গত বছরের মাঝামাঝিতে বন্ধু আমিনুল তাঁর পিসি থেকে একটা তেলুগু সিনেমা দিল প্রথমে যদিও তেলুগু বলে আনতে রাজি ছিলাম না আর আমার প্রথম দেখা এই তেলুগু সিনেমাই আমাকে তেলুগু সিনেমার ভক্ত বানিয়ে দিল। আমাকে বললে ভুল হবে আমার রুমমেটসহ বন্ধুদের সবাইকেই এই সিনেমাটা পাগল বানিয়ে ছাড়ল। পাগল বলছি এই কারণে যদি এক একজন এই সিনেমাটা একটানা ১২-১৫ বার করে দেখে তো আর কি বলা যায়। প্রায় তিন মাসের অধিক সময় ধরে প্রায় এই সিনেমাটা আমার পিসিতে দেখা হচ্ছিল এবং আরও অনেকে নিয়েছিল। আমাদের পুরো শহীদুল্লাহ হলেই (ঢাবি)এই সিনেমাটা ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। এখন আমাদের হলে নিয়মিত তেলুগু সিনেমা দেখা ও আদান প্রধান হয়। ডার্লি, আরিয়া-২ এগুলো ও আমার ভাল লেগেছে।
সিনেমার কাহিনী “মাগধীরা”:
‘হার্সা’ (রাম চরণ) একজন প্রাণবন্ত যুবক যে মটর বাইক চালাতে খুব পছন্দ করে এবং বিভিন্ন কারিশমা দেখিয়ে বাজি জিতে টাকা রোজকার করে। একদিন টিপটিপ বৃষ্টির দিনে বেবি ট্যাক্সি দিয়ে যাবার সময় বাহিরে হাত দিয়ে বৃষ্টি ছুতেছিল এবং বাস স্টপেজের এক মেয়ে ‘ইন্দু’ (কাজাল আগারওয়াল) এর হাতের সাথে স্পর্শ লাগে এবং প্রাণচাঞ্চল্য গভীর অনুভূতি অনুভব করে। সে ‘ইন্দু’ মেয়েটিকে খুঁজে বেড়ায় আর ইন্দু তাঁকে নিয়ে মজা করে তাঁকে নানান ভাবে ঘুরায়। ‘ইন্দু’ তাঁর প্রমে পড়ে যায় সেও ইন্দুকে বুজে ফেলে ও কাছে পায়।
এদিকে ঐ এলাকার এক ভয়ংকর লোক যার নাম ‘রাঘুভীর’ (দেব গিল) যে নাকি ইন্দুর প্রতি কামার্ত এবং সে ইন্দুকে চায় কিন্তু অজানা কারণে সে তাঁকে স্পর্শ করতে পারে না। গণক ঠাকুরের কাছে জানতে পারে ৪০০ বছর পূর্বে তাঁকে যে হত্যা করেছিল সে হার্সা নামে পুনর্জন্ম করেছে তাঁকে মারতে না পারলে তাঁর উদ্দেশ্য সফল হবে না। ‘রাঘুভীর’ ইন্দুর বাবাকে মেরে হার্সাকে ইন্দুর চোখে দোষী বানিয়ে হেলিকপ্টার দিয়ে পালিয়ে যাবার সময় হার্সা বাধা দেয় ও এক পর্যায়ে হেলিকপ্টার থেকে পড়ে যায় কিন্তু ইন্দুর হাতের স্পর্শে ৪০০ বছর পূর্বের সব সৃতি তাঁর ভিতর চলে আসে।
৪০০ বছর পূর্বে কি ঘটেছিল:
কালাভাহিরাবা (রাম চরণ, পর জন্মে যে হার্সা) উদিঘারা অঞ্চলের একজন বীর যোদ্ধা তাঁর সাথে যুবরানী মিত্রাবিন্দার (কাজাল আগারওয়া্ পর জন্মে যে ইন্দু) প্রেম। যুব রানীর এক চাচাত ভাই রান্দের (দেব গিল, পর জন্মে রাঘুভীর) সে তাঁকে বিয়ে করতে চায় ও কালাভাহিরাবার সাথে প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয় কিন্তু ষড়যন্ত্রের পরও হেরে যায় এবং রাজ্য থেকে বিতাড়িত হয়। শেরখান একজন মুসলিম পরাক্রমশালী রাজা তাঁর রাজ্য বিস্তারের জন্য উদিঘর অঞ্চল আক্রমণ করতে আসে। বিতাড়িত রাঘুভীর শেরখানের সাথে হাত মিলায় ও নিজ দেশ আক্রমণে সহযোগিতা করে। যুবরানী পাহাড়ের উপর দেবতাকে পূজা দিতে আসলে রাঘুভীর রাজাকে মেরে রাজ্য দখল করে নেয়।
এ রাজ্যের বীরদের বৈশিষ্ট্য হল তারা মরার পূর্বে কমপক্ষে ১০০ জন মেরে ফেলে। শেরখান এ বীরত্ব দেখতে পূজার স্থল আক্রমণ করে ও ১০০ জন শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা পাঠায় কালাভাহিরাবাকে মেরে যুব রানীকে তুলে আনতে। কালাভাহিরাবা একা ১০০ জনকে মারার পর কুচক্রী রাঘুভীরের সাথেও লড়াই হয় রঘুভীরও মারা পড়ে। কিন্তু রঘুভীর হিংসায় যুব রানীকে ছুরি নিক্ষেপে আহত করে। আহত প্রেমিকা নিচে পড়ে যেতে থাকলে প্রেমিক কালাভাহিরাবাও জাপ দেয় ও প্রেমের পরিসমাপ্তি ঘটে। শেরখান বীরত্ব দেখে খুব আবেগ তাড়িত হয় এবং প্রেমের করুন পরিণতি দেখে দারুণ মর্মাহত হয়ে পর জন্মে সাহায্য করার প্রতিজ্ঞা করে।
সেই পূর্ব জন্মের চারজন একসাথে পুনর্জন্ম করে এবং শেরখান এ জন্মে সালমান নাম নিয়ে জেলে হয়ে পৃথিবীতে আসে। হার্সা হেলিকপ্টার থেকে পড়ে পানিতে পড়ে ও সালমানের জালে আটকা পড়ে। হার্সা পড়ে সালমানের সাহায্য নিয়ে রাঘুভীরের হাত থেকে ইন্দুকে উদ্ধার করে। কিন্তু কিভাবে ??
ছবিটির নির্মাণ, অভিনয়, মান খুবই ভাল। ছবিটি গল্পের চেয়ে অভিনয় ও দুইটা যুগের অসাধারন সুন্দর দৃশ্যমানের জন্য বেশী নজর কেড়েছে আমার বিশ্বাস।
সবাইকে দেখার আমন্ত্রণ রইল।
ছবির নাম: মাগাধীরা
পরিচালকঃ এস এস রাজামৌলি
প্রযোজকঃ আলো আরাভিন্দ
কাহিনীঃ ভিজেন্দ্র প্রসাধ ও এম রত্নম
অভিনয়ঃ রাম চরন তেজ, কাজাল আগারওয়াল, শ্রীহরী, শরৎ বাবু
সংগীতঃ এম এম কেরাভানি, কালইয়ানী মালিক
মুক্তি প্রাপ্তঃ ৩১ জুলাই ২০০৯
দেশঃ ভারত, ভাষাঃ তেলুগু
পুরস্কারঃ ন্যাশনাল ফ্লিম এওয়ার্ড, ২০০৯ ফ্লিমফেয়ার বেস্ট ফ্লিম, ২০০৯ নান্দি এওয়ার্ড
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১১ রাত ৯:৪৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





