somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ক্যান্সার ও কেমোথেরাপি | বিজ্ঞানপোস্ট সিরিয়াল ৭

০৬ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ১১:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ক্যান্সার




জীবদেহ বিলিয়ন বিলিয়ন কোষ নিয়ে গঠিত । এগুলোর কোনগুলো বিভাজিত হয় আর কোনগুলো হয় না । যেমন মস্তিষ্কের কোষ বিভাজিত হয় না ।
কোষ বিভাজন দুই প্রকার,

মাইটোসিস আর মিয়োসিস । মাইটোসিস কোষ বিভাজন ঘটে দেহ কোষে(somatic cell) আর মিয়োসিস ঘটে জনন কোষে(reproductive cell)



মানুষের বুদ্ধি ও দিক নির্দেশনা যেমন মাথা(ব্রেন) থেকে আসে তেমনি কোষেরও একটি কন্ট্রোল সেন্টার থাকে যাকে বলে নিউক্লিয়াস । এই নিউক্লিয়াসে থাকে ডিএনএ । ডিএনএ তে থাকে জিন(Gene) এই জিন কোষের বৈশিষ্ট্য পরবর্তী নতুন কোষে স্থানান্তর করে। ডিএনএ একটি সুনির্দিষ্ট স্ট্রাকচার বিশিষ্ট । কোন কারণে এই স্ট্রাকচার ক্ষতিগ্রস্থ বা এলোমেলো হয়ে গেলে কোষের নিউক্লিয়াস তাকে ঠিক করে দেয় আর যদি সেটা ঠিক করা সম্ভব না হয় তবে কোষকে মরে যাওয়ার নির্দেশ দেয় ।



দেহ কোষ স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় বৃদ্ধি পায় । অর্থাৎ মাইটোসিস কোষ বিভাজনের মাধ্যমে এরা প্রয়োজন অনুযায়ী বাড়ে। এই কোষ বিভাজন ও তার হারটি নিয়ন্ত্রিত হয় কোষের ডিএনএর দ্বারা।


কোন কারণে যদি এই ডিএনএ ক্ষতিগ্রস্ত হয় আর যদি সেই ডিএনএ স্ট্রাকচার নিউক্লিয়াস রিপেয়ার করতে না পারে বা পুরো কোষটিকে মেরে ফেলতে না পারে তখনই দেখা দেয় বিপত্তি !!!

কি বিপত্তি বলার আগে জেনে নেয়া দরকার কি কি কারণে ডিএনএ এর স্ট্রাকচার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে ।

এক নাম্বারে, রেডিয়েশন বা তেজস্ক্রিয়তা । আমরা যে আলো দেখতে পাই সেটা হলো সাইন ওয়েভ(অনুদৈর্ঘ্য) বর্ণালীর ভিজিবল স্পেকট্রাম(দৃশম্যান তরঙ্গ) । এই সাইন ওয়েভের আরো নানা ক্যাটাগরি আছে যারা দৃশম্যান নয় যেমন আলফা রশ্মি, গামা রশ্নি , অতি বেগুনি রশ্নি, এক্স রশ্মি(X-ray) , মোবাইলের সিগন্যাল , ওয়াইফাই সিগন্যাল , রেডিও সিগন্যাল এগুলোর সবই হলো সাইন ওয়েভ ।


এগুলোর ভিতর যাদের তরঙ্গদৈর্ঘ্য ক্ষুদ্র যেমন আলফা রশ্মি বা গামা রশ্মি ইত্যাদি.... এদের সাথে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করলে এদের দ্বারা কোষের ডিএনএ এর স্ট্রাকচার ক্ষতিগ্রস্ত হয় । কারণ তরঙ্গদৈর্ঘ্য ক্ষুদ্র হলে সেসব তরঙ্গ সহজেই দেহ ভেদ করতে পারে ও ডিএনএ এর স্ট্রাকচার ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে কিন্তু বড় তরঙ্গদৈর্ঘ্য বিশিষ্ট আলো যেমন বাসাবাড়ির লাইট, টর্চ লাইট এসব ডিএনএ এর স্ট্রাকচার নষ্ট করতে সক্ষম নয় ।


এছাড়া নানা রকম রাসায়নিক যেমন ফরমালিন, পিভিসি এরকম আরো অনেক রাসায়নিক পদার্থ ধীরে ধীরে কোষের ডিএনএ এর স্ট্রাকচার নষ্ট করে দেয় ।


সে যাই হোক,

তো দেখা যাক কোন কারণে যখন কোষের ডিএনএ এর স্ট্রাকচার ক্ষতিগ্রস্থ হয় আর সেটা যখন রিপেয়ার বা মেরে ফেলা সম্ভব হয় না তখন কি হয়,


ক্ষতিগ্রস্ত(মিউটিলেটেড) ডিএনএ বাহি কোষ যখন মরে যায়না বা ঠিক হয় না তখন সেই কোষকে বলে ক্যান্সার কোষ । এই ক্যান্সার কোষ মাইটোসিস প্রক্রিয়ায় নিজের প্রতিলিপি তৈরি করা শুরু করে। এই গতি হয় অত্যন্ত দ্রুত। ভুল ডিএনএ স্ট্রাকচার বিশিষ্ট এই অস্বাভাবিক দ্রুতগতির ক্যান্সার কোষগুলো জন্ম দেয় টিউমারের। এছাড়া এরা নিজেদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না । এরা প্রবেশ করে রক্ত ও লসিকা প্রবাহে আর ছড়িয়ে যায় পুরো দেহে। যেহেতু ক্যান্সার কোষ অত্যন্ত দ্রুত গতিতে বাড়ে তাই তারা দেহের ইমিইউন(immune system ) সিস্টেম বা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকেও আক্রান্ত করে । এছাড়া বিভিন্ন স্থানে টিউমার তৈরি করে দেহের স্বাভাবিক কার্যক্রমে মারাত্মক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে !!!


এবার দেখা যাক কেমোথেরাপি কি ভাবে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে কাজ করে ।

কেমোথেরাপি হলো এমন কিছু রাসায়নিকের সংমিশ্রণ যারা দেহের কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ার উপরে প্রভাব বিস্তার করতে পারে। কেমো ডোজ দেহে প্রবেশ করে দেহের ভিতর যে কোষগুলো দ্রুত গতিতে বিভাজিত হয় সেসব কোষকে আক্রমণ করে ও মেরে ফেলে। যেহেতু ক্যান্সার কোষ দ্রুত গতিতে বিভাজিত হয় তাই তারা কেমোর টার্গেটে পরে।


কেমোর ব্যবহার ক্যান্সার কোষকে মেরে ফেলে দেহকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনে । তবে কেমোর একটি অসুবিধা হলো এটি ক্যান্সার কোষ ও স্বভাবিক কোষের ভিতর পার্থক্য করতে পারে না। এটি সমস্ত দ্রুত বিভাজন হওয়া কোষ সমূহকে আক্রমণ করে। এখন এই দ্রুত বিভাজিত কোষ কি সাধারণ কোষ না ক্যান্সার কোষ সেটা কেমো আইডেন্টিফাই করতে পারে না। ফলে কেমো নিলে দেহের স্বাভাবিক দ্রুত বৃদ্ধিসম্পন্ন কোষ গুলোও মারা পরে। যেমন দেহের চুল নিয়ন্ত্রণকারী কোষগুলো দ্রুত বিভাজিত হয় । ফলে এরাও কেমোর দ্বারা আক্রান্ত হয়। এই জন্য কেমো থেরাপি নিলে চুল পড়ে যায় !!!

এছাড়া দেহের অনান্য দ্রুত বৃদ্ধিসম্পন্ন কোষও যেমন ইমিইউন সিস্টেম(রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা) , অস্থিমজ্জা(বোন ম্যারো/Bone marrow) ইত্যাদিও দুর্বল হয়ে পড়ে। এইজন্য কেমো ডোজ চলাকালীন সার্বক্ষণিক বিশ্রাম ও অন্যান্য ওষুধ চালিয়ে যেতে হয় যাতে এই দুর্বলতার সুযোগে অন্য কোন ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া দেহকে আক্রান্ত করতে না পারে ।


প্রয়োজনীয় কেমো থেরাপি গ্রহণের মাধ্যমে ক্যান্সারকে পুরোপুরি আউট বা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।


কেমো ছাড়াও ক্যান্সারের চিকিৎসায় রেডিয়েশন থেরাপি আছে । এই পদ্ধতিতে নিয়ন্ত্রিত রেডিয়েশনের মাধ্যমে ক্যান্সার কোষকে মেরে ফেলা হয়। এছাড়া আরেকটি পদ্ধতি হলো সার্জারি বা অপারেশন। এই পদ্ধতিতে অপারেশন করে টিউমার বা ক্যান্সার কোষকে দেহ থেকে অপসারণ করা হয় ।


এনিওয়ে, সুস্থ থাকতে চাইলে ক্ষতিকর রাসায়নিকযুক্ত খাবার, খোলা খাবার , জাঙ্ক ফুড এসব জিনিস একদম বাদ দিতে হবে এবং রেডিয়েশন ছড়ায় এমন জিনিস থেকে যথাসম্ভব দূরে থাকতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ১১:৫৪
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×