somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রবাসীর ঈদ

৩০ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ৮:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঈদের নামাজ যত আগে পড়া যায় তত ভাল।
নিয়ম হচ্ছে সূর্য ঠিকঠাক মতো উঠে গেলেই গোসল করে নতুন কাপড় পরে নাস্তার টেবিলে বসে যাওয়া। পুরো একমাস সকালের নাস্তায় অনভ্যস্ত পেটে তখন খিধে থাকেনা। মুখে কিছু নিয়ে চাবালে মন কেমন খচ খচ করে। তবু মিষ্টি জাতীয় কিছু খেয়ে নামাজে যাওয়া ভাল। এটাই নবীজির সুন্নত।
আমার ছোটবেলার ঈদগুলো হতো শীতকালে। সকালে কম্বল ছেড়ে বেরোতে ইচ্ছে করতো না। মা গরম পানি বালতিতে ঢেলে আওয়াজ দিতেন গোসলে ঢুকতে। আব্বু বলতেন, 'ঈদের দিনে যে আগে গোসলে যায়, সে আগে বেহেস্তে যেতে পারে।'
আব্বুদের ছোটবেলায় আমার দাদী এটাই বলতেন। তাঁদের ছোটবেলাতেও ঈদ হতো শীতের সময়ে।
বেহেস্তে যাবার লোভে আব্বুরা সব ভাইবোন বিছানা ছেড়েই পুকুরের দিকে দৌড় দিতেন। কে আগে পুকুরে ঝাপ দিতে পারে! কনকনে শীত উপেক্ষা করে দিব্বি ঠান্ডা পানিতে গোসল করে ফেলতেন। বেহেস্তে যেতে হবেনা?
আমাদের বেহেস্তের যাবার প্রলোভন খুব বেশি কাজে দিত না। কোনরকমে শরীরকে টেনে নিয়ে যেতাম বাথরুমে। গায়ে পানি ঢালা মাত্রই অবশ্য ঘুম হাওয়া।
গোসলের শেষের দিকে পানি কেমন ঠান্ডা ঠান্ডা লাগতো। তখন শরীর গরম করতেই জোরে জোরে গাইতাম, "রমযানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ!"
যদিও এইবার সামারের মাঝামাঝি সময়ে ঈদ হয়েছে, তবু এয়ার কন্ডিশনার পার্থক্য বুঝতে দেয়নি। কমফোর্টার থেকে শরীর টেনে বের করতে রীতিমত লড়াই করতে হলো।
সুখের কথা, এখানে কল খুললেই ইচ্ছা মত গরম পানি পাওয়া যায়। গোসল শেষের দিকে ঠান্ডা লাগার কোন টেনশন কাজ করেনা। তাই গোসলের সময়ে আর "রমযানের ঐ রোজার শেষে" গানটি গাইতে হয়নি।
ঈদের আগের দিন থেকেই বউ একটা বিশেষ কারনে রাগ করে ছিল। কথা বলাবলি একদম বন্ধ। টেবিলে নাস্তা দিয়ে চুপচাপ খেতে লাগলো। আমি কথা বললে কোন জবাব দেয়না। আবারও হাত পাতলাম কাজী নজরুলের কাছে।
সুর করে গাইতে শুরু করলাম, "আজ ভুলে যা তোর দোস্ত দুশমন, হাত মেলাও হাতে,/ তোর প্রেম দিয়ে কর বিশ্ব নিখিল ইসলামে মুরীদ।/ ও ‘বউ’ রমযানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ!"
ছোট বেলায় যেমন গানটায় কাজ হতো, এইবার ভিন্ন উদ্দেশ্য হলেও, কাজ হলো। বউ হেসে দিল।
গানটি যেন হোমিওপ্যাথি! সব রোগের এক ওষুধ! চিনির গোলা!
ঈদের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেছে এক বান্ধবীর বাসায় বেড়াতে গিয়ে। ঈদ উপলক্ষে বাঙ্গালি সেই বান্ধবীর বাড়িতে আমাদের ইউনিভার্সিটিতে পড়ুয়া এক আফ্রিকান অ্যামেরিকান ছেলেও দাওয়াতে এসেছিল। তার নাম God's will, আক্ষরিক অর্থেই যার মানে "আল্লাহর ইচ্ছা।"
বেচারার কোনই ধারণা নেই আমাদের দেশীয় খাবার সম্পর্কে। এঞ্জেলা আর সব অতিথির মত তাকেও বলল "please help yourself."
বেচারা তখন একই প্লেটে পোলাও, গরুর মাংস, চিকেন, মিষ্টি দই, রসগোল্লা, এবং অন্যান্য ডেজার্ট একসাথে নিয়ে নিল। তারপর সব মেখে চামচ দিয়ে খেতে শুরু করলো। মানে রসগোল্লা এবং হালুয়া মাখানো একচামচ ভাত, গরুর মাংসের সাথে দিব্বি মুখে পুড়ে ফেলল। তারপর বলল, "food is delicious!"
তাকে আমাদের পুরান ঢাকার কিছু মিক্সড ডিশের ব্যাকগ্রাউন্ড স্টোরী বর্ণনা করে বললাম, 'তুমি এইমাত্রই এর অ্যামেরিকান সংস্করণ বের করলে।'
এছাড়া ঈদে তেমন বিশেষ কিছুই ঘটেনি। বন্ধুদের সাথে আড্ডা হয়েছে, যার জন্য ঈদ হওয়া লাগেনা। খাওয়া দাওয়া হয়েছে, যার জন্যও ঈদ হওয়া লাগেনা।
ছোটবেলায় যখন বাবার সাথে ঈদগাহে যেতাম, তখন ঈদের নামাজ শেষ হতেই আব্বু বলতেন, "মানুষ দেখো।"
অনেককেই দেখতাম দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মানুষ দেখতেন। মানুষ দেখার মধ্যে কি আছে, সেটা তখন বুঝতাম না। আব্বুরা ছোটবেলায় ঈদ করতেন গ্রামের ঈদগাহে। সেখানে শহরের তুলনায় খুব বেশি মানুষ হয়তো হতোনা। আমার জন্ম শহরেই। সবসময়েই দেখে এসেছি হাজার হাজার মানুষের জামাত। অধিক জনসংখ্যার দেশে জন্ম নেয়ার এই এক অসুবিধা।
এখন বুঝি। মাথায় টুপি পড়া লক্ষ লক্ষ মানুষের একটি সুবিশাল সমাবেশ দেখাতেও একটা আনন্দ ছিল।
এখানে সেটা দেখার সৌভাগ্য হয়না।
এখানকার মসজিদেও ঈদের নামাজ হয়। এখানকার মসজিদেও মানুষের ভিড় হয়। কিন্তু এতটুকু ভিড়ের জন্য ঈদ হওয়া লাগেনা।
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×