মানুষ প্রাণ দিয়ে যা চায় তাই নাকি পাওয়া যায়! অন্যভাবে বলা যায়, মানুষ খুব গভীরভাবে কাউকে চাইলে, তাঁকে পাওয়া যায়; মনে প্রাণে কিছু ভালোবাসলে তা মিলে যায়! অনেক না পাবার হা-হুতাশের মাঝে এমন আশার বানীও শুনেছি বহুবার!!
কাকতালীয় বলে একটি ব্যপার আছে তবে তা দু'চারবার ঘটতে পারে; বছরের পর বছর যখন ঘটতে থাকে তখন তাকে হয়তো কাকতালীয় বলা যায়না।
আমি বৃষ্টি ভালোবাসি। এই ভালোলাগার শুরু কবে মনে নেই! অনেক বছর আগে এক চন্দ্রালোকিত সন্ধ্যায় সমুদ্রে হাঁটু জলে দাঁড়িয়ে থাকার সময়; না দীঘর্দিন আগে খুব মন খারাপের এক দুপুরে যখন আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে মুষল ধারায় বৃষ্টি শুরু তখন! আবার হয়তো, আমার জীবনের সবচেয়ে ভয়ংকর দিনটিতে আমি যখন অসাড়, বোধহীন হয়ে নির্লিপ্তভাবে ঘুরছিলাম তখন চারদিক কাঁপিয়ে বৃষ্টি এসে জানিয়ে দেয়, "মেয়ে তুমি কাঁদো, আজ তোমার তীব্র কষ্টের দিন"..সেসময়।
এই ভালোলাগা, ভালোবাসার সম্পর্ক খুব অজান্তে শুরু হলেও, এখন অনেক কিছুই গোপন নেই। যেমন, কোথাও বেড়াতে গেলে আমি কোন দিন এয়ারপোর্টে লাগেজ রিজার্ভেশনের সময় বলিনি, "আমার সাথে এক মুঠো মেঘ আর এক পশলা বৃষ্টি যাবে"! অথচ আমি জানি, বৃষ্টি আমার সাথে যাচ্ছে।
আমার এই জীবনে সৃষ্টি কর্তা বেশ কিছু দেশ, শহর, দর্শনীয় স্থানে বেড়ানোর সুযোগ দিয়েছেন। খুব আশ্চর্যজনক ভাবে লক্ষ্য করি, আজ অবধি বছরের এমন কোথাও যাইনি যেখানে আমি যাবার পর বৃষ্টি নামেনি!!!! বছরের যে কোন সময়, যেকোন স্থানে। দেশে আত্মীয় সজন, বন্ধু বান্ধবরা মজা করে বলতেন, "অনাবৃষ্টির সময় তোমাকে সেখানে নিয়ে যাওয়া উচিত!" বৃষ্টি কখনো কোন দেশে আমার সঙ্গ ছাড়েনি। অনেক বছর আগে খুব শীতে নেদারল্যান্ডে গিয়েছিলাম, আমাদের পরিচিত পরিবারটি তখন ১২ বছর ধরে সেখানে বসবাস করছেন। তাঁরা জানালেন বছরের এসময় এখানে বৃষ্টি, গত বারো বছরে দেখেননি!
আমি যেখানে যাবো, বৃষ্টি আমার সঙ্গী- এটা এখন অবধারিত। তবে, মে মাসের এই কড়া রৌদ্রে উত্তরগোলার্ধের পৃথিবী যখন উত্তপ্ত; নেভাদার শুষ্ক মরুঅন্চলের তাপমাত্রা ১০৩ ডিগ্রী ফারেনহাইট, এমন সময় যেতে হলো সেখানে! আমি পৌছে তাপমাত্রা পেলাম ৬৮ ডিগ্রী ফারেনহাইট, আর কয়েক ফোঁটা বৃষ্টি এসে যেন জানিয়ে দিলো, "আমি সাথে আছি" :-)। সেই ফোঁটা ছিলো, তাৎক্ষনিক হাল্কা পরশের মতো। আমার জানা ছিলোনা, আমার মা মরুভূমিতে গিয়ে রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষা করছেন দেখার জন্য, "তাঁর শ্রাবন কন্যার আগমনে কখন বৃষ্টি নামে"!! পর দিন শুরু হলো বৃষ্টি, প্রথমে ঝিরিঝিরি, তার পর বর্ষন। আমার মা'র মুখে তৃপ্তির হাসি :-)। সেখানে উপস্থিত জনেরা অবাক হলেন, বছরের এসময় বৃষ্টি খুব অস্বাভাবিক!
আমার পরিচিত জনদের কাছে শুনে মজা করে বললেন, "যদি জানতে পারে, নেভাদা সরকার তোমাকে বিশেষ আমন্ত্রন জানিয়ে ঘন ঘন নিয়ে আসবে মরুভূমিতে বৃষ্টি নামাতে।"
মাঝে মাঝে মনে হয়, জীবন নিয়ে আমার কোন অভিযোগ থাকা হয়তো অনুচিত! অনেক পাওয়া না পাওয়ার ভীড়ে, সর্বত্র সার্বক্ষনিক ভাবে বৃষ্টির সঙ্গ তো এক পরম পাওয়া! এভাবে ভালোলাগা বা পছন্দের সঙ্গতো সকলের ভাগ্যে ঘটেনা।
মানুষ তাঁর মৃত্যু সম্পর্কে জানেনা। হয়তো চল্লিশকে ছোঁয়া সম্ভব হবেনা, আবার হয়তো নব্বুইয়ে কেটে যাবে দূরন্ত সময়! আমার মৃত্যু সম্পর্কে কিছুই জানিনা। তবে মনে হয়, সেদিন খুব বৃষ্টি নামবে। আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে বৃষ্টি এসে সঙ্গী হবে আমার অন্য ভুবনে যাত্রার।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:১৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




