somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চাইল্ড সেক্স এবিউজ - শিশু যৌন নির্যাতন (পুনঃপ্রকাশ)

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৩:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ধরুন আপনার বাড়িতে চুরি হয়েছে। আপনি হাতেনাতে চোরকে ধরেও ফেলেছেন। ব্যাটাকে পুলিশের কাছে নিয়ে গেলেন বিচারের জন্য। পুলিশ যথাসময়ে চোরকে কোর্টে চালানও করে দিল। এখন যদি বিচারপতি বিচার করতে গিয়ে বলেন, "যেহেতু আপনি রাতে বাড়ির দরজা খুলে ঘুমিয়েছেন, সেহেতু চোর চুরি করেছে।"
কাজেই চোরকে বেকসুর খালাস দিয়ে দেয়া হলো। উল্টো দরজা খুলে ঘুমানোর জন্য আপনাকে জরিমানা ও তিন রাত কারাবাসের শাস্তি ভোগ করতে হলো।
ভবিষ্যতে আপনার প্রতিবেশীর বাড়িতে চুরি হলে তিনি কী চোরকে পুলিশ/আদালতের হাতে তুলে দিবেন?
এবারে আরেকটা ঘটনা বলি, দেখেন পরিচিত শোনায় কিনা।
সালমাকে চেনেন? আরে আপনার বাসার পাশের গলির শ্যামলা করে মেয়েটি। খুব সুন্দরী না হলেও সাধারণ বাঙ্গালি মেয়েদের মতন মায়াবী চেহারার অধিকারিনী। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। সংসারের কাজে তাকে প্রায়ই বাইরে যাওয়া আসা করতে হয়। আপনার নজরে কখনও পড়েনি? রাস্তায় এত এত মানুষ! কয়জনকেই বা আপনি লক্ষ্য করবেন!
বরকতকেতো চিনেন। ঐযে মজনু মিয়ার চায়ের দোকানে সারাদিন আড্ডা দেয় যে ছেলেটি, সে। ও আচ্ছা, নাম জানতেন না? এখনতো জেনেছেন।
তা বহুদিন ধরেই সালমার উপর বরকতের নজর ছিল। সালমা পাত্তা দেয়নি কোনদিন। সে ভালবাসে মিজান নামের এক যুবককে। মিজানকে নাও চিনতে পারেন। খুবই গোবেচারা স্বভাবের ছেলে। গলির মুখে "প্রেসক্রিপশন ফার্মেসি" আছেনা? ওখানে কাজ করে ছেলেটা।
মিজানও তাকে ভালবাসে। তারা ঠিক করেছে নিজেদের একটু গুছিয়ে নিয়েই বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সেরে ফেলবে।
একদিন বরকত তার সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে সালমাকে উঠিয়ে নিয়ে যায়।
সালমার বাবা পুলিশকে জানানোর প্রস্তুতি নিলে পাড়ার মুরুব্বিরা (দুইতলা লাল বিল্ডিংয়ের হক সাহেব, চৌদ্দ নম্বর বাড়ির চৌধুরী সাহেব, ইঞ্জিনিয়ার তালুকদার সাহেব এবং পাড়ার মুরুব্বি, সর্বজন শ্রদ্ধেয় সৈয়দ সাহেব) এসে বলেন, "আমরা থাকতে তোমার পুলিশের কাছে যেতে হবে কেন? আমরাই হারামজাদাটার বিচার করবো।"
নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজন আইন-আদালত এড়িয়ে চলে। সালমার বাবা হাশেম মিস্ত্রীও ব্যতিক্রম নন। কাজেই তাঁরা পাড়ার সালিশী বিচারের উপর আস্থা রাখেন।
দুই পক্ষের কথা শুনে সৈয়দ সাহেব পান চাবাতে চাবাতে বলেন, "আগুনরে মোমের কাছে আনলে মোমতো গলবোই। মাইয়া মাইনষের কাম হইতাছে গতর ঢাইকা চলাফেরা করা। ইসলামে পর্দা করা ফরয! তুমি বুকের উপরে উড়না দিবা না, জওয়ান পুরুষ কি হাতে হাত রাইখা বইসা থাকবো? জোয়ানির জোসে একটা ভুল কইরা ফেলছে, এখন এই নিয়া বেশি বাড়াবাড়ি না করাই ভালা। এতে এলাকার বদনাম হইবো। গু যত ছানাছানি করবা, গন্ধ ততই ছড়াইবো। মনে রাইখো হাশেম, তোমার আরও তিনটা মাইয়া আছে। তাগোরে বিয়া দিতে হইবো। এক মাইয়ার বদনামি বাকিগুলিরেও বিপদে ফালাইবো।"
সবাই তাঁর কথায় সায় দিলেন। বরকতকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হলো, এবং সেই সাথে তিরিশজন মিসকিনকে ভোজ।
সালমাকে বলা হলো ঘরের বাইরে বেশি চলাফেরা না করতে। আর বেরুতেই হলে সে যেন বোরখা ছাড়া না বেরোয়।
বিচার শেষে হাশেমতো হাশেম, সালমা পর্যন্ত মনে করতে লাগলো দোষ আসলে তারই ছিল।
মিজান যথা সময়ে পল্টি মেরে অন্য আরেকটি মেয়েকে বিয়ে করে ফেলে।
এবং বরকতকে আপনি ঠিকই সারাদিন মজনু মিয়ার দোকানে আড্ডাবাজি করতে দেখবেন। এখনও সে চা সিগারেট খেতে খেতে হিন্দি গানের তালে সমানে তাল ঠুকে যায়। মাঝেমাঝে শরীরে উত্তেজনা বেশি চলে আসে, সে তার সাঙ্গপাঙ্গসহ নাচতে শুরু করে দেয়।
ইদানিং তার চোখ পড়েছে ফাতেমার উপর। মেয়েটা পাড়ায় নতুন এসেছে। তাকে দেখলেই সে সুর তুলে গান গায়, "গান্দি বাআত.....গান্দি গান্দি গান্দি গান্দি গান্দি বাআত...."
দোষ শুধু সালমাদেরই না, নয় বছরের মুনিরা, ছয় বছরের শান্তা, অথবা চার বছরের মেহরিনও যদি কোন এক বরকতের লালসার শিকার হয়, আমরা সম্পূর্ন দোষ চাপিয়ে দেই শিকারের উপর। শিকারীর কোনই দোষ থাকেনা।
"চার বছরের শিশু হলেও কেন গতর ঢেকে চলাফেরা করেনি? আগুনের সামনে মোমকে আনলে মোমতো গলবেই!"
এইবারে আরেকটা ঘটনা বলি।
একদিন একটি তিন বছরের বাচ্চাকে তার মা গোসল করাতে গেলে বাচ্চা তার মাকে বলে উঠে, "Kiss my body."
তিনবছরের বাচ্চার মুখে এমন কথা শুনে তার মা একটু অবাক হন। তিনি জিজ্ঞেস করলে জানতে পারেন তার বেবি সিটার (বাংলাদেশে "বুয়া") ঐ অবস্থায় সব বাচ্চাকেই চুমু খায়।
একজন বাঙ্গালি মা হলে কী করতেন? ৯৫% সুযোগ আছে তিনি ঐ বেবি সিটারের কাছে নিজের বাচ্চাকে পাঠাবেন না। এবং ব্যপারটা একদম চেপে যাবেন।
ফল হবে সেই বেবিসিটার নির্বিঘ্নে "বাড়ির কাজ" চালিয়ে যাবে। নিত্যনতুন শিশু তার লালসার শিকার হবে।
বেবি সিটারের (ইলিয়েনা ফাস্টার) ভাগ্য খারাপ। সে ঘটনা অ্যামেরিকায় ঘটিয়েছে।
এই শিশুর মা সাথে সাথে পুলিশকে খবর দেন, এবং এরপরই কেঁচো খুড়তে গিয়ে গোখরা বেরিয়ে আসে। ইলিয়েনার স্বামী (ফ্রান্সিসকো ফাস্টার) একজন খুনের সাজাপ্রাপ্ত আসামী (চার বছর কারাবাস) এবং ইতিমধ্যেই নয় বছরের এক শিশুর সাথে fondling (আপত্তিকরভাবে "আদর" করা) এর জন্য সে প্রবেশনে (সঠিক বাংলা শব্দ আমার জানা নেই) আছে।
তিন চার বছরের শিশুরা কিই বা বাঁধা দিবে? তারা ইলিয়েনার কাছে যেতে চাইতো না, মা বাবা তাদের পাত্তা না দিয়ে রেখে আসতেন। ভয়ে বেচারারা কাউকে কিছু বলতে পারেনি। রাতে দুঃস্বপ্ন দেখে "মনস্টার মনস্টার" বলে চিৎকার করে উঠতো! মা বাবা মনে করতেন এমনিতেই বুঝি ভয় পাচ্ছে। সেই ছোট বয়সেই কী পরিমান মানসিক চাপ বুঝতে পারছেন?
অথচ বাচ্চারা সাক্ষ্য না দিলে দানবগুলির বিচার হবে কিভাবে?
সাইকোলজিস্ট ডাকা হলো। যারা তিন বছরের শিশুদের মানসিকতা ভাল বুঝতে পারতেন। শুরু হলো সাক্ষ্য গ্রহণ প্রক্রিয়া। সে কী বিভৎসতম অধ্যায়!
ছোট ছোট শিশুদের নিয়ে গ্রুপ সেক্স করা হতো! বাচ্চারা যাতে কাউকে কিছু না বলে সেজন্য ছুরি দিয়ে ভয় দেখানো হতো! আবার এসব অপকর্ম ভিডিও রেকর্ড করে রাখা হতো!
মা বাবা তাঁদের শিশুদের শরীরে অদ্ভূত কিছু দাগ আবিষ্কার করলে ইলিয়েনা বলতো, "ওটা ডাইপার র‌্যাশ!"
ভাগ্য ভাল জজ সাহেবও ছিলেন অ্যামেরিকান, আমাদের পাড়ার মুরুব্বি সৈয়দ সাহেব না। ফ্র্যাংক ফস্টারের একশো পয়ষট্টি বছরের কারাদন্ড হয়েছে। মাত্র তিরিশ বছর শেষ হয়েছে।
ইলিয়েনার সাজা ছিল দশ বছরের। হয়তো রাজসাক্ষী হওয়ায় তার উপর দয়া দেখানো হয়েছে। জেল থেকে বেরুবার সাথে সাথেই তাকে তার দেশ কিউবায় ফেরত পাঠানো হয়েছে। "বন্যেরা বনে সুন্দর।"
সবচেয়ে বড় কথা, বাচ্চাগুলো এখন সুস্থ্য আছে। কারন তাঁরা মনের কথা বলতে পেরে হালকা হতে পেরেছে।
কথা হচ্ছে, ফ্রান্সিসকো ফাস্টারদের কী শুধুই অ্যামেরিকায় পাওয়া যায়? বাংলাদেশে নেই? অবশ্যই আছে। তাহলে ওদের ধরা যায় না কেন? দোষ সৈয়দ সাহেবদের যেমন আছে, তেমনি বাচ্চার মা বাবাদেরও আছে।
"এই চুপ চুপ! কাউকে বলতে যেও না। শেষে বদনাম হয়ে যাবে!"
হায়রে "বদনাম!"
যে সমাজে একজন ধর্ষকের নয় বরং ধর্ষিতার "বদনাম" হয়, আপনার কী মনে হয়না সেই সমাজকে পাল্টানোর সময় এসেছে?
মানসিকতা বদলাতে হবে। খুব কী কঠিন?
একজন বিধবা নারীকে কেউ বিয়ে করতে চায়না। কেন? তিনি কুমারী নন।
একটি মেয়ের বিয়ের আগে "এফেয়ার ছিল" শুনলেই সবাই বিগড়ে বসেন। অথচ যেই ছেলে বিয়ে করতে চলেছে, সে কী নবী রাসূল? তার কোনই "লাইন" ছিল না?
একটি ডিভোর্সী মেয়েরতো বাংলাদেশী সমাজে বেঁচে থাকাটাই কষ্টের। "ডিভোর্স হয়েছে? নিশ্চই মেয়েটার দোষ!" রাতের বেলা সেই মেয়েটির ঘরেই কিন্তু আপনাকে উঁকি দিতে দেখা যায়।
আপনার মা, আপনার বাবা, আপনার বড় বোন এমন ফালতু ফালতু কথা বলছে, এবং আপনি কাপুরুষ চুপচাপ বসে বসে সব শুনছেন। আপনি সমাজ বদলাবেন কিভাবে?
আপনি নিজের বাড়ির লোকজনদের দিয়েই শুরু করুন। যখন আপনার বাবা, পাড়ার মুরুব্বি সৈয়দ সাহেব, ভরা মজলিশে নিজের বিচার শোনাবেন, আপনি দাঁড়িয়ে বলুন "এটি অন্যায়! বরকত হারামজাদাকে অতি অবশ্যই জেলে ঢুকানো উচিৎ এবং সালমাকে সমাজে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নিতে হবে। আর কোন কথা নাই!"
আল্লাহ কোরআনে বলেছেন "ন্যায় বিচারের জন্য নিজের বিরুদ্ধে হলেও যাও।"
যেখানে আল্লাহ নিজে আপনার সাথে আছেন, সেখানে আপনার কিসের ভয়?
আজকে আপনি সালমার জন্য দাঁড়ান, কালকে আপনার মেয়ের জন্য অন্য কেউ দাঁড়াবে!
*** বেশ কিছুদিন আগের লেখা আবার শেয়ার করলাম। লেখাটি পুরানো হলেও ব্যপারটিকে আমরা পুরানো হতে দিচ্ছি না মোটেও।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৩:২০
১৪টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×