somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

'শিরক ও মূর্তিপূজা হারাম'- সত্য কথা

১৭ ই অক্টোবর, ২০০৮ রাত ১:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কথা সত্য, মূর্তি পূজা শিরক, যা ইসলাম ধর্মের ভাবধারার চূড়ান্ত পরিপন্থী।



মুসলিমদের মূর্তিপূজায় উৎসাহিত করা হচ্ছে এমন কিছু কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায়না।



তবে, প্রশ্ন হলো.. লালনের মূর্তি কি পূজার উদ্দেশ্যে নির্মিত হচ্ছিলো?
দেশে অগুনিত ব্যক্তির মূর্তি থাকতে ঠিক এই মূর্তিটি নিয়ে এমন গোপন পরিকল্পনার কথা মাত্র কিছু ভন্ডহুজুর জানলেন কিভাবে?


ভন্ড হুজুর বলছি তার কারন ব্যাখ্যা করছি।

মৌলবাদীরা তবু ধর্ম সম্পর্কে কিছু জানেন, কেউ কেউ যখন ধর্মের কিছু অংশ নিয়ে বাড়াবাড়ির পর্যায়ে চলে যায় তখন তাকে আমরা মৌলবাদী বা ফ্যানাটিক বলি।

দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের দেশে কিছুদিন পর পর এই "ইসলামের জাত গেলো" বোল তুলে একদল ভন্ডের আস্ফালন শুরু হয় তারা আদৌ ইসলামের প্রতি শ্রদ্ধাশীল বলে মনে হয়না।

প্রথমত, বাংলাদেশে এটাই তো প্রথম ভাস্কর্য নয়।
দ্বিতীয়ত, মূর্তি, ভাস্কর্য বা ছবি নিয়ে যদি পূজো বা বাড়াবাড়ির পর্যায়ে কিছু হয়ে থাকে, তা কিন্তু শেখ মুজিব ও জিয়াউর রহমানের ছবি নিয়ে তাদের দলের অনুসারীরা দীর্ঘ দিন ধরে করে আসছেন। এসব নিয়ে এই ভন্ডদের কখনো টুঁ শব্দটি করতে দেখা যায়না। বরং এসব দলের চরনে ঠাঁই পাবার আপ্রাণ প্রচেষ্টাই এদের প্রধান সাধনা বলে মনে হয়। দুটি দলের সাথে কোননা কোন পর্যায়ে এদের অতি সখ্যতা এবং রেষারেষি হয়েছে, কখনো এপ্রসঙ্গে কিছু বলতে শুনিনি।


ইসলাম ধর্মে শুধু ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে বলা আছে? দরিদ্র মজলুম মানুষদের সাহায্য করার কথা বলা নেই? দরিদ্র প্রতিবেশীকে অভুক্ত রেখে নিজে আহার করা কি জায়েজ? এই যে যারা কিছুদিন পর পর ইসলামের ঝান্ডা তুলে দেশে অশান্তির তান্ডব সৃষ্টি করে, এদের অর্ধাংশ যদি সত্যিকারের মুসলিম হতো, তাহলে আমাদের দেশে অনেক সমস্যা কমে যেতো। এরা ক'জন নিজ প্রতিবেশী অভুক্ত আছেন কিনা সে বিষয়ে খোঁজ রাখে?


ইসলামে মূর্তিপূজা হারাম, আর সুদ কি হালাল? কিছুদিন পূর্বে সুদি মহাজনের নির্যাতনে একজন দরিদ্র রিক্সাচালক প্রাণ হারালেন, ইসলামের ঝান্ডাধারী ভাইদের তো একটি শব্দ করতে শোনা গেলোনা? ক্ষমতার লোভ করলে অবশ্য এসব মহাজনদের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহন না করাই ভালো, মহাজনদের কৃ্পাদৃষ্টি ক্ষমতার কাছাকাছি থাকতে সাহায্য করে। পথে ঘাটে অসহায় দরিদ্র মানুষদের নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়, এসব মৃত্যু কে "হায়াৎ মওত আল্লাহ্'র হাতে" বলে এড়িয়ে যাওয়া, আর নিজ দলের কেউ প্রতিপক্ষের আক্রমনে নিহত হলে কিছুদিন পর পর তার জের তুলে "মাতম" করা এই ভন্ডদের কাজ।


ঠিক আছে মেনে নিলাম, ঘুষ, চাঁদাবাজী, মাস্তানী এমনকি সুদ গ্রহন ও হত্যা সব কিছুর চেয়ে মূর্তিপূজা ও শিরক গুরুপাপ, মহাপাপ।
আমাদের দেশে বিভিন্ন স্থানে পীর ফকিরের মাজারের নামে শিরকের কুপ্রথা চালু আছে, এর বিরুদ্ধে এসব ভন্ডদের কোন দিন সোচ্চার হতে দেখা যায়না কেনো? কোন কোন জীবিত পীর তার মুরিদদের দিয়ে পায়ে চুমু দেয়ানো, তাকে সেজদা করানোর মতো ধৃষ্টতাপূর্ণ কাজ করে। এসব খবর গণমাধ্যমে তুলে ধরার পরও এসবের বিরুদ্ধে এই (?)মৌলবাদী দলগুলোকে কোন অবস্থান নিতে দেখা যায়না কেনো? "মাজার পূজা", "কবর পূজা" পূজা নয়?
দেশে রাষ্ট্রীয় ভাবে "ঈদে মিলাদুন্নবী:, "শবে বরাত" এর মতো কুপ্রথা ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সাথে পালন করা হয়, ইসলামের ঝান্ডাধারী এসব ভন্ডদের এ নিয়ে কোন বিকার নেই, ক্ষমতার কাছাকাছি থেকেও সংশোধনের চেষ্টা নেই।
কারনটি অবশ্য স্পষ্ট, যারা এই কুপ্রথাগুলো প্রচলন করে যাচ্ছে তারা এই আস্ফালনকারী দলগুলোর প্রধান ভোটার। তাই ইসলামকে পাশে সরিয়ে রেখে, ইসলামের মূল্যবোধকে অগ্রাহ্য করে কুপ্রথা লালনকারীদের তুষ্ট করাই এই ভন্ডদের প্রধান কাজ।


তারচেয়ে বরং, কোন কার্টুনিস্টের ভাবনাকে কল্পণা করে নিয়ে তার উপর হামলে পড়ে দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করা সহজ, একজন মুসলিমকে নাস্তিক বলে ঘোষনা দেবার ধৃষ্টতা করা সহজ! হজ্জ যাত্রীদের হাজার ভোগান্তির সমাধানের চেষ্টা না করে, লালনের মূর্তিকে ইস্যুকরে দেশে হৈচৈ শুরু করা সহজ ও কম ঝুঁকিপূর্ণ- অন্তত ভোটারদের ভোট হারাবার ভয় নেই।


জাতীয়তাবাদের চেতনা, মুক্তি যুদ্ধের চেতনা, ইসলাম ধর্মের চেতনা এসব শুধু আড্ডার টেবিলে চায়ের কাপে (এবং ব্লগে)ঝড় তোলা আলোচনা আর প্রতিপক্ষের উপর হামলে পড়ার শ্লোগান বিশেষ।
এসব চেতনার বিন্দুমাত্র এসব কর্মীরা ধারন করলে দেশে এমন অরাজকতা বিরাজ করতোনা। অগুনিত নারী প্রতিদিন লান্ছিত, ধর্ষিত হতোনা, অব্দুর রশিদের মতো হত দরিদ্রকে নৃশংস ভাবে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেবার ধৃষ্টতা কেউ দেখাতো না। দুঃখজনক হলো, হতভাগ্য আব্দুর রশিদের সাথে এমন অন্যায় করার পর এসব চেতনাধারীদের কাউকে তাঁর দুর্দশাগ্রস্থ পরিবারটির পাশে দেখা যায়নি। এমনকি, পূঁজিবাদীদের এই বিভৎসরূপ উন্মোচনের পর আমাদের সমাজতান্ত্রিক কমরেড ভাইদের কোন উচ্চবাচ্য করতে দেখা যায়নি, প্রতিবাদ দূরের কথা।


কারো কোন আদর্শ, চেতনা, মূল্যবোধ নেই.. শুধু একটিই লক্ষ্য- দেশের ক্ষমতা দখল।


লালনের ভাস্কর্য বিমান বন্দরের সামনে থাকবে কি সরিয়ে ফেলা হবে তা আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়। দৃষ্টি নন্দন হলে থাকবে, দৃষ্টি কটূ হলে সরে যাবে। তবে ইসলাম ধর্মের অজুহাতে আর সব ছেড়ে এই মূর্তির উপর এমন আক্রমণ স্বাভাবিক মনে হলোনা।

আজ হঠাৎ লালনের ভাস্কর্যের উপর এমন হামলার পিছনে কোন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে বলে নিশ্চিত। দেশে কিছু অস্থিরতা সৃষ্টি করে বোকা মানুষগুলোর দৃষ্টি অন্য দিকে সরিয়ে কি অপকর্ম এরা করতে যাচ্ছে, মহান সৃষ্টিকর্তা জানেন।।



সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা আগস্ট, ২০০৯ ভোর ৪:২৮
৮৪টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×