somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

'ক্বদ খালাত মিন ক্ববলিহির রসুল' ও কাদিয়ানিদের সংশয় নিরসন

২৮ শে জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৪:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

'ক্বদ খালাত মিন ক্ববলিহির রসুল' ও মিথ্যাবাদী গোলাম আহমদের অনুসারী কাদিয়ানিদের সংশয় নিরসন

আবুল আর বাবুল দুটি চরিত্রের দুই ব্যক্তির মধ্যকার কথোপকথন। এখানে আবুল চরিত্রের লোকটি কাদিয়ানী মতবাদে প্রভাবিত এবং ঈসা (আ) সম্পর্কে ভ্রান্ত আকিদা পোষণকারী।

আবুল - বাবুল ভাই আপনি জানেন কি, হযরত ঈসা (আ) জীবিত নেই, একথা পবিত্র কুরআন (আলে ইমরান) দ্বারা সাব্যস্ত আছে। অর্থাৎ পৃথিবীতে আকাশ থেকে তাঁর পুনঃ আগমনের প্রচলিত বিশ্বাস ঠিক না।

বাবুল - বেশ তো, আয়াতটি বল দেখি!

আবুল - আল্লাহতালা বলেন, "ওয়া মা মুহাম্মাদুন ইল্লা রাসূল। ক্বদ খালাত মিন কবলিহির রসুল।" এই আয়াত দ্বারাই সাব্যস্ত।

বাবুল - তো এই আয়াতের অর্থ কী?

আবুল - কেন! আপনি অর্থ দেখে নিতে পারেন না?

বাবুল - অবশ্যই অর্থ দেখে নিতে পারি! তবে তোর থেকেই অর্থ দেখে নিতে চাচ্ছি এই আর কি! সুতরাং আয়াতের অর্থ কর! আমি তোর উল্লিখিত দাবী ঠিক না বেঠিক তা ভালভাবে দেখে নিতে চাই!

আবুল - আচ্ছা তাহলে আমি নিজেই অর্থ করে দিচ্ছি। আয়াতের অর্থ "এবং মুহাম্মদ একজন রাসূল ছাড়া কিছুই নয়, তার পূর্বেও সকল রাসূল মারা গেছেন।"

বাবুল - আবুল! আয়াতটির শাব্দিক অনুবাদ করে দিতে পারবি? তাহলে আমি পরিষ্কার হতে পারতাম যে, কোন শব্দের কেমন অর্থ নিয়েছিস!

আবুল - "(ওয়া) এবং (মা) নয় (মুহাম্মদ) মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (ইল্লা) ছাড়া (রাসূল) একজন রাসূল, (ক্বদ খালাত) মরে গেছে, (মিন ক্ববলিহি) তার পূর্বেও (আর-রসুল) সকল রাসূল।" {শাব্দিক অনুবাদ শেষ হল}।

বাবুল - ধন্যবাদ তোকে। তোর সাথে আলোচনা করতে এবার আমার জন্য সহজ হবে। কিন্তু আবুল ভাই! তুই তো দাবি করে বলেছিস যে "ঈসা (আ) জীবিত নেই" এই কথা নাকি পবিত্র কুরআন দ্বারা সাব্যস্ত! অথচ তোর পেশকৃত আয়াত তো এমন কিছুই বলেনা! এমনকি সেখানে ঈসা (আ)-এর নামগন্ধটুকুও নেই। তবে কি তুই নিজের কথাকে কুরআনের নামে জোর করে আমাকে গিলাইতে চাচ্ছিস?

আবুল - আরে ভাই! আপনার তো দেখছি আধ্যাত্মিক চোখ-ই নষ্ট হয়ে গেছে। আগে আধ্যাত্মিক চোখ চিকিৎসা করে আসুন! তখন নিজেই সব কিছু বুঝতে পারবেন!

বাবুল - রাগ করলি বুঝি! প্রবাদ আছে না, রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন! তাই রাগ করবি না কিন্তু! আমি তো তোর দাবীর সাথে বাস্তবতার মিল খুঁজে পাচ্ছিনা বলেই এভাবে প্রশ্ন করলাম!

আবুল - আপনি কি আয়াতে "ক্বদ খালাত" শব্দ দেখতে পাচ্ছেন না?

বাবুল - জ্বী হ্যাঁ, দেখতে তো পাচ্ছি! কিন্তু তার সাথে হযরত ঈসা (আ)-এর জীবিত থাকা আর না থাকার সম্পর্ক কোথায়?

আবুল - সম্পর্ক অবশ্যই রয়েছে। আল্লাহতালা এখানে "ক্বদ খালাত" ক্রিয়াপদ এনে বুঝাতে চেয়েছেন যে, 'মুহাম্মদ (সা)-এর পূর্বেও যত রাসূল ছিলেন তারা সবাই মারা গিয়াছেন।' আর যেহেতু ঈসা (আ) তিনি মুহাম্মদ (সা)-এর পূর্বেকার একজন রাসূল। সুতরাং উক্ত আয়াতের সারমর্ম দাঁড়াল, ঈসা (আ)ও মারা গেছেন।

বাবুল - দুঃখিত আবুল!

আমি জেনেবুঝে আল্লাহতালার উপর এইরকম একটা জঘন্য মিথ্যা কিছুতেই রটাতে পারব না! কেননা আল্লাহতালা উক্ত আয়াত দ্বারা এইরকম কোনো কথা কিভাবে বুঝাতে পারেন যেখানে "খালাত" শব্দের আক্ষরিক অর্থ "মৃত্যু" নয়, বরং 'ক্বদ খালাত' (قد خلت) অর্থ "গত হইয়া গিয়েছে"। তার মানে পূর্বেকার রাসূলদের কেউ বিল-মওত তথা মৃত্যুবরণের মাধ্যমে ইহকালীন জীবন থেকে লোকান্তরিত হয়েছেন আর কেউ বা (কিছুদিনের জন্য) বিল-রফ'য়ি ইলাস সামায়ী তথা আকাশে উঠিয়ে নেয়ার মাধ্যমে লোকান্তরিত হয়েছেন। যেমন ঈসা (আ)। সূরা আলে ইমরান আয়াত নং ৫৫ দ্রষ্টব্য। বহু সহীহ হাদীস এর সমর্থক। (অন্য পোস্টে সবিস্তারে লিখা আছে)।

আবুল- আরে বাবুল ভাই! আপনি হয়ত জানেন না, "খালাত" শব্দটি এখানে 'মৃত্যু' অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছে। কেননা, তার পরেই 'মৃত্যু' আর 'হত্যা' শব্দদুটি রয়েছে। এতে বুঝা গেল, ইহকালীন জীবন থেকে গত হওয়ার পদ্ধতি মৃত্যু কিবা হত্যা এই দু'য়ের বাহিরে নয়।

বাবুল - আবুল সাহেব! প্রথমকথা হল, আমি আরবী ভাষার যতগুলো ডিকশনারি দেখেছি তার কোথাও "খালাত" শব্দের অর্থ 'মৃত্যু' পাইনি। তাই এখানে তোর 'খালাত' অর্থ "মৃত্যু" ধরে নিয়ে অর্থ করা ঠিক হয়নি। দ্বিতীয়কথা হল, "খালাত" শব্দের পরে 'মৃত্যু' আর 'হত্যা' যে দুটো শব্দ দেখতে পাচ্ছিস সেগুলো হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথেই বিশেষভাবে সম্পর্কিত। এখানে আয়াতটির আলোচিত ব্যক্তিও কিন্তু হযরত মুহাম্মদ (সা)। তাই তোর উপরিউক্ত যুক্তি বাহ্যিকভাবে যতই সুন্দর দেখায় না কেন, কিন্তু তোর ব্যাখ্যাটি খাসকে আম (ব্যাপক) অর্থে ধরে নেয়ায় বাতিল হয়ে গেছে। কারণ তুই এক জায়গার পানি আরেক জায়গায় ঢালার চেষ্টা করেছিলে। কাজেই বহু সহীহ হাদীসের বিরুদ্ধে গিয়ে তোরা যেভাবে পবিত্র কুরআনকে নিজের মতকরে ব্যাখ্যা দিয়ে 'ঈসা (আ) জীবিত নেই' বলে বেড়াচ্ছিস এসব ভুল। এখন থেকে এসব বাদ দেয়।

তর্কের খাতিরে তোর কথাই ধরে নিই যে, খালাত শব্দের অর্থ 'মৃত্যু'। কিন্তু মহা সমস্যা তখনি দেখা দেয় যখন দেখলাম, খোদ মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী সাহেব নিজেও "খালাত" শব্দের অর্থ 'মৃত্যু' নেয়া থেকে বিরত থাকলেন! তুই মির্যা সাহেবের রচনা সমগ্র  ২৩ খন্ডের "রূহানী খাযায়েন" এর ৩য় খন্ডের ৫৮৮ নং পৃষ্ঠাটি খুলে দেখ। তিনি "ক্বদ খালাত" (قد خلت) এর অনুবাদ (ঊর্দূতে) করেছেন گزر چکے ہیں অর্থাৎ তাঁর পূর্বে সমস্ত রাসূল-ই গত হইয়া গিয়াছে । আবুল ভাই! এখানে মির্যা সাহেব কি 'ক্বদ খালাত' অর্থ 'মৃত্যু' না নিয়ে ভুল করলেন? (স্কিনশট নিচে দেয়া হল, দেখে নেয়!)

স্কিনশট দেখতে ক্লিক করুন www.markajomar.com/?p=4840

আবুল - না, ইয়ে মানে!!

বাবুল - তাহলে "ক্বদ খালাত" (قد خلت) মানে যেখানে 'মৃত্যু' অর্থ নেয়াই ঠিক নয়, সেখানে পবিত্র কুরআনের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে ঈসা (আ)-কে মৃত সাব্যস্ত করার দাবী জঘন্য মিথ্যা এবং শয়তানি ওয়াসওয়াসা নয় কি?

আবুল - তাহলে আপনি নিজেই আয়াতটির অর্থ করুন! আমি দেখি আপনার সাথে একমত হতে পারি কিনা?

বাবুল - ঠিক আছে। সূরা আলে ইমরান আয়াত নং ১৪৪ এর বঙ্গানুবাদ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ কর্তৃক মুদ্রিত কুরআনুল কারীম হতে) নিম্নরূপ -

"মুহাম্মদ একজন রাসূল মাত্র। তাহার পূর্বে বহু রাসূল গত হইয়াছে। সুতরাং যদি সে মারা যায় অথবা সে নিহত হয় তবে তোমরা কি পৃষ্ঠপ্রদর্শন করিবে? এবং কেহ পৃষ্ঠপ্রদর্শন করিলে সে কখনও আল্লাহ'র ক্ষতি করিতে পারিবেনা; বরং আল্লাহ শীঘ্রই কৃতজ্ঞদের পুরস্কৃত করিবেন।" (অনুবাদ শেষ হল)।

ভাল করে খেয়াল কর! তোদের অনুবাদে 'সমস্ত রাসূল' এভাবে অর্থ করা হয়। অথচ এই অর্থ এখানে ঠিক না; এখানে সঠিক অর্থ 'বহু রাসূল'। এই অর্থ ইসলামের প্রথম শতাব্দী থেকে অদ্যাবধি মুতাওয়াতিরভাবে চলে আসছে। আর মুতাওয়াতিরভাবে যেই আকীদা চলে আসে তার ব্যতিক্রমকারী কিংবা অস্বীকারকারী ব্যক্তি প্রকারান্তরে  ইসলাম থেকেই খারিজ । মানে সেই যেন মুসলমান-ই না!  আর এই ফতুয়া স্বয়ং মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী সাহেবের বইতেও পরিস্কার উল্লেখ আছে।  প্রমাণের জন্য "রূহানী খাযায়েন" এর ১৩ নং খন্ডের ২০৬ নং পৃষ্ঠাটি খুলে দেখ। 

তোদের (কাদিয়ানিদের) কৃত অনুবাদ সঠিক না হওয়ার আরেকটি কারণ এই যে, অনুবাদের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কতেক নিয়ম মানা জুরুরী। আর তা হচ্ছে, কুরআনের অপরাপর আয়াতের বর্ণনাভঙ্গি এবং সহীহ সুন্নাহ’র ইংগিতের বিরুদ্ধাচরণ না করা; বরং উভয়ের সামঞ্জস্যতার বিধান মেনেই শব্দের স্বতঃসিদ্ধ অর্থ গ্রহণ করা। এরই ভিত্তিতে সালফে সালেহীনগণ পবিত্র কুরআনের অনুবাদ করে গেছেন। আর এরূপ নিয়ম থাকার দাবী খোদ মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীও তার বইতে উল্লেখ করে গেছেন। 'রূহানী খাযায়েন' এর ১০ নং খন্ডের ৮৬ নং পৃষ্ঠাটি খুলে দেখ! পরিষ্কার লিখা আছে -

প্রথম হচ্ছে কুরআন শরীফ। কিন্তু স্মরণ রাখা চাই যে, কুরআনের কোনো আয়াতের সেই অর্থই আমাদের নিকট (সঠিক বলে) বিবেচিত যার পক্ষে কুরআনের অপরাপর স্থানগুলো সাক্ষ্য দিয়ে থাকে। কেননা কুরআনের কোনো কোনো আয়াত অপর আয়াতের ব্যাখ্যাকারী। এমনকি কুরআনের পরিপূর্ণ ও অকাট্য মর্মের উদঘাটন যদি কুরআনের অপরাপর স্থানগুলো দ্বারাও সহজলভ্য না হয়ে থাকে তখন তার জন্যও শর্ত হচ্ছে কোনো সহীহ, মারফূ ও মুত্তাসিল হাদীসও তার (আয়াতের) ব্যাখ্যাকারী হবে।"

তো এবার পারলে মির্যা গোলাম আহমদকেও এক হাত নেয়। কেননা সে নিজেও, কুরআনের সঠিক মর্মার্থ উদঘাটন করতে মুরফূ ও মুত্তাসিল স্তরের সহীহ হাদীসকে আয়াতের ব্যাখ্যাকারী বলে গেছেন! তাই অসংখ্য সহীহ হাদীস যেখানে ঈসা (আঃ) এর দ্বিতীয় আগমনের পক্ষে সংবাদ দিচ্ছে সেখানে কুরআনের অনুবাদে সহীহ হাদীসের বিরুদ্ধাচরণ করা বৈধ হয় কিভাবে?

আবুল - কুরআনে এরকম আর কোনো স্থান আছে কি যেখানে 'রাসূল' শব্দের বহুবচন 'রসুল' এর অর্থ 'সমস্ত রাসূল' এর বদলে 'বহু রাসূল' নেয়া হয়? প্রমাণ করতে পারবেন?

বাবুল - জ্বী হ্যাঁ, আছে। পবিত্র কুরআন নিয়ে যাদের গবেষণা আছে তাদের নিকট গোপন থাকেনি যে, পবিত্র কুরআনের কোনো কোনো জায়গায় “রসুল” (رسل/الرسل) শব্দ বহুবচন হওয়া সত্ত্বেও তার অনুবাদ করতে হয়েছে ‘বহু রাসূল‘। সূরা নিসা, আয়াত ১৬৪; সূরা রা’আদ আয়াত ৩৮ দ্রষ্টব্য। আবার কোনো কোনো জায়গায় সেই একই শব্দের অনুবাদ করতে হয়েছে ‘সকল রাসূল‘। সূরা নিসা আয়াত ১৭১; সূরা আরাফ আয়াত ৩৫ দ্রষ্টব্য। অতএব বুঝতে হবে যে, সুনির্দিষ্ট নিয়ম অমান্য করে যাইচ্ছেতাই অনুবাদ করার কারো অধিকার নেই।

সোজা কথায়, সূরা আলে ইমরান ১৪৪ মতে All Messengers নয়, Many Messengers। নিচে দু’টি অনুবাদ দিলাম।

প্রথমে সহীহ ইন্টারন্যাশনাল (Sahih International)’র অনুবাদ দেখ

Muhammad is not but a messenger. [Other] messengers have passed on before him. So if he was to die or be killed, would you turn back on your heels [to unbelief]? And he who turns back on his heels will never harm Allah at all; but Allah will reward the grateful.

এরপর ইউসুফ আলী (Yusuf Ali)’র অনুবাদ দেখ –

Muhammad is no more than a messenger: many Were the messenger that passed away before him.

আবুল - আপনি যেই অর্থ করলেন তাতে "ক্বদ খালাত" অর্থ তো 'মৃত্যু' ভিন্ন অন্য অর্থ নিলেন! আপনার এই অর্থ যে সঠিক তার প্রমাণ কী?

বাবুল - প্রথমত, মির্যা সাহেব নিজেও "ক্বদ খালাত" অর্থ 'মৃত্যু' ভিন্ন অন্য অর্থ নিয়েছেন! এখন তোর মত আমিও কি জিজ্ঞেস করতে পারিনা যে, তার ওই অনুবাদটিও যে সঠিক তার কী প্রমাণ আছে? মজারব্যাপার হল, মির্যা সাহেব লিখেছেন - "মাই নে জু কুচ কাহা উহ সব কুচ খোদা কে আমর চে কাহা হে আওর আপনে তরফ চে কুচ নিহি কিয়া।" অর্থাৎ আমি যাই কিছু বলি সবই খোদার নির্দেশে বলি, আমি আমার নিজ থেকে কিছুই করিনা।" (রেফারেন্স : রূহানী খাযায়েন খন্ড নং ১৯/পৃষ্ঠা নং ২২১)। এবার কোমরে জোর থাকলে মির্যা সাহেবের কৃত অনুবাদকে চ্যালেঞ্জ কর!

দ্বিতীয়ত, এই অনুবাদ আমার নয়, বরং এই অনুবাদ ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ কর্তৃক অনূদিত কুরআনুল কারীমের। সুতরাং তোর কোনো অভিযোগ থাকলে ইফা (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)কে গিয়ে কর ।

তৃতীয়ত, এই "খালাত" শব্দটি পবিত্র কুরআনের বহু জায়গায় উল্লেখ আছে। দেখে নাও সূরা বাক্বারা, আয়াত নং ১৩৪; সূরা আলে ইমরান, আয়াত নং ১৩৭; সূরা মায়েদা, আয়াত নং ৭৫ এবং সূরা আল ফাতহ, আয়াত নং ২৩। কিন্তু তার কোনো একটিতেও 'খালাত' শব্দের অর্থ 'মরে গেছে' নেয়ার সুযোগ নেই।

আবুল - সূরা মায়েদার ৭৫ নং আয়াতের মধ্যে "ক্বদ খালাত" অর্থ 'মৃত্যু' নিলে সমস্যা কোথায়??

বাবুল - হ্যাঁ সমস্যা আছে। কারণ, তখন তোদের কৃত অর্থ অনুসারে "মাসীহ ইবনে মরিয়মের পূর্বে সমস্ত রাসূল মৃত্যুবরণ করার মত হযরত মূসা (আঃ)-কেও (তোরা/কাদিয়ানিরা) মৃত সাব্যস্ত করতে বাধ্য হচ্ছিস! অবাক হচ্ছিস তাই না?

হ্যাঁ অবাক তো হবারই কথা! এজন্যই তো যত কাদিয়ানী 'কাদিয়ানিয়ত/আহমদিয়ত' ত্যাগ করে ইসলাম কবুল করেছেন তাদের সবাই তোদের উদ্দেশ্যে বলে গেছেন যে, মির্যায়িয়ত কতটা মিথ্যা আর ধোকার উপর প্রতিষ্ঠিত তা মির্যার লেখিত কিতাব না পড়ে বুঝার উপায় নেই। অথচ অধিকাংশ আহমদী মির্যার বইগুলো বিশেষ করে, এক গলতী কা ইযালা [নভেম্বর ১৯০১ইং]; দাফেউল বালা [এপ্রিল ১৯০২ইং]; ইযালায়ে আওহাম [১৮৯১ইং]; নাজমুল হুদা [নভেম্বর ১৮৯৮ইং]; হাকীকাতুল ওহী [মে ১৯০৭ইং]; মির্যা বশির আহমদ এম এ রচিত কালিমাতুল ফসল; ছেড়ে জামাতের কথিত মুরুব্বিদের বই পড়তে অভ্যস্ত। যেখানে মির্যায়িয়তের হাকীকত পর্যন্ত পৌছার কোনো রসদ নেই। যাইহোক, এবার দেখে নেয় হযরত মূসা (আঃ) সম্পর্কে মির্যা সাহেব কী লিখে গেছেন! মির্যা সাহেব লিখেছেন -

"আল্লাহ'র নওজোয়ান তিনি (মূসা)। আল্লাহ স্বীয় কিতাবে তাঁর জীবিত থাকার প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি আকাশে জীবিত, তিনি মৃত্যুবরণ করেননি এবং তিনি মৃত্যুবরণকারীদের অন্তর্ভুক্ত নন, এ কথাগুলোর উপর ঈমান রাখা আমাদের উপর ফরজ।" (রেফারেন্স : নূরুলহক [১৯৯৪ ইং (আরবী)] খন্ড নং ১ পৃষ্ঠা ৫০; রূহানী খাযায়েন ৮/৬৮-৬৯)।

প্রমাণ চাইলে ডকুমেন্ট দেয়া যেতে পারে।

যাইহোক, বলতে ছিলাম সূরা মায়েদার ৭৫ নং আয়াতের 'ক্বদ খালাত' অর্থ "মৃত্যু" নিলে তখন সমস্যা এটাই। আর এ সমস্যা আমাদের জন্য নয় শুধু, তোদের (কাদিয়ানিদের) জন্যও। ভুলে গেলে হবেনা যে, মূসা (আ)-কে মির্যা সাহেব 'জিন্দা ও আকাশে' থাকা বিশ্বাস করাকে ফরজ বলেছেন (উল্লেখ্য, "আকিদা" বিষয়ক কোনো বিষয় মানসূখ বা রহিত হয়না)। তাছাড়া আমি চ্যালেঞ্জ করছি, "খালাত" (خلت) শব্দের আক্ষরিক অর্থ 'মরে গেছে' - এরকম অর্থ কোনো অভিধান থেকে কেউ প্রমাণ করতে পারবেনা। আবুল সাহেব! জবাব আর লাগবে??

আবুল- হুম! এসব তো আগে কখনো ভেবে দেখেনি! আপনার দীর্ঘ যুক্তিপূর্ণ কথা সত্যি আমার ভেতর ভাবনার জন্ম দিয়েছে।

বাবুল - ভেবে দেখবি কিভাবে? তোরা তো মির্যায়িয়তের বলয়ের বাহিরেই যাস না। তোদের মস্তিষ্কে কাদিয়ানী পণ্ডিতরা "মোল্লা মৌলভিরা মিথ্যা বলে, তারা জাহান্নামের কীট; দুনিয়ার সব চে নিকৃষ্ট জীব ইত্যাদি" প্রোগ্রামগুলো ইন্সটল দিয়ে রাখছে। যাতে তোতাপাখির মত এসব আওড়াতে পারিস। যাতে ভুলেও কোনো মৌলভির বই পড়তে না চাস ! সেজন্যই তোদের বেশির ভাগই আহমদিয়তের বাহিরের জগত সম্পর্কে পুরোদস্তুর অন্ধকারে। তবু আশাবাদী তুই নিরপেক্ষভাবে ভেবে দেখবি। তোর উপর আমার বিশ্বাস রয়েছে। ইনশাআল্লাহ D. Hani Taher আর সাম্প্রতিক সময়ের Ikrima Najami উনাদের ন্যায় সত্য উপলব্ধি করতে সক্ষম হবি। ওয়াসসালাম।

লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী। ইমেইল [email protected]
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মার্চ, ২০১৯ সকাল ১১:৩২
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×