somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবা একটি দৃষ্টান্ত। কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত সিএইচসিপির জীবনের কথা।

২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৭:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দেশে রয়েছে অনেক বড় বড় সরকারী বেসরকারী স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান।সেই সব প্রতিষ্ঠানের মত জাক জমকপূর্ণ না হলেও দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্য সেবা ও সচেতনতার জন্য বর্তমান সরকার প্রতিষ্ঠা করেছেন কমিউনিটি ক্লিনিক নামক একটি ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেবা কেন্দ্র।সেখানে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে নন মেডিকেল শিক্ষায় শিক্ষিত কর্মীদের।তাদেরকে মেডিকেলের একটি স্বল্প সময়ের কোর্স করানো হয়েছে নিয়োগের পরবর্তী সময়ে তারপর হতে কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। তাদের একান্ত আন্তরিকতাই কমিউনিটি ক্লিনিক একটি রোল মডেল বিশ্বের মাঝে। এখানে শুধু যে বিষয় ভিত্তিক বিদ্যা থাকলেই যে একটি বিষয়ে দক্ষ হওয়া যাই, সেই প্রথা ছিন্ন করে দিয়েছে এই কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মীরা।তারা নন মেডিকেল পারসন হয়ে স্বল্প সময়ের প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেদের কর্মস্পৃহা ও আন্তরিকতাই স্বাস্থ্য সেবাই যে ভুমিকা রেখে চলেছে তা সারা পৃথিবী মনে রাখব।

মনোবল আর আন্তরিকতাই অসম্ভবকেও সম্ভব করা যাই তার উজ্বল দৃষ্টান্ত বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মীরা।
বাংলাদেশের মধ্যে কমিউনিটি ক্লিনিকে সর্বোচ্চ নরমাল ডেলিভারী /বাচ্চা প্রসব করানো কমিউনিটি ক্লিনিক সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার জুড়ি উপজেলার ভোগতেরা কমিউনিটি ক্লিনিক।এই কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মী সিএইচসিপি তার মায়ের স্বপ্ন পুরণে কাজ করে পেয়েছেন বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাত হতে জাতীয় পুরুষ্কার স্বাস্থ্য সেবাই অবদানের জন্য।

কেন সে এই পেশাকে এত ভালবাসে? তার সফলতার পেছনের কাহিনী কি?

ভোগতেরা কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি মোঃ হানিফুল ইসলাম । তার ছোট মনে কষ্টের দাগ কেটে গিয়েছিল তার মায়ের সন্তান হতে গিয়ে অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণে মৃত্যু। তখন সে অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র।সেই সময়ে ঐ উপজেলাই স্বাস্থ্য ব্যবস্থা তেমন ভাল ছিল না। যোগাযোগ ব্যবস্থাও ভাল ছিল না। তাই মায়ের মৃত্যু চোখের সামনে দেখতে হয়েছে হানিফুলের।

হানিফুলের নিজের মনে কথা তুলে ধরলাম নিজে লিখা ইনবক্সে তার।


আমি তখন মায়ের জন্য কিচ্ছু করতে পারি নি

আমার মা আমার খুব প্রিয় ছিলেন

আমাকে অনেক আদর করতেন

আমার মা বলতেন আমাকে স্বাস্থ্য কর্মী বানাবেন

পরিবার অবস্থা তকন খুব বেশি ভালো ছিল না

তাই বিজ্ঞান বিভাগে পরতে পারি নাই

মা মারা যাওয়ার পর লেখা পড়ায় অমনযোগী হয়ে পড়ি

তখন আমার খালা আমাকে উনার বাসায় নিয়ে পড়ান

আমি ২০০৭ সালে দাখিল পাস করি

২০০৯ সালে আলিম পাস করি

আলিম পাস করার পর সিএইচসিপি পদে আবেদন করি

আমাকে ভাইবার জন্য সিলেক্ট করা হয়
আমার নিকটতম প্রতিদ্বন্দি ছিল আমার বর্তমান এমপি ও মাননীয় হুইপ এর বোনের ছেলে

তাই উনার প্রথমে চাকরি হয়

কিন্তু উনি ওনার ঐ সময় ইউনিয়নের সচিব পদে চাকরি হওয়াতে সিএইচসিপি যোগদান করেন নি
তারপর ২০১২ সালেন এপ্রিল মাসে আমার সিসিতে মাননীয় প্রকল্প পরিচালক কমিউনিটি ক্লিনিক, মাকদুমা ম্যাডাম সিসি পরিদর্শনে আসেন

তখন এই সিসির সিএইচসিপি পদ খালি ছিল

উনি সিসিতে থাকা অবস্থায় উনার অফিসে ফোন দিয়ে দ্বিতীয় স্থানে যে আছে তাকে যোগদান লেটার পাটানোর জন্য বলেন

আমি এর এক সপ্তাহ পড়ে যোগদান লেটার হাতে পাই

১২ এপ্রিল ২০১২ সালে সিভিল সার্জন অফিসে যোগদান করি

এরপর হতেই সে এই ক্লিনিককে মনে প্রানে ভালবেসে কাজ শুরু করেন।যদিও তার কোন মেডিকেল শিক্ষা ছিল না।তার স্বপ্ন ছিল মাকে বাচাতে পারিনি।কিন্তু গ্রামের এলাকার মানুষের জন্য কিছু করব।তারপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে এবং একজন বেসরকারী প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত দক্ষ ডেলিভারী করানো কর্মীর সহযোগিতাই ক্লিনিকে নরমাল ডেলিভারী করানো শুরু করেন।এ বিষয়ে হানিফুলের বক্তব্য হলোঃ
আমি মনে করি আমার মাকে বাঁচাতে না পারলেও ।আমার মায়ের মতন কোন মায়ের অকালে মারা না যায় সেই জন্য কাজ করে চলেছি।


এজন্য আমি দিবারাত্রি কাজ করি

আমি যখন যোগদান করি তখন আমার কমিউনিটি ক্লিনিকের অবস্থা ভালো ছিল না।

এখন আমি আমার সিসি আমার মনের মতো করে সাজিয়েছি।
একটি সিসিতে যা দরকার সব কিছু আমার সিসিতে আছে ।

আমার সিসির ০৫ টি রুমের মধ্যে প্রতিটি রুম খুবি সুন্দর করে সাজিয়ে রাখি।

এখন ভোগতেরা কমিউনিটি ক্লিনিকে নিয়মিত নরমাল প্রসব করানো হয় । এই তরুণ ছেলে মেয়ে সারা দেশব্যাপী এই ভাবে কাজে মনোনিবেশ করে আছেন। যার ফলশ্রুতিতে বাংলদেশ সরকার পাচ্ছেন দেশ বিদেশে অনেক সুনাম ও খ্যাতি।কিন্তু এই তরুণ মেধাবী স্বাস্থ্য কর্মীদের মনের একটাই কষ্ট তাদের চাকুরীর নিশ্চয়তা নিয়ে। বাংলাদেশ সরকার কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত সকল কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) এদের চাকুরী জাতীয়করণের মাধ্যমে নিশ্চিন্তে কাজ করার সুযোগ করে দিতেন।এটা শুধু হানিফুল না এমন শত শত ছেলে মেয়ে এ ভাবে তাদের পরিশ্রমের মাধ্যমে দেশের প্রান্তিক জনগণের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করে চলেছেন। তাদের একটাই দাবী সরকারের কাছে তাদের চাকুরী জাতীয়করণ।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৮:৪৭
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×