somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জাতির পিতা নিয়ে প্যাচগি, ইব্রাহিম (আঃ) বনাম বঙ্গবন্ধু

২১ শে জুন, ২০১৭ রাত ৯:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এখন নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে "জাতির পিতা" নিয়ে। ইব্রাহিম (আঃ) এবং বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তর্ক। একপক্ষ আরেক পক্ষকে খেয়ে ফেলছে। নিতান্ত মূর্খ মানব থেকে শুরু করে সমাজের তথাকথিত সম্মানিত আঁতেল জ্ঞানভাণ্ডাররাও এই তর্কে যুক্ত হচ্ছেন।
আমার কথা পরিষ্কার, কেউ মানুক কী না মানুক, কুরআনে বলা হয়েছে ইব্রাহিম (আঃ) মুসলিম জাতির পিতা, তার মানে তিনি মুসলিম জাতির পিতা। কথা এখানেই শেষ। কারন যে কুরআন অস্বীকার করে, সে মুসলিম থাকেনা।
কেউ যদি ইনিয়ে বিনিয়ে বলার চেষ্টা করে তিনি অমুসলিম ছিলেন, তাহলে পাতা খাওয়া চতুষ্পদ থেকে উন্নতি ঘটে সে হাম্বা হাম্বা রব তোলা চতুষ্পদে পরিণত হয়েছে। এর বেশি কিছু না।
কারও গাত্র দাহ ঘটে, (১.) ইব্রাহিমকে পিতা বললেতো বঙ্গবন্ধুকে "জাতির পিতা" হিসেবে অস্বীকার করা হচ্ছে। কারন মানুষের একটাই পিতা হওয়া সম্ভব, দুইজন নয়।
কেউ কেউ ঘোষণা দিবে, (২.) মুসলিম কোন "জাতি" না, তাঁরা "সম্প্রদায়।" বাঙালি "জাতি" এবং এর পিতা বঙ্গবন্ধু।
কেউ আবার অতি বিজ্ঞ সাজার চেষ্টা করে বলবে, (৩.) "ইব্রাহিম (আঃ) যদি পিতা হন, তাহলে তাঁর আগের নবীদের কী হবে?"
তৃতীয় পয়েন্টেতো ছাগশিশু নিজেই ধরা পরে গেল। বঙ্গবন্ধু যদি বাঙালির পিতা হন, তাহলে তাঁর পূর্ববর্তীগণরা কী ছিলেন? বা কলকাতা তথা সমস্ত পশ্চিমবঙ্গের লোকেরা কী? তাঁরাওতো বাঙালি। তাঁরাও আমাদের মতোই বাংলায় কথা বলে, ভাত মাছ খায় এবং একই সংস্কৃতি বহন করে।
সহজ উত্তর, আমাদের ভাষায় শব্দটি ভিন্নভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এক্ষেত্রে হিন্দি শব্দটি আমার মনে হয় বেশি সঠিক। "রাষ্ট্র-পিতা।" গান্ধীজি ভারতের রাষ্ট্রপিতা। ফাদার অফ দ্য নেশনকে তাঁরা চমৎকারভাবে নিজেদের মতন করে এবং সঠিকভাবে অনুবাদ করেছে।
বঙ্গবন্ধুও আমাদের "রাষ্ট্রপিতা," তাঁর হাত ধরেই বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছে - এবং যেহেতু তাঁর আগের কোন বাঙালি (রবীন্দ্রনাথ, মাইকেল, বিদ্যাসাগর, নেতাজি প্রমুখ) বাংলাদেশের অধিবাসী ছিলেন না, এবং পশ্চিমবঙ্গের লোকজন ভারতের নাগরিক, বাংলাদেশের নয়, কাজেই সবদিক দিয়েই আমার ধারণা শব্দটি ফিট করে। মাথায় রাখতে হবে, অন্যান্য দেশের সাথে আমাদের পার্থক্য হচ্ছে, আমরা নিজেরাই নিজেদের "জাতিকে" ভাগ করে ভারত-পাকিস্তান-বাংলাদেশ হয়েছি। কাজেই "father of the nation" এর ট্রান্সলেশনটা আমাদের জন্য ভিন্ন হতেই হবে। উপায় নাই।
এইবার আসি দ্বিতীয় পয়েন্টে, যেখানে কেউ কেউ বলে, মুসলিমরা জাতি নয়, "সম্প্রদায়।"
তা বাবাজি, আমাদের নবীজি (সঃ) যেখানে স্পষ্টাক্ষরে ঘোষণা দিয়েছেন, "তোমরা আজ থেকে এক উম্মাহ, তোমাদের একজনের কষ্টে সমস্ত উম্মাহর কষ্ট হবে....." - এবং এখানে "উম্মাহ" শব্দের অর্থ "জাতি" - সেখানে তুমি বোমা ফাটিয়ে চিৎকার করলেও কিচ্ছু যায় আসেনা। মুসলিমরা এক জাতি কিভাবে হলো? তাঁরা একই সাথে রমজান মাসে রোজা রাখে, ঈদের দিনে নামাজ পড়ে, কুরবানীর ঈদে পশু কোরবান করে, নির্দিষ্ট কিছু খাদ্য এড়িয়ে চলে, দিনে পাঁচবার নিজের প্রভুর সামনে মাথানত করে - কালচারালি একটা নির্দিষ্ট ছকের মধ্যে থাকে। একই সংস্কৃতি বহন করে। সে যে অঞ্চলেরই মুসলিম হোক না কেন। সাদা হোক, কালো হোক, কী হলুদ চামড়ার অধিবাসী। মুসলিমরা কখনই গায়ের চামড়ার ভিত্তিতে নিজেদের ভেদাভেদ করতে পারবেনা। ভাষার ভিত্তিতেও নয়। নিয়ম নেই। তাই দেখা যায়, যে অঞ্চলেরই মুসলিম হোক না কেন, যে ভাষাতেই কথা বলুক না কেন, নামাজ সে ঠিকই আরবিতে পড়ে, এবং আরবি কুরআন পড়েই সে নির্দেশ গ্রহণ করে। এক নেতা মুহাম্মদকে (সঃ) মেনে চলে, এক প্রভু আল্লাহর দাসত্ব স্বীকার করে।
বাঙালি যেমন, যেখানেই থাকুক, বৈশাখে নববর্ষ পালন করে, ষোলই ডিসেম্বর বিজয়োৎসব করে, ছাব্বিশে মার্চ স্বাধীনতা দিবস পালন করে, একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষা শহীদ দিবস পালন করে এবং পৃথিবীর যে অঞ্চলেই বাংলাদেশ ক্রিকেট দল খেলুক না কেন, সাপোর্ট করে।
তাহলে একটি জাতি, আরেকটা সম্প্রদায় হয় কোন যুক্তিতে? গায়ের চামড়া? কেন? বাংলাদেশে কী ইউরোপ অ্যামেরিকানদের মতন ফর্সা বা আফ্রিকানদের মতোই কালো চামড়ার লোক নেই? ভাষা? আমার ছেলে যদি কালকে বাংলায় কথা বলতে তাঁর অসুবিধা হয়, যেটা বিদেশে বড় হওয়া লক্ষ লক্ষ শিশুদের ক্ষেত্রে হচ্ছে, তাঁরা কী বাঙালি নয়?
দেশের বুদ্ধিজীবীদের এখানেই সমস্যা, অতি আতলামো ফলাতে গিয়ে নিজের যুক্তিতে নিজেই প্যাঁচিয়ে ভূমিতে ধরাশায়ী হয়ে গোঁ গোঁ করতে থাকে।
এবং সবচেয়ে বড় পয়েন্টে আসি, প্রথমটা। ইব্রাহিম (আঃ) পিতা হলে বঙ্গবন্ধুকে পিতা ডাকা যাবেনা। এবং ভাইস ভার্সা। কারন বায়োলোজিক্যালি মানুষের একটাই পিতা হওয়া সম্ভব। দুইটা নয়।
কিন্তু ওহে জ্ঞান সাগর, ইসলাম বা বাংলাদেশের সাথে কী আমাদের "বায়োলোজিক্যাল" সম্পর্ক? দ্বৈত নাগরিকত্ব সম্পর্কে কী ভাইয়ের বিন্দুমাত্র ধারণা আছে? অ্যামেরিকান সিটিজেন একই সাথে নিজের দেশেরও সিটিজেন থাকতে পারবেন। মানে হচ্ছে, অ্যামেরিকান বাঙালিরও দুইটা জাতির পিতা, বঙ্গবন্ধু এবং জর্জ ওয়াশিংটন। অ্যামেরিকান মুসলিম বাঙালির সেখানে তিনজন। কোন সমস্যা? না। অতি মুক্তমনা অ্যামেরিকানরা এতে কিচ্ছু মনে করে না। করে আমগো দেশের ওয়ানাবি পোলাপান। যারা নিজেদের মুক্তমনা বলে দাবি করে, কিন্তু তাদের চাইতে সংকীর্ণমনা খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।
যাই হোক, একজন মুসলিম বাঙালি বলতেই পারে তাঁর জাতির পিতা ইব্রাহিম (আঃ) এবং "রাষ্ট্রপিতা" বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সে যদি বঙ্গবন্ধুকে বাঙালি "জাতির পিতা"ও বলে, তাহলেও সমস্যা নাই। যেহেতু আমাদের মহা আঁতেল সম্প্রদায় শব্দটির সঠিক অনুবাদের পরিবর্তে নিজেদের মধ্যে কামড়াকামড়ি নিয়ে ব্যস্ত।
সহজ সমাধান না দিয়ে যারা গিট্টু প্যাঁচিয়ে বেড়ায় এবং সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে - তাদের বুদ্ধিজীবী বলতে ইচ্ছে করেনা। সে যেই হোক না কেন।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুন, ২০১৭ রাত ৯:২৮
৬টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

×