somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শুয়ে থাকার কাল

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ১:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

টিকটিকিটার দিকে আপনি না তাকালেও পারতেন। ধরুন ঠিক যে মুহূর্তটিতে আপনার চোখ ওখানে পড়তে যাচ্ছিল, তার ক্ষণিক আগেই সেটা আপনি টের পেয়েছেন। পাবার কথা। এরকমই হয়। একটা বৃহত্তর দৃকবলয় অত্যন্ত ক্ষিপ্রভাবে আপনাকে জানান দিতে থাকে সম্ভাব্য আলোকসম্পাতকৃত পরবর্তী বস্তুটির কথা। হ্যাঁ, আলোকসম্পাত। নাহলে তো আপনি দেখেনই না। আর আপনার অতিদ্রুত মস্তিষ্ক-বার্তাটা যেভাবে আপনাকে সক্রিয় করেছিল, তাতে দৃকপাতের, মানে আলোকনিবদ্ধ হবার ঠিক.. ঠিক... ঠিক পূর্বমুহূর্তে আপনার চোখকে নিবৃত্ত করা আপনার পক্ষে সম্ভব ছিল। সেটাই হবার কথা। এভাবেই হয়। ফলে এই দৃকপাতটি আপনার ইচ্ছাকৃত। মানে দাঁড়ায়, আপনি টিকটিকিটাকে দেখতে চেয়েছেন। প্রবৃত্ত হয়েছেন। হয়তো কৌতূহলী, বা অনুসন্ধিৎসু। এমনকি হয়তো উদ্যমী বা প্রলুব্ধ।

কিন্তু এটা প্রায় নিশ্চিত যে এই পর্যন্ত এসে আপনি এই বিবরণীতে সন্দিগ্ধ হয়ে পড়বেন। আপনি কিছুতেই নিশ্চিত বা নিঃসংশয় হতে পারবেন না যে ঠিক এভাবেই ঘটেছে কিনা। কিংবা আপনি হয়তো চাইবেন না নিশ্চিত হতে। দৃকপাতের যে কর্তৃত্ব আসলে আপনার ছিলই, সেটা, সংশয়বশতঃ, আপনি অস্বীকার করতে চাইবেন। কিংবা এমনও হতে পারে যে সংশয় নয়, এখানে অস্বীকার করাটা একটা চিন্তাপ্রসূত ক্রিয়া। সারাংশ হচ্ছে, আপনি দাবি করবেন যে টিকটিকিটাকে আপনি দেখতে আসলে চাননি। এই দৃকপাত ইচ্ছানিরপেক্ষ। ঘটনাচক্রীয়। দৈবাৎ। আপনার এই দাবির সবচেয়ে জোরাল দিকটা হলো এই যে আপনি ঠিক তারপরই বমি করতে শুরু করেছেন। সেধে সেধে আপনি বমি করতে চাইবেন না এ কথা সর্বসাধারণ্যে প্রমাণ করার জন্য কসরৎ করতে হবে না। এভাবে আপনার ইচ্ছাসাপেক্ষ ও ইচ্ছাকৃত ক্রিয়াটি কিন্তু একটা দুর্ঘটনা হিসেবেই প্রমাণিত হলো।

কিন্তু আধখাওয়া তেলাপোকাটির কথা ধরা যাক। এমন তো হতেই পারত যে ওই অর্ধেক তেলাপোকাটি, যদি জীবন্ত প্রাণীর ভণিতা না-করে রওনা না-হতো, মানে যদি রওনা হবার উদ্যোগ না নিত, তাহলে আপনি বমি করতেন না হয়তো। সেদিক থেকে দেখলে আপনার থেকে অনেক অসুবিধাজনক অবস্থায় থাকার কথা টিকটিকিটার। ওর অভিজ্ঞতাতে এরকম কোনো ঘটনা থাকবার সম্ভাবনা একেবারেই কম যে কিছু একটা খেতে শুরু করবার পর সেই সন্দেহাতীত খাদ্যটি জীবন্ত হয়ে দৌড়ুতে চেষ্টা করবে। আবার টিকটিকিটার পক্ষে তেলাপোকাটির পিছন দিকের আধখানা বা পোয়াটেক মুখে-পোরা অবস্থায় বমি করাও অসম্ভব ছিল, যেটা আপনি করছেন। এ কথা ঠিকই যে টিকটিকিরা বমি করে কিনা এ বিষয়ে সকলের জানাশোনা কম। তাবলে তারা বমি করে না এমন সিদ্ধান্তে আসারও কোনো কারণ নেই। এমন তো হতেই পারে যে টিকটিকিটা বমি করছিল না নেহায়েৎ এই আতঙ্কে যে তেলাপোকার পশ্চাৎ অংশটিও মুখ থেকে নিষ্কৃত হয়ে সার্বভৌম দৌড়াদৌড়ি করবে। যাই হোক, টিকটিকিটা আপনার থেকেও অসুবিধাজনক অবস্থায় ছিল। সেদিকে ভ্রক্ষেপও আপনার ছিল না। তাছাড়া দৃকপাতের পুরো বিষয়টি, যাই প্রমাণিত হয়ে থাকুক না কেন, আসলে আপনার ইচ্ছাহেতুই ছিল।

ফলতঃ তেলাপোকাটি, আপনি আধখাওয়া কিংবা পোয়াখাওয়া তাকে দেখে বমি করতে লাগার পর, আপনাকে একান্ত সহমর্মী ভাবে। এর কোনো যৌক্তিক কারণ নেই যদিও। তবুও ও ভাবে। এবং ও প্রাণপণ আপনার দিকে দৌড়াতে থাকে। আর আপনি ততক্ষণে বমি থামিয়েছেন একদফা। আর আপনি কিছুতেই চাইছেন না ও আপনার দিকে আসুক। আর তাই আপনি আবার বমি-উন্মুখ হয়ে উঠছেন। এ দফা আপনি নিজের বুক ভাসালেন শুয়ে শুয়ে। কিন্তু আধা-তেলাপোকাটি আপনার শায়িত ডান উরু বরাবর আসছে। আসছেই। এবং দ্রুত। আর আড়চোখে আপনি তা দেখছেন। আপনি আবার বমি করলেন। দেয়াল বেয়ে ঠিক তখনই হাঁচড়-পাঁচড় তেলাপোকাটা আপনার ডান উরুতে আছড়ে পড়ল। আর আপনি একটা প্রবল ঝটকায়, চাইলেন, উরু থেকে তাকে হঠিয়ে দিতে। আপনি পা ঝাড়া দিলেন। মানে দিতে চাইলেন। এটা সম্ভবতঃ আপনার ইচ্ছাপ্রসূত প্রক্রিয়া। কোমড়ের নিচে পাছার মাংসপেশী শক্ত হলো। মুখে বমি সমেত আপনি কিছু একটা আওয়াজ করছেন। অথচ নিচে কিছুই নড়ল না। আর ঠিক সেই... সেই... ঠিক সেই মুর্হর্তে আধা-তেলাপোকাটা বিছানার চাদরের উপর পড়ল, যেখানটাতে আপনার উরু, মানে উরু জোড়া, থাকার কথা ছিল।

হতে পারে যখন আপনি অজ্ঞান ছিলেন বলে সবাই ভেবেছিল, তখন আপনি মোটেই অজ্ঞান ছিলেন না। হয়তো আপনি সবকিছু দেখেছেন। একটা একটা করে দুটো উরুই কেটে নেয়া। হতে পারে সেজন্যই টিকটিকিটার দিকে তাকাতে আপনি কৌতূহলী হয়েছিলেন, কিংবা অনুসন্ধিৎসু। কিংবা প্রলুব্ধ। হতে পারে এই তেলাপোকাটার সঙ্গে যুগল বেঁধে গন্তব্যে আপনি যেতে চান না। কিন্তু আধা-তেলাপোকাটা আপনার যেখানে উরু থাকার কথা ছিল সেখানে রক্তের মধ্যে আটকে গেছে।

আর আপনি বমি করছেন। আবারও।

জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট হাসপাতালের ৭ নং ওয়ার্ড॥ ২৮শে আগস্ট ২০০৮ সারারাত্রি

১৪টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×