somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গিয়েছিনু পাহাড়ে.......... আহারে -২

২৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৯:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১ম পর্বের লিঙ্ক
শেষ পর্বের লিঙ্ক

সকালের নাস্তা শেষে রওনা হলাম আমাদের প্রথম দ্রষ্টব্য স্থান রিছাং ঝর্ণা দেখতে। পাহাড়ী রাস্তা ধরে এগিয়ে চলেছে আমাদের গাড়ি। পাহাড় দেখার লোভে সকাল বেলায় ঐ প্রচন্ড ঠান্ডার মধ্যেও আমি গাড়ির ছাদের উপর উঠে বসলাম। হাত পা প্রায় অবশ হওয়ার যোগাড়। আমাদের গাড়ি প্রায় আধাঘন্টা আকা বাকা উচু নিচু রাস্তা পার করে পৌছালো রিছাং ঝর্ণার কাছে। রিছাং ঝর্ণার কাছে যেখানে গাড়ি পার্ক করা হলো সেখানে এক উপজাতি পুরুষ আমাদের পথ আটকালো। বলল, গাড়ি পার্কিং এর জন্য তাকে টাকা দিতে হবে। আমরাও তার কথা শুনে সেই মজা পেলুম। দেশের রাজা পুলিশ বাবাজীরা কিছু বলছেনা আর উনি কোথাকার কোন মরণচাঁদ। বললাম, দিব দিব যাওয়ার সময় দিব।


সে বলল এই পাহাড়সহ আসে পাশের তিন তিনটা পাহাড়ের মালিক নাকি সে। আরও কত গাল গল্প শুরু করল। আমরা তাকে এড়িয়ে পাহাড়ি ঢালু বেয়ে রিছাং ঝর্ণার কাছে যেতে লাগলাম। চারপাশের প্রকৃতির অপরুপ সুধা পান করতে লাগলাম। আমি প্রথমে অবশ্য ভেবেছিলাম ঝর্ণাতে নিশ্চই পানি থাকবেনা। কারণ আরকিছুই নয় শীতকাল। এই ট্রিপে আমার মুল উদ্দেশ্য ছিল সাজেক দেখা। তাই ঝর্ণা নিয়ে তেমন কিছু ভাবার নেই। কিন্তু আশ্চর্যভাবে পানি পেয়ে গেলাম। যদিও তেমন বেশি কিছুই না। তারপরও বেশ ভাল লাগল। ঝর্ণার কাছে পৌছাতেই সবাই যার যার অস্ত্রপাতি মানে ডিএলএলআর, ডিজিটাল ক্যামেরা আর মোবাইল তো আছেই, সেসব নিয়ে উঠে পড়ে লেগে গেল ফটাফট ছবি তোলার জন্য। আমার যদিও কোন ডিএসএলআর নেই তবুই আমি ও কিছু কম যায়নি। মোবাইল আর ডিজিটাল ক্যামেরা দিয়ে ফটাফট ছবি তুলতে লাগলাম।


যেহেতু আমি একা এই ট্রিপে এসেছি তাই নিজের ছবি তোলার লোক পাচ্ছিলাম না। পরে অবশ্য তিনজন ভাল বন্ধু জুটে গিয়েছিল। আমরা চারজন সারা ট্রিপে খুবই মজা করেছি। একেবারে কাছের বন্ধুরমত হয়ে গিয়েছিলাম। তো চার জন মিলে আমরা ছবি তুলতে লাগলাম। ছবি তুলতে তুলতে হঠাৎ মাথায় আসল ঝর্ণার পানি উপরে যেখান থেকে পড়ছে সেখানে উঠে দেখার। আমরা পাশ দিয়ে সরু আর খাড়াই রাস্তা দেখতে পেলাম। ব্যস সেটা বেয়েই উঠে গেলাম ঝর্ণার মাথায়। আমাদের আগেই দেখি দুয়েকজন সেখানে পৌছে গেছে। জায়গাটা বেশ বিপদজনকই ছিল। একটু অসাবধানতার জন্য যেকোন মূহুর্তে বিপদ ঘটতে পারে।


আমাদের সাথে কিছু মেয়েরা গিয়েছিল। তারাও কিছু কম যায় না। কিছুক্ষণ পরে দেখি কয়েকজন অতি সাহসী মেয়ে ও সেই খাড়াই বেয়ে উঠে এসেছে। বুঝলাম আজকাল অদম্য মেয়েরা শুধু ময়মনসিংহের কলসিন্দুরেই থাকে না, ঢাকাতেও পাওয়া যায়। তাদের এই উদ্যম দেখে সত্যিই খুব ভাল লাগল। তো যাই হোক অনেক এ্যাডভেঞ্চার আর ফটোশুট করে আমরা আবার ফিরতি পথে রওনা হলাম। ফেরার পথে পড়ল আলুটিলা গুহা। যেটা সম্পূর্ন প্রাকৃতিক একটি গুহা। সেখানে নেমে আমরা সবাই গুহার ভিতরে চলে গেলাম। গুহার ভিতরে ঢোকার মুখে সবার হাতে মশাল ধরিয়ে দেয়া হলো। কেননা গুহার ভিতরে দিনের আলো পৌছায় না।

শীতের দিন বিধায় সবাই জুতা মুজা পরে গিয়েছিলাম। গুহার মুখে পৌছে দেখি ভিতরে অল্প অল্প পানি। বুঝতে বাকী রইল না জুতা এবার বগলে নিতে হবে। অন্য সবারমত আমিও জুতা মোজা হাতে নিয়ে ঢুকে পড়লাম ভিতরে। সরু পথ দিয়ে আমরা সবাই লাইন দিয়ে ধীরে ধীর যাচ্ছিলাম। ভিতরে পানি এত ঠান্ডা ছিল যে বলার মত না। কিছুদুর হাটার পর উপরের ছাদ নিচু হয়ে আসল। সবাই মাথা নিচু করে আগাতে লাগলাম। মাঝামাঝি এসে বেশ কিছুটা চওড়া জায়গা পেয়ে সবাই গুহার অভ্যান্তরে অন্ধকারেই ছবি তোলা শুরু করল। তারপর আবার সামনে আগান। আর একটু আগাতেই দিনের আলো চোখে পড়ল। বুঝলাম গুহার শেষ মাথায় চলে এসেছি। এক এক করে সবাই বাইরে চলে আসলাম।

বাইরে এসে সবাই স্থানীয় হকারদের কাছ থেকে ডাবের পানি, পেয়ারা ইত্যাদি খেতে লাগল। কারণ টিমের সবাই তখনও এসে পৌছায়নি। কিভাবে পৌছাবে? দলের সাইজ তো আর কম না। আমাদের সাজেক ট্রিপের সদস্য সংখ্যা ছিল ৬৩ জন। এজন্য সকল জায়গা দেখতেই আমাদের একটু বেশী সময় লাগছিল। আবার সবাই গাড়িতে উঠে শহরের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। ইতিমধ্যে দুপুর হয়ে গেছে, কুয়াশা থাকায় তা বুঝতে না পারলেও পেট সেটা জানান দিল।


ইজোড় রেষ্টুরেন্টে আমরা আমাদের দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম। খাবারের মান বেশ ভালই ছিল সেই সাথে পরিবেশও। এই রেষ্টুরেন্টের একটি কক্ষে আবার জাপানি ষ্টাইলে খাবার ব্যবস্থা ছিল। অর্থাৎ নিচে পা গুটিয়ে বসে সামনে ছোট টুলের উপর খাওয়ার ব্যবস্থা। টেবিলে যাদের যায়গা হয়নি তারা বসলাম জাপানি স্টাইলে খেতে। দুপুরের খাওয়া দাওয়ার পর আমরা রওনা হলাম আমাদের মুল গন্তব্য সাজেকের উদেশ্যে। খাগড়াছড়ি থেকে সাজেকের যে রাস্তা আছে তার কথা আমি সারা জীবনে ভুলব না। এমন পাহাড়ী উচু নিচু ভয়ংকর রাস্তা অবশ্য এর আগে আমি বান্দরবান থেকে থানচি যেতেও পেয়েছিলাম। তবুই দুটো রাস্তাই অসম্ভব সুন্দর।

প্রথমে গাড়ির ছাদে আমরা চারজন ছিলাম। পরে দেখি আরও কয়েকজন জুটে গেল। আমাদের ভ্রমণসঙ্গি এক ভাই যার কথা আগেই বলেছি, সে আবার এমন রসের কথা বলছিল যে আমরা গাড়ির ছাদে হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছিলাম। অনেক সময় গাড়ি এমন ঢালু বেয়ে নামছিল যে, মনে হচ্ছিল আমরা কোন রোলার কোষ্টার রাইডে চড়েছি। এত রোমাঞ্চ জীবনে খুব কমই উপভোগ করেছি। আমাদের ভ্রমণের কিছুদিন আগে এক অনাকাঙ্খিত ঘটনার জন্য বাগাইছড়ি থেকে সাজেক পর্যন্ত সেনাবাহিনী স্কর্ট দিয়ে দর্শনার্থীদের পৌছে দেয় প্রতিদিন দুইবার। সকাল ১১টা এবং বিকাল ৩টা। এর বাইরে পর্যটকবাহী কোন গাড়ি যেতে দেওয়া হয় না। আমাদেরকেও সেনাবাহিনী স্কর্ট দিয়ে পৌছে দিল।

আমরা যেদিন খাগড়াছড়ি পৌছেছিলাম সেদিন থেকে বেশ হাড় কাপানো শীত পড়েছিল। আমাদের গাড়ি চলছিল আর আমরা শীতের সাথে সাথে প্রকৃতির অপরূপ সুধা পান করছিলাম। পাহাড়ী বুনো পরিবেশ যে কত সুন্দর তা নিজ চোখে না দেখলে উপলদ্ধি করা যাবেনা। তখন মনে হল, আরে, এই সুধা পান করতেই তো এতদুর আসা।

এবারে আরও কিছু ছবি দেখা যাক




































সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৪:৫১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজ রমনায় ঘুড়ির 'কৃষ্ণচূড়া আড্ডা'

লিখেছেন নীলসাধু, ১৮ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৬




আজ বিকাল ৪টার পর হতে আমরা ঘুড়ি রা আছি রমনায়, ঢাকা ক্লাবের পর যে রমনার গেট সেটা দিয়ে প্রবেশ করলেই আমাদের পাওয়া যাবে।
নিমন্ত্রণ রইলো সবার।
এলে দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×