আমাদের বাংলার গ্রামদেশে একটা প্রবাদ প্রচলিত আছে- তা হলো ”ছিড়তে পারেনা মুরগীর বাল- নাম রাখছে শেখ জালাল”- কথাটি আমাদের এই ব্লগের নাস্তিকদের বেলায় যে কত নির্মম সত্য তা আজ প্রমাণ করার জন্যই এই লেখা।
নাস্তিকদের সম্পর্কে আমার ধারনা স্বল্পকালের। বলতে গেলে ব্লগে আসার আগে এদের সম্পর্কে আমার বেশী জানাশোনা ছিলনা। প্রথম প্রথম ইসলাম আর মুসলমানদের নিয়ে এদের সমালোচনা দেখে ভীত হয়ে যেতাম- ভাবতাম ”বলে কি এরা এসব? মুহাম্মদ সঃ এর যৌন জীবন আর পবিত্র কোরআনের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করা আর ইসলামকে ঠুনকো একটা হাস্যকর বস্তুতে পরিনত করাই যেন এদের লক্ষ্য আর উদ্যেশ্ব্য। ....
তারপর থেকেই আমি অনেক ভেবেছি এদের নিয়ে। যুক্তির কাঠগড়ায়, ইসলামের দৃষ্টিতে, এমনকি বাস্তবতার নিরিখেও চিন্তা করেছি এদের চরিত্র নিয়ে। আমার ভাবনার ফলাফলে পরে আসছি। তার আগে বাস্তবতার নিরিখে দেখে নেই ইসলামের বর্তমান অবস্থা ও অবস্থান।
ইসলামের আবির্ভাবের পর হতে অদ্যাবধি বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল একটা ধর্ম হিসাবে স্বীকৃত। যা নিয়ে নাস্তিক্যবাদের অনুসারী আর ইহুদীদের মাথা ব্যথার অন্ত নেই। বিশ্বের প্রায় দেড় শত কোটি অনুসারী আশ্রয় নিয়েছে ইসলামের ছায়াতলে। যে ধর্মের পবিত্র গ্রন্থ আলকোরআন আজ বিজ্ঞানের বিশেষ বিশেষ আবিস্কারের মুখে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছে। পৃথিবীতে এমন কোন গ্রন্থ খূঁজে পাওয়া যাবেনা যার আগাগোড়া মুখস্ত লোকের সংখ্যা এত বেশী। সেই তুলনায় অন্য কোন ধর্ম গ্রন্থ মুখস্ত লোকের সংখ্যা দু’এক জনও পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ।
সংখ্যা বিজ্ঞান বা নিউমারোলজি আবিস্কারের পর পবিত্র কোরআনের সংখ্যা তাত্ত্বিক বন্ধনের এক ঘুর রহস্যের সন্ধান পাওয়া যায়- যা আজ বিশ্বের চিন্তাশীল, আর গবেষকদের কাছে এক অলংঘনীয় রহস্যই- সেইসাথে চিন্তার খোড়াক ও গবেষনার উপকরনতো বটেই। যার পথ ধরে ড. মরিস বুকাইলী, সহ নাম না জানা আরো অনেক গবেষক ইসলামের ভুল অনুসন্ধান করতে গিয়ে আশ্রয় গ্রহন করেছে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে, যাদের জীবন সত্যের আলোয় আলোকিত।
ইসলামের এই সকল অবস্থা আজ এবং বর্তমান পৃথিবীর প্রতিষ্ঠিত সত্য। কারো সমালোচনায়, ঠুনকো গলাবাজি, আর ব্লগের এইসব ভাঁড়দের চোরাই মন্তব্যে ইসলামের এক চুল যেমন বাঁকা হবেনা। সেইসাথে বন্ধও হবেনা ইসলামের জয়যাত্রা।
অপরদিকে আমরা সাময়িক দুঃখিত হই - যখন দেখি ইন্টারনেট প্রযুক্তির এই যুগের হাওয়ায় ব্লগ লেখার সুযোগে কতগুলো ভাঁড় তাদের যুক্তিহীন আর কদর্য সমালোচনা দিয়ে ইসলামকে কলুষিত করতে চায়। আর আমরাও তাদেরকে ভদ্র ভাষায় জবাব দেয়ার প্রয়াস চালাই- এই ভেবে... হয়ত তাদের ভুল ভাঙ্গবে। কিন্তু সবই যেন ”অরন্যে রোদন”। সেইসব ভাঁড়দের ভদ্র ভাষায় জবাব দেয়ার ফলাফল আমি কখনও ভাল দেখি নাই। শুধুই তেনা প্যাচানী ছাড়া।
দু’একটা উদাহরন দেই :
>>> ওরা পবিত্র কোরআনের সত্যতা প্রমাণ করতে বলে-
>>> জবাব হলো: আরে.. তোমরা কি দেখনা? তোমাদের ভাষায় তথাকথিত সেই সেকেলে মৌলবাদীরা যাদের মস্তিস্ক পর্যাপ্ত প্রোটিনের অভাবে সুস্থ ভাবে বেড়ে উঠতে পারেনা- তারা কিভাবে এই এতবড় গ্রন্থের ৬৬৬৬, (ছয় হ্জার ছয়শত, ছিষট্টি) টি আয়াত কন্ঠস্ত আর ঠোটস্ত করে ফেলে। এদের সংখ্যা এই পৃথিবীতে আজ কত সহস্র- গনিয়া দেখ। অপরদিকে তোমরা দেখাও এমন কোন ধর্মগ্রন্থ অথবা তোমাদের মতবাদের কোন কথার এতবড় একটা সংস্করন হাতেগোনা দু’একজন মুখস্ত করতে পেরেছে। এটা কি পবিত্র কোরআনের অলৌকিকতা নয়? এটা কি কোরআনের সত্যতার প্রমান নয়? কোরআনের সংখ্যাতাত্তিক বন্ধন আর আয়াতের মাধ্যমে বিজ্ঞানকে চ্যালেঞ্জ করার কথা না হয় বাদই দিলাম। পারলে তোমরা এমন কোন একটা গ্রন্থ সামনে এনে দেখাও যার আগাগোড়া তোমাদের প্রোটিন সমৃদ্ধ মস্তিস্ক এমন ভাবে মুখস্ত করতে পেরেছে?
>>> মুহাম্মদ এর দোষ চারিত্রিক দোষ অনুসন্ধান করে এরা।
>>>> জবাব হলো : যে মুহাম্মদ সঃ মাত্র ৬৩ বৎসরের জীবনকালে একদিনের জন্য কোন একাডেমিক শিক্ষা গ্রহন না করেও সোয়া লক্ষ, ১২৫,০০০ (এক লক্ষ, পচিশ হাজার) লোকের সম্মুখে জীবনের শেষ ভাষনটি দিয়ে গেছেন। আর তোমরা যারা তাঁর সমালোচনা করতে আস... সেই তোমরা সারাজীবন লেখাপড়া করে বড় বড় ডিগ্রী নিয়ে ১২৫ জন লোককে নিজের সেই মতবাদ গিলাতে পেরেছ কিনা বিবেককে প্রশ্ন করে দেখ। (ওদের সোভিয়েত ইউনিয়নের সেই প্রভুদের সম্রাজ্য ভেঙ্গে পড়ার পরও এরা চুঁ চুঁ করে বেড়ায়)
>>> ওরা মনবতার ধর্মের বুলি আওড়ায়-
>>>> অথচ যুগ যুগ ধরে আর তাদের পুর্ব পুরুষদের বংশ পরম্পরা থেকে প্রাপ্ত তাদের রক্তে মাংশে প্রবিষ্ট সেই মানবতা নামক শব্দটি- যা ধর্ম থেকে ধার করা বানী সেটাকে অস্বীকার করার দৃষ্টতা দেখায়। ধর্ম, স্রষ্টা বলে কিছু নেই বলে প্রচার চালাতে চায়- কিন্ত তার রক্তে মানবতা নামক যে শব্দটির অস্তিত্ব তাই যে ধর্মের অবদান সেটাকে স্বীকার করেনা।
অথচ ইসলাম বলেছে:
* তোমার প্রতিবেশী যদি না খেয়ে থাকে- তুমি যদি পেট পুড়ে খাও পরকালে তুমি তার জন্য জিজ্ঞাসিত হবে।
* রাত্রে খাবার খাওয়ার পর একজন প্রতিবেশীর বাড়িতে অন্তত তার অবস্থা জানার জন্য তাগিদ দেয়া হয়েছে।
* একজন মানুষের ছোট্ট একটি প্রয়োজন মিটিয়ে দেয়ার মধ্যে মসজিদে বসে, এতেকাফের সহিত, ৪০ বছর নফল ইবাদত করার চেয়েও বেশী পুন্যের কথা বলা হয়েছে।
* যাকাত প্রদানের মাধ্যমে অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করে যে মানবতার কথা বলা হয়েছে। সেগুলো তাদের নজরে আসেনা। অথচ তাদের বৈশিষ্ট হচ্ছে “দাদা খেয়ে এসেছেন- নাকি যেয়ে খাবেন”। যে ভূ’খন্ডের বাসিন্দাদের বৈশিষ্ট হলো বাড়িতে মেহমান এলে মেহমানকে প্রশ্ন করে- “দাদা খেয়ে এসেছেন-? নাকি যেয়ে খাবেন?” সেই ভূ-খন্ডেরই বাসিন্দা এরা। (আমার সন্দেহ)
এরা ইন্টারনেট প্রযুক্তির এই শক্তিকে কাজে লাগিয়ে আপনার আমার ধর্ম বিশ্বাসে চির ধরানোর চেষ্টায় লিপ্ত। দু’পয়সা মানুষকে দান করার ক্ষমতা নেই। অথচ মানবতার কথা বলে ব্লগে- তাও নিজের নামটি লুকিয়ে-ইসলামিক একটি নামকে ধার করে- চিন্তা করুন “কতবড় নি....... এরা”।
যদি ক্ষমতা থাকে... যদি চ্যালেঞ্জ গ্রহন করার শক্তি থাকে... তাহলে- প্রযুক্তির এই যুগের ৮০ কিংবা ১০০ বছরের আয়ুকে কাজে লাগিয়ে মুহাম্মদ (সঃ) এর জীবনে কৃত কর্মগুলির ১০০ একশত ভাগের একভাগ করে দেখাক। মুহাম্মদ (সঃ) এর মানবতার কথা যদি তাদের পছন্দ না হয়, তবে ঠিক আছে- ইসলামের বর্তমান বাস্তবতাই তো চ্যালেঞ্জ ছুড়ে রেখেছে... বাপের বেটা হয়ে থাকলে তাদের সেই মানবতার শিক্ষা প্রচার আর প্রসার করতে পবিত্র কোরআনের কাছাকাছি একটা গ্রন্থ রচনা করে প্রচার প্রসারে লেগে যাক.. দেখি পৃথিবীর একজন মানুষকে তার সেই গ্রন্থটিকে কণ্ঠস্ত আর ঠোটস্ত করাতে পারে কিনা। গিলাতে পারে কিনা একটা শব্দ।
কিন্তু না.. এদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট হচ্ছে ধর্ম নিয়ে কোন কথা ব্লগে লিখলেই সেখানে চোরের মত আসবে আর খন্ডিত একটা কথাকে সম্বল করে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে চলে যাবে। গঠনমুলক কোন সমালোচনা করবে না-বরং শুণ্যগর্ভ বর্তমানে দাঁড়িয়ে হামবড়া ভাব দেখাবে। এদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট আর বর্তমান কর্মের জন্য ইসলাম আরো আগেই এদের সংজ্ঞা নির্ধারন করে দিয়েছে। দিয়েছে তাদের একটি নামও। আর এরা কার শক্তির দ্বারা পরিচালিত হয় সেটাও সুস্পষ্ট ভাষায় বলে দেয়া আছে।
আমার আজকের এই লেখা এগুলো অহঙ্কার নয়- এগুলো হলো বাস্তবতা। আর সেই বাস্তবতাটাকেও তারা অস্বীকার করে ... অস্বীকার করে- গনতন্ত্রের মুল সূত্র যা পৃথিবীর প্রতিষ্ঠিত সত্য ”মেজরিটি মাষ্ট বি গ্র্যান্টেড” এই সত্যটিও তাদের বোধগম্য তো নয়ই অনুভুতিতে ও জাগেনা- >>> না হলে মেক্সিমাম বিশ্বাসী জনগোষ্ঠির এই ব্লগে ভদ্র ভাষায় জ্ঞানার্জন করতে চেষ্টা করা তো গণতন্ত্রেরই শিক্ষা... বক্রচিন্তা আর বক্র সংলাপই দারা যে ভালো কিছু আসেনা সেটা বুঝার জন্য তো বড় পন্ডিত হবার প্রয়োজন পড়েনা।
>>> এরা মুক্তচিন্তা আর মুক্ত আলোচনার কথা বলে-
>>>> কিন্তু নিজেরা ভদ্র ভাষা আর ভদ্র চিন্তার গুনাবলী অর্জন করতে পারে নাই। এরা যুক্তির কথা বলে কিন্তু অন্যের যুক্তি এরা মানতে রাজী নয়। এরা বিজ্ঞানের আলোচনা করবে- কিন্তু নিজেরা বিজ্ঞান মানবে না। ব্লগের ভদ্র আলোচনায় অভদ্র ভাষা প্রয়োগের কারনে ব্লক করে দিলে ফ্যাসিবাদী চরিত্রের কথা বলে।
আবারো বলছি >>> এইসব চরিত্রের কারনে ইসলাম এদের সংজ্ঞা যেমন নির্ধারন করে দিয়েছে.. তেমনি তাদের সম্পর্কে সুস্পষ্ট ভাষায় বলে দিয়েছে “মুর্খের সাথে তর্ক করিওনা” অথবা “মুর্খের সাথে তর্ক করা মুর্খের কাজ”। অতএব যারা যুক্তি মানবেনা-তাদের সাথে আলোচনা করা বা তাদেরকে আলোচনার সুযোগ দেয়া কোন বুদ্ধিমানের কাজ নয়। যারা ভদ্র ভাষায় অন্যের ধর্মকে শ্রদ্ধা করতে শিখবে না- তাদের সাথে আলোচনা করা বা তাদেরকে আলোচনার সুযোগ দেয়া কোন বুদ্ধিমানের কাজ নয়।
অতএব.. যারা ব্লগে ধর্ম বিষয়ে লিখেন বা লিখতে চেষ্টা করেন তারা মশা আর মাছি থেকে উত্তম খাদ্যকে সংরক্ষন করার কাজটি ভাল করে শিখেই করবেন- সে আশাই করছি। শয়তানকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করা কোন অনৈতিক কাজ নয়। রাজ দরবারে কুকুরের চিৎকার যেমন বেমানান- সেইরূপ যারা প্রকৃত ধর্ম আর প্রকৃত মানবতা কি বুঝেনা- তাদেরকে ইসলামের মানবতাবোধের আলোচনায় অংশগ্রহন করতে দেয়াও তদ্রুপ। ধর্মকেই যারা মানেনা- তাদেরকে ধর্মের আলোচনায় সুযোগ দেওয়াও বোকামী ছাড়া আর কিছুই নয়।
বিঃ দ্রঃ- দু:খিত- কিছু ভাষাগত সমস্যা থাকতে পারে...
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই আগস্ট, ২০১১ রাত ১১:৪৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




