somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী : দয়া করে ১৯ নং অনুচ্ছেদটি ও সংশোধন করুন...

১৩ ই আগস্ট, ২০১০ বিকাল ৩:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এই পোষ্টটি লেখার চেষ্টা করছি আজ এক সপ্তাহ হয়- কিন্তু বিদ্যুতের সমস্যার কারনে পারছিনা। আমার অবস্থান কিশোরগঞ্জ জেলার সর্ব দক্ষিনে পাকুন্দিয়া উপজেলায়। এখানে বিদ্যুত দৈনিক গড়ে ১-১০ মিনিট করে দৈনিক মোট ১ ঘন্টার মত। গতকাল ১১/০৮/‘১০ তারিখ ছিল ২৪ ঘন্টায়-সর্ব সাকুল্যে ১৯ মিনিট। যা দিয়ে কম্পিউটার চালানো তো দুরের কথা আই.পি.এস এর চার্জও হয়না যাতে সন্ধায় ঘরে এক দুইটা এনার্জি লাইট ও জালানো যায়। এই হলো আমার এলাকার বিদ্যুতের চিত্র। আর এই অবস্থাটি বিরাজমান সর্বসাকুল্যে কটিয়াদী উপজেলা থেকে শুরু করে মসুয়া, বুরুদিয়া, এগারসিন্দুর, বাহাদিয়া, মির্জাপুর, চরফরাদী, পাটুয়াভাঙ্গা, এই ইউনিয়নগুলো। সব মিলিয়ে যার আয়তন হবে প্রায় ৫০/৬০ বর্গ কিলোমিটার। জানা গেছে কটিয়াদী বিদ্যুত অফিসেও জেনারেটর দিয়ে অফিস করা হয়।

আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ভালই চলছিল প্রায় তিন/চার মাস। কিন্তু তারপর হতেই শুরু হলো বিপত্তি এই বিপত্তির আর যেন শেষ নাই। অবস্থার পরিবর্তনের জন্য স্থানীয় এম.পি মহোদয়ের স্বরনাপন্ন হলে- তিনি জনসাধারনের কাছে তার অক্ষমতা প্রকাশ করেন এই ভাবে যে- “আমার কিছুই করার নাই- কারন: কিশোরগঞ্জের জন্য মোট বরাদ্দ থেকে প্রেসিডেন্ট সাহেব নিয়া গেল তার এলাকার জন্য ৮ মেগা ওয়াট, স্পীকার আঃ হামিদ সাহেব নিয়া গেল তার এলাকার জন্য ৬ মেগা ওয়াট, আশরাফ সাহেব নিয়া গেল তার এলাকার জন্য ৫ মেগা ওয়াট, এইরূপে সবাই যার যার মত নিয়া- আমার সবচাইতে ভোটার অধ্যুষিত এলাকার জন্য বরাদ্দ রাখল মাত্র মাত্র ২ মেগা ওয়াট- এর বিচার আল্লায় করব।”

সূধী পাঠক, অনুমান করুন: কতটা করুন, ভয়াবহ আর অসহায় পরিস্থিতিতে একজন এম.পি-র মুখ দিয়ে উচ্চারিত হয়- “এর বিচার আল্লায় করব” আর জনাব এম.পি সাহেবের মুখ দিয়ে উচ্চারিত এই আর্তিটি আজ আমাদের কটিয়াদী-পাকুন্দিয়ার ভোক্তভোগী জনগনের মুখে মুখে যেন কাটা ঘায়ে লবনের ছিটার মত ‘পাষান কৌতুক’ হয়ে আছে।

মাননীয় এম.পি. মহোদয়ের এই করুন আর্তি যেন আমাদের একটি কথাই স্বরন করিয়ে দেয় দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতায় আসীন- আমাদের এই কিশোরগঞ্জের কৃতি সন্তানেরা আজ তাদের নিজ নিজ ক্ষমতার অনুপাতে- নিজ নিজ এলাকার জন্য বিদ্যুত বরাদ্দ দিয়াছেন। সেখানে আমাদের এই বয়োবৃদ্ধ এম.পি. ডাঃ আঃ মান্নান সাহেবের কোন মূল্যই নাই- হোকনা তার এলাকায় ভোটার ও গ্রাহক সংখ্যা বেশী।

এক সপ্তাহের পরিকল্পনায় এই লেখাটি আজ-মসজিদের তারাবীহ্ নামাজের জন্য ভাড়াকৃত জেনারেটরে আইপিএস. চার্জ দিয়ে লিখছি। গ্রামীণ প্রবাদ “বেশী ফকিরে দরগাহ্ নষ্ট” এই প্রবাদটি যে কত নির্মম সত্য তা আজ আমরা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। বর্তমান বাংলাদেশ সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ন পদগুলিই দখল করে আছে কিশোরগঞ্জের কৃতি সন্তানেরা। আর এই কৃতি সন্তানদের কীর্তির বাস্তব রূপ হলো “এর বিচার আল্লায় করব”
অর্থাৎ আমাদের অবস্থাটি আজ যেন রামের তীরে বিদ্ধ হওয়া সেই ব্যাঙটির মত। উদাহরনটি আর একটু পরিস্কার করি- রামায়নের কাহিনী: রাম যখন সীতার খুঁজে বনে বনে ঘুড়ে ক্লান্ত হয়ে পিপাসার্ত। তখন পম্পা সরোবরে তৃষ্ণা নিবারনের জন্য তার তীরটি মাটিতে বিদ্ধ করে ধনুকটি রেখে তৃষ্ণা নিবারন শেষে তীরটি উঠালে তীরের আগায় বিদ্ধ ব্যাঙটিকে প্রশ্ন করে:
কীরে ব্যাঙ তুই যখন বিদ্ধ হতে চলেছিস্ তখন আওয়াজ করলি না কেন?
ব্যাঙটি কাতর স্বরে জবাব দেয়: প্রভু আমরা যখন বিপদে পড়ি তখন রাম রাম বলে ডাকি-তখন তুমি আমাদের রক্ষা কর- আজ যখন রাম নিজেই আমার হন্তারক তখন আমি আর কাকে ডাকব?

আমাদের অবস্থাটিও সেই ব্যাঙটির মতই যেন। সরকারের উচ্চ পদস্ত কিছু কর্মকর্তার সুবিধাবাদী বন্টনের শীকার হয়ে আজ পাঁচ ছয় বছর যাবত মাগরিবের পর হতে রাত ১১/১২ টা পর্যন্ত বিদ্যুত পাইনা। বর্তমানের চিত্র আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। পল্লী বিদ্যুতের মিটার ভাড়া নামক- ভাড়াটি বিশ বছরেও শেষ হয়না। সার্ভিস চার্জ নামক চার্জটি দিতে হয় ২৪ ঘন্টায় ১৯ মিনিট সার্ভিস পেয়েও। মিনিমাম বিল নামক বিষ ফোড়াটি না পারছি ফেলে দিতে না পারছি- ভোগ করতে। এই সব জুলুমের প্রতিকারের জন্য শেষ অবলম্বন: সকলে মিলে খতম পড়ানো-তাও পারছিনা “মসজিদে সমবেত হলে জঙ্গী সন্দেহে গ্রেফতারের ভয়ে”। আর কিভাবে শাস্তি হলে প্রশাসনের সেই 'রাম"দের থেকে মুক্তি মিলবে?

অবশেষে সচেতন নাগরিকের মনে প্রশ্ন জাগে- তাহলে আমাদের পবিত্র সংবিধানের ১৯ এর (১) নং অনুচ্ছেদে বর্নিত কথাটি কি ভুল- যেখানে বলা হয়েছে:
১৯ (১) “সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা নিশ্চিত করিতে রাষ্ট্র সচেষ্ঠ হইবেন।”
১৯ (২) ‘মানুষে মানুষে সামজিক ও অর্থনৈতিক অসাম্য বিলোপ করিবার জন্য, নাগরিকের মধ্যে সম্পদের সুসম বন্টন নিশ্চিত করিবার জন্য এবং প্রজাতন্ত্রের সর্বত্র অর্থনৈতিক উন্নয়নের সমান স্তর অর্জনের উদ্যেশ্যে সুষম সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করিবার জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন করিবেন।

তাহলে কি আমাদের কিশোরগঞ্জের পৈত্রিক নিবাস ওয়ালা, বর্তমান সরকারের প্রেসিডেন্ট, স্পীকার, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী, সেনা বাহিনীর প্রধান সাহেব, সকলেই সংবিধানের এই অনুচ্ছেদটির প্রতি বৃদ্ধাগুলি প্রদর্শন করিয়াছেন?
অবশ্য যদি আমি ভুল না বুঝে থাকি... পাঠকদের জন্য সংবিধানের পাতাটির কপি পোষ্টের প্রথমেই সংযুক্ত করলাম।

অতএব এই মহুর্তে একটি আহবানই আমরা জানাতে চাই- মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, দয়া করে এই অনুচ্ছেদটিকে বিলুপ্ত ঘোষনা করুন: আর না হয় এভাবে লিখুন: “ক্ষমতার অনুপাতে বা ক্ষমতাসীনদের ইচ্ছার অনুপাতে সুযোগ সুবিধা বন্টিত হইবে”।
কারন: আপনারা ক্ষমতা গ্রহনের সময় যে পবিত্র সংবিধানটি সমুন্নত রাখার শপথ নিয়ে থাকেন- সেই শপথ ভঙ্গ করার আত্ম-প্রবঞ্চনা থেকে মুক্তি লাভ করার জন্য হলেও- ব্যবস্থা নিন।


বি: দ্র: লেখাটি গত রাত্রে ১১টায় লেখা... অনেক ভেবে চিন্তে আজ পোষ্ট করলাম।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই আগস্ট, ২০১০ বিকাল ৪:২৩
১৯টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×