somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশের একমাত্র উপজেলা - যেখানে চা বাগান এবং সমুদ্র সৈকত একসাথে দেখা যায়

১৩ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ৮:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বাংলাদেশে এমন এক উপজেলা আছে, যেখানে পাহাড়ের সবুজ আর সমুদ্রের নীল একসাথে মিশে গেছে। দেশের একমাত্র এই স্থানটি হলো চট্টগ্রামের বাঁশখালী — যেখানে আছে চায়ের সুবাসিত বাগান আর পাশাপাশি বিশাল সমুদ্র সৈকত।

চট্টগ্রামের নতুন ব্রিজ থেকে বাসে উঠলাম চানপুরের উদ্দেশ্যে। ভাড়া ১০০ থেকে ১৩০ টাকা। বাসে ওঠার আগেই ফোনে কথা হয়েছে চা বাগানের ফ্যাক্টরি ম্যানেজার দীপন দাদার সঙ্গে। তিনি হুঁশিয়ার করেছিলেন— “রাস্তা কিন্তু ভীষণ খারাপ, মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকবেন।”

২০০ টাকা দিয়ে সিএনজি রিজার্ভ করলাম চা বাগান পর্যন্ত। কিছুদূর গিয়েই বুঝলাম, দীপন দাদা ভুল বলেননি। জায়গায় জায়গায় রাস্তার গর্ত যেন ছোট ছোট পুকুর! সিএনজির মধ্যে আমরা উঠানামা করছি ঢেউয়ের মতো। নামটা যে “চানপুর পুকুরিয়া রোড”, তা যথার্থই বলা যায়।

অবশেষে পৌঁছে গেলাম চানপুর বেলগাঁও চা বাগানে। চা বাগানের ঢালু পথ, সবুজ পাতার সারি, দূরে ফ্যাক্টরির ধোঁয়া— এক অন্যরকম অনুভূতি।

সেখানেই দেখা হলো শিপন নামের এক ছোট্ট ছেলের সঙ্গে। বয়স ১২–১৩ হবে। সে-ই আমাদের গাইড হয়ে গেল। হাসিমুখে বলল, “ভাই, এখানে মাঝে মাঝে হাতি আসে।”

এই চা বাগানে বন্য হাতির আনাগোনা নাকি নিয়মিত। শুনে অবাক হলাম, কিন্তু মনে মনে হাতি দেখার একটা শিশুসুলভ প্রত্যাশাও জন্ম নিল।

হাঁটতে হাঁটতে শিপন দেখালো টিলার চূড়া, যেখানে থেকে পুরো বাগান দেখা যায়। সে জানালো, তার বাবা-মা দুজনেই এই বাগানে কাজ করে।
চা গাছের ফুল দেখে বলল, “ভাই, এই ফুল খাওয়া যায়।” অবাক হয়ে জানতে পারলাম, ফুলের ভেতরে আছে সামান্য এক ফোঁটা মিষ্টি রস। কৌতূহল সামলাতে পারলাম না— চা ফুলের স্বাদ সত্যিই অদ্ভুত

সম্পূর্ণ ভিডিও দেখুন এখানেঃ


শিপন তার গরুগুলো পাহাড়ের ঢালে রেখে গিয়েছিল ঘাস খাওয়ার জন্য। কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে বলে, তার দুইটা গরু হারিয়ে গেছে!
ছেলেটা টেনশনে, আর আমরা এখন চা বাগানে গরু খুঁজছি।

ঘুরে ঘুরে অবশেষে একটি গরু পাওয়া গেল, কিন্তু আরেকটি এখনো নিখোঁজ। এই সময় চোখে পড়ল চা বাগানের টিনের ছাউনি— দূর থেকে যেন বিশ্রামাগারের মতো লাগে, সবুজের ভেতরে এক টুকরো ধূসর ছোঁয়া।

চা বাগানের ভেতরে এমন এক জায়গা পেলাম যেখানে একটাও পাতা নেই— সম্পূর্ণ লিফলেস! সবুজে ঘেরা এলাকায় এমন দৃশ্য সত্যিই অদ্ভুত।

এদিকে শিপনের গরু খোঁজার যাত্রা চলছেই। যতই সময় যাচ্ছে, ওর মুখে চিন্তার ছাপ। কিন্তু অবশেষে দূর থেকে একটা ডাক— “ভাই, পেয়ে গেছি!”
আমরা হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। শিপনও যেন নতুন করে প্রাণ পেল।

চা বাগানের শেষে আছে ফ্যাক্টরি, যেখানে পাতা শুকানো হয়, মেশানো হয়, আর শেষে তৈরি হয় সেই চা, যা আমাদের কাপ ভরে দেয় সকালে। এই পুরো প্রক্রিয়াটা চোখে দেখা এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা।

চা বাগান ঘুরে এবার রওনা দিলাম বাঁশখালী সমুদ্র সৈকতের পথে। জনপ্রতি ২০ টাকা ভাড়ায় গুনাগরি পৌঁছে আবার সিএনজি নিলাম শামসুল মামার সঙ্গে — যিনি আমাদের ড্রাইভার, গাইড আর গল্পকার।

বাঁশখালী সৈকতের আছে তিনটি পয়েন্ট— বাহারছড়া, খানখানাবাদ, আর কদম রসুল।
প্রথমেই গেলাম বাহারছড়া পয়েন্টে। এক পাশে ঝাউবন, অন্য পাশে সমুদ্র। বসে আছি ঘাসের উপর, আর দূরে গরু-মহিষ ঘাস খাচ্ছে। বাতাসে নোনা গন্ধ আর ঢেউয়ের মৃদু শব্দ।

সূর্য ধীরে ধীরে সমুদ্রের বুকে হারিয়ে যাচ্ছে। সেই গোধূলি আলোয় বাহারছড়া যেন আরও রঙিন।

পরের গন্তব্য খানখানাবাদ পয়েন্ট।
একপাশে সমুদ্র, অন্যপাশে ঝাউবন— মাঝখান দিয়ে সিএনজি চলছে। মনে হচ্ছিল, আমি যেন এক নীল সবুজ পৃথিবীর মাঝখান দিয়ে যাচ্ছি।

অবশেষে কদম রাসুল পয়েন্টে পৌঁছে দেখি, রাত নেমে গেছে। সারা দিনের ক্লান্তি ধুয়ে যাচ্ছে সমুদ্রের নোনা বাতাসে।

আজকের সফরটা আমার কাছে ছিল আলাদা।
চা বাগান আমাকে ফিরিয়ে নিয়েছে অতীতে — শান্ত, সুবাসিত আর নিরব জীবনের দিকে।
আর সমুদ্র আমাকে ঠেলে দিয়েছে ভবিষ্যতের কল্পনায় — যেখানে সীমাহীনতা আর স্বাধীনতা মিশে আছে।

শেষে দাঁড়িয়ে বুঝলাম, অতীত আর ভবিষ্যতের মাঝখানে বর্তমানটাই সবচেয়ে সুন্দর।

সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ৮:১৫
৫টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×