দেশে রয়েছে অনেক বড় বড় সরকারী বেসরকারী স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান।সেই সব প্রতিষ্ঠানের মত জাক জমকপূর্ণ না হলেও দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্য সেবা ও সচেতনতার জন্য বর্তমান সরকার প্রতিষ্ঠা করেছেন কমিউনিটি ক্লিনিক নামক একটি ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেবা কেন্দ্র।সেখানে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে নন মেডিকেল শিক্ষায় শিক্ষিত কর্মীদের।তাদেরকে মেডিকেলের একটি স্বল্প সময়ের কোর্স করানো হয়েছে নিয়োগের পরবর্তী সময়ে তারপর হতে কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। তাদের একান্ত আন্তরিকতাই কমিউনিটি ক্লিনিক একটি রোল মডেল বিশ্বের মাঝে। এখানে শুধু যে বিষয় ভিত্তিক বিদ্যা থাকলেই যে একটি বিষয়ে দক্ষ হওয়া যাই, সেই প্রথা ছিন্ন করে দিয়েছে এই কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মীরা।তারা নন মেডিকেল পারসন হয়ে স্বল্প সময়ের প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেদের কর্মস্পৃহা ও আন্তরিকতাই স্বাস্থ্য সেবাই যে ভুমিকা রেখে চলেছে তা সারা পৃথিবী মনে রাখব।
মনোবল আর আন্তরিকতাই অসম্ভবকেও সম্ভব করা যাই তার উজ্বল দৃষ্টান্ত বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মীরা।
বাংলাদেশের মধ্যে কমিউনিটি ক্লিনিকে সর্বোচ্চ নরমাল ডেলিভারী /বাচ্চা প্রসব করানো কমিউনিটি ক্লিনিক সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার জুড়ি উপজেলার ভোগতেরা কমিউনিটি ক্লিনিক।এই কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মী সিএইচসিপি তার মায়ের স্বপ্ন পুরণে কাজ করে পেয়েছেন বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাত হতে জাতীয় পুরুষ্কার স্বাস্থ্য সেবাই অবদানের জন্য।
কেন সে এই পেশাকে এত ভালবাসে? তার সফলতার পেছনের কাহিনী কি?
ভোগতেরা কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি মোঃ হানিফুল ইসলাম । তার ছোট মনে কষ্টের দাগ কেটে গিয়েছিল তার মায়ের সন্তান হতে গিয়ে অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণে মৃত্যু। তখন সে অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র।সেই সময়ে ঐ উপজেলাই স্বাস্থ্য ব্যবস্থা তেমন ভাল ছিল না। যোগাযোগ ব্যবস্থাও ভাল ছিল না। তাই মায়ের মৃত্যু চোখের সামনে দেখতে হয়েছে হানিফুলের।
হানিফুলের নিজের মনে কথা তুলে ধরলাম নিজে লিখা ইনবক্সে তার।
আমি তখন মায়ের জন্য কিচ্ছু করতে পারি নি
আমার মা আমার খুব প্রিয় ছিলেন
আমাকে অনেক আদর করতেন
আমার মা বলতেন আমাকে স্বাস্থ্য কর্মী বানাবেন
পরিবার অবস্থা তকন খুব বেশি ভালো ছিল না
তাই বিজ্ঞান বিভাগে পরতে পারি নাই
মা মারা যাওয়ার পর লেখা পড়ায় অমনযোগী হয়ে পড়ি
তখন আমার খালা আমাকে উনার বাসায় নিয়ে পড়ান
আমি ২০০৭ সালে দাখিল পাস করি
২০০৯ সালে আলিম পাস করি
আলিম পাস করার পর সিএইচসিপি পদে আবেদন করি
আমাকে ভাইবার জন্য সিলেক্ট করা হয়
আমার নিকটতম প্রতিদ্বন্দি ছিল আমার বর্তমান এমপি ও মাননীয় হুইপ এর বোনের ছেলে
তাই উনার প্রথমে চাকরি হয়
কিন্তু উনি ওনার ঐ সময় ইউনিয়নের সচিব পদে চাকরি হওয়াতে সিএইচসিপি যোগদান করেন নি
তারপর ২০১২ সালেন এপ্রিল মাসে আমার সিসিতে মাননীয় প্রকল্প পরিচালক কমিউনিটি ক্লিনিক, মাকদুমা ম্যাডাম সিসি পরিদর্শনে আসেন
তখন এই সিসির সিএইচসিপি পদ খালি ছিল
উনি সিসিতে থাকা অবস্থায় উনার অফিসে ফোন দিয়ে দ্বিতীয় স্থানে যে আছে তাকে যোগদান লেটার পাটানোর জন্য বলেন
আমি এর এক সপ্তাহ পড়ে যোগদান লেটার হাতে পাই
১২ এপ্রিল ২০১২ সালে সিভিল সার্জন অফিসে যোগদান করি
এরপর হতেই সে এই ক্লিনিককে মনে প্রানে ভালবেসে কাজ শুরু করেন।যদিও তার কোন মেডিকেল শিক্ষা ছিল না।তার স্বপ্ন ছিল মাকে বাচাতে পারিনি।কিন্তু গ্রামের এলাকার মানুষের জন্য কিছু করব।তারপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে এবং একজন বেসরকারী প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত দক্ষ ডেলিভারী করানো কর্মীর সহযোগিতাই ক্লিনিকে নরমাল ডেলিভারী করানো শুরু করেন।এ বিষয়ে হানিফুলের বক্তব্য হলোঃ
আমি মনে করি আমার মাকে বাঁচাতে না পারলেও ।আমার মায়ের মতন কোন মায়ের অকালে মারা না যায় সেই জন্য কাজ করে চলেছি।
এজন্য আমি দিবারাত্রি কাজ করি
আমি যখন যোগদান করি তখন আমার কমিউনিটি ক্লিনিকের অবস্থা ভালো ছিল না।
এখন আমি আমার সিসি আমার মনের মতো করে সাজিয়েছি।
একটি সিসিতে যা দরকার সব কিছু আমার সিসিতে আছে ।
আমার সিসির ০৫ টি রুমের মধ্যে প্রতিটি রুম খুবি সুন্দর করে সাজিয়ে রাখি।
এখন ভোগতেরা কমিউনিটি ক্লিনিকে নিয়মিত নরমাল প্রসব করানো হয় । এই তরুণ ছেলে মেয়ে সারা দেশব্যাপী এই ভাবে কাজে মনোনিবেশ করে আছেন। যার ফলশ্রুতিতে বাংলদেশ সরকার পাচ্ছেন দেশ বিদেশে অনেক সুনাম ও খ্যাতি।কিন্তু এই তরুণ মেধাবী স্বাস্থ্য কর্মীদের মনের একটাই কষ্ট তাদের চাকুরীর নিশ্চয়তা নিয়ে। বাংলাদেশ সরকার কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত সকল কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) এদের চাকুরী জাতীয়করণের মাধ্যমে নিশ্চিন্তে কাজ করার সুযোগ করে দিতেন।এটা শুধু হানিফুল না এমন শত শত ছেলে মেয়ে এ ভাবে তাদের পরিশ্রমের মাধ্যমে দেশের প্রান্তিক জনগণের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করে চলেছেন। তাদের একটাই দাবী সরকারের কাছে তাদের চাকুরী জাতীয়করণ।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৮:৪৭