somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খুব সহজেই আমরা সবাই জাদুকর হতে পারি যেভাবে.....

১২ ই অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১০:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দীর্ঘদিন আগের ঘটনা।

ঘনিষ্ঠ পারিবারিক বন্ধু পরিবারে নতুন শিশু জন্ম হয়েছে। শিশুর বয়স তিন চার মাস, আমি বাসার বড়দের সাথে দেখতে গেছি। ভীষণ কিউট বাবুটা এই বয়সেই মাকে চিনেছে, অপরিচিত কারো কোলে যেতে চায়না। সেই বাবু আমার কোলে এসে খুব খুশী যদিও বাচ্চা কোলে নিতে অভ্যস্ত ছিলাম না তারপরও কিশোরী আমি মহা আনন্দিত!

সোফায় ঠায় বসে আছি আর, গুটলু একটা ছোট্ট বাবু কোলে বসে খেলছে।

তিন চার মাস পর ভয়ংকর সংবাদ শুনি, সেই শিশুটি মারা গেছে!!!

শিশুর মৃত্যু সংবাদের মতই চমকে দিয়েছে তার মৃত্যুর কারণ। দেশের অন্যতম ধনাঢ্যতম ও উচ্চশিক্ষিত পরিবারের সেই শিশু মারা গেছে সাধারণ ডাইরিয়ায়! পরিবারটির একটি পা বরাবর আমেরিকায় দেয়া, কিছু হলেই আমেরিকায় ছুটে যায়। এমনকি শিশুর জন্মের কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আমেরিকায় নিয়ে নাগরিকত্বের ফরমালিটি সেড়ে এসেছিলো ওর পরিবার অথচ ওর চিকিৎসায় আমেরিকা দুরের কথা ঘরের পাশে সিঙ্গাপুরে যাবার সুযোগপায়নি তারা(যদিও ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি ডাইরিয়ার চিকিৎসায় বাংলাদেশ ও দক্ষিন এশিয়ার দেশ আমেরিকা সিঙ্গাপুরের চেয়ে উন্নত)। তিন দিনের ডায়রিয়ায় অবুঝ শিশুটি মৃত্যু বরন করে।

এই চিত্র তৃতীয় বিশ্বের অত্যন্ত পরিচিত চিত্র। হত দরিদ্র থেকে বিত্তবান, যেকোন পরিবারের সদস্য এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে তবে শিশুদের জন্য এ এক মরণব্যাধি। অথচ খুব ছোট ছোট কিছু সাবধানতা আর প্রাত্যহিক অভ্যাস প্রতিরোধ করতে পারে এই মরণব্যধি।
জাতি সংঘের সংস্থা ইউনিসেফের পরিসংখ্যান অনুযায়ি ২০১৩ সালে সারা বিশ্বেজুড়ে ৩ লক্ষ ৪০ হাজারের অধিক শিশু(যা দিনে ১০০০ এর বেশি) মৃত্যু বরন করে শুধুমাত্র বিশুদ্ধ পানি, যথাযথ পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা আর যথাযথ পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থার অভাবে।

প্রতি বছর মাত্র পাঁচ বছরে পৌঁছানোর আগেই লক্ষ লক্ষ শিশু ডাইরিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে! অথচ সাবান দিয়ে নিয়মিত হাত ধোয়ার মতো একটি সাধারণ অভ্যাসের মাধ্যমে এই শিশু মৃত্যুর ও অসুস্থতার সংখ্যা বিপুল ভাবে কমিয়ে আনা সম্ভব! অত্যন্ত সহজ ও সুলভ এই অভ্যাসটি গড়ে তোলার মাধ্যমে প্রতি তিন জনের একজন শিশু ডাইরিয়া ও প্রতি ছয়জনের একজন শিশুর নিউমোনিয়া সহ শ্বাসনালীর ইনফেকশনে আক্রান্ত হওয়া প্রতিরোধ করা সম্ভব।


আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অভ্যাস হাত ধোয়া। যদিও বিশ্বের অধিকাংশ মানুষ প্রতিদিন্‌ই হাত ধুয়ে থাকেন তবে তাদের মাঝে নিয়মিত সাবান দিয়ে যথাযথ ভাবে হাত ধোয়ার সংখ্যা খুব বেশি নয়।
অথচ সাবান দিয়ে হাত যত্ন করে হাত ধোয়ার মতো একটি অতি সাধারণ ও প্রায় খরচহীন কাজটি একরকম ম্যাজিক ওয়ান্ড বা জাদুর কাঠির মতোই কাজ করে।

* প্রতিবার বাইরে থেকে বাসায় প্রবেশ করে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া জরুরী। হাত ধোয়ার পূর্বে ঘরের কোন আসবাব, ব্যক্তিগত জিনিস বিশেষ করে খাবারের তৈজস(গ্লাস, প্লেট, চামচ) ইত্যাদি না ছোঁয়া অনুচিত।

* বাইরে থেকে বাসায় ফিরে হাত না ধুয়ে কোন ভাবে কোন ছোট্ট শিশু বা তাদের ব্যবহারের জিনিস স্পর্শ করা যাবেনা।

*প্রতিবার টয়লেট বা শৌচালয় ব্যবহারের পর অবশ্যই খুব ভালোভাবে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া জরুরী।

*প্রতিবার খাবারের আগে হাত ধোয়া জরুরী। অনেকে বাইরে ঘুরতে গিয়ে বিভিন্ন খাবার খায় হাত না ধুয়েই। অনেক ক্ষেত্রে বড়দের এতে তেমন কোন ক্ষতি না হলেও, শিশুদের কোমল ও দুর্বল ইমিউন সিস্টেম সহ্য করতে পারেনা বিধায় ডাইরিয়া ও শ্বানালীর বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়।

*বাইরে খেলাধুলা বা বেড়ানোর সময় অপরিস্কার হাতে নাক, চোখ, মুখ স্পর্শ না করা, এই শিক্ষা শিশুদের জন্যও অত্যন্ত জরুরী।

২০০৮ সাল থেকে শিশু মৃত্যু হার কমিয়ে আনার লক্ষ্যে বিভিন্ন শ্লোগান নিয়ে প্রতি বছর ১৫ই অক্টোবর "গ্লোবাল হ্যান্ড ওয়াশিং ডে" বা "বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস" পালিত হয়ে আসছে।



আমরা সকলেই ব্যক্তিগত উদ্যোগে এই দিবসটি পালন করে পরিবার সমাজে সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারি-----

* বিভিন্ন স্কুলের শিশুদের এই দিন হাত ধোয়ার গুরুত্ব সম্পর্কে অভিহিত করা যায়।

* নিজ নিজ বাসায় সন্তানদের সাথে সাথে গৃহকর্মীদের বিষয়টির গুরুত্ব বুঝিয়ে বলে তাদের পরিচিত মহলে তথ্যগুলো ছড়িয়ে দেবার প্রচেষ্টা করা যায়।

*কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীদের সাথে এ বিষয়ে আলোচনা করলে অনেকেই অতি সাধারন অথচ জরুরী এই কাজটির গুরুত্ব সম্পর্কে জানবেন।

*উদ্যোগী তরুণ তরুনী(বয়স যেমনই হোক, যিনি এই কাজটি করবেন তিনি অবশ্যই তারুন্যকে পিছনে ফেলে আসেননি) নিকটস্থ বস্তি এলাকায় গিয়ে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারে।

*এমনকি পথ চলতেও আমরা প্রত্যেকে যদি একজন সুবিধা বন্চিত শিশুকে সাবান দিয়ে হাতা ধোয়ার গুরুত্ব বুঝিয়ে বলতে পারি, তাহলে নিজের অজান্তেই হয়তো কারো প্রাণ রক্ষা সম্ভব হয়ে যাবে।

*যাঁরা গ্রামে থাকেন বা গ্রামের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ তাঁরা আত্মীয় পাড়া প্রতিবেশী সহ গ্রামের সকল পরিচিত জনদের মাঝে এই সচেতনতা ছড়িয়ে দিতে পারেন।

* কোন ভিখেরীর হাতে কাচা টাকার পরিবর্তে নতুন সাবানের মোড়ক খুলে তার হাতে তুলে দেয়া যায়(মোড়ক সহ দিলে তা আবার দোকানে বিক্রী করে দেবার সম্ভাবনা বেশি)।

সরকারের পক্ষে চার বছর, আট বছরে যা সম্ভব নয়..... শুধুমাত্র সাধারণ মানুষের সদিচ্ছা আর সন্মিলিত প্রচেষ্টায় তা অল্প সময়ে অর্জিত হতে পারে।


আমাদের ছোট্ট একটি প্রচেষ্টা যদি নিষ্পাপ প্রাণ রক্ষায় সাহায্য করতে পারে, মানুষ হিসেবে এর চেয়ে বড় অর্জন আর কি হতে পারে!

আর সেই সাথে এই ম্যাজিক ওয়ান্ডটি অন্যের হাতে তুলে দিয়ে খুব সহজে আমরা সবাই জাদুকর হয়ে উঠতে পারি



তথ্যসুত্র: ইউনিসেফ ও সিডিসি


সর্বশেষ এডিট : ১২ ই অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১:৩৬
৩০টি মন্তব্য ৩০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×