"ভ্যালেন্টাইনস্ ডেতো প্রায় চলে আসলো, প্ল্যান আছে কোন?"
"আরে ধুরু! ঐ কালা বউরে নিয়া কিসের ভ্যালেন্টাইনস্ ডে? রাতের বেলা ঠিক মতন চেহারাই দেখা যায় না! আমার লাইফটা শ্যাষ হয়া গ্যাল ভাই!"
"সমান কথাতো আপনার বউও বলতে পারে, 'মটকা, কালা, বাইট্টা, টাকলা জামাইরে বিয়া কইরা লাইফটা তামা তামা হয়া গ্যাল!'"
কথাটা আমি মনে মনে বললাম। কুকুরকে কুত্তা বলিতে নেই, তাহার 'মাইন্ড' খাইবার সম্ভাবনা থাকিয়া যায়! শুধু শুধু কারও মন খারাপ করিয়ে লাভ কী?
ঠিক তখনই আমাদের সামনে দিয়ে একজন পরী হেঁটে চলে গেল। আমেরিকান মেয়েরা এমনিতেই সুন্দর হয় (গায়ের রং ফর্সা, সুন্দর না?) তার উপর যখন ভাল সাজ পোশাক পড়ে, বিশেষ করে অফিসের ড্রেস, তখন আসলেই তাদের 'পরী' বলে ভ্রম হয়। শুধু ডানাটাই যা একটু মিসিং থাকে, এই আর কি।
"ইশ! আমরা যে ক্যান এইসব মাইয়া পাইনা!"
মেয়েটা এই দিকে তাকিয়ে একটা ভদ্রতার হাসি দিল। ব্যস, এইটাই বাকি ছিল। তাকিয়ে দেখলাম লোকটার চোখে আসলেই আফসোস ঝরে ঝরে পড়ছে! এই দৃষ্টি আমাদের দেশের মিষ্টির দোকানের সামনে দাঁড়ানো ভিক্ষুক শিশুদের চোখে দেখা যায়। অতি লোভনীয় কোন বস্তু চোখের সামনে দেখা যাচ্ছে, যা আপন করে পাবার ক্ষমতা বা সামর্থ্য কোনটাই নেই!
আমি আবার মনে মনে বললাম, "তখন এই মেয়েটাও বলতো, 'মটকা, কালা, বাইট্টা, টাকলা জামাইরে বিয়া কইরা লাইফটা তামা তামা হয়া গ্যাল!'"
পুরুষ মানুষ মাত্রই ছাগল প্রকৃতির। বাঁধা থাকা অবস্থায় ভাল। ছুটলেই অন্যের বাগানের গাছের পাতায় মুখ দেয়। মেয়েদের ব্যপারটা জানিনা। জানার প্রয়োজনও নাই। নারী পুরুষ দুই পক্ষেরই সৌন্দর্য্যের প্রতি আকর্ষণ থাকাটা একটি জন্মগত স্বভাব। খুবই স্বাভাবিক এবং তাতে কোন দোষ নেই। ঠোঁটের উপর সুন্দরবন এবং কপালের উপর সাহারা মরুভূমির অধিকারী পুরুষ যেমন জীবন সঙ্গিনী হিসেবে ঐশ্বরিয়া রাইকে চায়, তেমনি মুখে বিশাল বিশাল আচিলওলা, মোটামুটি পর্বতাকার মেয়েটিও ঋত্বিক রোশানের স্ত্রী হতে চায়। সমস্যা ঘটে তখন, যখন বিয়ের পরেও তাদের এই আফসোস যেতে চায় না।
"আমার ভাগ্যে ঐশ্বরিয়া জুটলো না" - এই দুঃখে নিজের বিয়ে করা স্ত্রীর দিকে ঠিক মতন তাকায় না পর্যন্ত!
সালমান খানের সিক্স প্যাক দেখার পরপরই নিজের স্বামীর ভূড়ির দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে।
আরে, হাতি কিনলেই হলো? তার খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে না? ঐশ্বরিয়াকে পালার ক্ষমতা আছে তোর? তার মেকাপের খরচই তোর সারা বছরের স্যালারীর চেয়ে বেশি!
সালমান খান প্রতিদিন কয়টা মেয়ের প্রেমের প্রস্তাব পায় সেটা খেয়াল আছে? তাদের সবার সাথে প্রতি মুহূর্তে কম্পিটিশন করার ক্ষমতা আপনার আছে?
মাঝে দিয়ে যা পাওয়া সম্ভব নয়, সেই দুঃখে যা পেয়েছি, সে আনন্দ উপভোগ করা হয়ে উঠেনা। জীবনের চমৎকার মুহূর্তগুলো শেষ হবার পরে আফসোস করে ভাবে, "ইহা আমি কী করিলাম!"
নিজের জীবন সঙ্গী/সঙ্গিনীকে নিয়েই সুখী হবার চেষ্টা করুন। সুন্দরভাবে কথা বলুন, একসাথে হাসুন, ভাল কোন রেস্টুরেন্টে খেতে যান; সবার উপরে.....ভালবাসুন! দুজনের আনন্দময় মুহূর্তের ছবি তুলে ফেসবুকে দিন! সুখী দম্পতি দেখতে সবারই ভাল লাগে। দেখুন কয়টা লাইক এবং কমেন্ট পান! কে বলতে পারে, আপনার কালো স্ত্রী অথবা ভূড়িওলা স্বামীর মাঝেই হয়তো এমন কোন গুণ আছে যা শাহরুখ খানেরও নেই। জীবনানন্দ দাসকে মোটেও সুদর্শন ব্যক্তি বলা চলে না, অথচ তাঁর মতন রোমান্টিক কবিতা স্বয়ং রবীন্দ্রনাথও কী লিখতে পেরেছিলেন?
সুজান খানও ঋত্বিক রোশানের মতন হ্যান্ডসাম স্বামী ছেড়ে চলে গেছেন। ভেবে দেখুন, সমস্যাটা কোথায়!
"আপনার কোন প্ল্যান আছে?"
"কিসের প্ল্যান?"
"ভ্যালেন্টাইনস্ ডেতে?"
"নাহ! বউই থাকবে না, আমার আবার কিসের প্ল্যান!"
"বলেন কী? বউ কই থাকবে?"
"সেই রাতে দেশ থেকে ফিরবে।"
"তাহলেতো মুশকিল হলো।"
"আরে ব্যাটা, আমার মুশকিল নিয়ে ভাবার আগে নিজেরটা নিয়ে চিন্তা কর! আমার কাছে বছরের তিনশো পয়ষট্টি দিনই ভ্যালেন্টাইনস্ ডে। তুই নিজে অন্তত একটা দিনকে স্পেশাল বানা!"
আবারও কথাটা মনে মনে বলতে হলো। ভদ্রতা বজায় রাখাটা একটি অতি কষ্টসাধ্য ও বিরক্তিকর কাজ!

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




