somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাসূলের (সা.) ভূমিকাসমূহ - ১

২৩ শে জুন, ২০১০ সকাল ১১:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[এই পোস্টটা, যারা seriously ইসলাম সম্বন্ধে জানতে চান, তাদের জন্য। আমরা যখন প্রায় "নাস্তিক" একটা মস্তিষ্ক নিয়ে বড় হচ্ছিলাম, তখন চাইলেও ইসলাম সম্বন্ধে জানার তেমন সুযোগ ছিল না - বলা যায়: আজকের মত সহজলভ্য source বা resource কোনটাই তখন ছিল না। আজ তাই যারা "searching souls" - তাদের কাছে প্রয়োজনীয় তথ্য পৌঁছে দিতে বড় ইচ্ছা করে।]


রাসূলের (সা.) ভূমিকাসমূহ

……একটু গবেষণা করলে দেখা যবে যে, রাসূল (সা.)-এঁর গুরুত্ব, তিনি মুসলিম জাতির জন্য যে সমস্ত ভূমিকা পালন করেন, সে সবের মাঝে নিহিত। এই ভূমিকাগুলো সুন্নাহ ও হাদিসকে অনুসরণ করার অপরিহার্যতাকে আরো বেশী করে প্রতিষ্ঠিত করে। বহু স্কলার এইসব ভূমিকাকে লিপিবদ্ধ করে গেছেন। নবী (সা.)-এঁর বহুবিধ ভূমিকা সম্বন্ধে যদিও আলোচনা করা যেত, তবুও আমরা এখানে কেবল তাঁর চারটি প্রধান ভূমিকা সম্বন্ধে আলোচনা করব :

১)কুর’আনের ব্যাখ্যাকারী
২)স্বনির্ভর আইনপ্রণেতা
৩)নিখুঁত উদাহরণ

এবং
৪)যার আনুগত্য করতে হবে এমন ব্যক্তি।

(১)
কুর’আন ব্যাখ্যাকারী হিসেবে নবী মুহাম্মদ (সা.)

যারা ইসলামের বিরোধীতা করে তারা কুর’আন ও ইসলামকে নবীর (সা.) সুন্নাহ থেকে পৃথক করে দেখাতে চায়। আমরা ইতোমধ্যেই যেমন দেখিয়েছি যে, এরকম একটা দৃষ্টিভঙ্গী অগ্রহণযোগ্য। যেমনটা কেউ কেউ বর্ণনা করেছেন, সুন্নাহ হচ্ছে জীবন্ত কুর’আন। আয়েশা (রা.) যেমন বলেছেন, “আল্লাহর রাসূলের (সা.) চরিত্র ছিল কুর’আন” (বুখারী ও অন্যান্য কর্তৃক সংগৃহীত)। সুন্নাহর সাথে সম্পর্কহীনভাবে যারা কুর’আন ব্যাখ্যা করতে চাইবে, তাদের ব্যাপারে ওমর (রা.) মুসলিমদের সাবধান করে বলেছেন : “এমন মানুষজন আসবে যারা তোমাদের সাথে কুর’আনের জটিল আয়াতের ভিত্তিতে তর্ক করবে। তাদেরকে সুন্নাহ দিয়ে পরাভূত করবে, কেননা সুন্নাহর অনুসারীরা আল্লাহর কিতাবের ব্যাপারে সবচেয়ে জ্ঞানী।”

নবী (সা.)-এঁর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাসমূহের অন্যতম একটি, নিঃসন্দেহে ছিল এই যে, তিনি মানব জাতির কাছে কুর’আনের বক্তব্য পৌঁছে দেবেন, তাদেরকে তা শিক্ষা দেবেন, ব্যাখ্যা করবেন এবং কি করে এর অর্থ প্রায়োগ করতে হয় তা দেখিয়ে দেবেন। আমরা ইতোপূর্বে উল্লেখ করেছি এমন অনেক আয়াত যেগুলিতে তাঁর এই ভূমিকার উল্লেখ হয়েছে, তার অন্যতম হচ্ছে নীচের আয়াতটি:

“আল্লাহ মু’মিনদের প্রতি অবশ্যই অনুগ্রহ করেছেন যে তিনি তাদের নিজেদের মাঝ থেকে তাদের কাছে রাসূল প্রেরণ করেছেন যে তাঁর আয়াতসমূহ তাদের কাছে তিলাওয়াত করে, তাদেরকে পরিশুদ্ধ করে এবং কিতাব ও হিকমাহ্ শিা দেয় যদিও তারা আগে স্পষ্ট বিভ্রান্তিতেই ছিল।” ( সূরা আলে ইমরান, ৩:১৬৪)

এখানে নবী (সা.)-এঁর ব্যাপারে বলা হচ্ছে যে [সে] “তাঁর আয়াতসমূহ তাদের কাছে তিলাওয়াত করে”এবং “কিতাব ও হিকমাহ্ শিক্ষা দেয়”। এখানে নবী (সা.) পালন করে গেছেন এমন ২টি ভূমিকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে – তা না হলে এখানে অভিব্যক্তিগুলো বাহুল্য হয়ে যেত। নবী (সা.) জিবরাইল ফেশেতার কাছ থেকে ওহী লাভ করেছেন এবং মুসলিমদের কাছে তা পড়ে শুনিয়েছেন। এ ছাড়া একই সময়ে তিনি তাদেরকে সেই ওহীর মর্মার্থ শিক্ষা দিয়েছেন। এই প্রসঙ্গে হাবিবুর রহমান আজামী বলেন:

“উপরের তিনটি আয়াতের সমষ্টিতেই (২:৫১, ৩:১৬৪, ৬২:২) দুটো ব্যাপারে স্পষ্টভাবে এবং আলাদা আলাদাভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রথমত, ওহী তিলাওয়াত করা এবং দ্বিতীয়ত, কিতাব শিক্ষা দেওয়া।
প্রথমটির অর্থ, অর্থাৎ কিতাবখানির তিলাওয়াত, একেবারেই স্পষ্ট। কিন্তু দ্বিতীয়টি, অর্থাৎ, কিতাবখানি শিক্ষা দেওয়া – এই ব্যাপারে কিছু ব্যাখ্যার প্রয়োজন রয়েছে। ব্যাপারটা যদি নিয়মতান্ত্রিকভাবে কুর’আন আবৃত্তি করা, মানুষকে মুখস্থ করানো ইত্যাদি বোঝাতো তাহলে এটাকে তিলাওয়াতের থেকে আলাদা করে নির্দিষ্টভাবে বলার প্রয়োজন ছিল না। সুতরাং এটাই প্রমাণ করে যে, এ দ্বারা কুর’আনের আয়াতসমূহের ব্যাখ্যা ও তাফসীর এবং সেগুলোর অন্তর্নিহিত অর্থ, প্রজ্ঞা ও আদেশসমূহ বের করে নিয়ে আসার কথা বলা হয়েছে।
খোদ কুর’আন থেকে এভাবে এটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, নবীর কর্তব্যের মাঝে যেমন আল্লাহর ওহীর সরাসরি তিলাওয়াত ও প্রচার করার ব্যাপারগুলো ছিল, তেমনি সেগুলো স্পষ্ট করে দেয়া এবং তাফসীর করার ব্যাপারগুলো নবুওয়াতের কর্তব্য ছিল। যুক্তিসঙ্গতভাবেই বোঝা যায় যে, কুর’আনের বক্তব্যগুলো বাধ্যতামূলক এবং নিরঙ্কুশ। ঠিক যেমন নবীর (সা.) দেওয়া ব্যাখ্যাও। তা নাহলে তাকে কিতাবখানা শিক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব অর্পণ করা এবং সেটাকে তার নবুওয়াতের মিশনের অংশবিশেষ করাটা অর্থহীন হয়ে যেত। মোটকথা কুর’আনের এই বক্তব্যগুলোর উপর ভিত্তি করে বলা যায় যে, নবী (সা.) কেবল আল্লাহর একজন রাসূল ছিলেন না, বরং আল্লাহর বাণীর একজন শিক্ষক ও ব্যাখ্যাকারীও ছিলেন।”


কুরআনে আল্লাহ আরো বলেন:

“এবং আমরা তোমার প্রতি স্মরণিকা (কুর’আন) নাযিল করেছি, যাতে তুমি সমগ্র মানবজাতিকে তা বুঝিয়ে দাও যা তাদের জন্য নাযিল করা হয়েছে, যেন তারা তা নিয়ে চিন্তা ভাবনা করতে পারে।” (সূরা নাহল, ১৬:৪৪)

আলবানী বলেন যে, এই আয়াতের দু’টো অর্থ রয়েছে। প্রথমত, আল্লাহর রাসূল (সা.) যে ওহী লাভ করেছেন, তার কোনকিছুই তিনি গোপন করবেন না বরং তিনি অবশ্যই তার সবটুকুই মানবজাতির কাছে পৌঁছে দেবেন। দ্বিতীয়ত, এর অর্থ হচ্ছে এই যে, কুর’আনের বিস্তারিত ব্যাপারগুলো ব্যাখ্যা করা এবং কিভাবে কুর’আন প্রয়োগ করতে হবে তা দেখিয়ে দেওয়াও আল্লাহর রাসূলের (সা.) কর্তব্য।
স্পষ্টতই আল্লাহ তাঁর রাসূলের (সা.) উপর কুর’আন ব্যাখ্যা করার এই বোঝা চাপিয়ে দিতেন না, যদি তিনি নবীকে (সা.) কুর’আন ব্যাখ্যা করার প্রয়োজনীয়তা জ্ঞান দান না করতেন। অন্যথায়, “সমগ্র মানজাতিকে তা বুঝিয়ে দাও” – এই কাজটি তাঁর জন্য অসম্ভব হতো এবং আল্লাহ কোন বান্দার উপরই তার বহন ক্ষমতার বেশী বোঝা চাপিয়ে দেন না। সুতরাং নবী (সা.) যখন কথা বলেছেন অথবা কোন কাজ করেছেন, তিনি তখন কুর’আন প্রয়োগ করছিলেন এবং ব্যাখ্যা করছিলেন – এই কর্ম সমাধা করার উদ্দেশ্যে আল্লাহ তাঁকে যে জ্ঞান দান করেছিলেন সেই অনুযায়ী। ‘ওহীর ব্যাখ্যাকারী’ হিসেবে তাঁর যে ভূমিকা সেটা পালন করতে গিয়েই তিনি তা করছিলেন। সুতরাং যখনি আল্লাহর রাসূল (সা.) কোন আয়াত ব্যাখ্যা করছিলেন বা প্রয়োগ করছিলেন, সেই ব্যাখ্যা বা প্রয়োগের ভিত্তি ছিল ঐ আয়াত নাযিল করার পেছনে আল্লাহর যে উদ্দেশ্য ছিল সেটা – নবী (সা.)-কে আল্লাহ যে ব্যাপারে আগেই অবহিত করেছিলেন। সূরা আল-কিয়ামাহর নিম্নলিখিত আয়াতের নিহিতার্থও হচ্ছে তাই:

”ওহী আয়ত্ব করার জন্য তুমি তাড়াহুড়া করে তোমার জিহ্বা সঞ্চালন করো না, এটা সংরক্ষণ ও পড়ানোর দায়িত্ব আমাদেরই। সুতরাং আমরা যখন তা পাঠ করি, তুমি সেই পাঠের অনুসরণ কর। অতঃপর এর বিশদ ব্যাখ্যার দায়িত্ব আমাদেরই।” (সূরা আল-কিয়ামাহ্, ৭৫:১৬-১৯)

নবী (সা.)-কে সঠিকভাবে কুর’আন গ্রহণ করার আদেশ দেয়া হয়েছে এবং বলা হয়েছে যে, আল্লাহ তারপর সেটার অর্থ পরিষ্কার করে দেবেন। প্রথমে তাঁর কাছে পরিষ্কার করে দেয়া হবে এবং তারপরে তাঁর মাধ্যমে বাকী গোটা মানবজাতির কাছে তা ব্যাখ্যা করা হবে। উপরোক্ত আয়াতে (১৬: ৪৪) একথা বলা হচ্ছে যে, কেউ যদি আল্লাহর ব্যাখ্যা এবং কুর’আনের প্রয়োগ সম্মন্ধে জানতে চায়, তবে তাকে রাসূলের (সা.) সুন্নাহর শরণাপন্ন হতে হবে। এই আয়াতে এটা পরিষ্কার ভাবে বলা হয়েছে যে, এটা হচ্ছে নবী (সা.) ভূমিকাসমূহের একটি যে, তাঁকে মানবজাতির কাছে কুর’আন ব্যাখ্যা করতে হবে। এরকম একটা ভূমিকা যদি অপ্রয়োজনীয় হতো, তবে গোটা কুর’আনকে একত্রে একটা পাহাড়ের উপর-নাযিল করলেই হতো – এর সাথে কোন রাসূল প্রেরণের প্রয়োজন ছিল না। কিন্তু আল্লাহ তাঁর অসীম প্রজ্ঞাবলে তেমনটা করেন নি। এবং তিনি যেটা করেছেন তার কারণ সম্মন্ধে মানবজাতিকে ভাবার অবকাশ দিয়েছেন।

[Page#103~107, The Authority and Importance of Sunnah - Jamaal al-Din M. Zarabozo, বই থেকে অনুদিত]

[চলবে........ইনশা'আল্লাহ্]
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×