somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শ্রীশরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর লেখা পল্লী-সমাজ পর্ব ১

১৮ ই আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বেণী ঘোষাল মুখুয্যেদের অন্দরের প্রাঙ্গণে পা দিয়াই সম্মুখে এক প্রৌঢ়া রমণীকে পাইয়া প্রশ্ন করিলেন এই যে মাসি রমা কই গা ? মাসী আহ্নিক করিতেছিলেন ইঙ্গিতে রান্নাঘর দেখাইয়া দিলেন। বেণী উঠিয়া আসিয়া রন্ধনশালার চৌকাঠের বাহিরে দাড়াইয়া বলিলেন তা হ'লে রমা কি কর্‌বে স্থির করলে ? জ্বলন্ত উনান হইতে শব্দায়মান কড়াটা নামাইয়া রাখিয়া রমা মুখ তুলিয়া চাহিল কিসের বড়দা ?

বেণী কহিলেন তারিণী খুড়োর শ্রাদ্ধের কথাটা বোন্‌ । রমেশ ত কাল এসে হাজির হয়েছে। বাপের শ্রাদ্ধ খুব ঘটা ক রেই কর্‌বে বলে বোধ হচ্চে যাবে না কি ?

রমা দুই চক্ষু বিস্ময়ে বিস্ফারিত করিয়া বলিল আমি যাব তারিণী ঘোষালের বাড়ি ? বেণী ঈষৎ লজ্জিত হইয়া কহিল সে ত জানি দিদি আর যেই যাক তোরা কিছুতেই সেখানে যাবি নে। তবে শুন্‌চি নাকি ছোঁড়া সমস্ত বাড়ী বাড়ী নিজে গিয়ে বল্‌বে বজ্জাতি বুদ্ধিতে সে তার বাপেরও ওপরে যায় যদি আসে তা হ’লে কি বল্‌বে ? রমা সরোষে জবাব দিল ‍‌আমি কিছুই বোলবো না বাইরের দরওয়ান তার উত্তর দেবে পূজানিরতা মাসীর কর্ণরন্ধ্রে এই অত্যন্ত রুচিকর দলাদলির আলোচনা পৌঁছিবামাত্রই তিনি আহ্নিক ফেলিয়া রাখিয়া উঠিয়া আসিলেন। বোন্‌ঝির কথা শেষ না হইতেই অত্যুত্তপ্ত খৈএর মত ছিট্‌কাইয়া উঠিয়া কহিলেন দরওয়ান কেন ? আমি বল্‌তে জানিনে ? নচ্ছার ব্যাটাকে এম্‌নি বলাই বল্‌ব যে বাছাধন জন্মে কখন আর মুখুয্যেবাড়ীতে মাথা গলাবে না। তারিণী ঘোষালের ব্যাটা ঢুকবে নেমত্যন্ন কর্‌তে আমার বাড়ীতে ? আমি কিছুই ভুলি নি বেণীমাধব । তারিণী তার এই ছেলের সঙ্গেই আমার রমার বিয়ে দিতে চেয়েছিল। তখনও ত আর আমার যতীন জন্মায় নি ভেবেছিল যদু মুখুয্যের সমস্ত বিষয়টা তা হলে মুঠোর মধ্যে আস্‌বে বুঝলে না বাবা বেণি । তা যখন হ’ল না তখন ঐ ভৈরব আচায্যিকে দিয়ে কি সব জপতপ তুক্‌তাক্‌ করিয়ে মায়ের কপালে আমার এমন আগুন ধরিয়ে দিলে যে ছ’মাস পেরুল না বাছার হাতের নোয়া মাথার সিঁদুর ঘুচে গেল! ছোট জাত হ’য়ে চায় কিনা যদু মুখুয্যের মেয়েকে বৌ কর্‌তে । তেম্‌নি হারামজাদার মরণও হয়েছে ব্যাটার হাতের আগুনটুকু পর্য্যন্ত পেলে না। ছোটজাতের মুখে আগুন । বলিয়া মাসি যেন কুস্তি শেষ করিয়া হাঁপাইতে লাগিলেন। পুন্য পুন্য ছোট জাতের উল্লেখে বেণীর মুখ ম্লান হইয়া গিয়াছিল কারণ তারিণী ঘোষাল তাহারই খুড়া। রমা ইহা লক্ষ্য করিয়া মাসীকে তিরস্কারের কণ্ঠে কহিল কেন মাসি, তুমি মানুষের জাত নিয়ে কথা কও? জাত ত আর কারুর হাতেগড়া জিনিস নয়? যে যেখানে জন্মেচে সেই তার ভাল। বেণী লজ্জিতভাবে একটুখানি হাসিয়া কহিল না রমা মাসী ঠিক কথাই বল্‌চেন। তুমি কত বড় কুলীনের মেয়ে তোমাকে কি আমরা ঘরে আন্‌তে পারি বোন্‌ । ছোট খুড়োর এ কথা মুখে আনাই বেয়াদপি। আর তুকতাকের কথা যদি বল ত সে সত্যি। দুনিয়ায় ছোট খুড়ো আর ঐ ব্যাটা ভৈরব আচায্যির অসাধ্য কাজ কিছু নেই। ঐ ভৈরব ত হয়েচে আজকাল রমেশের মুরুব্বি ।

মাসী কহিলেন সে ত জানা কথা বেণি । ছোঁড়া দশ বারো বচ্ছর ত দেশে আসেনি এতদিন ছিল কোথায় ? “কি ক'রে জান্‌ব মাসি ? ছোট খুড়োর সঙ্গে তোমাদেরও যে ভাব আমাদেরও তাই। শুন্‌চি এতদিন নাকি বোম্বাই না কোথায় ছিল। কেউ বল্‌চে ডাক্তারি পাশ ক'রে এসেচে কেউ বলচে উকিল হ'য়ে এসেচে কেউ বল্‌চে সমস্তই ফাঁকি ছোঁড়া নাকি পাঁড় মাতাল । যখন বাড়ী এসে পৌঁছল তখন দুই চোখ নাকি জবাফুলের মত রাঙা ছিল। বটে ? তা হলে তাকে ত বাড়ী ঢুক্‌তে দেওয়াই উচিত নয় । বেণী উৎসাহভরে মাথার একটা ঝাঁকানি দিয়া কহিল নয়ই ত । হাঁ রমা তোমার রমেশকে মনে পড়ে ? নিজের হতভাগ্যের প্রসঙ্গ উঠিয়া পড়ায় রমা মনে মনে লজ্জা পাইয়াছিল। সলজ্জ মৃদু হাসিয়া কহিল পড়ে বৈ কি। সে ত আমার চেয়ে বেশী বড় নয়। তা ছাড়া শীতলাতলার পাঠশালে দুজনেই পড়তাম যে। কিন্তু তার মায়ের মরণের কথা আমার খুব মনে পড়ে। খুড়ীমা আমাকে বড় ভালবাসতেন। মাসি আর একবার নাচিয়া উঠিয়া বলিলেন তার ভালবাসার মুখে আগুন । সে ভালবাসা কেবল নিজের কাজ হাসিল করবার জন্যে। তাদের মতলবই ছিল তোকে কোনমতে হাত করা।

বেণী অত্যন্ত বিজ্ঞের মত সায় দিয়া কহিল তাতে আর সন্দেহ কি মাসি । ছোটখুড়ীমার যে কিন্তু তাহার বক্তব্য শেষ না হইতেই রমা অপ্রসন্নভাবে মাসীকে বলিয়া উঠিল সে সব পুরণো কথায় দরকার নেই মাসি ?

রমেশের পিতার সহিত রমার যত বিবাদই থাক তাহার জননীর সম্বন্ধে রমার কোথায় একটু যেন প্রচ্ছন্ন বেদনা ছিল। এতদিনেও তাহা সম্পূর্ণ তিরোহিত হয় নাই। বেণী তৎক্ষণাৎ সায় দিয়া বলিলেন তা বটে তা বটে। ছোটখুড়ী ভালমানুষের মেয়ে ছিলেন। মা আজও তাঁর কথা উঠলে চোখের জল ফেলেন।

কি কথায় কি কথা আসিয়া পড়ে দেখিয়া বেণী তৎক্ষণাৎ এ সকল প্রসঙ্গ চাপা দিয়া ফেলিলেন। বলিলেন তবে এই ত স্থির রইল দিদি নড়চড় হবে না ত ? রমা হাসিল। কহিল বড়দা বাবা বলতেন আগুনের শেষ ঋণের শেষ আর শত্রুর শেষ কখনো রাখিসনে মা। তারিণী ঘোষাল জ্যান্তে আমাদের কম জ্বালা দেয়নি বাবাকে পর্যন্ত জেলে দিতে চেয়েছিল। আমি কিছুই ভুলিনি বড়দা, যতদিন বেঁচে থাকব ভুলব না। রমেশ সেই শত্রুরই ছেলে ত । তা ছাড়া আমার ত কিছুতেই যাবার জো নেই। বাবা আমাদের দুই ভাইবোনকে বিষয় ভাগ করে দিয়ে গেছেন বটে কিন্তু সমস্ত বিষয় রক্ষা করার ভার শুধু আমারই উপর যে । আমার ত নয় ই আমাদের সংস্রবে যারা আছে তাদের পর্যন্ত যেতে দেব না। একটু ভাবিয়া কহিল আচ্ছা বড়দা এমন করতে পার না যে কোনও ব্রাহ্মণ না তাদের বাড়ি যায় ?

বেণী একটু সরিয়া আসিয়া গলা খাটো করিয়া বলিল সেই চেষ্টাই ত করচি বোন। তুই আমার সহায় থাকিস আর আমি কোনও চিন্তা করি নে। রমেশকে এই কুয়াপুর থেকে না তাড়াতে পারি ত আমার নাম বেণী ঘোষাল নয়। তার পরে রইলাম আমি আর ঐ ভৈরব আচায্যি । আর তারিণী ঘোষাল নেই দেখি এ ব্যাটাকে এখন কে রক্ষা করে ।

রমা কহিল রক্ষে করবে রমেশ ঘোষাল। দেখো বড়দা এই আমি বলে রাখলুম শত্রুতা করতে এও কম করবে না।

বেণী আরও একটু অগ্রসর হইয়া একবার এদিক-ওদিক নিরীক্ষণ করিয়া লইয়া চৌকাঠের উপর উবু হইয়া বসিল। তারপর কণ্ঠস্বর অত্যন্ত মৃদু করিয়া বলিল রমা বাঁশ নুইয়ে ফেলতে চাও ত এই বেলা পেকে গেলে আর হবে না তা নিশ্চয় বলে দিচ্চি। বিষয় সম্পত্তি কি করে রক্ষে করতে হয় শেখেনি এর মধ্যে যদি না শত্রুকে নির্মূল করতে পারা যায় ত ভবিষ্যতে আর যাবে না এই কথাটা আমাদের দিবারাত্রি মনে রাখতে হবে যে এ তারিণী ঘোষালেরই ছেলে আর কেউ নয় । সে আমি বুঝি বড়দা । তুই না বুঝিস কি দিদি! ভগবান তোকে ছেলে গড়তে গড়তে মেয়ে গড়েছিলেন বৈ ত নয়। বুদ্ধিতে একটা পাকা জমিদারও তোর কাছে হটে যায় এ কথা আমরা সবাই বলাবলি করি। আচ্ছা, কা'ল একবার আসব। আজ বেলা হ’ল যাই বলিয়া বেণী উঠিয়া পড়িলেন। রমা এই প্রশংসায় অত্যন্ত প্রীত হইয়া উঠিয়া দাড়াইয়া বিনয় সহকারে কি একটু প্রতিবাদ করিতে গিয়াই তাহার বুকের ভিতর ছাঁৎ করিয়া উঠিল। প্রাঙ্গণের এক প্রান্ত হইতে অপরিচিত গম্ভীর-কণ্ঠের আহ্বান আসিল রাণী কই রে ? রমেশের মা এই নামে ছেলেবেলায় তাহাকে ডাকিতেন। সে নিজেই এতদিন তাহা ভুলিয়া গিয়াছিল। বেণীয় প্রতি চাহিয়া দেখিল তাহার সমস্ত মুখ নীলবর্ণ হইয়া গিয়াছে। পরক্ষণেই রুক্ষমাথা খালি পা উত্তরীয়টা মাথায় জড়ানো রমেশ আসিয়া দাঁড়াইল। বেণীর প্রতি চোখ পড়িবামাত্র বলিয়া উঠিল এই যে বড়দা এখানে ? বেশ চলুন আপনি না হ’লে করবে কে ? আমি সারা গা আপনাকে খুজে বেড়াচ্চি। কৈ রাণী কোথায় ? বলিয়াই কপাটের সুমুখে আসিয়া দাড়াইল। পালাইবার উপায় নাই রমা ঘাড় হেঁট করিয়া রহিল। রমেশ মুহূর্তমাত্র তাহার প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়া মহাবিস্ময় প্রকাশ করিয়া বলিয়া উঠিল, এই যে! আরে ইস কত বড় হয়েছিস রে ? ভাল আছিস ?

রমা তেমনি অধোমুখে দাড়াইয়া রহিল। হঠাৎ কথা কহিতেই পারিল না। কিন্তু রমেশ একটুখানি হাসিয়া তৎক্ষণাৎ কহিল চিনতে পাচ্ছিস রে ? আমি তোদের রমেশদা । এখনও রমা মুখ তুলিয়া চাহিতে পারিল না। কিন্তু মৃদুকণ্ঠে প্রশ্ন করিল আপনি ভাল আছেন ?

হা ভাই ভাল আছি। কিন্তু আমাকে আপনি কেন রমা ? বেণীর দিকে চাহিয়া একটুখানি মলিন হাসি হাসিয়া বলিল রমার সেই কথাটা আমি কোনদিন ভুলতে পারিনি বড়দা । যখন মা মারা গেলেন ও তখন ত খুব ছোট। সেই বয়সেই আমার চোখ মুছিয়ে দিয়ে বলেছিল রমেশদা তুমি কেঁদ না আমার মাকে আমরা দু'জনে ভাগ করে নেব। তোর সে কথা বোধ করি মনে পড়ে না রমা না ? আচ্ছা আমার মাকে মনে পড়ে ত?কথাটা শুনিয়া রমার ঘাড় যেন লজ্জায় আরও ঝুঁকিয়া পড়িল। সে একটিবারও ঘাড় নাড়িয়া জানাইতে পারিল না যে খুড়ীমাকে তাহার খুব মনে পড়ে। রমেশ বিশেষ করিয়া রমাকে উদ্দেশ করিয়াই বলিতে লাগিল আর ত সময় নেই মাঝে শুধু তিনটি দিন বাকি যা করবার করে দাও ভাই যাকে বলে একান্ত নিরাশ্রয় আমি তাই হয়েই তোমাদের দোরগোড়ায় এসে দাড়িয়েচি। তোমরা না গেলে এতটুকু ব্যবস্থা পর্যন্তও করতে পারচি না।

মাসি আসিয়া নিঃশব্দে রমেশের পিছনে দাড়াইলেন। বেণী অথবা রমা কেহই যখন একটা কথারও জবাব দিল না তখন তিনি সুমুখের দিকে সরিয়া আসিয়া রমেশের মুখপানে চাহিয়া বলিলেন তুমি বাপু তারিণী ঘোষালের ছেলে না ?রমেশ এই মাসিটিকে ইতিপূর্বেই দেখে নাই কারণ সে গ্রাম ত্যাগ করিয়া যাইবার পরে ইনি রমার জননীর অসুখের উপলক্ষে সেই যে মুখুয্যেবাড়ি ঢুকিয়াছিলেন আর বাহির হন নাই। রমেশ কিছু বিস্মিত হইয়াই তাহার দিকে চাহিয়া রহিল। মাসি বলিলেন না হলে এমন বেহায়া পুরুষমানুষ আর কে হবে? যেমন বাপ তেমনি ব্যাটা! বলা নেই কহা নেই একটা গেরস্তর বাড়ির ভিতর ঢুকে উৎপাত করতে শরম হয় না তোমার?

রমেশ বুদ্ধিভ্রষ্টের মত কাঠ হইয়া চাহিয়া রহিল।

আমি চললুম বলিয়া বেণী ব্যস্ত হইয়া সরিয়া পড়িল।

রমা ঘরের ভিতর হইতে বলিল কি বোক্‌চ মাসি তুমি নিজের কাজে যাও না মাসি মনে করিলেন তিনি বোনঝির প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিতটা বুঝিলেন। তাই কণ্ঠস্বরে আরও একটু বিষ মিশাইয়া কহিলেন নে রমা বকিস্‌ নে। যে কাজ করতেই হবে তাতে আমার তোমাদের মত চক্ষুলজ্জা হয় না। বেণীর অমন ভয়ে পালানর কি দরকার ছিল ? বলে গেলেই ত হ’ত। আমরা বাপু তোমার গোমস্তাও নই খাসতালুকের প্রজাও নই যে তোমার কর্মবাড়িতে জল তুলতে ময়দা মাখতে যাবো। তারিণী মরেচে গা সুদ্ধ লোকের হাড় জুড়িয়েচে এ কথা আমাদের ওপর বরাত দিয়ে না গিয়ে নিজে ওর মুখের ওপর বলে গেলেই ত পুরুষমানুষের মত কাজ হত।

রমেশ তখনও নিস্পন্দ অসাড়ের মত দাড়াইয়া রহিল। বস্তুতই এ সকল কথা তাহার একান্ত দুঃস্বপ্নেরও অগোচর ছিল। ভিতর হইতে রান্নাঘরে কপাটের শিকলটা ঝন্‌ঝন্‌ করিয়া নড়িয়া উঠিল। কিন্তু কেহই তাহাতে মনোযোগ করিল না। মাসি রমেশের নির্বাক ও অত্যন্ত পাংশুবর্ণ মুখের প্রতি চাহিয়া পুনরপি বলিলেন যাই হোক বামুনের ছেলেকে আমি চাকর দরোয়ান দিয়ে অপমান করাতে চাইনে একটু হুশ করে কাজ করো বাপু যাও। কচি খোকাটি নও যে ভদ্দরলোকের বাড়ির ভেতর ঢুকে আবদার করে বেড়াবে । তোমার বাড়িতে আমার রমা কখনও পা ধুতেও যেতে পারবে না এই তোমাকে আমি বলে দিলুম।হঠাৎ রমেশ যেন নিদ্রোত্থিতের মত জাগিয়া উঠিল এবং পরক্ষণেই তাহার বিস্তৃত বক্ষের ভিতর হইতে এমনি গভীর একটা নিশ্বাস বাহির হইয়া আসিল যে সে নিজেও সেই শব্দে সচকিত হইয়া উঠিল। ঘরের ভিতর কপাটের অন্তরালে দাড়াইয়া রমা মুখ তুলিয়া চাহিয়া দেখিল। রমেশ একবার বোধ করি ইতস্তত করিল তাহার পরে রান্নাঘরের দিকে উদ্দেশ করিয়া কহিল যখন যাওয়া হতেই পারে না তখন আর উপায় কি! কিন্তু আমি ত এত কথা জানতাম না না জেনে যে উপদ্রব করে গেলাম সেজন্য আমাকে মাপ করো রাণি । বলিয়া ধীরে ধীরে চলিয়া গেল। ঘরের ভিতর হইতে এতটুকু সাড়া আসিল না। যাহার কাছে ক্ষমা ভিক্ষা করা হইল সে যে অলক্ষ্যে নিঃশব্দে তাহার মুখের দিকে চাহিয়া রহিল । রমেশ তাহা জানিতেও পারিল না। বেণী তৎক্ষণাৎ ফিরিয়া আসিয়া দাড়াইল। সে পালায় নাই বাহিরে লুকাইয়া অপেক্ষা করিতেছিল মাত্র। মাসির সহিত চোখাচোখি হইতেই তাহার সমস্ত মুখ আহ্লাদে ও হাসিতে ভরিয়া গেল । সরিয়া আসিয়া কহিল হা শোনালে বটে মাসি । আমার সাধ্যিই ছিল না অমন করে বলা । এ কি চাকর দরোয়ানের কাজ রমা । আমি আড়ালে দাড়িয়ে দেখলাম কিনা । ছোড়া মুখখানা যেন আষাঢ়ের মেঘেমাসি ক্ষুণ্ণ অভিমানের সুরে বলিলেন খুব ত হ'ল জানি কিন্তু এই দুটো মেয়েমানুষের ওপর ভার না দিয়ে না সরে গিয়ে নিজে বলে গেলেই ত আরও ভাল হত আর নাই যদি বলতে পারতে আমি কি বললুম তাকে দাড়িয়ে থেকে শুনে গেলে না কেন বাছা ? অমন সরে পড়া উচিত হয়নির মত করে বার হয়ে গেল। এই ত ঠিক হল । মাসি ক্ষুণ্ণ অভিমানের সুরে বলিলেন খুব ত হ'ল জানি কিন্তু এই দুটো মেয়েমানুষের ওপর ভার না দিয়ে না সরে গিয়ে নিজে বলে গেলেই ত আরও ভাল হত আর নাই যদি বলতে পারতে আমি কি বললুম তাকে দাড়িয়ে থেকে শুনে গেলে না কেন বাছা ? অমন সরে পড়া উচিত হয়নি!মাসির কথার ঝাজে বেণীর মুখের হাসি মিলাইয়া গেল। সে যে এই অভিযোগের কি সাফাই দিবে ভাবিয়া পাইল না কিন্তু অধিকক্ষণ ভাবিতে হইল না হঠাৎ রমা ভিতর হইতে তাহার জবাব দিয়া বসিল এতক্ষণ সে একটি কথাও কহে নাই। কহিলতুমি যখন নিজে বলেছ মাসি তখন সেই ত সকলের চেয়ে ভাল হয়েচে। যে যতই বলুক না কেন এতখানি বিষ জিভ দিয়ে ছড়াতে তোমার মত কেউ ত পেরে উঠ্‌ত না । মাসি এবং বেণী উভয়েই যার পর নাই বিস্ময়াপন্ন হইয়া উঠিলেন। মাসী রান্নাঘরের দিকে ফিরিয়া কহিলেন কি বল্‌লি লা ?কিছু না। আহ্নিক কর্‌তে বসে ত সাতবার উঠ্‌লে যাও না ওটা সেরে ফেল না রান্নাবান্না কি হবে না ? বলিতে বলিতে রমা নিজেও বাহির হইয়া আসিল এবং কাহাকেও কোন কথা না বলিয়া বারান্দা পার হইয়া ও দিকের ঘরে গিয়া প্রবেশ করিল। বেণী শুষ্কমুখে চুপি চুপি জিজ্ঞাসা করিল ব্যাপার কি মাসি ? কি করে জান্‌ব বাছা ? ও রাজ রাণীর মেজাজ বোঝা কি আমাদের মত দাসীবাদীর কর্ম্ম ? বলিয়া ক্রোধে ক্ষোভে তিনি মুখখানা কালীবর্ণ করিয়া তাঁহার পূজার আসনে গিয়া উপবেশন করিলেন এবং বোধ করি বা মনে মনে ভগবানের নাম করিতেই লাগিলেন। বেণী ধীরে ধীরে প্রস্থান করিল।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ২:০৩
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজ রমনায় ঘুড়ির 'কৃষ্ণচূড়া আড্ডা'

লিখেছেন নীলসাধু, ১৮ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৬




আজ বিকাল ৪টার পর হতে আমরা ঘুড়ি রা আছি রমনায়, ঢাকা ক্লাবের পর যে রমনার গেট সেটা দিয়ে প্রবেশ করলেই আমাদের পাওয়া যাবে।
নিমন্ত্রণ রইলো সবার।
এলে দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×