somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গিয়েছিনু পাহাড়ে.......... আহারে শেষ পর্ব

২৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৯:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পর্ব-১
পর্ব-২
চলতে চলতে সন্ধার কিছু আগে আমরা দুর থেকে একটা মোবাইলের টাওয়ার দেখতে পেলাম। এবং বুঝতে পারলাম যে, আমরা সাজেকের কাছাকাছি পৌছে গেছি। চলতে চলতে একটা ব্যাপার খেয়াল করছিলাম। সেটা হলো আশে পাশে অনেকক্ষণ পর পর যেসব বাড়িঘরের দেখা পাচ্ছিলাম সেখানে থাকা ছোট ছোট বাচ্চা ছেলেমেয়েরা আমাদের কে দেখে হাত নাড়ছিল। আমরাও সমান আগ্রহে হাত নেড়ে তাদের সায় দিচ্ছিলাম। বেশ মজাই লাগছিল। এরপর একজন এই হাত নাড়ানাড়ির ব্যাপার খোলসা করল। বলল আসলে ওরা এরকম হাত নাড়ে চকলেট পাওয়ার জন্য। শুনে খুবই খারাপ লাগল কারণ আমরা কেউই আগে থেকে জানতাম না তাই চকলেট আনা হয়নি।

সাজেকের কাছাকাছি পৌছে শুরু হল ভয়ঙ্কর খাড়া রাস্তা। এমন খাড়া রাস্তা বেয়ে গাড়িতে করে আগে কখ্নও ওঠার সৌভাগ্য হয়নি। এই খাড়াই বেয়ে ওঠার সময় রাস্তার পাশে দেখলাম একটা মাইক্রোবাস এর ইঞ্জিন দিয়ে ধোয়া বের হচ্ছে। বুঝতে বাকী রইলো না যে, এই খাড়াই বেয়ে ওঠার মত ক্ষমতা এই গাড়ির নেই তাই এই হাল। আমাদের চান্দের গাড়িও এত শক্তিশালী হওয়ার পরও সাজেক উঠে ইঞ্জিনে পানি দিতে হল। অবশেষে আমরা আমাদের মুল গন্তব্য সাজেকে পৌছলাম। যেতে যেতে রাস্তার দুইধারে অনেক ঘরবাড়ি দেখলাম, আর কিছু সাইনবোর্ড দেখলাম। যতগুলো সাইনবোর্ড দেখলাম তার প্রায় সবই ইংরেজিতে। অবাক হলাম না, কারণ সাজেক ভ্রমণ কাহিনী পড়ে সেগুলো আগেই জেনেছিলাম।

রাস্তার বা পাশে সেনাবাহিনীর তৈরী বিলাস বহুল সাজেক রিসোর্ট দেখতে পেলাম। গাড়ি আমাদের কে একেবারে হেলিপ্যাডে নিয়ে গেল। তখন প্রায় সন্ধা হয়ে গিয়েছে। তবুই পুরোপুরি অন্ধকার হ্য়নি। চারিদিকে এমন কুয়াশা যে কিছুই প্রায় দেখাই যাচ্ছিল না। গাড়ি থেকে নামার জন্য আর তর সইছিল না। গাড়ি থামার সাথে সাথে গাড়ির ছাদ থেকে এক লাফ দিয়ে নেমে গেলাম এবং সাথে সাথেই এক দৌড়ে হেলিপ্যাডে উঠে গেলাম। সবাই ওই কুয়াশা আর স্বল্প আলোতেই ফটোশুট শুরু করে দিল। আমি মোবাইল বের করে সেলফি তোলা শুরু করলাম। আনন্দে সবাই এতই আত্বহারা যে (দিশেহারাও বলতে পারেন) শীতের কথা বেমালুম ভুলেই গেল। ফটো তোলা আর হইচই শেষ করে আমরা আবার গাড়িতে করে রুইলুই পাড়াতে ফেরৎ আসলাম।

গাড়ি থামল আলো রিসোর্টের সামনে। দলনেতা ঘোষনা করল যে, আলো রিসোর্টে সমস্ত মেয়েদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সকল মেয়েদেরকে রুমগুলো ভাগ করে দেয়া হল। তারপর আমাদের ছেলেদের ব্যবস্থা একটু দুরে অন্য একটি রিসোর্টে করা হলো। সাজেকে থাকার ব্যাপারে আমাদের আগেই বলা হয়েছিল যে, সাজেকে থাকার ব্যবস্থা খুবই অপ্রতুল, বেড শেয়ার করে থাকতে হবে, এমনকি ফ্লোরিং করেও থাকতে হতে পারে। তবে কপাল ভাল যে এই শীতে ফ্লোরিং করতে হয়নি। কিন্তু বেশ আটোশাটো হয়ে ছিলাম একটা রাত।


আমাদের যেই রুমে থাকার ব্যবস্তা হয়েছিল সেই রুমে আমরা ছয়জন দুই বেডে ছিলাম। ব্যাগ রেখে ফ্রেশ হয়ে বাইরে বের হলাম রুইলুই পাড়া দেখতে। যেহেতু রাত হয়ে গিয়েছিল তাও সেখানে সোলার সিস্টেমের জন্য ষ্ট্রিট লাইটের ব্যবস্থা ছিল। সেই আলোয় আমার পুরো পাড়া ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম। এতক্ষন সবাই যে যার মত ছোট ছোট গ্রুপ করে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। রাত ৮:৩০ নাগাদ আমাদের অর্ডার হোটেলে খাওয়ার জন্য আগেই বলা হয়েছিল।

১ম ব্যাচে খাওয়ার জন্য আমরা ঠিক সময়মতই চলে আসলাম হোটেলে। সাথে সাথেই ছিট পেয়ে বসে গেলাম। অনেকেই বিশেষ করে মেয়েরা দেরি করে আসার জন্য বাইরে অপেক্ষা করতে লাগল। খাওয়া দাওয়া বেশ ভালই ছিল। রাতে খাওয়ার পর আমাদের প্রোগ্রাম ছিল বারবিকিউ এবং ফানুশ উড়ান। বারবিকিউ করতে করতে বেশ রাত হয়ে গেল। প্রায় রাত ১২ টা বেজে গিয়েছিল। অনেকে সারাদিনের ক্লান্তিকর জার্নির জন্য অবশ্য ঘুমিয়ে পড়েছিল। তারপরও সবার স্ট্যামিনা তো আর এক না, তাই বারবিকিউ অনেকে উপভোগ করেছিল।

পরদিন খুব সকাল সকাল উঠে সবাই রেডি হয়ে নিল। কারন আজকে আমাদের কংলাক পাড়াতে যাওয়ার কথা। সেটা খুব দুরে নয়। সকাল ৭ টার দিকে আমার সবাই রেডি হয়ে কংলাক পাড়াতে চলে গেলাম। রুইলুই পাড়া থেকে কংলাক পাড়া ৩ থেকে ৪ কিলোমিটার দরত্বের হবে। আমরা গাড়িতেই গিয়েছিলাম। অনেকে অবশ্য কাছে ভেবে ভোর বেলা হাটা শুরু করেছিল। পথে তাদেরকে দেখলাম। যেখানে গাড়ি এসে থামল সেখান থেকে খাড়া বেয়ে উঠতে হল প্রায় ১০ ১২ তলা বাড়ির সমান উচুতে এবং অবশ্যই হেটে।

উপরে হেটে উঠার সুবিধার্থে নিচে ছোট ছোট ছেলেরা বাশের লাঠি বিক্রি করছিল। বাঁশের লাঠিগুলি এমনই সাইজযুক্ত আর সোজা ছিল যে দেখেই পছন্দ হয়ে যাই। আমি জানতাম এটুকু উঠতে আমার বাঁশের লাঠির দরকার নেই। অনেকে অবশ্য কিনল। উপরে উঠে আমরা দেখালাম আদিবাসীদের বাড়ি ঘর। আমরা ঘুরে ঘুরে তাদের জীবনযাত্রা দেখছিলাম। পাড়াটা খুবই সুন্দর। প্রায় প্রত্যেক বাড়ির সামনেই ফুলের গাছ লাগানো আর কোথাও খুজে একটু আবর্জনা পেলাম না। সাজেক এসে এই ব্যাপারটা খুব ভাল লাগল। রুইলুই পাড়াতেই কোন আবর্জনা নেই।

কংলাক পাড়া মুলত পাহাড়ের চুড়াতে অবস্থিত। আমরা হাটতে হাটতে একদম পাহাড়ের চুড়াই গিয়ে প্রকৃতির অপরূপ শোভা উপভোগ করতে লাগলাম। আর ফটোশুটতো আছেই। সকালে যেহেতু আমরা নাস্তা না করে চলে এসেছিলাম তাই পেট ক্ষুধার জানান দিচ্ছিল। এক আদিবাসির বাড়ি থেকে দেখলাম আমাদের গ্রুপের কয়েকজন পাকা সুস্বাদু পেপে কিনে খাচ্ছিল। আমরা অবশ্য যেয়ে আর পেপে পাইনি। কারণ পেপে এত সুস্বাদু ছিল যে ওরা যেকটা পেয়েছে সব কিনে খেয়ে ফেলেছে। একজন আন্টি অবশ্য কলা খাইয়ে খাতির করল। যা হোক আমরা কলা খেয়েই সন্তুষ্ট হলাম।

পাড়াতে হাটতে হাটতে আমরা দেখলাম উপজাতিদের সেই বিখ্যাত ঝুড়ি। যা কপালে বেল্টের মত পেচিয়ে পিঠে ঝুলে থাকে। একজনের কাছ থেকে ঝুড়ি ধার করে আমরা কিছুক্ষণ ফটো তুললাম। আমাদের ফটো তোলা দেখে তাদের কি হাসি। যা হোক কংলাক পাড়া ঘুরাঘুরি শেষে আমরা আবার রুইলুই পাড়া ফেরৎ আসলাম। এসে সেনাবাহিনীর ক্যান্টিনে পরাটা আর আলুভাজি খেয়ে নিলাম সবাই। খাওয়া দাওয়া শেষ করে সবাই অপেক্ষা করতে লাগলাম। কেননা ১১টায় সেনাবাহিনী স্কর্ট দিয়ে নিয়ে যাবে আমাদের তাই ১১টার অপেক্ষা।

অপেক্ষা তাই বলে কেউ বসে বসে করছিল না। সবাই আশেপাশের পরিবেশ ঘুরে দেখছিল। সাজেক রিসোর্ট আর তা সংলগ্ন ষ্টোন গার্ডেন আর সেই সাথে সাজেকের আইকনিক নির্মান রুনময় রিসোর্ট ঘুরাঘুরি করছিল। ১১টা বাজলে আমার সবাই খাগড়াছড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। আবার সেই রাস্তা। অসম্ভব সুন্দর আর ভয়ংকর। যাওয়ার সময় দেরী করে আসার জন্য আমার আর ছাদে জায়গা হলো না। আমি তখন গাড়ির মধ্যে বসলাম। অবশ্য পরে প্রায়ই সবাই নিচে নেমে এসেছিল কারণ বাইরে সেদিন প্রচন্ড রোদ ছিল। তাদের এই নিচে নেমে আসা দেখে আমি মনে মনে খুব মজা পেয়েছিলাম।

খাগড়াছড়ি আসার পথে আমাদের গাড়ি থেমেছিল হাজাছড়া ঝর্ণার কাছে। সেখানে নেমে প্রায় ১০ মিনিট হেটে আমরা সবাই হাজাছড়া ঝর্না দেখতে গিয়েছিলাম। এই ঝর্নায় একটুও পানি ছিলনা। যাই হোক পানিবিহীন ঝর্না দেখে আবার ফিরে এলাম। প্রায় ২:৩০ টার সময় আমরা খাগড়াছড়ি শহরে পৌছলাম। এসে মনটানা হোটেলে এবার দুপুরের খাবার খেলাম।


















সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মার্চ, ২০১৬ সকাল ৮:৫৮
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজ রমনায় ঘুড়ির 'কৃষ্ণচূড়া আড্ডা'

লিখেছেন নীলসাধু, ১৮ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৬




আজ বিকাল ৪টার পর হতে আমরা ঘুড়ি রা আছি রমনায়, ঢাকা ক্লাবের পর যে রমনার গেট সেটা দিয়ে প্রবেশ করলেই আমাদের পাওয়া যাবে।
নিমন্ত্রণ রইলো সবার।
এলে দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×