somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রতিষ্ঠান 'জব্দের' নামে জব্দ হচ্ছেন গ্রাহকরা(দেখার কি কেও নেই)

১৭ ই আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সরকারের তৎপরতায় একের পর এক 'বিতর্কিত' প্রতিষ্ঠান জব্দ হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত সাধারণ মানুষের পাওনা টাকা আদায় হচ্ছে না। দোষীদের শাস্তির উদ্যোগ কিছুটা থাকলেও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সুরক্ষায় সরকারের কোনো পদক্ষেপ নেই। যুব কর্মসংস্থান সোসাইটি- যুবক এক যুগ ধরে তিন সরকারের সময় সাধারণ মানুষের কাছ থেকে দুই হাজার ৫৮৮ কোটি টাকা নিয়ে পাহাড়সম প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠে। ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে অবৈধ ব্যাংকিংয়ের অভিযোগ ওঠে। তখন বড় রকমের হোঁচট খেয়ে পরের বছর থেকেই যুবকের কর্তারা এখন পর্যন্ত ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন ঠিকই, কিন্তু তিন লাখেরও বেশি আমানতকারী না পাচ্ছেন কোনো মুনাফা, না পাচ্ছেন তাঁদের মূল টাকা। লগি্ন করা অর্থ ফেরত পাওয়ার আশায় সরকারের গঠন করা দু-দুটি কমিশনের কাছে গিয়ে কান্নাকাটি করেছেন যুবকের গ্রাহকরা। তবু কোনো ফল হয়নি। একই দশা ডেসটিনি গ্রুপের ৪৫ লাখ গ্রাহক-পরিবেশকেরও। বছর দুই ধরে গ্রুপটির শীর্ষ কর্মকর্তারা কারাগারে আছেন, গোপনে কিছু কিছু করে ব্যবসায়িক কাজ-কর্মও চালাচ্ছেন অন্য কর্মকর্তারা। শুধু কমিশন ও বিনিয়োগের টাকা পাচ্ছেন না গ্রাহক-পরিবেশকরা। আবার হলমার্ক কেলেঙ্কারির পেছনে যে দুই হাজার ৬৬৮ কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতি, সোনালী ব্যাংক তথা জনগণের সেই টাকাও আদায় করতে পারেনি সরকার। যা হয়েছে, তা হলো কেবল হলমার্কের মালিক কারাগারে আছেন, কারখানাগুলো বন্ধ আছে।এদিকে গ্রামীণ ব্যাংক ও ড. ইউনূস নিয়ে সরকারের অবস্থান দেশ-বিদেশে উভয় পক্ষের শুধু সুনামহানিই করে চলেছে। হতাশায় পদত্যাগ করেছেন সরকারের নিয়োগ দেওয়া চেয়ারম্যানও।তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'একদিকে আইনের অভাব, অন্যদিকে সরকারের দিক থেকে সমস্যা ঝুলিয়ে রাখার মনোভাবের কারণেই এমনটি হচ্ছে। যুবক ও ডেসটিনির ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কোনো আইন নেই। তাই সরকারের পক্ষে বিনিয়োগকারীদের পাওনা পরিশোধের উদ্যোগ নেওয়া কঠিন। আর গ্রামীণ ব্যাংকের জন্য সুনির্দিষ্ট আইন আছে। সে মতেই ব্যাংকটি পরিচালনা হচ্ছে। সরকার কী কারণে ব্যাংকটি নিয়ে এমন করছে তা আমার বোধগম্য নয়।' হলমার্ক কেলেঙ্কারির সুরাহা না হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'এটি ব্যাংক ও সরকারের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে। কারণ হলমার্কের নেওয়া টাকা ব্যাংকের। ব্যাংক পরিচালনার জন্য আইন আছে। যেহেতু সোনালী রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক, তাই এত বড় কেলেঙ্কারির ঘটনার সুরাহা সরকারের ইচ্ছার বাইরে হবে না।'যুবকের গ্রাহকরা এখনো কাঁদছে : 'ঢাকার খিলগাঁও এলাকায় নাজনীন নাহার নাজু নামের একজন গৃহবধূকে চাকরির লোভ দেখিয়ে যুবক সংস্থার নির্বাহী পরিচালক হোসাইন আল মাসুম আমানত সংগ্রহের দায়িত্ব দেন। দুবার এই নারীকর্মী অনভিজ্ঞতার কারণে চাকরি ছাড়েন। বারবার তাঁকে অভয় দিয়ে যুবক চাকরিতে ফিরিয়ে নেয়। তাঁর গ্রাহক দায় (গ্রাহকদের কাছ থেকে তিনি যুবকের জন্য নিয়েছেন) সাড়ে তিন কোটি টাকা। তার পরিবার ছোট ছোট তিনটি দোকানের মালিক ছিল। যুবকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হয়ে গ্রাহক দায় পরিশোধে সবকটি দোকান বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। কিন্তু এখনো দিনের বেলায় ঘরে ফিরতে পারেন না তিনি। প্রতি ভোরে ঘর ছাড়েন, গভীর রাতে ঘরে ফেরেন। স্বামী ক্যান্সারে আক্রান্ত, ছোট ছেলে হেপাটাইটিসে আক্রান্ত, বড় ছেলের পড়াশোনা প্রায় বন্ধ। আর্থিক সংকট এত তীব্র যে সকালে কয়েক মুঠো ভাত ও মরিচের গুঁড়া আর এক চিমটি লবণ সম্বল করে দুপুরের আহার সারেন। এমন হাজার হাজার নাজনীন আজ পারিবারিক দুর্ভোগ ও সামাজিকভাবে নাজেহাল, দিশেহারা, পথহারা ও ঘরছাড়া। অথচ যারা পরিকল্পিতভাবে এই সংকট সৃষ্টি করেছে তারা ও তাদের সহযোগীরা নির্বিকারভাবে বিলাসী জীবনযাপন করছে। জনস্বার্থে অবিলম্বে যুবকের এসব কর্ণধারকে আটক করা আবশ্যক। নতুবা এসব সমাজদ্রোহী ও রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর দুষ্ট লোকদের অপতৎপরতা ও প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে না'- মো. রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে সরকার গঠিত যুবক কমিশনের প্রতিবেদনে এভাবেই সংস্থাটির গ্রাহকদের দুরবস্থার বর্ণনা করা হয়েছে।সমবায় অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধন নিয়ে ১৯৯৪ সালে যাত্রা শুরু করে যুবক। সরকার গঠিত যুবক কমিশনের হিসাব অনুযায়ী, যুবকের কাছে তিন লাখ তিন হাজার ৭৩৯ জন গ্রাহকের পাওনার পরিমাণ দুই হাজার ৫৮৮ কোটি টাকা। দেশের ৪৯টি তফসিলি ব্যাংকে যুবকের অর্থ রয়েছে মাত্র ৭৮ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। প্রতিবেদনে বলা হয়, সারা দেশে ৯১টি জমি প্রকল্প থাকলেও এর মধ্যে ৫০টি প্রকল্পে কোনো জমি অবশিষ্ট নেই। ৪০ ব্যক্তি যুবকের সম্পদ আত্মসাৎ করেছে। সম্পদ যাও আছে, তার কিছু যুবকের কর্মকর্তারা বিক্রি করে নিজেদের নামে প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছেন। কিন্তু গ্রাহকদের দুই হাজার ৫৮৮ কোটি টাকা ফেরত দেওয়ার কোনো নামগন্ধ নেই।অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চারদলীয় জোট সরকারের সময় বেকায়দায় পড়া এ প্রতিষ্ঠানটিকে নতুন করে কোনো বেকায়দায় ফেলতে রাজি নয় বর্তমান সরকার। সরকারের তরফ থেকে মৌখিকভাবে যুবকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের এ তথ্য জানানো হয়েছে। তাই যুবক অনেকটা প্রকাশ্যেই সম্পদ বিক্রি বা আত্মসাৎ করতে পারছে।এক কর্মকর্তা বলেন, মো. রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে গঠিত যুবক কমিশন বারবার যুবকের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে ব্যবসা পরিচালনা করার তথ্য জানিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করলেও সরকার তা করেনি। সর্বশেষ কমিশন তার চূড়ান্ত প্রতিবেদনে যুবকের সম্পদ দখলে নিয়ে তা বিক্রি করে গ্রাহকদের পাওনা পরিশোধের সুপারিশ করেছে। জানা গেছে, ওই সুপারিশ বাস্তবায়নেও সরকার কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। অর্থমন্ত্রীর কাছে ওই সুপারিশ পাঠানো হলেও প্রশাসক নিয়োগ করে সম্পত্তি বিক্রি ও গ্রাহকদের পাওনা পরিশোধের কোনো উদ্যোগ সরকারের বাকি মেয়াদে হবে না বলেই ধারণা করা হচ্ছে। ফলে গ্রাহকদের আমানত ফেরত পাওয়ার আপাতত কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।কমিশনের তথ্য মতে, মাঠ পর্যায়ে কর্মচারীদের বেশির ভাগই ছিল গৃহবধূ, যাঁরা স্বামী-সন্তান নিয়ে শান্তিপূর্ণ জীবনযাপনে অভ্যস্ত ছিলেন। যুবকের উদ্যোক্তারা সুপার মোটিভেশনের কৌশলে ও অধিক আয়-উপার্জনের লোভ দেখিয়ে এসব গৃহবধূর কাউকে চাকরি দেয়, আবার কাউকে আমানত সংগ্রহে কমিশনভোগী কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ দেয়। এসব কর্মচারী নিজ নিজ এলাকায় পরিচিতজনদের কাছ থেকে যুবকের বিভিন্ন প্রকল্পে বিনিয়োগের জন্য টাকা সংগ্রহ করে। তাদের মাধ্যমে যুবক অল্প সময়ের মধ্যে গ্রাহকদের মধ্যে আছেন অত্যন্ত নিম্ন আয়ের মানুষ, যাঁরা মুনাফার আশায় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয় ও ধারদেনার মাধ্যমে যুবকে টাকা বিনিয়োগ করেছেন। টাকা ফেরত না পাওয়ায় এসব ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী দিনে দিনে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। দায় পরিশোধের ব্যর্থতার কারণে আপজন দ্বারা পরিত্যক্ত হয়ে বহুকর্মী বিশেষ করে নারী কর্মচারীরা তাঁদের নিজ এলাকা ও ঘরবাড়ি ছাড়া হয়ে রোগে-শোকে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।যুবকের নির্বাহী পরিচালক হোসাইন আল মাসুম সম্প্রতি কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমরা গ্রাহকদের পাওনা পরিশোধ করে দায়মুক্তির উদ্যোগ নিয়েছি।' অথচ ২০০৬ সালেই বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশনা দিয়েছে, গ্রাহকদের আমানতের সঙ্গে তার সুদও পরিশোধ করতে হবে।ডেসটিনির ৪৫ লাখ গ্রাহক-পরিবেশকের ভাগ্য অনিশ্চিত : একটি বেনামি আবেদন দিয়ে শুরু। তার পর থেকে ডেসটিনি গ্রুপের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা, মামলা করে শীর্ষ কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তার করার কাজ হয়েছে। তা সত্ত্বেও কিছু কর্মকর্তা কম পরিসরে এখনো কিছু কিছু ব্যবসায়িক কার্যক্রম সচল রেখেছেন। কিন্তু গ্রাহকরা না পাচ্ছেন আগের মতো কমিশন, না পাচ্ছেন বিনিয়োগের অর্থ। গ্রুপটির কর্মকাণ্ড নিয়ে সরকারের মধ্যেও আর কোনো উদ্যোগ নেই।জানা গেছে, এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ডেসটিনি নিয়ে নানা ঘটনা ঘটলেও কোনো গ্রাহক-পরিবেশকই তাঁদের বিনিয়োগের অর্থ ফেরত পাননি, অবশ্য এখন পর্যন্ত অর্থ ফেরত চেয়ে কোনো দাবিও তোলেননি তাঁরা। বর্তমান সরকারের বাকি মেয়াদে ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালু করা বা গ্রাহকদের বিনিয়োগের অর্থ ফেরত দেওয়ার কোনো উদ্যোগই নেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। তাঁরা বলছেন, এত বড় প্রতিষ্ঠানের বিপুল দায় আর সম্পদের দায়ভার নেবে না বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তাই যুবকের মতোই অপেক্ষার প্রহর গুনতে হতে পারে ডেসটিনির গ্রাহকদেরও।গত মার্চ মাসে ডেসটিনি গ্রুপের সব ব্যবসায়িক ও আর্থিক লেনদেনের সুবিধার্থে সব ব্যাংক হিসাব খুলে দেওয়ার আবেদন করেন গ্রুপটির সভাপতি (চলতি দায়িত্ব) মো. আশরাফুল আমীন। একই সঙ্গে ডেসটিনি গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলোর ভবিষ্যৎ কর্মকাণ্ডে সরকারের সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানগুলোর নিবিড় তদারকিও চেয়েছেন তিনি। তবে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলা স্বাভাবিক গতিতে চলুক- এমনটিও চেয়েছেন আশরাফুল আমীন।আবেদনে আশরাফুল আমীন বলেছেন, 'কিছু অবৈধ, লোভী, আত্মসাৎকারী অসৎ ব্যবসায়ীর কারণে প্রতিষ্ঠানটি মিথ্যা, বানোয়াট, ভুলভ্রান্তির শিকার। ডেসটিনি গ্রুপের কেউ অন্যায় বা রাষ্ট্রের নীতিমালার বাইরে দুর্নীতি করে থাকলে তাঁদের শাস্তি দিন। গুটিকয়েক ব্যক্তি ও অল্প কিছু পত্রিকার সংবাদের ভিত্তিতে পুরো প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে ৪৫ লাখ পরিবেশক ও দুই কোটি জনগণের বিনষ্ট না করার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেছেন, ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির সদস্য সংখ্যা সাড়ে আট লাখের বেশি উল্লেখ করে আবেদনে আশরাফুল আমীন বলেছেন, কম্পানিতে তাঁদের বিনিয়োগ দুই হাজার কোটি টাকার বেশি। গড় হিসেবে এঁদের মাথাপিছু বিনিয়োগ ২৫ হাজার টাকার কম। এতে স্পষ্ট, নিম্ন আয়ের মানুষই কম্পানিটির বিনিয়োগকারী।আশরাফুল আমিনের দেওয়া তথ্য মতে, গত বছরের ২৫ মে থেকে ডেসটিনি গ্রুপের ৫৮৪টি ব্যাংক হিসাব জব্দ করে রাখা হয়েছে। যদিও এর মধ্যে ৩৩৭টি ব্যাংক হিসাবই অভিযুক্ত নয়- ডেসটিনি গ্রুপের এরূপ ৪৬টি প্রাইভেট লিমিটেড কম্পানির। এ কারণে ডেসটিনি গ্রুপের সব ব্যবসায়িক কার্যক্রম দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় তিন হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ৪৫ লাখ পরিবেশক ও তাদের ওপর নির্ভরশীল আড়াই কোটি মানুষ বিনিয়োগ হারানোর শঙ্কায় আছেন।বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, 'ডেসটিনি নিয়ে শুরুতে সরকার যতটা হার্ডলাইনে ছিল, এখন আর ততটা নেই। তবে ডেসটিনি গ্রুপকে আবারও ব্যবসা পরিচালনা করতে দেওয়া বা গ্রাহকদের অর্থ ফেরত দেওয়ার মতো কোনো উদ্যোগই সরকার বাকি মেয়াদে নেবে না।'সোনালী ব্যাংকের টাকা হলমার্কেই রয়ে গেছে, শুধু কারখানাগুলো বন্ধ : সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখা আর হলমার্ক গ্রুপের কর্মকর্তারা দেশের ব্যাংকিং ইতিহাসের সবচেয়ে বড় আর্থিক কেলেঙ্কারির জন্ম দিয়েছেন। শাখাটি থেকে হলমার্ক গ্রুপ ভুয়া কাগজপত্রে ঋণ নিয়েছে দুই হাজার ৬৬৮ কোটি টাকা। গত বছর এই ঋণ কেলেঙ্কারি ফাঁস হওয়ার পর প্রথমে অর্থমন্ত্রী তা পাত্তা দেননি। পরে কড়া সমালোচনার মুখে হলমার্কের এমডি তানভীর মাহমুদ, তাঁর স্ত্রী ও গ্রুপটির চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম ও জিএম তুষারসহ সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তার করে সরকার। বছরখানেক জেল খেটে মাসে ১০০ কোটি টাকা পরিশোধের শর্তে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন জেসমিন ইসলাম। অথচ হলমার্ক গ্রুপের কম্পানি সংঘস্মারক অনুযায়ী, চেয়ারম্যানের আর্থিক লেনদেনের ক্ষমতা নেই। জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর মাসে ১০০ কোটি টাকা পরিশোধের দায় থেকে মুক্তি চেয়ে উচ্চ আদালতে আপিল করেছেন জেসমিন ইসলাম। অন্যদিকে, দুর্নীতি দমন কমিশন ওই জামিন বাতিল চেয়ে আবেদন করেছে। আগামী ১৮ আগস্ট এসব আপিলের শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।গত বছরের অক্টোবরে তানভীর মাহমুদ গ্রেপ্তারের সময় তাঁদের ৪৫টি পোশাক কারখানা চালু ছিল। এখন সেখানে চারটি কারখানা চালু আছে। বাকি কারখানাগুলো এখনো বন্ধই রয়েছে। আর কারখানা বন্ধ থাকায় ব্যাংকের পাওনা পরিশোধের উদ্যোগ নেওয়াও সম্ভব হচ্ছে না।গত ফেব্রুয়ারি মাসে হলমার্ক গ্রুপের করা এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত কারখানাগুলো চালু রাখার পক্ষে মত দেন। কারখানাগুলো সচল রেখে কিভাবে পাওনা আদায় করা সম্ভব, সে ব্যাপারে গত মার্চে তিনি স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি প্রতিবেদন চান সোনালী ব্যাংকের কাছে। তবে এখনো তা তৈরি করতে পারেনি সোনালী ব্যাংক। ফলে ঋণ আদায় ও কারখানা চালু-দুটোই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।হলমার্ক গ্রুপের ঋণ আদায় পরিস্থিতির সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রদীপ কুমার দত্ত কালের কণ্ঠকে বলেন, হলমার্কের ঋণ পুনঃ তফসিলের ব্যাপারে সোনালী ব্যাংকের নিজস্ব আইনজীবীদের মতামত নেওয়া হয়েছে। আগের রপ্তানিমূল্য ব্যাংকে আসার পর তা সমন্বয় করা হয়েছে। এভাবে মোট ৪১০ কোটি টাকা আদায় হয়েছে। বাকি টাকা আদায় প্রসঙ্গে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে করণীয় সরকারেরই জানা নেই : সরকার গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে কী করতে চায়, তা এখনো স্পষ্ট নয়। অনেকটা জোর করে ড. ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর বছর দেড়েক ধরে ওই পদটি এখনো খালিই রয়েছে। এমডি নিয়োগে চেয়ারম্যানকে বেশি ক্ষমতা দেওয়ার পরও তা করতে পারেনি সরকার। কারণ, উচ্চ আদালতে পরিচালকরা সরকারের এ উদ্যোগের বিপক্ষে রিট দায়ের করেছেন। অবস্থা বেগতিক দেখে এখন আর ওই রিট মামলা নিষ্পত্তির পক্ষে নয় সরকার। আর এতে হতাশ হয়ে পদত্যাগ করেছেন ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদে সরকারের নিয়োগ দেওয়া চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোজাম্মেল হক।চেয়ারম্যান পদত্যাগপত্র দেওয়ার পর থেকেই নতুন করে চেয়ারম্যান খুঁজছেন অর্থমন্ত্রী। কিন্তু যোগ্য কাউকেই রাজি করাতে পারছেন না তিনি। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেওয়ার জন্য ইতিমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক দুজন ডেপুটি গভর্নর ও একজন সাবেক সচিবকে টেলিফোনে অনুরোধ করেন অর্থমন্ত্রী। তাঁদের কেউই অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবে রাজি হননি। তাই পদত্যাগী চেয়ারম্যানকেই আপাতত অনুরোধ করা হয়েছে দায়িত্ব পালন করে যেতে, যত দিন নতুন চেয়ারম্যান পাওয়া না যায়।অর্থমন্ত্রী মনে করেন, গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে যে ১২ জন সদস্য রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে সরকারের নিয়োগ দেওয়া তিনজন বাদে বাকিরা সবাই এখনো ড. ইউনূসের ভক্ত। তাই ওই পরিচালকদের সরানোর অংশ হিসেবে পরিচালক নিয়োগ বিধিমালাটি বর্তমান মেয়াদকালের মধ্যেই চূড়ান্ত করে যাবে সরকার। ওই বিধিমালার অধীনে সরকার গঠিত নির্বাচন কমিশন ঋণগ্রহীতা পরিচালক নির্বাচিত করবে। এর মধ্য দিয়েই গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ থেকে ড. ইউনূস অনুসারীদের সরানোর কৌশল নিয়েছে সরকার।গত বুধবার অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছেন, গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত তিনটি। এগুলো হলো- ব্যাংকটি যেভাবে চলছে, সেভাবেই চলবে। সরকারের শেয়ার ২৫ শতাংশ আছে, তা-ই থাকবে। পরিচালক নিয়োগের বিধিমালা সরকার চূড়ান্ত করে যাবে। আর গ্রামীণ ব্যাংককে হয় বাংলাদেশ ব্যাংক, না হয় ক্ষুদ্রঋণ নিয়ন্ত্রক সংস্থার অধীনে পরিচালিত হতে হবে।

সুত্র
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ২:২০
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×