somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঈমান বিনষ্টকারী বিষয়সমূহ - ২

০৩ রা অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১২:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[আগের পর্বের ধারাবাহিকতায়। আগের পর্বটি রয়েছে এখানে: view this link]

১) কোন প্রকার (বড়) শিরকে লিপ্ত হওয়া।

যে কয়টি কারণে একজন মুসলিম তার ঈমান হারিয়ে অমুসলিম হয়ে যেতে পারেন, তার মাঝে সবার আগে আসবে “বড় শিরক”! ইসলামী পরিভাষায়, “শিরক” অর্থ হচ্ছে কাউকে বা কিছুকে আল্লাহর অংশীদার জ্ঞান করা। এই “শিরক” দুই প্রকার: “বড় শিরক” ও “ছোট শিরক”। এর মাঝে “বড় শিরক” করলে, যে কারো ঈমান নষ্ট হয়ে যেতে পারে এবং সে অমুসলিম হয়ে যেতে পারে। আর “ছোট শিরক”ও একটা বিশাল গুনাহ্ – যা সকল কবীরাহ্ গুণাহর চেয়ে বড় – কিন্তু তবু, তা মানুষকে ইসলাম থেকে বের করে দেয় না!

কুর’আনে এবং হাদীসে “শিরক” কথাটা ঘুরে ফিরে এসেছে এবং কুর’আনে “শিরক” বলতে মূলত যা মানুষকে মুশরিকে পরিণত করে, সেটাই বোঝানো হয়েছে – অর্থাৎ যাতে লিপ্ত হলে সে আর মুসলিম থাকে না; তওবা না করে সেই অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে সে চির জাহান্নামী হবে। কুরআনের বহু বহু আয়াতে শিরকের ভয়াবহ পরিণতি, ক্ষতি ও শাস্তির কথা বলা হয়েছে। তবু সবচেয়ে বেশী উদ্ধৃত দু’টি আয়াত আমরা প্রথমেই উল্লেখ করবো ইনশা’আল্লাহ্!

“নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে শরীক করাকে ক্ষমা করেন না। তিনি ক্ষমা করেন এ ছাড়া অন্যান্য পাপ, যার জন্য তিনি চান। আর যে আল্লাহর সাথে শরীক করে সে অবশ্যই মহাপাপ রচনা করে।“ (কুর’আন, ৪:৪৮)
“অবশ্যই তারা কুফরী করেছে, যারা বলেছে, ‘নিশ্চয় আল্লাহ হচ্ছেন মারইয়াম পুত্র মাসীহ’। আর মাসীহ বলেছে, ‘হে বনী ইসরাঈল, তোমরা আমার রব ও তোমাদের রব আল্লাহর ইবাদাত কর’। নিশ্চয় যে আল্লাহর সাথে শরীক করে, তার উপর অবশ্যই আল্লাহ জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন এবং তার ঠিকানা আগুন। আর যালিমদের কোন সাহায্যকারী নেই।“ (কুর’আন, ৫:৭২)

উপরে উদ্ধৃত আয়াত দু’টির সমন্বিত অর্থ দাঁড়ায়:
আল্লাহ শিরক ক্ষমা করেন না। যে শিরক করে মারা গেল (তওবা না করে, পুণরায় ঈমান সঠিক না করে) তার জন্য জান্নাত হারাম এবং সে চিরজাহান্নামী।

আরবী তথা কুর’আনিক পরিভাষায় দেখবেন কোন একটা শব্দ বা অভিব্যক্তিকে বোঝাতে তার বিপরীত শব্দ বা অভিব্যক্তি ব্যবহার করা হয়। সে দিক থেকে বলতে গেলে বলতে হবে: শিরক হচ্ছে তৌহীদের বিপরীত ধারনা। ইসলামের সকল কর্ম-কান্ড, ইবাদত, করণীয় ও বর্জনীয় – এই তৌহীদের ধারণাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়। বিধর্মী বা বহিরাগত কেউ যদি জিজ্ঞেস করে: What Islam is all about? আপনি চাইলে একবাক্যে বলতে পারেন/পারতেন: لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ বা “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্" - অর্থাৎ, “আল্লাহ্ ছাড়া ইবাদতের যোগ্য আর কোন ইলাহ্ বা deity নেই”! আর যদি আপনি এক শব্দে জবাব দিতে চাইতেন তাহলে বলতে পারেন/পারতেন: তৌহীদ! তৌহীদ বা আল্লাহর একত্ব বা অদ্বিতীয়তাকে কেন্দ্র করেই ইসলামের সকল কর্মকান্ড পরিচালিত হয়। তৌহীদ নিয়ে লিখে শেষ করা যাবে না। তবু, একদম অল্প কথায় বলতে চাইলে আমরা বলতে পারি: যা কিছুর অস্তিত্ব ছিল/আছে/থাকবে তার সবকিছু একদিকে আর আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা আরেক দিকে – এভাবে সবকিছু থেকে আল্লাহকে আলাদা করে তার ইবাদত করতে হবে। মনে রাখতে হবে আর কিছুই আল্লাহর মত নয়। আপনার তৌহীদ ভিত্তিক দ্বীনের যাত্রা শুরু হবে এখান থেকে! এই যাত্রায়, আপনার কল্পনায়, উদাহরণ স্বরূপ, কখনো যদি একটা বিশাল/বিকট/ভয়ঙ্কর আকার/আকৃতির বৃক্ষকে দেখে মনে হয় ওটা বোধহয় ঈশ্বর: আরাধ্য বা পূজনীয় - সাথে সাথে তৌহীদের একেবারে মূল জায়গায় ফিরে যেতে হবে – মনে করতে হবে: আর কিছুই আল্লাহর মত নয়। আপনার ধ্যান, ধারণায়, কল্পনায়, বুদ্ধিতে যা কিছুকে আল্লাহ্ বলে মনে হয় বা আল্লাহর মত মনে হয়, আল্লাহ্ হচ্ছেন তার otherness। [এভাবেই আমরা দেখি কুর’আনে ইব্রাহীম (আ.) সূর্য, তারা ইত্যাদির ব্যাপারে যুক্তি পেশ করেন।] এই কথাটা (আর্থাৎ, আর কিছুই যে আল্লাহর মত নয়), কুর’আনের দুইটি আয়াতে খুব স্পষ্টভাবে বলা আছে যার একটি, আমরা বিশ্বাসীরা, খুব ঘন ঘন পড়ি, কিন্তু হয়তো সেভাবে খেয়াল করি না – সেটা হচ্ছে সূরাহ ইখলাসের শেষ আয়াত:

“And there is none co-equal or comparable unto Him.” (Noble Qur’an, 112:4)
“আর তাঁর কোন সমকক্ষও নেই।“ (বায়ান ফাউন্ডেশন অনুবাদ, ১১২:৪)
“আর তাঁর সমতুল্য কেউ নেই।“ (ইবন কাসীর অনুবাদ, ১১২:৪)

অপরটি হচ্ছে সূরা শুরার ১১ নম্বর আয়াত:
“তিনি আসমানসমূহ ও যমীনের স্রষ্টা; তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে জোড়া বানিয়েছেন এবং চতুষ্পদ জন্তু থেকেও জোড়া বানিয়েছেন, (এভাবেই) তিনি তোমাদেরকে ছড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর মত কিছু নেই আর তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা।“ (কুর’আন, ৪২:১১)

শিরক নিয়েও শত শত পৃষ্ঠা লেখা যায়। বাংলায় শিরকের উপর বিস্তারিত তথ্য নিয়ে লেখা বইয়ের একটি হচ্ছে: শিরক কি ও কেন? ড.মুহাম্মদ মুয্‌যাম্মিল আলী, তাওহীদ পাবলিকেশন, ঢাকা। বইটি ই-বুক আকারে ইনশা’আল্লাহ্ এখানে পাওয়া যাবে:view this link

সুযোগ পেলে আমরা তৌহীদ ও শিরকের উপর বিস্তারিত জ্ঞান লাভ করবো ইনশা’আল্লাহ্! আপাতত অন্তত ঈমান বিনষ্টকারী বিষয়ের প্রথমটি, অর্থৎ (বড়) শিরক, কত প্রকার ও কি কি তা আমাদের জানতে হবে, আর তা থেকে মৃত্যু পর্যন্ত বেঁচে থাকতে হবে! ইসলামের ‘আলেমগণ চার ধরনের কাজকে (বড়) শিরক বলে চিহ্নিত করে থাকেন – অর্থাৎ শিরক চার প্রকার। সেগুলো হচ্ছে:

ক)প্রর্থনায় শিরক – আল্লাহ্ ছাড়া কারো কাছে প্রাথর্না করা বা দোয়া করা। যেমন কোন পীরের কাছে সন্তান বা সম্পদ প্রর্থনা করা।
খ)নিয়তে শিরক – যে কাজগুলো কেবল আল্লাহর উদ্দেশ্যে করা যায়, সেগুলো অন্য কারো জন্য করার নিয়ত করা। যেমন আল্লাহ্ ছাড়া কারো জন্য বা কারো উদ্দেশ্যে কুরবানী করা।
গ)আনুগত্যে শিরক – কারো আনুগত্য করতে গিয়ে আমরা যদি আল্লাহর অবাধ্য হয়ে যাই, তাহলে সেটা আনুগত্যে শিরক হবে।
ঘ) ভালেবাসায় শিরক - কাউকে বা কোনকিছুকে আমরা যদি আল্লাহর চেয়ে বেশী ভালোবাসি, তাহলে সেটা ভালোবাসায় শিরক হবে।

(চলবে ইনশা'আল্লাহ্.....)

[এর পরের পর্বটা রয়েছে এখানে: view this link]
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১১:০৩
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×