somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এই মৃত শহরে

৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১০ সকাল ৯:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটি শহরের প্রাণ সে শহরের বাসিন্দা। সেই বাসিন্দাদের জীবন থেকে যখন হাসি-আনন্দ চলে যায় তখন আসলে সেই শহরের মৃত্যু হয়। তেমনি এক মৃত শহরে পরিনত হয়েছে আমাদের ঢাকা।

একটা সময় রাত-বিরেতে রিক্সা করে ঘুরে বেরিয়েছি। কেনাকাটা করেছি। ফুটপাথের টঙ ঘরে চা খেয়েছি। আড্ডা দিয়েছি। গলা ছেড়ে গান গেয়েছি। সবই করেছি নির্ভয়ে। মনের মধ্যে একটা ফুরফুরা ভাব ছিল। স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক। কিন্তু সেই উচ্ছ্বলতা আজ নেই।

১. খুব বেশি দিন আগের কথা নয়, সংসদ ভবনের সামনের ও পাশের মাঠ ছিল উন্মুক্ত। প্রতিদিন বিকেলে হাজার হাজার মানুষের পদচারনায় মুখরিত ছিল এলাকাটা। ছোট বাচ্চারা ছোটাছুটি করছে, লাফালাফি করছে আর বড়রা ঘাসে পা ছড়িয়ে দিয়ে বসে জুড়ে দিয়েছে আড্ডা। একপাশে কিছু ছেলে পেলে আবার স্কেটিং করছে। উৎসুক জনতা সেটা মন ভরে উপভোগ করছে। বাদামওয়ালা বাদাম বিক্রি করছে, চানাচুড়ওয়ালা চানাচুড় বিক্রি করছে, বাঁশিওয়ালা বাঁশি বিক্রি করছে আর চাওয়ালা ফ্লাস্কে করে বিক্রি করছে চা আর কফি। কেউ কেউ গিটার বাজিয়ে গান করছে, কেউ বা মনের আনন্দে নেচে চলেছে। এ এক অনাবিল আনন্দময় জীবন। কিন্তু গনমানুষের এ উচ্ছ্বল আনন্দ কারও চোখে কাটার মত বিধল। মাঠে সর্বসাধারনের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হল। যান্ত্রিক জীবনে এক মুঠো নির্মল আনন্দের মৃত্যু হল।

২. এটাও বেশিদিন আগের কথা নয়, এ শহরে প্রায় মাঝরাত পর্যন্ত দোকানপাট খোলা ছিল। মানুষ অনেক রাত পর্যন্ত এ মার্কেট সে মার্কেট ঘুরে পছন্দের জিনিসটা কিনত। শুধু যে কেনাকাটার জন্যই ঘোরা হত তা নয়। এমনি ঘোরাঘোরিও হত খাওয়া দাওয়াও হত। কিন্তু সেও আর হবার নয়। বিদ্যুৎ বাঁচাও, বিদ্যুৎ বাঁচাও বলে সন্ধ্যা হতে না হতেই সব বন্ধ করে দেওয়া হল। সারাদিন পরিশ্রম করে মানুষ একটু রিলাক্সড হতে চায়। এবং সেক্ষেত্রে মার্কেটে ঘোরা কিংবা কেনাকাটা করা যথেষ্ট কাজে দেয়। শুধু তাই নয় সংসারের প্রয়োজনীয় কেনাকাটাও তো করতে হবে। কিন্তু অফিস থেকে বের হয়ে সারাক্ষন থাকতে হয় একটা চরম দুশ্চিন্তার মধ্যে, জ্যাম ঠেলে যেতে যেতে মার্কেট খোলা থাকবে তো? মার্কেট খোলা পেলেও দু-একটা মার্কেট ঘুরে পছন্দের জিনিস কেনা প্রায়শই অসম্ভব একটা কর্ম হয়ে দাড়ায়। সাড়া দুনিয়া জুড়ে নাইট লাইফ বলে একটা ব্যাপার আছে কিন্তু আমাদের ঢাকা সন্ধ্যা হতে না হতেই একটা মৃত শহরে পরিনত হয়।

৩. বিভিন্ন জাতীয় দিবস গুলোতে কিংবা আন্তর্জাতিক দিবসগুলোতে মানুষ একটু হৈ হুল্লোর করে। বহুবছর ধরে এটাই হয়ে আসছে। ছোটবেলায় দেখেছি শবেবরাতের রাতে ছোটরা বাজি ফোটাতো। আমরাও করেছি। যদিও পরিবার থেকে কিঞ্চৎ ধমক-ধামক আসত কিন্তু সেটা কখনোই আমাদের নির্মল আনন্দে বাধা হয়ে দাড়াতনা। ঈদের আগের রাতে (চাঁদ রাত) একটা বয়স পর্যন্ত সবসময়ই আমরা আতশবাজি পুড়িয়েছি এবং আমাদের সাথে বড়রাও সামিল হত। বিয়েতে, জন্মদিনে, খৎনার অনুষ্ঠানে এমনি নানা উপলক্ষে আমরা হৈ-হুলোর করেছি, আনন্দ মিছিল করেছি, বাজি ফুটিয়েছি। কিন্তু এখন আর এসব করা যায়না। নানা দিক থেকে নিষেধাজ্ঞা আসে। ইদানিং দেখি এ ধরনের উপলক্ষ্ এলে মাইকিং করা হয়, রেডিও-টিভিতে ঘোষণা দেয়া হয়, পত্রিকাতে বিজ্ঞপ্তি ছাপা হয় যেন এসব থেকে বিরত থাকে সবাই। কি অদ্ভুৎ দেশ আমাদের।
গতকাল থেকে টিভিতে খবরে এ ধরনের একটা ঘোষণা দিচ্ছে যে, আগামীকাল থার্টি ফার্স্ট নাইটে রাত ন'টার পর রাস্তায় দল বেধে ঘোরাঘোরি করা যাবেনা, জটলা পাকানো যাবেনা, আতশবাজি পোড়ানো যাবেনা, টিএসসিতে যাওয়া যাবেনা ইত্যাদি ইত্যাদি। এসবের মানে কি? নিরাপত্তার নামে এ কেমন অসভ্যতা? একটা স্বাধীন দেশের নাগরিক হয়ে আমরা নববর্ষের আনন্দ করতে পারবনা? রাস্তায় ঘুরতে পারবনা? আতশবাজি পোড়াতে পারবনা? কেন?
জনগনের নিরাপত্তা দেয়ার জন্য পুলিশ বাহিনী রয়েছে। মানুষ আনন্দ করবে, নাচবে, গাইবে এটা তাদের অধিকার। কেউ সমস্যা করলে তার বিরূদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা পুলিশই গ্রহন করবে। তাদের কাজইতো তাই। এভাবে ঘোষণা দিয়ে মানুষকে ঘরে বন্দি করে রাখা কোন সভ্যতার পর্যায়ে পড়ে আমার জানা নেই।

একটা শহরের মানুষের মনে যখন কোন আনন্দ থাকেনা তখন সে শহর আপনা আপনি মরে যায়। কিন্তু আমরা যারা ঢাকায় থাকি তাদের মনের আনন্দ এখনও শেষ হয়ে যায়নি। আমরা এখনও হাসতে জানি। আমাদের হাসি থামানোর জন্য চেষ্টা চলছে। কিন্তু তা সফল হবেনা যদি আমরা সবাই মিলে জেগে উঠি। আমরা একটা মৃত শহরের বাসিন্দা হয়ে বাঁচতে চাইনা। আসুন আমরা সবাই মিলে আবার প্রাণ খুলে হাসি, আসুন আবার সবাই মিলে রাস্তায় নেমে আসি, গলা ছেড়ে গান গাই, হাতে হাত ধরে মৃতপ্রায় ঢাকাকে আবার বাঁচিয়ে তুলি।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১০ সকাল ৯:৪২
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×