somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুসলিমরা কেন পিছিয়ে পড়ছে

২৫ শে মার্চ, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বড়ই আফসোস আর লজ্জার ব্যাপার

পৃথিবীতে ১৮০ কোটি মুসলিম থাকার পরও নোবেল প্রাইজ চালুর পর থেকে এই পর্যন্ত নোবেল উইনার মুসলিমের সংখ্যা ২০ ও ক্রস করবে না । অথচ প্রতি বছর ইসরায়েল থেকে নোবেল প্রাইজ পাচ্ছে মানুষ ।

আসলে আমরা মুসলিমরা চরম মাত্রায় অলস আর বোকা জাতি । মুসলিম দেশ গুলোর কি সম্পদ কম না যায়গা কম সবই পর্যাপ্ত কিন্তু নেই কাজ করার হ্যাডম । আছি কেবল আল্লাহর ওয়াস্তে কি পাওয়া যায় তা নিয়ে । একবার কোন এক মসজিদে গেলাম জুমার নামাজ পড়তে , ইমাম সাহেব কেবল পরকালে কি কি পাব সেই কথাই বললেন কিন্তু একবারও দুনিয়াতেও কিভাবে ভাল থাকতে পারি তার কথা নেই । এই যদি হয় অবস্থা তাহলে তো আমাদের লাথির উপরেই থাকতে হবে । এককালে ইংরেজরা লাথি মেরেছিল , আজকে ইউএসএ মারছে , কাল চীন মারবে । মানে লাথির উপরেই জীবন চলে যাবে । এর একমাত্র কারণ আমাদের ইনোভেশন বা উদ্ভাবনী ক্ষমতা জিরোর কাছাকাছি নিয়ে এসেছি আমরা । সেই মধ্যযুগে কয়েকজন মুসলিম বিজ্ঞানীর নাম বেঁচে আর কতকাল খাব আমরা । আমি আমার বাসার নিত্য ব্যবহার্য যা জিনিস পেলাম সবই অমুসলিম দেশ নয়ত কোম্পানির তৈরি করা । ১৮০ কোটি লোক বসে বসে ডিমে তা দিচ্ছি ।

পুরনো ঢাকার সিদ্দিকবাজার গিয়েছিলাম বাসার জন্য স্যানিটারি সামগ্রী(কল , বেসিন , পাইপ এইসব আর কি) কিনতে । দোকানিকে জিজ্ঞাসা করলাম আরএফএল এর প্রোডাক্ট বের করতে , সে উত্তর দিল নাই কারণ হিসেবে বলল সে কাদিয়ানীদের (প্রাণ আরএফএল গ্রূপের মালিক মৃত মেজর জেনারেল অব. আমজাদ আলী আহমদিয়া বা কাদিয়ানী ছিলেন) জিনিস বিক্রি করে না !!!

কি অদ্ভুত চিন্তাধারা ।

বাংলাদেশের প্রমিনেন্ট দুটো কোম্পানি আরএফএল আর স্কয়ার লিমিটেড দুটোই কিন্তু ননমুসলিম ওউন্ড । এইভাবে এরককম হিংসা জিনিসটাই আমাদের পিছিয়ে দিচ্ছে ।

বিশ্বের যত বড় বড় কোম্পানি যেমন মাইক্রোসফট , বোয়িং এয়ারক্রাফট কর্পোরেশন , সনি কর্পোরেশন , স্যামসাং ইলেক্ট্রনিক্স লিমিটেড , এপোল ইনকর্পোরেট লিমিটেড , ফেইসবুক , টয়োটা অটোমোবাইলস , গুগল ইত্যাদি প্রায় সবই অমুসলিমদের । মুসলিমদের যদি কিছু পাওয়া যায় তারও সব টেকনোলজি আর ইঞ্জিনিয়ার ননমুসলিমদের দেয়া ।

মুসলিমরা ইনোভেশনে বাকিদের চেয়ে শত বছর পিছিয়ে । একটা ব্যাপার এ ব্যাপারে বিবেচ্য তা হল ইনোভেশন আর ব্যবহার করা । যে উদ্ভাবন করতে জানে সে তার প্রয়োজন মেটাতে নতুন কিছু বানিয়ে নিতে পারবে আর যারা টাকায় কিনবে তারা পণ্যের যোগান না পেলে শেষ । যেমন আমেরিকায় যদি ফোন তুলে দেয়া হয় তবে মার্কিন বিজ্ঞানীরা হয়ত এমন কোন প্রযুক্তির উদ্ভব ঘটাবে যার দ্বারা ফোনের কাজ হাতঘড়ি বা চশমার মাধ্যমেও করা সম্ভব যেমন আমরা দেখতে পাচ্ছি স্মার্ট ওয়াচ কিংবা মাইক্রোসফট হলো লেন্স বা গুগোল গ্লাস । কিন্তু সৌদি আরব বা আরব আমিরাতে যদি আজ মোবাইল টেকনোলজি বন্ধ করে দেয় তবে তাদের পঁচে মরা ছাড়া আর গতি নেই । বলতে পারেন তেলের কথা । আরে ঐ খনিজ তেলটুকুও নিজের যোগ্যতায় উঠানোর মুরোদ নেই । পশ্চিমা কোম্পানিরা যদি তাদের প্রযুক্তি আর যন্ত্রপাতি প্রত্যাহার করে নেয় তাহলে ভাতে মারা যাবে তারা । তেল উঠানোর আগে তো তারা ভিক্ষা করেই খেত । এই তেল আবিষ্কারের পরেই না এত চর্বি জমল গায়ের ভিতর । এত বড় একটা দেশ সৌদি আরব অথচ নিজের যোগ্যতায় একটা সুঁই বানানোর ক্ষমতা নেই । আল্লাহর নামে তেল উঠাচ্ছে , বেচছে আর খাচ্ছে । জগ থেকে পানিটা ঢেলে খাওয়ার জন্যও তারা গরীব দেশগুলোর থেকে শ্রমিক নিয়ে যাচ্ছে । কয়দিন আগে দেখলাম সৌদি কিং ইন্দোনেশিয়ায় গিয়েছে সাথে চারশ টন মাল ইভেন লিফটও সাথে করে নিয়ে গেছে । এভাবে বিলাসিতায় তারা টাকা অপব্যয় করছে অথচ এই টাকা গুলো যদি তারা ইনোভেশনে ব্যয় করত তাহলে মুসলিম তো বটেই গোটা মানব জাতির উপকার হত । ফ্রান্সের লুই পাস্তুরের হাইড্রোফোবিয়া বা জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন যেমন আমরা ব্যবহার করছি একই ভাবে ইবনে হাসানের মাগনিফাইং গ্লাসও । এগুলো মানব জাতির উপকারে আসছে ।
একদিন এক ইন্ডিয়ান কে বললাম তোমরা কাশ্মীরে কেন মানুষ মারছো সে পাল্টা বললো সৌদি আরব কেন ইয়েমেনিদের মারছে সেটার প্রতিবাদ করেছো তো ?
আসলেই এই প্রশ্নের কোন উত্তর নেই আমার কাছে । ক্ষমতাকে ধরে রাখতে এই আরবি নেতারা মুসলিমদের বাঁশ দিয়ে পশ্চিমা বাবাদের খুশি রাখতে ব্যস্ত । বিচারটা এখন দেব কার কাছে ।


আবার একলা মুসলিম লিডারদের উপরও দোষ দিলে ব্যাপারটা অন্যায় হয়ে যায় । কারণ যখনই কোন মুসলিম দেশ উন্নত হওয়ার চেষ্টা করে তখনই পশ্চিমারা কোন এক ছুতায় ঝাঁপিয়ে পড়ে তাকে ধ্বংস করতে । যেই ইরাক নিজে নিজে নতুন নতুন টেকনোলজি বানাতে শুরু করল অমনি সেখানে জঙ্গি বিষ ঢুকিয়ে , ভুয়া অস্ত্রের নাম করে আজকে ধুলিস্মাৎ করে দিলো আমেরিকা , সেই একই অবস্থায় লিবিয়ার এখন আবার চোখ পড়েছে আমার বাংলাদেশের উপর ।


আসলে কেউ যদি যুগের চাহিদা ধরতে ব্যর্থ হয় তবে তো মহাবিপদ । এখন আর তরবারির যুগ নেই । এখন হল মাথার যুগ । যে যত বেশি মাথা ইউজ করবে সেই অনায়াসে চলে যাবে নেতৃত্বে । এই যেমন চীন । তার আজকে এই টপ পজিশনে পৌঁছতে যুদ্ধ লাগে নি । সে উদ্ভাবনে মন দিয়েছিল তাই আজকে আমেরিকা জাপানের সাথে তার সাপে নেউলে সম্পর্ক থাকার পরও চীনের শীর্ষ দুই বাণিজ্য সহযোগী দেশ আমেরিকা আর জাপান । কিচ্ছু করার নেই । চীন নিজেকে টেকনোলজিতে দক্ষ করে তুলেছে , জন্ম দিয়েছে প্রযুক্তির আজ তাই সুঁই থেকে জাহাজের দশ হাজার হর্স পাওয়ারের মেরিন ইঞ্জিন সবই মেড ইন চায়না । কেউই চীনের মত কম দামে এই পণ্য সরবরাহ করতে পারবে না তাই ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় হোক চীন ছাড়া গতি নেই ।

আমরা মুসলিমরা এখন শর্টকাট খুঁজি খুব । নামাজ রোজা করে বেহেস্তে যাওয়ার কি দরকার , যেয়ে বোমা মারো কিংবা বিধর্মীর কল্লা কাটো আর লাফ দিয়ে চলে যাও জান্নাতে । যদিও জঙ্গিবাদ মুসলিমদের রিপ্রেজেন্ট করে না বা এটা মুসলিমরা সাপোর্টও করে না কিন্তু এই বলে দায় এড়ানো যায় না ।

যেমন কোন জঙ্গি হামলা হলে আমরা যতোই বলি না কেন প্রকৃত মুসলিম এই কাজ করতে পারে না তাতে কোন লাভ নেই । হামলা কারীর নামের ভিতর আরবি ভাষা পেলেই দোষটা চলে আসবে আমাদের উপর , এবং আসাটা অবাক করার মত কিছু নয় । এই যেমন মায়ানমারে যে রোহিঙ্গাদের কচুকাটা করা হল নির্দয় ভাবে এখন সেখানকার বুদ্ধরা যদি বলে আমরা অহিংসা পরম ধর্মে বিশ্বাস করি কাজেই যারা রোহিঙ্গা হত্যা ও নির্যাতনে জড়িত তারা সহীহ/প্রকৃত বুদ্ধ না !!! তবে কেমন হবে ব্যাপারটা !!!

ইন্টারন্যাশনাল প্রখ্যাত ম্যাগাজিন TIME কিন্তু ঠিকই এক বুদ্ধ গুরুর ছবি ছাপা হয়েছিল(১ জুলাই ২০১৩ তারিখে) এই শিরোনামে "THE FACE OF BUDDHIST TERROR" অর্থাৎ বুদ্ধ জঙ্গির মুখ

একই ভাবে ইন্ডিয়ায় উত্তর প্রদেশে সন্ত্রাসী মৌলবাদী যোগী আদিত্যনাথকে মুখ্যমন্ত্রী করার আজকে আমেরিকার প্রখ্যাত নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকার নিউজ হয়েছে "Mr. Modi's Perilous Embrace of Hindu Extremists" অর্থাৎ জনাব মোদির হিন্দু উগ্রবাদীদের সাথে চাতুর্য্ পূর্ণ আঁতাত

এখানে উপরের দুটো জিনিসে ব্যক্তির জন্য তার দায় তাদের ধর্মের উপর চলে গেছে । আমিও এটা বলব না আর কেউই এটা বিশ্বাস করবে না যে বৌদ্ধ বা হিন্দুদের অধিকাংশ লোক নির্মম বা সন্ত্রাসী । বরং গুটিকয়েক লোকের দায় পুরো ধর্মের উপর চলে আসছে । আর এটা আসাটাই স্বাভাবিক কারণ ভালোর ক্রেডিট নিলে খারাপের টাও আপনাআপনি চলে আসবে । এখানে আমাদের চাওয়া বা না চাওয়াতে অন্যদের কিছু আসবে বা যাবে না । যেমন ইবনে সিনা নামের মধ্যযুগের একজন মুসলিম বিজ্ঞানীকে নিয়ে আমরা মুসলিমরা গর্ব করি এখন তিনি কয় ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন , রমজানে রোজা রাখতেন কিনা , কেমন ধার্মিক ছিলেন , কোরআন কয়বার খতম দিয়েছেন সেটা আমরা জানি না আর জানতেও চাই না কিন্তু তার পরও তার মুসলিম নামের কারণে তার ভাল কাজের ক্রেডিট মুসলিমদের উপরে চলে আসে । এখন একই ভাবে জঙ্গিরা আদৌ নামাজ রোজা করে কিনা বা কোরআন পড়েছে কিনা কিংবা কারো প্ররোচনায় জঙ্গিবাদে নেমেছে কিনা এটা কেউ যাচাই করতে যাবে না । তার নামের জন্য আর তার মুখে আল্লাহু আকবার ধ্বনির কারণে তাদের কাজের দায় ইসলাম আর আমাদের তথা মুসলিমদের উপরে চলে আসছে !!!

পরিশেষে আমাদের মুসলিম সমাজের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা এটাই থাকবে যে আমাদের শর্টকাট মারার ধান্দা থেকে বের করে এনে জ্ঞান বিজ্ঞানে , ল্যাবরেটরিতে মনোনিবেশ করিয়ে দাও ।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মার্চ, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৪৮
৫১টি মন্তব্য ৯টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×