somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তুমি আমার এমনই এক জন....

১৮ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১০:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কিছু কিছু চোখ, কিছু কিছু দৃষ্টি, কিছু ভালোবাসা মানুষকে সারা জীবন তাড়া করে ফিরে।
দীর্ঘ দিন আগের কথা।


বাইরে প্রচন্ড ঝড় বৃষ্টি। মা বাবা কেউ বাসায় নেই। দুপুর অথচ চার পাশটা কেমন অন্ধকার করে এসেছে।


এমন সময় সাহায্যকারী ছোট্ট মেয়েটা এসে খবর দিলো, দারোয়ান কাউকে নিয়ে এসেছে, আমাকে দেখাতে চাইছে। দরজার কাছে ছোট খাটো জটলা! হঠাৎ বাগানের এক কোণে কেমন অস্বাভাবিক এক নড়াচড়া দেখে দারোয়ান কাছে গিয়ে ওকে আবিস্কার করে।
বিভিন্ন পশুপাখি প্রেমী এক পরিবারে আমার জন্ম। শৈশব থেকে নিজের বাসায় গৃহপালিত পশু পাখি থেকে শুরু করে এক্সোটিক পশু পাখি দেখে আসা আমি পোষা প্রানীর ব্যাপারে পুরোপুরি নিরাসক্ত! আর কুকুর বিড়াল জাতীয় প্রাণীর কাছ থেকে দশ হাত দুরে থাকি। ক্ষিপ্র চিতা বাঘকে এক হাতের চেয়েই কম দূরত্ব থেকে দেখেছি, অথচ কোন বিড়ালের সাথে এক কামরায় নিজেকে চিন্তা করতেই শিউরে উঠি!

সেদিন তার মাঝে কি যেনো একটা ছিলো। দারোয়ানের হাতে মুষ্ঠিবদ্ধ হয়ে যখন সে থর থর করে কাঁপছিলো, কেমন এক অণুনয় ঝরে পড়ছিলো তার চোখে! ঝড় বৃষ্টিতে ভিজে জব জবে অসহায় ভীরু সেই দৃষ্টি নিমেষেই আমাকে সন্মোহিত করে। বাসার ছেলেটাকে বলি ওকে ভালো করে গোসল করিয়ে মুছে দিতে। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে ওকে এক বাটি দুধ এনে দিতেই কেমন ক্ষুধার্তের মতো খেতে থাকে।

সে বাসাতেই থাকে তবে আমার ঘরে নয়। সারা বাড়ি, বাগান আপন মনে ঘুরে বেড়ায়। কিছু দিনের মধ্যেই একটু বড় ও বেশ হৃষ্টপুষ্ট হয়ে উঠে। আমি আদর করে ও নাম দিয়েছিলাম পিংকু। ধবধবে সাদা এই বিড়াল ছানার গলায় স্যাটিনের একটা ফিতা বাঁধা, তাতে সাদা সুতোয় সেলাই করে লিখেছিলাম "PINKU"।
তাকে দেখেই পাড়া প্রতিবেশিরা জানতো, এটা মানবীর বিড়াল।

আমার ঘরে তার প্রবেশ নিষেধ হলেও সে কেমন করে যেনো জানতো এই বাড়িতে তার গার্জিয়ান কে! আমার বাইরে যাওয়া আর আসার সময় কোথা থেকে ছুটে গেটের কাছে যেতো। এক সময় বাইরে থেকে ফেরার সময় পিংকু কে গেটের কাছে এক্সপেক্ট করতে শুরু করি।
সেদিন ক্লাস ছিলোনা। প্রতিদিন আমি নিয়মিত যেসময় বের হয়ে যাই, তেমন সময় আমার মা অফিসের উদ্দেশে্য বের হয়ে যাবার প্রায় সাথে সাথেই বাইরে একটু হৈ চৈ শুনি।


* * * * * * * * * *

একটু পর বাসার লোকজনের ছোট একটি দল আমার কাছে আসে, ছেলেটা হাতে পিংকু কে ধরে আছে। পিংকু কেমন ভাবে যেনো ওর হাতে শুয়ে আছে আর চোখে এক ধরনের হেরে যাওয়া, অসহায় কাতর দৃষ্টি!

ছোট মেয়েটা প্রায় এক নিঃশ্বাসে হরবর করে যা বললো, আমার মা অফিস যাবার সময়( সাধারনত এসময় আমি ক্লাসে যাই, সেদিন ক্লাস ছিলোনা) ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে চলে যেতেই দারোয়ান পিংকুকে আবিস্কার করে, গাড়ির চাকার নীচে পিষ্ট!!!
অদ্ভুত ব্যাপার ওর গায়ে কোন রক্ত নেই। এটা দেখে আমি একটু পজিটিভ হতেই ছেলেটা কি যেনো বর্ণনা করতে চাইছিলো, পিছন দিকে কোন এক ইনজুরির কথা। আমার বাঁধা পেয়ে আর শেষ করতে পারেনি। কোন পশু হঅসপাতাল, পশু চিকিৎসকের নাম, ঠিকানা কিছুই জানা নেই। কখনও দেখেছি বলেই মনে পড়েনা।

যে দেশে মানুষ বিনা চিকিৎসায় অহরহ মারা যায় সেখানে এমন চিকিৎসক সহজলোভ্য হওয়া শুধু বিলাসিতা নয় প্রায় অসম্ভব!
পিংকুর অসহায় দৃষ্টি টা সহ্য করার ক্ষমতা আমার ছিলোনা। ওদের বললাম, ওদিকে তোমরা চেষ্টা করে দেখো। আমাকে কিছু যেনো না জানায় তা বিশেষ ভাবে অনুরোধ করলাম(ছোট মেয়েটা কোন কিছু এক্সাইটিং দেখলেই ছুতে এসে আমাকে জানায়)!
বাসায় গ্রাম থেকে আসা সম্পর্কে আত্মীয় ছিলেন, ওনার পরামর্শে দুধ হলুদ টাইপ কিছু চিকিৎসা চলেছিলো মনে হয় তবে পিংকু খুব বেশিক্ষণ কষ্ট পায়নি। আল্প সময় পরেই ইহলোক ত্যাগ করে।

কোন আপন কাউকে সেই প্রথম চিরতরে হারানো। মৃত্যুর শীতল স্পর্শ কেমন নির্মম ও কঠিন, সেই প্রথম অনুভব করি।
মনে আছে সেদিন বাসার থমথমে পরিবেশ। বাবা মা কাজ থেকে ফিরে সব শুনে আমায় নিয়ে অস্থির হয়ে পড়েছিলেন। শুধু কান্নাকাটি নয়, আমি তার পর বেশ কিছুদিন কোন খাবার খেতে পারিনি।

ধীরে ধীরে এক সময় সব স্বাভাবিক হয়ে আসে..... শুধু পিংকুর সেই অসহায় কাতর দৃষ্টি আমাকে ছেড়ে যায়না।
কারো চোখের অনুনয়, কোন আকুতি ভরা দৃষ্টি সারা জীবন মানুষকে তাড়া করে ফিরে, সেই আমার প্রথম পরিচয়।

*দীর্ঘদিন ধরে পিংকুর কথা লিখতে ইচ্ছে করছে, চেষ্টাও করেছি অনেকবার। খুব প্রিয় আর আপন কারো কথা লিখে রাখা না তাড়া করে ফেরা দৃষ্টিটা থেকে রেহাই পাওয়া যায় কিনা তার চেষ্টা জানা নেই!!!!*

সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১২:০২
৩২টি মন্তব্য ৩২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×