somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চে’ গুয়েভারাঃ ফিদেল’কে শেষ চিঠি

১০ ই অক্টোবর, ২০১০ রাত ১২:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[এই চিঠিটি ফিদেল ক্যাষ্ট্রো’কে লেখা চে’ গুয়েভারা’র শেষ চিঠি। এটা ফিদেল ১৯৬৫ সালের এপ্রিল মাসে পান এবং ৩রা অক্টোবর একটি ভাষণে তিনি কিউবা’র সবার কাছে এটি পড়ে শোনান।]

এই মূহুর্তে আমার অনেক কথা মনে পড়ছে – যখন মারফা এন্টোনিয়াসের বাসায় তোমার সাথে আমার দেখা হল, যখন তুমি আমাকে তোমার সাথে যোগ দিতে বললে এবং প্রস্তুতিপর্বের সাথে সম্পৃক্ত সব দুঃশ্চিন্তাগুলো।

তারা একদিন আমাকে প্রশ্ন করেছিল মৃত্যু হলে কাকে জানানো হবে, এবং তার সত্যিকারের সম্ভাবনা আমাদের সবাইকে আচ্ছন্ন করেছিল। পরে আমরা জেনেছিলাম যে এটা সত্যি ছিল, যে একটি বিপ্লবে একজন অর্জন করে - বিজয় অথবা মৃত্যু, যদি সেটা সত্যিকারের বিপ্লব হয়। বিজয়ের পথজুড়ে অনেক সহ-যোদ্ধাকে আমাদের হারাতে হয়েছে।

আজ সবকিছু আর ততোটা নাটকীয় নয়, কারণ আমরা এখন আরও পরিণত হয়েছি। কিন্তু সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়েছে। আমি মনে করি যে আমি কিউবান বিপ্লবের সাথে যে বন্ধনে জড়িয়েছিলাম, আমি আমার সেই দ্বায়িত্ব সম্পন্ন করেছি, এবং আমি তোমাকে বিদায় জানাচ্ছি, সহ-যোদ্ধাদের এবং তোমার সব লোকেদের, যারা ইতিমধ্যেই আমার আপনজন হয়ে উঠেছে।

আমি আনুষ্ঠানিকভাবে পার্টির জাতীয় নেতৃত্বস্থানীয় পদ থেকে, মন্ত্রীর পদ থেকে, আমার মেজর পদমর্যাদা থেকে পদত্যাগ করছি এবং আমার কিউবান নাগরিকত্ব পরিত্যাগ করছি। আমার কোনকিছুই আর আইসঙ্গতভাবে কিউবার সাথে সম্পৃক্ত নয়। যে বন্ধন রইল তা সম্পুর্ণ অন্য ধরনের – যেটা পদত্যাগ করার মত সহজে ভেঙ্গে ফেলা যায়না।

আমার অতীত জীবন স্মরণ করে, আমি বিশ্বাস করি যে আমি আমাদের বৈপ্লবীক বিজয়কে সুদৃঢ করতে পর্যাপ্ত সন্মান এবং ত্যাগের এর সাথে কাজ করেছি। সিয়েরা মায়েস্ট্রা’র প্রথম মূহুর্তগুলোতে তোমার উপর পূর্ণ বিশ্বাস রেখে আমি যেমন ভুল করিনি, তেমনভাবে একজন নেতা এবং বিপ্লবী হিসেবে তোমার যোগ্যতা বুঝতেও আমার দেরী হয়নি।

আমি চমৎকার সময় কাটিয়েছি, ক্যারিবিয়ান সঙ্কটের সেই উজ্জল তথাপি দুঃখের দিনগুলোতে তোমার পাশে থেকেও আমি আমাদের জনতার অংশ হওয়ার গর্ব অনুভব করেছি।

সেইসব দিনগুলোতে তুমি একজন অত্যন্ত দক্ষ লোকের থেকেও বেশী মেধাবী ছিলে। তোমাকে নিঃসঙ্কোচে অনুসরণ করে, তোমার চিন্তা, বিপদ দেখে জানানোর ক্ষমতা এবং তোমার নীতির সাথে নিজেকে একাত্ম করতে পেরে আমি গর্বিত। পৃথিবীর অন্য জাতিরা আমার বিনয়ী প্রচেষ্টা আহবান করছে। আমি সেটা করতে পারি যেটা কিউবার প্রধান নেতা হিসেবে অর্পিত দ্বায়িত্বের কারণে তুমি করতে সমর্থ হবে না, এবং আমাদের বিচ্ছিন্ন হওয়ার সেই সময় উপস্থিত।

আমি এটা সবাইকে জানাতে চাই যে, আমাকে আনন্দ এবং দুঃখের একটি মিশ্র অনুভূতি নিয়ে এটা করতে হচ্ছেঃ আমি একজন নির্মাতা হিসেবে আমার বিশুদ্ধতম আশা রেখে যাচ্ছি, এবং সেই কাছের মানুষদের যাদের আমি ভালবাসি। এবং আমি এমন একটি জনগনের কাছ থেকে চলে যাচ্ছি যারা আমাকে তাদের ছেলের মত বরণ করে নিয়েছিল। এটা আমাকে গভীরভাবে ক্ষতবিক্ষত করে। যে বিশ্বাস তুমি আমাকে শিখিয়েছ, আমার জনতার যে বিপ্লবী আদর্শ তা আমি নতুন যুদ্ধক্ষেত্রে নিয়ে যাচ্ছি, সাথে নিয়ে যাচ্ছি সকল কাজের পবিত্রতম সেই কাজ করার অনুভুতিঃ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ, সেটা যেখানেই হোক না কেন। এটা আমার গভীরতম ক্ষতও সান্ত্বনা দিয়ে সারিয়ে তুলছে।

আমি আগেও একবার বলেছি যে কিউবা আমার যে কোন ধরণের দ্বায়িত্ব থেকে মুক্ত, সেটা ছাড়া যেটা উদাহরণ থেকে উদ্ভুত হয়। যদি অন্য কোন দেশে আমার জীবনের শেষ সময় কাটাতে হয়, আমার শেষ চিন্তা হবে এই জনগণের বিষয়ে, বিশেষভাবে তোমার জন্য। তোমার শিক্ষা এবং উদাহরণের জন্য আমি কৃতজ্ঞ, এবং আমি আমার শেষ পরিণতি পর্যন্ত আমার কাজে বিশ্বস্ত থাকার চেষ্টা করব।

আমি সবসময়ই বিপ্লবের বৈদেশিক নীতির সাথে একমত ছিলাম, এবং আমি তাই থাকব। আমি যেখানেই যাই, আমি একজন কিউবান বিপ্লবীর দ্বায়িত্ব অনুভব করব এবং সেইমত আচরণ করব। আমি এজন্য দুঃখিত নই যে আমি আমার স্ত্রী ও সন্তানদের জন্য কিছুই রেখে যাচ্ছি না। এটাতে বরং আমি খুশী। আমি তাদের জন্য কিছুই চাই না, কারণ আমি জানি যে সরকার থেকে তাদের খরচ এবং পড়াশুনার জন্য যথেষ্টই দেওয়া হবে।

তোমাকে এবং আমাদের জনগণকে আমি আরও অনেক কিছু বলতাম, কিন্তু আমি মনে করি সেটা অপ্রয়োজনীয়। আমি তাদের কিভাবে দেখতে চাই তা ভাষায় প্রকাশ সম্ভব নয় এবং তাই শুধু শুধু পৃষ্ঠায় আঁচড় কাটার কোন মানেই হয় না।

বিজয়ের পথে আজীবন! হয় স্বদেশ নয় মৃত্যু!
আমার সমস্ত বৈপ্লবীক ঐকান্তিকতা নিয়ে তোমাকে আলিঙ্গন।

চে’



এই লেখাটি ভাল লেগে থাকলে নিচের লেখাগুলোও আপনার ভাল লাগতে পারেঃ

১। চে’ গুয়েভারাঃ স্মরণীয় উদ্ধৃতি

২। চে’ গুয়েভারাঃ একটি বিপ্লবী জীবন

৩। Guerrillero Heroico - ক্যামেরার পেছনের মানুষটি




চে’র শেষ চিঠি পড়ছেন ফিদেল ক্যাষ্ট্রো, ৩রা অক্টোবর, ১৯৬৫



তথ্যসূত্রঃ ইন্টারনেট


৯ই অক্টোবর, ২০১০, ঢাকা

সর্বশেষ এডিট : ১১ ই অক্টোবর, ২০১০ দুপুর ১২:৫৭
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭



আমাদের ব্রেইন বা মস্তিষ্ক কিভাবে কাজ করে লেখাটি সে বিষয়ে। এখানে এক শিম্পাঞ্জির কথা উদাহরণ হিসেবে টেনেছি মাত্র।

ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

×