somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হড় কাহিনী (২)

০১ লা জুন, ২০১৬ রাত ১১:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
বিষয়: হাড়িয়া ও আকাশ পানি প্রসঙ্গ
------------------

আদিবাসী সমাজে হাড়িয়া বা পচানীর বহুল ব্যবহার সম্পর্কে অনেকেই হয়তো জানেন। কিন্তু যেটা জেনেও জানেন না তাহলো এই হাড়িয়ার ভুল ব্যবহারের জন্য আদিবাসী সমাজে আজ এটি ক্ষতির কারন হয়ে দাড়িয়েছে। বিশেষ করে যখন থেকে হাড়িয়ার বদলে আকাশ পানি (পৗউরৗ) এর প্রচলন হয় তখন থেকে হড় সমাজ ধ্বংসের পাশাপাশি হড়দের সংস্কৃতি ও উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়ে আসছে।
তবে ঠিক কিভাবে ও কবে হাড়িয়া এবং আকাশ পানির ব্যবহার আদিবাসী সমাজে ঢুকেছে তা আমরা অনেকেই জানিনা। অন্য আদিবাসী সমাজে এগুলোর ব্যবহার শুরুর নিশ্চয় ভিন্ন ইতিহাস আছে তবে হড় সমাজে কিভাবে হাড়িয়া আসলো তা কলেয়ান হাড়াম কথিত ও স্ক্রেফসরুড লিখিত হড়কোরেন মারে হাপড়ামকো রেয়াঃ কাথা গ্রন্থে কিছুটা পাওয়া যায়। এই গ্রন্থে লিটৗ দেবতা যিনি ঠাকুরজিউ এর বার্তাবাহক তাঁর উপর দায়িত্ব পড়েছিল হড়দের প্রথম পিতা-মাতা পিলচু হাড়াম-বুডহি’কে দেখাশোনা করার। তারা যখন বড় হলেন তখন লিটৗ হড়দের বংশবৃদ্ধি করার পরিকল্পনা করতে গিয়ে তাদের একদিন হাড়িয়া বানানো শেখালেন এবং বললেন এটি একটি সুস্বাদু পানীয়, এটা খেলে ভালো লাগবে তবে অবশ্যই সেটি খাওয়ার আগে তার নামে কিছুটা হাড়িয়া উৎসর্গ করতে বললেন। তাঁর কথামতো পিলচু হাড়াম বুডহি হাড়িয়া বানিয়ে একদিন খেয়ে মাতাল হয়ে একসাথে রাত্রী যাপন করলেন। পরেরদিন সকালে লিটৗ দেবতা তাদের সাথে দেখা করতে গেলে ওই ঘটনার জন্য তারা লজ্জা বোধ করছিলেন। পরে লিটৗ দেবতা তাদের আশস্ত করলেন যে এটা খারাপ কিছু তারা করেননি। আর এইভাবেই আদি মানব-মানবীর মিলনের ফলে হড়দের বংশবৃদ্ধি হতে শুরু করে। এভাবেই শুভ একটি কাজকে এগিয়ে নিতে প্রথম হড়দের মধ্যে হাড়িয়া খাওয়ার প্রচলন শুরু হয়।
সম্ভবত এই ঘটনার অনেক পরে হড়রা এই হাড়িয়াকে সমাজ ও সংস্কৃতির একটি অংশ হিসেবে গ্রহণ করে। যার ফলশ্রুতিতে এখনো হড়দের সকল পূজায়, উৎসবে, অনুষ্ঠানে হড়দের বিভিন্ন বঙ্গা (দেব-দেবী) কে হাড়িয়া উৎসর্গ করা হয়। মূলত হাড়িয়া পূজার একটি অপরিহার্য অংশ হিসেবে প্রতিষ্টা পায়। এবং যারা হড়দের বঙ্গা বুরুদের (দেব-দেবী) পূজাদি কার্যে অংশ নেয় তারাই শুধুমাত্র এটি খেতে পারতো তাও খুব অল্প পরিমাণে। শাল পাতায় বর্তমানে কাঁঠাল পাতায় বেশী দেখা যায় ফুঁড়ুঃ (চোঙ্গা) বানিয়ে বঙ্গাদের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করার পর পূজা শেষে পুরোহিত এবং তার সাথে উপস্থিত দুই একজন হাড়িয়া খেয়ে থাকে। হড় সমাজে হাড়িয়া পূজার একটি অন্যতম উপাদান হিসেবেই বহুদিন ছিল তবে ঠিক কবে থেকে পূজার বাইরে শুধূমাত্র নেশা হিসেবে এটাকে ব্যবহারের প্রচলন হয় তা জানা যায়না।
পূজার অংশ হিসেবে হাড়িয়ার এরূপ প্রচলন পর্যন্তও ঠিক ছিল। কেননা হাড়িয়া খাওয়ার প্রচলন হলেও শুধুমাত্র পূজা পরবে এটি খাওয়া হতো। কিন্তু এখনকার অনেক আদিবাসী সমাজে পূজা পরব বা কোন অনুষ্ঠান ছাড়াই হাড়িয়া খেতে দেখা যায়। অনেক জায়গায় আবার হাড়িয়াও বিক্রী হয়। মূলত যখন থেকেই পূজা পার্বনের বাইরে বা অনুষ্ঠান ছাড়া এই হাড়িয়া খাওয়ার প্রচলন শুরু হয় সেদিন থেকেই হড় সমাজ একটু একটু করে ক্ষয়ে যেতে শুরু করে। এর সাথে যোগ দেয় আকাশ পানি (দেশী মদ বা চোলাই মদ বা চুয়ানি) নামের আরেকটি পানীয়। যেটি এখন হড় সমাজকে একেবারে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে।
হড় সংস্কৃতির সাথে হাড়িয়ার সম্পর্ক বেশ ঘনিষ্ট হলেও আকাশ পানির সাথে সম্পর্ক কিন্তু একেবারেই নেই। কিন্তু খুবই দুঃখের বিষয় তথাকথিত পুথিগত বিদ্যাসম্পন্ন কিছু হড় বা যারা পুথিগত বিদ্যা অর্জন করতে পারেন নাই এমনও কিছু হড় তারা বলে থাকনে আকাশ পানিতো হড় সমাজেরই অংশ। এটা খাওয়া মানে হড় সংস্কৃতিকে রক্ষা করা। তারা আসলে হড় সংস্কৃতিকে রক্ষার মিথ্যা বাহানা দিয়ে থাকেন, সত্যিকার অর্থে সংস্তৃতি রক্ষার চাইতে তারা সংস্কৃতি ধ্বংসের এবং সেটিকে বিকৃত করার কাজটিই বেশী করে থাকেন।
হাড়িয়া এবং আকাশ পানি সম্পর্কে নিজের অভিজ্ঞতার কথা যদি বলি- আমি প্রথম হাড়িয়া খেয়েছি একেবারে পূজার অংশ হিসেবেই। বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানেও খেয়েছি। পরবর্তীতে আকাশ পানিও খেয়েছি। পৃথিবীর বেশীরভাগ সমাজেই এই ধরনের নেশা জাতীয় পানীয় প্রচলনের ব্যবহার আছে। এখন এই পানীয় ব্যবহারের উপর নির্ভর করছে সমাজের উপর এটির প্রভাব ভালো হবে নাকি খারাপ হবে। তাই মাঝে মাঝেই আমি বলে থাকি ‘আপনি হাড়িয়া খাইতে পারেন কিন্তু হাড়িয়া যেন আপনাকে খেয়ে না ফেলে’।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুন, ২০১৬ রাত ১১:২০
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×