somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমরা লক্ষ লক্ষ সাইকোপ্যাথের সাথে বাস করছি

২৫ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ১১:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ড. ইউনুস প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে নোবেল পেলেন। গর্বে আমাদের বুক এতই ফুলে উঠলো যে শার্টের বোতাম ছিড়িছিড়ি অবস্থা। তখনই একদল ফাতরামি করা শুরু করলো।
"সুদখোর রক্তচোষাকে নোবেল দিয়েছে।"
"যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যপারে ড.ইউনুসের ভূমিকা কী? ওতো একটা ছাগু।"
"মার্কিনদের পা চাটলে এইরকম নোবেল সবাই পায়।"
এই সমস্ত আঁতেলদের কথা শুনলে গা ঘিনঘিন করে। সবকিছুতেই এরা মাতবর, সবকিছুতে এদের মন্তব্য করতেই হবে। বানরের হাতে একে ৪৭ দেয়া আর বাঙালির হাতে ফ্রি ইন্টারনেটসহ কীবোর্ড ধরিয়ে দেয়া একই ব্যপার। হাত দিয়ে বিষ্ঠা ছাড়া কিছুই বেরোয় না। ইতিহাস সাক্ষী। কয়েকটা ঘটনা কেবল মনে করিয়ে দেই।
সাকিব আল হাসান বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ক্রিকেটার হয়ে গেলেন। মাগুরার ছেলের উপর বিশ্ববাসী গর্বিত, কেবল বাঙালি বাদে। তার বউ কেন প্রবাসী, তার বউ কেন পর্দা করেনা, তার বউ কেন কসমেটিকস ব্যবসা করলো, সে কেন বউ নিয়ে হেলিকপ্টারে করে গ্রামের বাড়িতে গেল, এতিম শিশুদের সাহায্যের নাম করে সাকিব আসলে অন্য মতলব হাসিল করতে চায়.....অভিযোগের শেষ নাই।
নাসিরের বোনকে নিয়ে নোংরামির কাহিনীতো এই সেদিনের ঘটনা।
এর আগেও রবীন্দ্র নজরুলকেও হিসাবে নিন। রবীন্দ্রনাথের বৌদির সাথে প্রেম ছিল - এই কথা ছাড়া তাঁর সম্পর্কে আর কোন তথ্যই যেন বাঙালি জানে না। নজরুলেরও চরিত্রে ত্রুটি ছিল, মাল্টিপল প্রেম ছিল, কাফের ছিল, নাস্তিক ছিল, মৌলবাদী ছিল, এই ছিল, ঐ ছিল - ইত্যাদি কথা শোনার পর আপনার মনে হতে পারে কাজী নজরুল ইসলাম আসলে অত্যন্ত ফালতু কবি। হেড মাস্টারের সাথে যোগাযোগ থাকায় যে ছাত্রের কবিতা স্কুল ম্যাগাজিনে ছাপানো হয়, নজরুলের যোগ্যতা আসলে সেই কবির চেয়েও খারাপ।
সেদিন এক পার্টি থেকেই বের হয়ে চলে এসেছিলাম। সেখানে একদল রামছাগল আলোচনা করছিল বাঙালি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ হাইকমিশনার, রানীর পা চাটা চামচা আনোয়ার চৌধুরীকে পুতুল হিসেবে বসিয়ে ব্রিটিশরা আসলে বাংলাদেশকে চুষে খেয়ে ফেলেছে। তাদের স্বার্থ হাসিল হয়ে যাচ্ছে, আমরা কিছুই বুঝতে পারছি না।
একবার মুখ ফুটে বলতে যাচ্ছিলাম "ভাই, নিজেরে এতটাও বড় মনে করবেন না, দোহাই লাগে!" পরে আর কিছু বললাম না। ছাগলের ব্যা ব্যাতে রাগ করে নিজের দেশকে ছোট করার কোন মানে হয়না। আমার মা গরিব হলেও, আমারই মা। কিছু কুপুত্রের জন্ম দিয়েছেন, এইটাই যা দোষ আর কি।
নিজের জীবনের থেকেও একটা অভিজ্ঞতা শেয়ার করা যাক।
ঢাকায় থাকতে এক টিউশনির দালালের সাথে আমার পরিচয় হয়েছিল। সে ছাত্রদের ভাল ভাল টিউশনি যোগার করে দিত। তখনকার সময়ে সপ্তাহে চারদিন পড়িয়ে পাঁচ ছয় হাজার টাকা আয়ের মতন লোভনীয় সব অফার। আমার নিজেরই তখন টিউশন ছিল, এবং আমি আমার ছাত্রদের উপর সন্তুষ্টও ছিলাম। একদম আত্মীয়দের মতন। আমার বাড়তি কোন টিউশনির দরকার ছিল না। কিন্তু আমার বন্ধুদের দরকার ছিল। তাই আমি সেই দালালের সাথে তাদের কয়েকজনের পরিচয় করিয়ে দিলাম। কিন্তু একদল হারামি রটাতে শুরু করলো, আমি নাকি কমিশন খাই, এই কারনেই এদের সাহায্য করি। নাহলে আমার কী স্বার্থ? ক্ষোভে ফেটে যেতাম। ইচ্ছা করতো এইসব নমক হারামকে ড্রেনের পানিতে চুবিয়ে মারি। তাহলে বুঝতো যে তাদের মতন স্বার্থপর নোংরা কাঙ্গাল মেন্টালিটি আমার না। আমি যদি নিজে উঠি, তাহলে অন্যকেও উঠতে সাহায্য করি। পৃথিবীতে এখনও অনেক মানুষ আছে যারা স্বার্থ ছাড়াই অপরের উপকার করতে ভালবাসে। তাদের দুই চার পয়সা "কমিশন" লাগেনা।
কিন্তু এরা এসব বুঝবে না।
সেদিন ফেসবুকে দেখলাম এক দল জাপানি ছেলেমেয়ে ঝাড়ু হাতে রাস্তাঘাট পরিষ্কার করছে। দেখেই মনটা ভাল হয়ে গেল। কারন দেশটা জাপান নয়, বাংলাদেশ। আমরা নিজেরাই যেখানে নিজেদের ঘরদোর পরিষ্কার করিনা, সেখানে আমাদের নোংরা দেশটাকে পরিচ্ছন্ন করতে এরা সেই সুদূর জাপান থেকে উড়ে চলে এসেছে। এদেরকে বুকে জড়িয়ে স্বাগত জানানো উচিৎ ছিল। কিন্তু সেটা করলে কী আর আমরা বাঙালি হতাম? আমরা কী করলাম? ফেসবুকে গবেষণাধর্মী স্ট্যাটাস দিতে শুরু করলাম, জাপানিরা নিজেরা আসলে কতখানি নোংরা জাতি এই নিয়ে সচিত্র প্রতিবেদন। তারা নেকেড সুশি খায়, "টয়লেট রেস্টুরেন্ট" তাঁদের ওখানে বেশ জনপ্রিয় একটি কালচার। তারা মানুষের পায়্খানাকে প্রসেসড করে মাংসের সাপ্লিমেন্ট হিসেবে ব্যবহার করে। কোরিয়াতে একটি ঐতিহ্যবাহী ও জনপ্রিয় শরবত হচ্ছে মানুষের গুয়ের শরবত, ইত্যাদি। এবং তারপর উপসংহার টানা, যে জাতি নিজেরাই নোংরা, তারা আবার অন্যকে পরিষ্কার করবে? তার আগে নিজেরা পরিষ্কার হয়ে আসুক।
এবং যথারীতি এই স্ট্যাটাসে প্রচুর লাইক, শেয়ার ও কমেন্ট জমা পড়ল।
"ঠিক বলেছেন ভাই।"
"দারুন!"
"এক বস্তা লাইক!"
প্রথম কথা, জাপানিরা নোংরা নাকি ময়লা সেইটা পরের ব্যপার, আসল কথা হচ্ছে যারা উপকারীর উপকার স্বীকার না করে উল্টা অপকার করতে চায় - এইধরনের মানুষেরা মানসিক প্রতিবন্ধী। এদের ইমার্জেন্সি বেসিসে দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলে শক থেরাপি দেয়া উচিৎ।
যারা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে মানুষের দুর্বলতা বের করার চেষ্টা করে বিমলানন্দ লাভ করে, তাদের সবকটাকে মিসির আলীকে দিয়ে চিকিৎসা করানো উচিৎ।
আমরা লক্ষ লক্ষ সাইকোপ্যাথের সাথে বাস করছি, আমরা বুঝতেও পারছিনা আমাদের সমাজটা এখন কতখানি অসুস্থ। একটা রাস্তার কুকুরকেও যদি কেউ আদর করে বিস্কিট দেয়, সেই কুকুর খুশিতে লেজ নাড়ে। কামরাতে আসেনা। আমরা সেই কুকুরের চেয়েও খারাপ, বুঝতে পারছেন?
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ৩:৫১
৮টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কৃষ্ণচূড়া আড্ডার কথা

লিখেছেন নীলসাধু, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০২



গতকাল পূর্ব নির্ধারিত কৃষ্ণচূড়ায় আড্ডায় মিলিত হয়েছিলাম আমরা।
বছরের একটি দিন আমরা গ্রীষ্মের এই ফুলটির প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে প্রকৃতির সাথে থাকি। শিশুদের নিয়ে গাছগাছালি দেখা, ফুল লতা পাতা চেনাসহ-... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×