somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঈমান বিনষ্টকারী বিষয়সমূহ - ১

২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১১:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[লেখাটা মূলত বিশ্বাসী মুসলিম ভাই-বোনদের জন্য, তবে অন্যরাও আগ্রহ বোধ করলে পড়ে দেখতে পারেন]

ভূমিকা: এই ব্লগে আমার বিচরণ অনেকদিন। একটা বিষয় আমাকে খুব পীড়া দেয় – অনেক সময়ই দেখা যায় একজন মুসলিম নামধারী মানুষ ইসলাম, আল্লাহ্, রাসূল(সা.), কুর’আন বা হাদীস সম্বন্ধে হালকাভাবে এমন একটা মন্তব্য করে বসেন, যার পরে theoretically তার আর মুসলিম থাকার কথা নয়। এধরনের ঘটনার frequency গত ৭ বছর+ ধরে উত্তর উত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে দেখছি বলেই মনে হয়। ব্যাপারটা তিনি সজ্ঞানে করে থাকলে আলাদা কথা। কিন্তু, না বুঝে করে থাকলে তা তার জন্য কতই না দুর্ভাগ্যজনক! কাউকে অমুসলিম প্রতিপন্ন করা আমার উদ্দেশ্য নয় এবং তাতে আমার কোন লাভও নেই। কিন্তু অনেকবারই মনে হয়েছে তাকে/তাদেরকে সতর্ক করে দেয়া বোধহয় আমার ঈমানী দায়িত্ব। একবার জানিয়ে দেয়ার পরে, তিনি নিজেকে নিয়ে কি করলেন, তা আমার দেখবার বিষয় নয়! এই তাগিদ থেকেই আজকের লেখাটায় হাত দেয়। যদি আপনাদের কোন কাজে লাগে তবে সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর – আলহামদুলিল্লাহ্!

মূল বক্তব্য: আল্লাহয় ও আখরাতে বিশ্বাসী মুসলিমদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে, পরকালের জীবনে জান্নাত লাভ করা। মুসলিমদের জীবনের সকল কর্মকান্ডই তাই, ঐ একটি লক্ষ্যকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হবে, এটাই স্বাভাবিক। সকালে ঘুম থেকে উঠে দৈনন্দিন জীবন শুরু করার পর থেকে, দিনশেষে, আবার রাতে ঘুমাতে যাবার আগ পর্যন্ত আমরা যত কাজ করি – সব কাজে আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের চেষ্টা করি, মূলত জান্নাতে যাবার আকাঙ্খা থেকেই। কিন্তু মুসলিম মাত্রই জানেন যে, জান্নাত লাভের পূর্বশর্ত হচ্ছে ঈমান, তাই জান্নাতে যেতে হলে আমাদের মৃত্যু পর্যন্ত ঈমানের উপর থাকতে হবে – আর সেজন্য, ঈমান বলতে কি বুঝায়, কি কি বিশ্বাস করা ঈমানের জন্য অপরিহার্য্য ইত্যাদি জানার পাশাপাশি, কি কি কারণে আমাদের ঈমান নষ্ট হয়ে যেতে পারে সেটা জানাটা অত্যন্ত জরুরী। কুর’আনে আল্লাহ্ বলেন:
“হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যথাযথ ভয়। আর তোমরা মুসলমান হওয়া ছাড়া মারা যেও না।“ (কুর’আন, ৩:১০২)

আরবী ভাষার রীতি অনুযায়ী এই আয়াতের সঠিক অর্থ দাঁড়ায় এমন যে, আল্লাহ্ আমাদের বলছেন: আমরা যেন অমুসলিম অবস্থায় মারা না যাই – অর্থাৎ মৃত্যুর সময় যেন মুসলিম অবস্থায় থাকি। আর তা থাকতে হলে, কি কি কারণে আমাদের ঈমান নষ্ট হয়ে যেতে পারে, বা, কি ঘটে গেলে আমরা সারাজীবন মুসলিম নাও থাকতে পারি তা জানাটা অত্যন্ত জরুরী। আমরা সারাজীবন মুসলিম থেকেও যদি মৃত্যুর ৬ মাস, ৬ দিন, ৬ঘন্টা বা ৬ মিনিট আগেও ঈমান হারিয়ে অমুসলিম হয়ে যাই - তা হলে আমাদের সকল সৎকর্ম ও ইবাদত বৃথা হয়ে যাবে – আমরা আর জান্নাত আশা করতে পারবো না।
আমরা মুসলিমরা যখন জীবনের প্রারম্ভে অযু করতে শিখি, তখন কি কি কারণে আমাদের অযু থাকে না সেটা জানাটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাড়ায় খুব সহজ কারণে: যে ইবাদতগুলোতে অযু অপরিহার্য্য (যেমন নামায বা সালাত, তাওয়াফ ইত্যাদি), অযু না থাকলে সেগুলো সমাধা হবে না বরং আমাদের প্রচেষ্টা পন্ডশ্রমে পরিণত হবে। তাই কিসে অযু ভঙ্গ হয় তা যদি আমরা না জানি, তবে অযু করার পর অযু আছে মনে করে আমরা হয়তো কোন ইবাদতের জন্য অনেক মেহনত করলাম, কিন্তু কার্যত দেখা গেলো অযু করার সাথে সাথেই হয়তো আমাদের অজ্ঞাতসারে আমাদের অযু ভঙ্গ হয়ে গিয়েছিল আর সেহেতু, আমাদের সকল ইবাদত-প্রচেষ্টা বিফলে গেলো। পাঠক হয়তো জেনে থাকবেন যে, কাবাসংলগ্ন মক্কার মসজিদুল হারামে ১টা সালাতের সওয়াব, অন্যত্র ১ লক্ষ সালাতের সওয়াবের সমান। এজন্য যারা হজ্জ্ব বা উমরাহয় যান, তারা চান ওখানে বেশী বেশী ইবাদত করতে। কিন্তু আপনার যদি অযুই না থাকে, তবে ঐ রকম ফজিলতের স্থানও আপনার কোন উপকারে আসবে না! একইভাবে ঈমান আনার সাথে সাথে ঈমানদার বান্দাদের এটাও জানা উচিত যে, কিসে কিসে ঈমান বিনষ্ট হয়ে যায় – কেউ ইসলাম থেকে বেরিয়ে যায়। অযুর মতই, আপনার যদি ঈমান ভঙ্গ হয়ে যায়, তাহলে কোথায় কোন ফজিলতের জায়গায় বা ফজিলতের সময়ে কত ইবাদত করলেন তা অর্থহীন হয়ে যায়। সেজন্যই ঈমান/ইসলাম ভঙ্গের কারণগুলো যে কোন মুসলিমের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জানা আবশ্যক! বিশ্বমানের প্রায় সকল স্কলারই অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে এই বিষয়টা নিয়ে কথা বলেছেন, লিখে গেছেন। অথচ, আমাদের দেশের সারাজীবন-৫ওয়াক্ত-সালাত-আদায়-করা বহু মুসলিমই হয়তো এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারগুলো সম্বন্ধে কখনো শোনেনই নাই!

আজকে আমরা প্রথমেই যে কয়টি বিষয়ের জন্য কোন মুসলিমের ঈমান বিনষ্ট হয়ে যায়, সেগুলো শুধু পয়েন্ট আকারে উল্লেখ করবো ইনশা’আল্লাহ্। যে বিষয়গুলোতো ঈমান/ইসলাম বিনষ্ট হয়ে যায় সেগুলো হচ্ছে:

১) কোন প্রকার (বড়) শিরকে লিপ্ত হওয়া।
২) নিজের এবং আল্লাহর মাঝে কাউকে মধ্যস্থতাকারী জ্ঞান করা।
৩) অমুসলিমদের অবিশ্বাসী মনে না করা।
৪) মুহাম্মদ (সা.) যা নিয়ে এসেছিলেন, তার চেয়ে উন্নততর কোন জীবনব্যবস্থা বা পথ-নির্দেশনা রয়েছে এমন মনে করা।
৫) দ্বীনের (ইসলামের) অবিচ্ছেদ্য কোন অংশকে অপছন্দ করা – যদি বাস্তবে বা বাহ্যিকভাবে কেউ তা পালন করেও থাকে।
৬) দ্বীনের কোন বিষয় বা তা পালনকারীদের নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করা।
৭) যাদু-টোনা করা।
৮) অবিশ্বাসীদের সমর্থন করা এবং তাদের প্রতি আনুগত্য জ্ঞাপন করা।
৯) কারো কারো শরিয়ত না মানলেও চলে – এমন বিশ্বাস পোষণ করা।
১০) দ্বীনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি না শেখা ও না প্রয়োগ করার মাধ্যমে দ্বীন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া।
১১) দ্বীনের অবিচ্ছেদ্য কোন অংশকে অস্বীকার করা।
১২) (কারো কারো মতে)সালাত পরিত্যাগ করা, তবে সকল আলেম এমন মনে করেন না।

আমরা আগামী পর্বগুলোতে প্রত্যেকটি পয়েন্ট বিস্তারিত আলোচনা করবো ইনশা’আল্লাহ্!

[এর পরের পর্বটি রয়েছে এখানে view this link]
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১২:২২
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯

মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা বলতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×