”আজকে বুবুর গায়ে হলুদ
কালকে বুবুর বিয়ে,
বুবু যাবে শ্বশুর বাড়ী
ঘোমটা মাথায় দিয়ে।”
ছোট বেলায় মুখে মুখে ছড়া শেখা, আর এই ছড়ার মধ্যে দিয়ে একটি সম্পর্ককে চেনা।
সেটি হলো খুব আদরের একটি সম্পর্ক বুবু। বড় বোন, আপা, আপু, বড়দি, দিদি। অনেকে আবদার করে নানী দাদীকেও বুবু ডেকে থাকে। এটিকে আরো আদর করলে দাড়াঁয় বু।
ঢাকায় আসার পরে নতুন একটা শব্দ শিখলাম সেটি হরো বুয়া।
প্রথম প্রথম ভাবতাম বুয়া মানে হয়তো বুবু।
পরে দেখি বুয়ার মা ও বুয়া, বুয়ার মেয়েও বুয়া। আমি আজও বুঝতে পারলাম না বুয়া মানে কি? এটির সংগে কোন সম্পর্ক জড়িয়ে আছে?
আমাদের সময়ে বাড়ীতে যারা কাজ করতো তাদের ঝি বলতো। তাই বলে ঝি বলে ডাকতো না। ঝি গিরি একটা পেশার নাম, কোন সম্পর্কের নাম নয়।
মা জেঠিরা তাদেরকে অমুকের মা বলে ডাকলেও আমাদের সংগে অর্থাত ছেলেমেয়েদের সাথে একটা সম্পর্ক তৈরী হতো।
যেমন নানী, দাদী, খালা, মাসী, দিদি ইত্যাদি। এমনও দেখা গেছে , মা বাবার চেয়েও এদের সাথে সম্পর্ক বেশী টানতো। এরাও দীর্ঘ দিন এমনকি অনেকে এক বাড়ীতে জীবন কাটিয়ে দিত।
আমরাও এই শিক্ষা পেয়েছি, বাসায় কেউ এলে তার সংগে সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে।
আমি দেখেছি আমার মাকে ভিক্ষুক কে বাবা বলতে। আমি বহুদিন জানতাম এ ভিক্ষুক আমার দাদু।
আমার মেয়েরাও বাসায় যে মেয়েটি তার মাকে গৃহ কর্মে সাহায্য করে তাকে আপন ভেবে ওরা ডাকে দিদি. আন্টি, পিশি, নানী। ওদের সংগে তাদের গোপন ভালোবাসার টানও আছে। যেমন আমাকে লুকিয়ে ডিম ভেজে দেওয়া, বেশী করে ঝাল দিয়ে নুডুলস রেঁধে দেওয়া্।
বুয়ার সাথে কি এগুলো হয়?বুয়া মানেই তো জানি না।বুজিও শুনেছি কিন্তু বুয়া শুনিনি।
মাও ডাকে বুয়া, বাবাও ডাকে বুয়া, ছেলেমেয়েও ডাকে বুয়া।
আমার মনে হয় এটা রীতিমতো একটা অসভ্যতা। যা থেকে প্রকাশিত হবে ভবিষ্যত নির্মমতা।হিংসা আর বিদ্বেষ। হারিয়ে যাবে এক সময় মায়া, মমতা শব্দ গুলো। আর ”ক্ষুধার্তকে অন্ন দাও” ”শীতার্তকে বস্ত্র দাও” আর দীনে দয়া কর” মধুর বাক্যগগুলো।