somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তেরে য্যায়সে লাখো আয়ে...

০২ রা মে, ২০০৮ রাত ১:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ক্রাইসিস বা সংকট মোকাবেলায় প্রত্যেকের হয়তো নিজস্ব কিছু পদ্ধতি থাকে, কেউ অস্থির হয়ে, কেউ ঠান্ডা মাথায় ধীরস্থির ভাবে চিন্তা করে, কেউবা পরিস্থিতি থেকে নিজেকে সম্পূর্ণ গুটিয়ে নিয়ে, কেউবা হা-হুতাশ অথবা আহাজারি করে নিজ নিজ স্টাইলে দুঃসসময় বা বিপদ মোকাবেলা করে।



যে বিপদ মোকাবেলার কথা লিখতে বসেছি তা ঠিক সেই অর্থে বিপদ বা দুঃসময় না হলেও খারাপ সময় বা সংকট অবশ্যই।

প্রচন্ড জ্বর বা ব্যাথা আমায় সেভাবে কাবু করতে পারেনা কারন নিজের ক্ষেত্রে এসব কষ্টের চিকিৎসা "অগ্রাহ্য" শব্দটি দিয়ে। যেহেতু কোন ঔষধ দিয়ে উপশমের উপায় নেই তাই সৃষ্টিকর্তার নাম জপে ব্যাথাকে "অগ্রাহ্য" করাই মহৌষধ। সমস্যা হয় যখন শারীরিক কষ্টের সাথে মন খারাপ নামক ঘাতকের সমন্বয় ঘটে। সব কিছু এলোমেলো হয়ে যায়! অসহায়ত্ব আর বিষন্নতা গ্রাস করে!


সম্প্রতি এমন সংকটে যখন প্রায় নিস্তেজ, সমুদ্রতীরের হিম শীতল বাতাসে চুপচাপ বসে থাকার তীব্র ইচ্ছে জাগে। সেসময় সমুদ্রসৈকতের তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস, এমন ইচ্ছেপূরনে পরিবারের কারো সন্মতি বা উৎসাহ না মেলাটাই স্বাভাবিক, বিশেষ করে ১০৩ ডিগ্রী জ্বর নিয়ে!


কি করা যায়! সংকটের সমাধান প্রয়োজন!
সমুদ্রে যেতে চাই! খুব খুব যেতে চাই!
শীতল জলরাশির আটলান্টিক অথবা প্রশান্ত যদি সম্ভব না হয় তাহলে আরেকটি বিকল্প খুঁজে পাই! ছুটে যাই প্রকৃতির রঙের মহা সমুদ্রে!!!


হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ র্বণীল প্রদীপ জ্বালিয়ে প্রকৃতি যে রঙের সমুদ্র সাজিয়ে বসেছে, ছুটে যাই সেখানে!
রঙের এই বর্ণাঢ্য মেলায় পৌঁছে প্রতিটি পর্যটকের হয়তো প্রথমেই মনে হয় কোন রূপকথার রাজ্যে চলে এসেছি! আর আমার মতো বুভূক্ষ মন নিয়ে যাঁরা গেছেন তাঁরা হয়তো নিঃশ্বাস নেবার সময়ও অতি সাবধান হন, স্বপ্ন ভঙ্গ হতে পারে ভেবে!


হাজার রঙের রাশির দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকতে হয়। চোখ ঝলসে যাওয়া সৌন্দর্য বললেও ভুল হবেনা। বেড়াতে আসা প্রতিটি মানুষের চোখে মুখে মুগ্ধতা, ভালোলাগা! অপরূপ সাজের নির্মল নিষ্পাপ টিউলিপের রাশি তাদের ঔজ্জল্য আর কিরণ ছড়িয়ে চারপাশের পরিবেশকে যেন উদার করে তুলেছে! সম্পূর্ণঅজানা অচেনারাও আলাপ পরিচয়ে মেতে উঠে যেন কতো দিনের চেনা! একসময় অবাক হয়ে লক্ষ্য করি উপস্থিত অধিকাংশ পর্যটকের সাথেই বন্ধুর মতো আলাপ হয়েছে। কোন বাগানটি বেশি সুন্দর, কোথায় কিভাবে যেতে হয়, কোন পথে গেলে সুইজারল্যান্ডের অপার্থিব রূপের কিছু ছটা নজরে কাড়ে, সবাই অতি পরিচিতের মতো এসব আলাপ করে গেছেন!


টিউলিপের অপরূপ সৌন্দর্য বরাবর মনে করিয়ে দেয় "দেখা এক খোয়াব তো ইয়ে সিলসিলে হুয়ে, দূর তাক নিগাহো মে গুল খিলে হুয়ে..."। সত্যিই তাই, যতোবার দেখি, প্রতিবার স্বপ্নপূরনের আনন্দ হয়, যতোদূর দৃষ্টি যায় শুধুই ফুলের শোভা যেন! বিমোহিত হয়ে যখন মন্ত্রমুগ্ধের মতো তাকিয়ে আছি সেই সৌন্দর্যের দিকে, হঠাৎ একরাশ সবুজের দিকে নজর যায়! ভালো করে লক্ষ্য করে দেখি, ফুলগুলো সব কেটে নিয়ে গেছে, শুধু সবুজ গাছ রয়ে গেছে! কেটে নেয়া ফুলের ডাঁটার ক্ষতস্থানটি যেন বিষন্ন ভঙ্গীতে তাকিয়ে আছে! টিউলিপ সিজনের প্রায় শেষ সময়, শীঘ্রই সব ফুল কাটা হয়ে যাবে, এই রঙের সমুদ্রের মৃত্যু সন্নিকট!!!


মন খারাপ হলো। চোখ ফিরিয়ে নিলাম রঙের মেলার দিকে, যেখানে বিভিন্ন বর্ণের অগুনিত তারা হয়ে ফুটে আছে লক্ষ লক্ষ টিউলিপ। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের সমুদ্রে বিভিন্ন বর্ণের টিউলিপের উথালপাথাল ঢেউ! ... নিজের কথা, নিজের অস্তিত্বের কথা মনে হলো! মানুষের সাথে কি অদ্ভুত মিল! অপরূপা সেই ফুলগুলোর জন্য, ফুলের মতো মানুষের জীবনের জন্যই যেন বলা...

"তেরে য্যাসে লাখো আয়ে
লাখো ইস মাটি নে খায়ে
রাহা না নাম নিশান রে বান্দে
মাত কার তু আভিমান...."


কতো মিথ্যা মানব জীবনের অহমিকা!
কতো ভুল আর অর্থহীন ক্ষণস্থায়ী পার্থিব অর্জনের দম্ভ আর দাপট!!




সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে এপ্রিল, ২০১০ ভোর ৪:২২
৩৭টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পেচ্ছাপ করি আপনাদের মূর্খ চেতনায়

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩৮

আপনারা হাদি হতে চেয়েছিলেন, অথচ হয়ে গেলেন নিরীহ হিন্দু গার্মেন্টস কর্মীর হত্যাকারী।
আপনারা আবাবিল হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাড়াতে চেয়েছিলেন, অথচ রাক্ষস হয়ে বিএনপি নেতার ফুটফুটে মেয়েটাকে পুড়িয়ে মারলেন!
আপনারা ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×