somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উৎসর্গ হেলাল হাফিজ.....!!!

০৭ ই অক্টোবর, ২০১০ রাত ১২:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মানুষের জীবনে কিছু একান্ত বিষয় আছে যা আর কারো সাথে শেয়ার করা দূরের কথা, তার নিজের জীবনে কি তাৎপর্য বহন করে বা কতোখানি গুরুত্বপূর্ণ সে নিজেও অনুধাবন করতে পারেনা।

আটপৌঢ়ে জীবনের অংশ হয়ে উঠা এমন কিছু ব্যাপার যা আসলে জীবনের পরম সম্পদ! এই সম্পদের অস্তিত্ব সম্পর্কে আমরা অনেকে উদাসীন, কেউ বা অবগত নই আবার কেউ স্বীকার করতে চাইনা। অবহেলায় এড়িয়ে যায়...

প্রাত্যহিক জীবনের একান্ত সঙ্গী হয়ে ওঠা এমন কিছু আমার জীবনেও আছে। পাঠ্য বইয়ের বাইরে অন্যান্য বই পড়া, গান শোনা। খুব সহজ ভাষায় বলা সাধারণ একটি কথা, যার অন্তর্নিহিত তাৎপর্য অনুধাবনে আমিও হয়তো খুব গুরুত্বপূর্ণ সময়ে অপরাগ ছিলাম।

আমার দৈনন্দিন জীবনে মিশে থাকা এমন একটি বই “যে জলে আগুন জ্বলে”।
নামের মাঝেই রহস্য, অন্যরকম মাধুর্য আর মাদকতা।
নামটা শুনলে গভীরবোধ সম্পন্ন কারো অস্তিত্ব অনুভূত হয়!

সাধারন বই পাঠ যতো আনন্দময় হোক, পড়াশুনার ব্যাপারটা আমার মতো অনেকের জন্যই ক্লান্তিকর হয়ে উঠে সময়ে সময়ে। সারাবছর পড়াশুনায় অবহেলা যারা করে, পরীক্ষার আগে তাদের আরো কঠিন পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে হয়.... প্রস্তুতি গ্রহনের পরীক্ষা।

প্রফেশনাল পরীক্ষা এগিয়ে এলে মোটা মোটা সব বইয়ের খুঁটিনাটগিুলোও খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতো.. একটি শব্দ, একট দাঁড়ি-কমা, সেমকিোলনও যে কোন কিছুর অর্থ ও গুরত্ব বদলে দিতে পারে, সেসময় তা বড় সুক্ষভাবে অনুভূত হয়... এই অনুভূতি, মনযোগ আর ব্যস্ততার সাথে বোনাস হিসেবে পাওয়া যেতো এক কালো মেঘ, যার নাম “স্ট্রেস”!!!

ভীষণ যন্ত্রণাদায়ক এই স্ট্রেস.... এর কাছ থেকে অব্যহতি পেতে একেক জনেক একেক প্রচেষ্টা.. কেউ বাইরে হাঁটতে যায়, কেউ টিভি দেখে, গান শুনে, কেউ ইয়োগা বা যোগব্যায়ামের চিরন্তন ফর্মূলা চেষ্টা করে দেখে আর কেউ বা ঘুমের দেশে স্বপ্ন রাজ্যে বিচরণ করতে যেয়ে পরীক্ষাসংক্রান্ত দুঃস্বপ্ন দেখে চমকে জেগে উঠে...

মেডিকেল কলেজের ভয়াবহ সব পড়াশুনায় চোখ মুখ ডুবিয়ে পড়াকালীন সেসময় আমার স্ট্রেস রিলিভার ছিলো প্রিয় কাব্যগ্রন্থ “যে জলে আগুন জ্বলে”।
খুব দুর্বোধ্য কোন চ্যাপ্টার, কোন দুর্বোথ্য কম্পোজিশন, প্যাথোফিজিওলজি, প্রসেডিউর আয়ত্ত্বে আনার পর সেলিব্রেশন হতো শেল্ফ থেকে আনমনে হাতে নেয়া বইটির পাতা উল্টে.. একেক কবিতা একেকটি ম্যাজিক!!!!
কবি হেলাল হাফিজ সেই ম্যাজিকের ম্যাজিশিয়ান! তাঁর শব্দের যাদু স্পর্শে নিমেষে উবে যেতো যতো ক্লান্তি। ঝরঝরে মন নিয়ে আবার ফিরে যেতাম পরবর্তী যুদ্ধে, অর্থাৎ আরো দুর্বোধ্য কোন পড়া মগজে গেঁথে নিতে।

“কবির জীবন খেয়ে জীবন ধারণ করে
কবিতা এমন এক পিতৃঘাতী শব্দের শরীর,
কবি তবু সযত্নে কবিতাকে লালন করেন,
যেমন যত্নে রাখে তীর
জেনে-শুনে সব জল ভয়াল নদীর।

সর্বভূক এ কবিতা কবির প্রভাত খায়
দুপুর সন্ধ্যা খায়, অবশেষে
নিশীথে তাকায় যেন বয়ঃসন্ধিকালের কিশোরী,
কবিকে মাতাল করে
শুরু হয় চারু তোলপাড়,
যেন এক নির্জন বনের কোনো হরিণের লন্ডভন্ড খেলা
নিজেরই ভিতরে নিয়ে সুবাসের শুদ্ধ কস্তুরী।
কবির কষ্ট দিয়ে কবিতা পুষ্ট হয়
উজ্জ্বলতা বাড়ায় বিবেক,
মানুষের নামে বাড়ে কবিতার পরমায়ু
অমরতা উভয়ের অনুগত হয়।”


হেলাল হাফিজ আমার কাছে জলের আগুনে মিশে থাকা একজন.. কখনও মনে হয়নি কষ্টের এই ফেরিওয়ালা দেখতে কেমন! তিনি আমার কাছে দুপংক্তির শব্দাক্ষরের মাঝে বন্দী এক অদ্ভুত ভালোলাগা.
মনে হয়নি যৌবনদীপ্ত তারুণ্যকে তাদের সময়ে শ্রেষ্ঠ.ব্যবহার মনে করিয়ে দেয়া কবির বয়স কতো হতে পারে!!

কবিতার পংক্তিমালার সাথে মিশে আছেন হেলাল হাফিজ। কবিকে কখনও আলাদা করে মনে পড়েনি, মনে হয়েছে তাঁর কবিতাই হয়তো মূখ্য.. এই ভীষণ বড় ভ্রান্তি দূর হয়, বলা যায় এই ভ্রান্ত ধারনা সম্পর্কে অবগত হই যেদিন এই সাইটে হঠাৎ তাঁর নাম চোখে পড়ে!! বেশ কয়েক বছরর আগ কেউ একজন পোস্ট দিয়েছিলনে যার শিরোনাম ছিলো, হেলাল হাফিজের কবিতা অথবা যে জলে আগুন জ্বলে উল্লেখ করে। চোখে পড়তেই চমকে উঠি!!! এতো আমার একান্ত কবিতার বই, আমার অতি আপন কেউ... মন ভালো হয়ে যায় শিরোনামে তাঁর নাম দেখে...

বুঝতে পারি হৃদয়ছোঁয়া অথচ আটপৌঢ়ে পংক্তিমালার মতো কবিতার সাথে একাকার হয়ে খুব সন্তপর্নে কবি আমাদের মগজে ও ভাবনায় স্থায়ী আসন করে নিয়েছেন!!
কখনও না দেখা এই কবি সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারনাও মনে গেঁথে আছে, যা তাঁর কবিতার মতোই সহজ সুন্দর. কোমল অথচ দৃঢ়। বুঝতে পারি জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে প্রচারে তাঁর বড্ড অনীহা! ঘনঘন মিডিয়ায় চেহারা দেখিয়ে খ্যাতি ও আধিপত্য বিস্তারে তাঁর আগ্রহ নেই। তিনি কাউকে গভীর ভাবে ভালোবেসেছিলেন, যে ভালোবাসা থেকে জন্ম হয়েছিলো লাল নীল হরেক রকমের কষ্টের, সেই কষ্ট আর ভালোবাসাকে পুঁজি করে বেঁচে আছেন তিনি। সস্তা প্রচার আর ঢাক ঢোল পিটিয়ে কাব্যগ্রন্থের কাটতির প্রয়োজন নেই তাঁর! আত্মপ্রচার বিমূখ, নির্লোভ একজন সুন্দর মনের মানুষ তিনি।

যিনি হাতগুটিয়ে বসে থেকেও নিজের অজান্তেই ছুঁয়েছেন আকাশ.....

আজও কোথাও কখনও খুব হৃদয়ছোঁয়া পংক্তিমালা চোখে পড়লে, হঠাৎ কোন কবিতার লাইন গভীর ভালোলাগায় ভরিয়ে দিলে নিমেষেই ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠে.. কারণ কবিতার নাম উল্লেখ না থাকলেও বুঝতে পারি এটা হেলাল হাফিজের কবিতা.. জ্বলন্ত আগুনে ভরা জল কেউ আঁজলা ভরে তুলে এনেছেন!

“ইচ্ছে ছিলো তোমাকে সম্রাজ্ঞী করে সাম্রাজ্য বাড়াবো
ইচ্ছে ছিলো তোমাকেই সুখের পতাকা করে
শান্তির কপোত করে হৃদয়ে উড়াবো।
........
ইচ্ছে ছিল রাজা হবো
তোমাকে সাম্রাজ্ঞী করে সাম্রাজ্য বাড়াবো,
আজ দেখি রাজ্য আছে
রাজা আছে
ইচ্ছে আছে,
শুধু তুমি অন্য ঘরে।”


ছোট্ট ছোট্ট কিছু শব্দমালা, অল্পকিছু কথায় এভাবে হৃদয়ের কোমল দ্বার কড়া নাড়তে পারে কেবল এই একজন কবির কবিতা। স্নিগ্ধতা, নিমর্লতা আর গভীর ভালোলাগার আবেশে মন ছুঁয়ে যেতে পারে কেবল কবি হেলাল হাফিজের পংক্তিমালা!

"এখন তুমি কোথায় আছো কেমন আছো, পত্র দিয়ো৷
এক বিকেলে মেলায় কেনা খামখেয়ালী তাল পাখাটা
খুব নিশীথে তোমার হাতে কেমন আছে, পত্র দিয়ো৷
ক্যালেন্ডারের কোন পাতাটা আমার মতো খুব ব্যথিত
ডাগর চোখে তাকিয়ে থাকে তোমার দিকে, পত্র দিয়ো৷
কোন কথাটা অষ্টপ্রহর কেবল বাজে মনের কানে
কোন স্মৃতিটা উস্কানি দেয় ভাসতে বলে প্রেমের বানে
পত্র দিয়ো, পত্র দিয়ো৷

আর না হলে যত্ন করে ভুলেই যেয়ো, আপত্তি নেই৷
গিয়ে থাকলে আমার গেছে, কার কী তাতে?
আমি না হয় ভালোবেসেই ভুল করেছি ভুল করেছি,
নষ্ট ফুলের পরাগ মেখে
পাঁচ দুপুরের নির্জনতা খুন করেছি, কী আসে যায়?
এক জীবনে কতোটা আর নষ্ট হবে,
এক মানবী কতোটা আর কষ্ট দেবে!"


আপনি কেমন আছেন প্রিয় কবি?
মহান সৃষ্টি কর্তা যেন আপনাকে সুস্থ, সুন্দর, সুখি ও শান্তিপূর্ণ দীর্ঘ জীবন দান করেন এই প্রার্থনা।

***প্রায় তিনমাস আগে ব্লগে প্রিয়কবিকে নিয়ে লেখা একটি পোস্ট পড়ে এটা লিখেছিলাম। তারপর খোঁজ পেলাম এই জীবিত কিংবদন্তীরর। সৌভাগ্যক্রমে অসাধারণ ক্ষমতার অধিকারী বন্ধুর মাধ্যমে সম্প্রতি ভীষণ প্রচারবিমূখ, নিভৃতচারী প্রিয়কবির খোঁজ জানতে পারি। মহান স্রষ্টার কৃপায় কবি হেলাল হাফিজ ভালো আছেন, আর.. আজ তাঁর জন্মদিন!!!!!***

শুভ জন্মদিন প্রিয় কবি। :-)

যাঁর জন্মদিন তাঁকে উপহার দেবার নিয়ম, আমি আপনার জন্মদিনে আপনার ভক্তকূলকে উপহার দিতে চাই একটি সংবাদ.. “কবি হেলাল হাফিজ” এর নতুন বই শীঘ্রই প্রকাশ পাবে :-)প্রার্থনা করি , নতুন বইটির জনপ্রিয়তা যেনো “যে জলে আগুন জলে”র আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তাকেও ছাড়িয়ে যায়।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই অক্টোবর, ২০১০ বিকাল ৩:১১
৪৯টি মন্তব্য ৪৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×