ আরেকজন পাঠকের প্রথম আলোর চিঠিপত্র বিভাগে একটা চিঠি ছাপা হয়েছে যেখানে তিনিও বোঝাতে চেয়েছেন পতাকা উড়ানোর নিয়ম-নীতি। আমি সেই লেখকের লেখার অংশ বিশেষ এখানে তুলে ধরছি-

"জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং নামানোর নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম আছে। বিশেষ কোনো উপলক্ষ বা রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান ছাড়া জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয় সূর্যোদয়ের সময় এবং অবশ্যই তা সূর্যাস্তের আগে নামিয়ে নিতে হয়। সন্ধ্যার পর কিংবা রাত্রিকালে জাতীয় পতাকা টাঙিয়ে রাখা অপরাধ। উন্মুক্ত স্থানে পতাকা উত্তোলন কিংবা নামানোর সময় দাঁড়িয়ে সম্মান দেখানো অবশ্য কর্তব্য। অন্যদিকে, যে কেউ ইচ্ছা করলেই তাঁর বাড়ি-গাড়ি, দোকান কিংবা মোটরবাইকের হ্যান্ডেলে জাতীয় পতাকা টাঙাতে পারেন না। কেবল নির্দিষ্ট কয়েকটি জাতীয় দিবসেই বেসরকারি ভবন বা প্রতিষ্ঠানে নিয়ম মেনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা যায় এবং সেই পতাকাও অবশ্যই সূর্যাস্তের আগে নামিয়ে নিতে হয়। একই সঙ্গে জাতীয় পতাকার আকার এবং রংও সঠিক হওয়া প্রয়োজন। রং জ্বলা, ছেঁড়া কিংবা বেঢপ আকৃতির পতাকা উত্তোলন অপরাধ বলে গণ্য হয়ে থাকে। পতাকা টাঙানোর দণ্ডটি অবশ্যই সোজা হতে হবে।"

তাই কি? তাহলে জনগনের পতাকা উড়ানোর কোন অধিকার নেই? ব্যাপারটা তা না। লেখক একটা জায়গায় ভুল করছেন। যেসকল প্রতিষ্ঠানে কিংবা অনুষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উড়ানো হয় সেখানে একটা নিয়ম মেনে চলার জন্য এসব নির্দেশনা। আমাদের সংবিধান কখনোই জনগনকে পতাকা উড়াতে নিষেধ করতে পারেনা।

লেখক এরপর বিদেশী পতাকা উড়ানোর ব্যাপরে বলেছেন-

"রবীন্দ্রনাথ সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা জানিয়েছিলেন, ‘তোমার পতাকা যারে দাও তারে বহিবারে দাও শকতি’। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বহু ত্যাগ আর রক্তের বিনিময়ে আমরা একটি পতাকা অর্জন করেছি বটে, কিন্তু সেটি যথাযোগ্যভাবে বহন করার মতো শক্তি আমাদের থাক বা না থাক, আবেগ আর উচ্ছ্বাসের কমতি নেই। সেই আবেগের বহিঃপ্রকাশ ঘটতে দেখলাম
বিশ্বকাপ ফুটবল শুরু হওয়ার পর। প্রিয় দলের প্রতি সমর্থনের প্রমাণ হিসেবে দেশের সর্বত্র মাঠঘাট, দোকানপাট এমনকি উঁচু গাছের মগডালেও নানা দেশের নানা রঙের আর নানা আকারের পতাকা। সেই সঙ্গে কেউ আবার দেশপ্রেমের নমুনা দেখিয়ে ছোট্ট একটি লালসূর্যের পতাকাও টাঙিয়েছেন। আমার বিশ্বাস, বিশ্বের আর কোনো দেশে এমন অদ্ভূত আর উৎকট আবেগের বহিঃপ্রকাশ লক্ষ্য করা যাবে না।"


ভুল কথা। বিদেশী পতাকা উড়ালেই দেশের মান-সন্মান ধূলিস্বাৎ হয়ে যায়না। কিংবা দেশপ্রেমের ঘাটতি প্রকাশ পায়না। একটা ছোট উদাহরন দিই- কয়েক বছর আগে পত্রপত্রিকায় একটা খবর বেশ জোড়েসোরে প্রকাশিত হয়েছে, আফ্রিকার একটা যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশে জাতীসংঘের মিশনে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী কাজ করেছে। সেখানকার জনগন বাংলাদেশের
সেনাবাহিনীর কাজে এতটাই মুগ্ধ হয়েছে যে তারা বাংলায় কথা বলা শিখেছে। শুধু তাই নয় তাদের ঘরে ঘরে শোভা পাচ্ছে বাংলাদেশের পতাকা। তাই বলে কি তাদের জাত চলে গেছে? তাদের দেশপ্রেমে ঘাটতি পরেছে?

ফুটবল এদেশে খুবই জনপ্রিয় একটা খেলা। হাঠে-মাঠে-ঘাটে সর্বত্র ফুটবলের বিস্তার। সেই ফুটবলের সবচেয়ে বড় আয়োজন বিশ্বকাপে প্রত্যেকেরই কোন না কোন দলের খেলা ভাল লাগে। সেই ভাললাগা থেকেই মানুষ একটু আনন্দ পাবার আশায় নানা রকম কীর্তি করে থাকে। বাড়ির ছাদে, গাড়িতে কিংবা গাছের আগায় পতাকা টাঙায়। দেখা যায় এক বন্ধু হয়তো ব্রাজিলের সাপোর্টার আর অন্য বন্ধু আর্জেন্টিনার। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে বিতর্কের শেষ নেই। হয়তো কখনো কখনো
মারামারিও লেগে যায়, কিন্তু তার স্থায়িত্বকাল কেবল বিশ্বকাপ চলাকালীনই। এরপর আবার সব আগের মতন।



কিন্তু এই পতাকা উড়ানোতে দোষের কিছু আমার চোখে পড়েনা। কারন আসলে এগুলো পতাকাই না। প্রত্যেক দেশের পতাকার নির্দিষ্ট মাপ ও রঙের ব্যাপার আছে। আমাদের এখানে যে সব পতাকা উড়ে সেগুলো নির্ধারিত মাপ মেনে তৈরি করা হয় না। তারওপর পতাকার ভেতর থাকে সেই দলের কোন তারকার নাম এমনকি যার সৌজন্যে পতাকা তৈরি হয়েছে তার নামও থাকে। এটাকে আর যাই বলা হোক না কেন অন্ততঃ পতাকা বলার কোন কারন নেই। কাজেই এ নিয়ে অযথা দুঃশ্চিন্তা করে খেলা দেখার মজা থেকে বঞ্চিত হওয়ারও কোন কারন নেই।

ছবি সূত্রঃ বিবিসি, গুগল
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুন, ২০১০ বিকাল ৩:৩৮
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×