somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঘুরে আসি দার্জিলিং

২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :





দার্জিলিং পশ্চিমবঙ্গের সর্ব উত্তরের একটি জেলা শহর।এটি জেলা হেড কোয়াটার । এটি একটি প্রাচীন শহর। মূলত বৃটিশ আমলে এর বিকাশ ঘটে। এখানে বৃটিশ কায়দার বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে।যা সমগ্র ভারতের জনগনকে আকর্ষন করে। স্কুলের সময়ে দেখা যায় পাহাড়ের ঢাল বেয়ে পিঁপড়ের সারির মতো ছেলেমেয়েরা স্কুলে যাচ্ছে।তা ছাড়া স্বাস্থ্যকর স্থান হিসাবেও এর খ্যাতি আছে। আগেকার বাংলা সিনেমা গুলোতে এর প্রয়োগ দেখা যায়। চলুন এবারে ঘুরে আসি পাহাড়ের রানী দার্জিলিং হতে।

প্রথমেই এন্ট্রি এবং এক্সিট বর্ডার চ্যাংড়াবান্ধা দেখিয়ে ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে নিন ঢাকাস্থ ভারতীয় দূতাবাস থেকে।
ট্রাভেল ট্যাক্স ঢাকার সোনালী বাংকের হেড অফিসে দিতে পারেন আবার বর্ডারেও দিতে পারেন। সেক্ষেত্র পার পাসপোর্টে ১০/২০ টাকা বেশী দিতে হবে।
ঢাকা পুরাতন গাবতলী থেকে শুভ বসুন্ধরা, মানিক এন্টার প্রাইজ, এস আর পরিবহন, রোজিনা পরিবহন, শাহ আলী পরিবহন, হানিফ পরিবহন সহ আরো বাস যায় বর্ডার পর্যন্ত।ভাড়া পড়বে ৬০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে।
এ ছাড়া কল্যাণপুর হতে শ্যামলী বি আর টিসি এসি বাস ছেড়ে যায় বর্ডার পর্যন্ত। আবার বর্ডারের ওপার হতে ওদের গাড়ী নিয়ে যায় শিলিগুড়ী সেন্ট্রাল প্লাজা পর্যন্ত। ভাড়া পড়বে ১৫০০ টাকা। সব গাড়িই রাত ৯টার মধ্যে ঢাকা ছেড়ে যায়।

রাত ১টার দিকে বাস গুলো সিরাজ গজ্ঞে বিভিন্ন ভালো হোটেলে যাত্রা বিরতী দেয়। ২০মিনিট থেকে ৩০ মিনিট সময় পাবেন। বাড়তি আকর্ষণ যমুনা ব্রীজের (বঙ্গ বন্ধু সেতু) রাতের সৌন্দর্য।তিস্তা নদীর উপর নতুনব্রীজ।(আবশ্য এই সময়টাতে সকলে থাকে গভীর ঘুমে মগ্ন।)

ভোর বেলা বাংলাদেশের শেষ প্রান্ত বুড়িমারী বর্ডারে এসে পৌঁছাবনে। বুড়িমাড়ী হলো লালমনির হাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার বাংলাদেশের শেষ প্রান্ত্।
বাস থেকে নেমে প্রত্যেক পরিবহনের অস্থায়ী বিশ্রামাগার আছে। সেখানে ফ্রেশ হবেন। স্থানীয় বুড়ীর হোটেলে সকালের নাশতা সেরে নেবেন। সম্ভাব্য ফেরার তারিখ দিয়ে ফিরতী টিকেট বুকিংটাও সেরে ফেলবেন।
সকাল ৯টায় সীমান্তের কার্যক্রম শুরু হয়। তাই এর কিছু আগে ভ্যানে করে চলে যাবেন বাংলাদেশ কাষ্টমসে। পর্ব শেষ হলে জিরো পয়েন্ট দিয়ে হেটে ভারতীয় সীমান্তে(চ্যাংড়াবান্ধা) প্রবেশ করবেন। ইমিগ্রেশন কাস্টমস সেরে মুদ্রা বিনিময় করে রওরা হবেন।শ্যামলীতে গেলে ওদের গাড়ী থাকবে। উঠে বসবেন। আর অন্য পরিবহনে গেলে শেয়ারে অথবা রিজার্ভ করে মারুতী নিয়ে যাবেন। আনুমানিক বাংলাদেম সময় বেলা ১২টা বাজবে। রওনা হবার সময় ঘড়ির সময় আধ ঘন্টা পিছিয়ে নেবেন।এই অংশের নাম চ্যাংড়া বান্ধা। এটি হলো কুচবিহারের অন্তর্গত।

এবার কুচবিহার, জলপাইগুড়ি পার হয়ে শিলিগুড়ী(দার্জিলিং এর একটি মহকুমা ) এসে পৌঁছবেন। শেয়ার গাড়ী বা রিজার্ভ গাড়ীতে এলে হোটেল রাজ দরবারের কাছে নামবেন। ওখানে ঝুপরি হোটেলে ভাত খেয়ে নিতে পারেন। ভাড়া জীপ অথবা রিজার্ভ গাড়ীতে রওনা হবেন দার্জিলিং। প্রথম বার গেলে রিজার্ভ গাড়ীতে যাওয়া ভালো।
আর যারা শ্যামলীতে যাবেন তাদের গন্তব্য শেষ হবে সেন্ট্রাল প্লাজাতে। নেমে ফেরার টিকিট বুকিংটা দিয়ে দিবেন।রাস্তার উণ্টা দিকের ঢাকা হোটেল থেকে দুপুরের খাবার সেরে নেবন।পরে রিজার্ভ গাড়ীতে যাত্রা করবেন।সংগী হিসেবে ছোট পরিবার ২টি হলে ভালো হয় অথবা ৪ জন সিঙগেল বন্ধু।
মিনিট পাঁচেকের মধ্যে শিলিগুড়ী শহর থেকে তেনজিং নোরগে স্ট্যা চু দাঁড়িয়ে দার্জিলিং মোড়ে আপনাকে দার্জিলিং এর পথ নির্দেশ করবে।। শুকনা অতিক্রম করতেই কখন আস্তে আস্তে জীপ পাহাড়ে উঠতে থাকবে ঠিক পাবেন না। হঠাত তাকিয়ে দেখবেন নীচে অনেক নীচে মাটি আর আপনি এক পাহাড় থেকে আর এক পাহাড়ে ছুটে চলেছেন।

যেতে যেতে দেখবেন পথের বাঁক কেমন ভয় লাগবে। ঝরনা আর মেঘের ভেলা। মাঝে মাঝে জীপের মদ্যে মেঘ ঢুকে আপনাকে ভিজিয়ে দিয়ে যাবে।
পথে যেতে যেতে কোন এক সময় দেখবেন ভারতের হেরিটেজ রেলওয়ে টয় ট্রেন আসছে অথবা যাচ্ছে। আরাধনা ছবিতে শর্মিলা ঠাকুর আর রাজেশ খান্না যে ভাবে জীপ আর টয় ট্রেন অতিক্রম করেছিল ঠিক সেভাবে আপনাকে অভিবাদন জানিয়ে ট্রেন ছুটে চলেছে।রাস্তার ধারে নিরাপত্তা রেলিং এ বসে হনুমান আর বানর আপনাকে স্বাগত জানাবে।
পাহাড়েড় আঁকা বাঁকা পথ বেয়ে জীপ উপরে উঠার মনোরম দৃশ্যে মন হারিয়ে যায়। এরই মাঝে মাঝে উকি দেয় কাঞ্চনঝঙ্ঘার চূড়া।আর দুচো্খ ভরে দেখা যাবে বিস্তীর্ন চা বাগান। কখনও মেয়েরা দল বেঁধে তুলছে দুটি পাতা একটি কুড়ি। আর রাত হয়ে গেলে দেখবেনর পাহাড়ের গায়ে অসংখ্য প্রদীপ জ্বলছে।(শহরের বিস্তার)
এরই মাঝে দার্জিলিং পৌঁছে যাবেন।ড্রাইভারকে বলবেন সবচেয়ে উঁচুতে হোটেলে নিয়ে যেতে।
যদি হোটেলে খাবার ব্যাবম্থা না থাকে তাড়াতাড়ি রাতের খাবারটা বাইরে থেকে খেয়ে আসবেন। হোটেলে ব্যাবস্থা থাকলেও প্রথমেই অর্ডার দিয়ে দেবেন। সন্ধ্যার পরে খাবার পাওয়া যায় না। হোটেলে ভুলেও মাছ খাবনে না। সবচেয়ে ভালো ডিম খাওয়া।

ফ্রেশ হয়ে সন্ধ্যার চা খেতে খেতে দেখবেন মেঘে চারিদিক ঢেকে গেল। শুধু মাত্র হোটেলটা জেগে আছ্ । নাশতায় মোমো খেতে ভুলবেন না্। একে একে শীতের পোষাকগুলো বের করে ফেলবেন।সাথে টয়লেট পেপার রাখবেন কারন দার্জিলিং এ জলের অভাব। মনে রাখেবেন অক্টোবর হতে ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত ট্যুরিষ্ট সীজন। এই সময় হোটেল ভাড়া খাবার সব কিছুর দাম বেশী। পাহাড়ে বর্ষা আসে তাড়াতাড়ি। আর এই সময়ে পাহাড়ে প্রায় ধ্বস নেমে চলাচলের বিঘ্ন ঘটায়।তবে সব সীজজনে পাহাড়ের ভিন্ন রূপ আছে।
হোটেল কর্তৃপক্ষকে বলে রাখবেন আপনারা টাইগার হিল দেখবেন। ভোর ৩টায় ড্রাইভার এসে ডেকে নিয়ে যাবে। কপাল ভালো হলে সুর্যোদয় দেখবেন।ঈশ্বরের এক অপরূপ সৃষ্টি। তাকে কৃতজ্ঞতা জানাবেন।
এর পর যতদূর সম্ভব চিড়িয়াখানা, রক গার্ডেন, বাতাসিয়া লুপ, হিমালয়ান মাউন্টেন ইনস্টিটিউট, আরও কিছু দেখবেন। ঐ দিন হয়তো সব সম্ভব হবে না। পরের দিনও দেখবেন। বিকালে শপিং করবেন। শীতের পোষাক অনেক সস্তা। আর পাবেন অরিজিনাল নেপালের স্টোন। ডিসেম্বরের ২৪-২৬ তারিখের দিকে গেলে স্নো ফলও দেখতে পারেন।
ফেরার দিন অপসন ২ টা। একটা ওখান থেকে সুন্দরী মিরিখ দেখতে চলে যেতে পারেন। তবে ড্রাইভারকে আগেই বলে দেবেন নেপালের পশুপতি চেকপোস্টে নিয়ে যেতে।ফেরার পথে রোহিনী সোহিনী হয়ে শিলিগুড়ী ফিরে হোটেল এয়ার ভিউ তে থাকুন।( এ ছাড়াও অনেক হোটেল আছে)
২য় অপসন সরাসরি শিলিগযড়ী চলে আসতে পারেন। পথে মাখাই বাড়ী চা বাগান থেকে চা কিনে নিয়ে আসুন। শিরিগুড়ী তেকেও মিরিখ যেতে পারেন।

পরদিন সকালে বিধান মার্কেটে একবার ঢু মেরে আসুন। আর একবার এসে কালিংমপম, সেভক, কালিঝরা দুধিয়া ঘোরা যাবে।

বেলা ১টার মধ্যে চ্যাংড়াবান্ধার দিকে রওনা হবেন। কারণ ফেরার বাস গুলো বুড়িমাড়ী থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে।
তাছাড়া বর্ডারের আনুষ্ঠানিকতা তো আছেই।ফেরার পথে বগুড়ার দই নিয়ে ফিরে আসুন। ভোর বেলাতে চোখ মেলে দেখুন আপনি ঢাকাতে।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:৫০
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×