somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প: বাসা দেখতে যেয়ে আমার সম্ভাব্য বিয়ে .......

২০ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৯:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দোস্ত আজ না জাহিদের জন্মদিন,তাড়াতাড়ি নিচে নাম, আমরা তোর আফিসের নিচে
-ওকে নামছি
বসের থেকে আগেই অনুমতি নেয়া আছে তাই তাড়াতাড়ি বের হলাম,আমি বিরক্তি নিয়ে বন্ধুদের বললাম
-এই বয়সে আইসা ওই হারামির ইচ্ছা হইছে জন্মদিন পালন করার,না?
আরে বিয়ের পর প্রথমবার তো তাই, বলেই সবাই হেসে দিল।
সবাই মিলে ঠিক করতে পারলামনা যে কি উপহার দেয়া যায়, তাই কয়েক রকম মিষ্টি আর ফল কিনলাম।
জাহিদদের কলোনিতে ঢুকতেই একটু পর একটা বিল্ডিঙের সামনে টু লেট লেখা দেখলাম।
অনেকদিন ধরেই নতুন বাসা খুজছি,কিন্তু পছন্দ হচ্ছে না, অবশ্য এই বাসাটা বাইরে থেকে বেশ ভালই লাগল,তাছাড়া অফিসের কাছাকাছিও আছে, এখন ভিতরটা পছন্দ হলেই হয়, আর ভাড়াটাও সাধ্যের মধ্যে হলে ভাল।
-তোরা দাড়া আমি কিছুক্ষণের মধ্যে বাসাটা দেখে আসছি

দারয়ানকে জিজ্ঞাস করলাম বাড়িওয়ালা কয়তালায় থাকে?
-দোতালায় উইঠঠা বাম পাশে।
-হুম
দোতালার বামপাশের এপার্টমেন্টের কলিং বেল চাপার একটু পরেই এক বয়স্ক ভদ্রলোক দরজা খুললেন।
- আসাসালামুয়ালাকুম।
- অয়ালাইকুমুসসালাম।
রেলিঙ দিয়ে নিচের দিকে তাকালাম। আমার তিন বন্ধু মিষ্টির প্যাকেট আর ফলমূল নিয়ে নিচে দারিয়ে আছে। মুরুব্বিও নিচের দিকে তিকিয়ে বলে উঠলেন
- এই তোরা নিচের থেকে মেহমানদের ভিতরে নিয়ে আয়।
- সাথে সাথে দুইটা পিচ্চি দৌড়ে নিচে গেল এবং ওদেরকে নিয়ে আসল। আমরা সবাই ড্রয়িং রুমে বসলাম। ওই পিচ্চি দুইটা আবার দৌড়ে এসে আমাদের মিষ্টির প্যাকেট আর ফলমূল নিয়ে ভিতরে চলে গেল। আমরা চার বন্ধু বোকার মত তাকিয়ে রইলাম।
মুরুব্বি কথা শুরু করলেন
- তা বাবা তোমার বাবা মা আসেন নি যে?
- আসলে উনারা একটু আসুস্থ। সব কিছু উঠিকঠাক হলে পরে এসে পাকা কথাবার্তা বলবেন।
- হুম। তুমি কি কর?
- একটা মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানিতে রিজিওনাল সেলস ম্যানেজার হিসাবে আছি
- বাহ ভাল ভাল। পড়াশুনা?
- তিন বছর আগে বিবিএ শেষ করেছি, মার্কেটিঙের জব তাই এমবিএ করার তেমন সুযোগ পাইনি, ধীরে সুস্থে করব
- কোন ইউনিভার্সিটি?
- ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি, চিটাগাং
- আরে আমার মেয়েওতো ওইখানে পড়ে। ওহো তোমাদেরকে অনেকক্ষণ বসিয়ে রাখলাম। অনন্যা তারাতারি চা নাশতা নিয়ে আয়।
একটু পর শাড়ি পরা এক তরুণী রুমে ঢুকল। আন্দাজ করলাম এই হয়ত অনন্যা।নামের মত মেয়েটি দেখতেও খুবই অনন্যা। এই পর্যন্ত কোন মেয়ের চুল দেখে প্রেমে পরি নাই,কিন্তু এই মেয়ের দীঘল কালো কেশ দেখে আমি শুধু তার প্রেমে পরি নাই, রিতিমত হাবুডুবু খাচ্ছি......
মুরুব্বি আবার কথা শুরু করলেন
- এই আমার একমাত্র মেয়ে অনন্যা, তোমাদের ভার্সিটিতেই সেভেন্ত সেমিস্টারে পড়ে, আমি দুই দুই বার স্ট্রোক করেছি, তাই ওর বিয়ের জন্য তাড়াহুড়া করে পাত্র খোজা শুরু করেছি, তোমার সম্পর্কে তোমার চাচা ইলিয়াস সাহেব আমাকে তেমন কিছু বলেন নি, আসলে বলার কোন সুযোগ পাননি, ইলিয়াস সম্পর্কে আমার অনেক পুরানো বন্ধু হয়, তাই তার ভাতিজা শুনার পর আর কিছু জিজ্ঞাস করি নাই।
আমার চাচা!!! আমারতো ইলিয়াস নামে কোন চাচাই নাই। আর আমিতো আসছি বাসা দেখতে।এই মনের কথাগুলো মনেই রাখলাম।আর শুধু বন্ধুগুলার দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকালাম, যেন তারা উল্টাপাল্টা কিছু না বলে।

-তা তোমারা দুইজন কথা বল,আমি তোমার বন্ধুদের নিয়ে ভিতরে যাচ্ছি।
ওরা মনে হয় আমার মনের অবস্থা টের পাইছে, তাই আর কোন কিছু না বলেই অনন্যার বাবার সাথে ভিতরের রুমে গেল।
আমি চুপচাপ চা পান করছি দেখে অনন্যা নিজেই বলে উঠলো
-শুধু চা খাচ্ছেন যে? আর কিছু নিবেন না?
-এইখানে আপনার বানানো কিছু থাকলে বলেন, ওইটাই ট্রাই করি
-বাহ ভালই তো ফ্লার্ট করতে পারেন
-মার্কেটিঙের লোক আমি,মানুষ পটানোই কাজ
-এই পর্যন্ত কয়টা প্রেম করেছেন?
মেয়ের এরকম সরাসরি প্রশ্ন শুনে বুঝতে পারলাম এই মেয়ে অনেক কঠিন জিনিস
- তা বলতে পারেন ১৫/১৬ টা
- কচু
- মানে?
- মানে আপনার মত ভদ্র চেহারার ছেলেদের প্রেমে মেয়েরা সহজে পড়ে না
- তা আপনি তো মোটামুটি সুন্দরী, আপনি কয়টা প্রেম করেছেন?
এমনভাবে আমার দিকে মেয়েটা তাকালো যেন ওকে মোটামুটি সুন্দরী বলে মহাভারত অশুদ্ধ করেছি, তবে আমার চোখে ও আসলে মোটামুটি সুন্দরী না,পুরাই হুরপরী
- আমার লেখাপড়া গার্লস স্কুল ও কলেজে, আর ভার্সিটি সম্পর্কে তো জানেন, মেয়েদের আলাদা ক্যাম্পাস
- এখনকার যুগে এটা কোন ব্যাপার!
- আমার আশেপাশে কোন ছেলেকে দেখলে মামারা ওর হাত পা ভেঙ্গে দিবে
বুঝলাম ওর মামারা খুব প্রভাবশালী, তবে ও প্রেম করুক না করুক আমাকে বিয়ে করলেই আমি মহা খুশি
- শুনেন বিয়ের আগে যদি ১০০ টাও প্রেম করেন আমার কোন সমস্যা নাই, কিন্তু যদি বিয়ের পর অন্যকোন মেয়ের দিকে তাকাইছেন,তাইলে কিন্তু আপনাকে কি যে করব নিজেও কল্পনা করতে পারবেন না
- যাক বাবা আপনি তাহলে রাজি
-মেয়েরা প্রেমের সময় স্মার্ট ছেলে খুজে,আর বিয়ের সময় সহজসরল ছেলে, তবে আপনাকে দেখতে সহজসরল দেখালেও আপনি তা নন
এই মেয়ে কি সুপার কম্পিউটার নাকি?
হঠাৎ করেই অনন্যার বাবা হুড়মুড় করে ড্রয়িং রুমে ঢুকলেন
-বাবা একটা বড় ভুল হয়ে গেছে, অনন্যা কে যে ছেলেপক্ষ দেখতে আসার কথা, তুমিতো সে নও!! এই মাত্র ইলিয়াস আমাকে ফোন করল,ছেলেপক্ষ নাকি আজ আসতে পারবে না
- জি, আমি আসছিলাম আসলে বাসা দেখতে, কিন্তু আপনারা আমাকে কোন সুযোগ দিলেন না নিজের কথাটুকু বলার
-আমি আন্তরিক দুঃখিত বাবা
অনন্যা করুন চোখে আমার দিকে তাকিয়ে রইল, মেয়েটার মায়ায় পরে গেলাম, মায়া বড়ই খারাপ জিনিস
- আসলে আঙ্কেল অনন্যাকে আমার খুব ভাল লেগেছে, আপনার যদি আপত্তি না থাকে তাহলে আমার বাবা মাকে পাঠাতে পারি
-বাবা একটা ভুলতো হয়েই গেছে,বাসার সবার সাথে কথা বলে দেখি, কেমন?
আমরা দরজার দিকে এগিয়ে গেলাম আর অনন্যা বলে উঠল
-বাবা তুমি ভিতরে যাও আমি দরজা লাগিয়ে আসছি
বের হওয়ার সময় অনন্যা বলে উঠল
-এই যে জনাব, আপনার নামটা জানা হল না
আমি কথা না বলেই আমার ভিজিটিং কার্ডটা ওর হাতে ধরিয়ে দিলাম।
চলে আসবার সময় আমার বন্ধুরা আমাকে নানা ভাবে সান্তনা দিতে লাগল।নিচে নেমে কি মনে করে আবার দোতালার রেলিঙের দিকে তাকালাম, অনন্যা কে দেখলাম সেই করুন চোখেই আমার দিকে তাকিয়ে আছে, বুকের ভিতর একটা মোচর দিয়ে উঠল, আবার মনে আসল কিছুক্ষন আগের ভাবনাটা, মেয়েটা আমাকে আসলেই মায়ায় বেধে ফেলেছে, এই মায়া বড়ই খারাপ জিনিস......
নাহ এই মেয়েকে আমার চাই চাই, যেভাবেই হোক বাবা মাকে ওদের বাসায় প্রস্তাব নিয়ে পাঠাতে হবে।
গুনগুন করে গান গাইতে লাগলাম আর অনন্যার কথা ভাবতে ভাবতে সামনে হাটতে লাগলাম-‘আলগা করগো খোপার বাঁধন, দিল ওহি মেরে ফাঁশ গেয়ি......’
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৯:৩৮
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখনো নদীপারে ঝড় বয়ে যায় || নতুন গান

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২০

এ গানের লিরিক আমাকে অনেক যন্ত্রণা দিয়েছে। ২৪ বা ২৫ এপ্রিল ২০২৪-এ সুর ও গানের প্রথম কয়েক লাইন তৈরি হয়ে যায়। এরপর ব্যস্ত হয়ে পড়ি অন্য একটা গান নিয়ে। সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×