[হালিশহর এলাকাকে দুর্গত এলাকা হিসাবে ঘোষণার দাবীতে মানববন্ধন]
আমাদের জীবনে বালা-মুসিবতের কোন শেষ নাই। একটা যায়, একটা আসে। আসতেই থাকে। জণ্ডিস ও পানিবাহিত রোগের কারণে আমাদের হালিশহর এলাকাকে দুর্গত এলাকা হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। ঘরে ঘরে জণ্ডিসের পাদুর্ভাবে হাসপাতাল, ক্লিনিকগুলোতে রুগী ও দর্শনাথী বেড়েছে কল্পনাতীতভাবে। মানুষ দলে দলে স্মরনাপন্ন হচ্ছেন জণ্ডিসের পরীক্ষা করানোর জন্য। সিভিল সার্জনের পক্ষ হতে বলা হয়েছে চট্টগ্রাম ওয়াসার পানিতে সমস্যা থাকায় এই সমস্যা মহামারি আকারে রুপ নিয়েছে। চলছে পরীক্ষা নিরীক্ষা। চিকিৎসক ও সচেতনরা যতই বাইরের খাবার গ্রহণ হতে দূরে থাকতে বলেন আমরা যেন ততই বাইরের লোভনীয় খাবারের প্রতি ঝুঁকে পড়ি, অনেকটা প্রতিযোগিতার মতো।
অভিজ্ঞতা : 1
মাত্র দু’এক বছর আগের কথা; সরকারের পক্ষ থেকে যখন সীম রেজিস্টেশন বাধ্যতামূলক করা হলো। সার্ভিস সেন্টারগুলোতে তিল ধারণের ঠাঁই নাই। একই দৃশ্য মোবাইলের দোকানগুলোতে বিদ্যমান ছিল। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে রেজিস্ট্রেশন করার সুযোগ পাওয়াটা অনেকটা রেলের টিকেট পাওয়ার মতো অবস্থায় দাঁড়িয়েছিল। তবুও অবৈধভাবে সীম রেজিস্ট্রেশন বন্ধ হয়নি, হচ্ছে না। আপনি ধারণাও করতে পারবেন না আপনার নামেই সীম রেজিস্ট্রেশন করা আছে কিন্তু সেটা ব্যবহার করছে অন্যকেউ, দীর্ঘ দিন ধরে।
অভিজ্ঞতা : 2
প্রায় একই সময় চলছিল জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনীর আনুষ্ঠানিকতা। ওয়ার্ড অফিস, সিটি কর্পোরেশন অফিস ও নির্বাচন কমিশনারের অফিসে তখন সর্বক্ষণ লোক জনের ভিড় লেগে থাকত। জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনকে কেন্দ্র করে সাধারণ ভূক্তভোগীদের সমস্যার কোন শেষ ছিল না। কারো নামের বানানে ভুল, কারো ছবির জায়গায় ছবি নাই, কারো জন্ম তারিখে ভুল, কারো পিতা বা মাতার নামে ভুল ইত্যাকার সমস্যার সমাধানে লেজে গোবরে অবস্থা হয়েছিল তখনকার সময়। নির্ধারিত সময় বেধে দেয়ায় সাধারণ হুজুকে পাবলিক ওয়ার্ড অফিসের এবং স্থানীয় দালালদের চক্করে পড়ে বিপুল পরিমাণ টাকা খরচ করতে বাধ্য হয়। অপর দিকে নির্বাচন কমিশনারের অফিসে পর্যাপ্ত কর্মচারীর অভাবে মানুষ পায়নি কাঙ্খিত সেবা। এই সমস্যা থেকে উত্তোরণের পরপর এখন আবার শুরু হয়ে গেছে স্মার্ট কার্ড বিতরণ। এখানে ঝক্কি ঝামেলা কম হবে সে ব্যাপারে আমি নিঃসন্দেহ নই। চিন্তার খোরক যোগায় যখন দেখি আমরা কেমন যেন, কোন একটা “ রা” উঠলেই আমরা সেদিকে ছুটে চলি, পঙ্গপালের মতো, দ্বিগবিদিক জ্ঞানশূণ্য হয়ে। ঠাণ্ডা মাথায় আমরা যেন কিছু করতেই পারি না। ফলে আমাদের এই অস্থিরতাকে কাজে লাগায় দালাল চক্র।
জাতীয় পরিচয়পত্রের বিকল্প জন্ম নিবন্ধন, ড্রাইভিং লাইসেন্স, পাসপোর্টের কপি, জমির দলিল ইত্যাদি। একটা গুরুত্বপূর্ণ দলিলের বিপরীতে আমরা অন্যটি কাজে লাগাতে পারি সংশ্লিষ্ট দলিলটি হাতে পাওয়ার আগ মুহুর্ত পর্যন্ত। তা আমরা করি না বরং আমরা আরেকজন কি করলো সেটার অনুকরণ অনুসরণ করি। এজন্য হয়তো আমাদের হুজুগে বাঙ্গালি বলা হয়।
[অবশেষে জাতীয় পরিচয়পত্র হাতে পেলেন এই মুরুব্বি]
অভিজ্ঞতা : 3
এখন চলছে বিশ্বকাপ উত্তেজনা, উত্তেজনার লেটেস্ট ভার্সন। নিজ পছন্দের দলের জার্সি পড়ে ঘুরা, পড়াশুনা বন্ধ করে রাতভর জেগে খেলা দেখায় ভালবাসার কি নিদর্শন ফুটে উঠে তা জ্ঞানে আসেনি এখনো। দু’একজন নয় বরং পুরো দেশেই এখন এই অবস্থা, অধিকাংশই। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সত্য যে, এই মানুষদের সামনে একজন মানুষকে কেটে টুকরো টুকরো করে ফেললেও কেউ কথা বলেনা, সেলফি তুলে, ভিডিও করায় ব্যস্ত থাকে। হতাশা আর দুঃখের শেষ কবে হবে কে জানে।
আমরা এখন স্বাভাবিক বিষয়ে আশ্চার্য হই আর প্রয়োজনীয় বিষয়ে নিরব থাকি, দর্শক হয়ে রুচির পরিচয় দিই।
আমাদের ভিতরের মানুষটা মরে গেছে, একে জাগাতে হবে। যারা মানুষ ক্রমশ বাড়ছে বলে হা হুতাশ করেন তাদের কাছে প্রশ্ন করি, আসলে কি মানুষ বাড়ছে? আমি তো দেখি না। আমি দেখি অমানুষ আর পশু বাড়ছে শ’য়ে শ’য়ে। বরং মানুষ কমছে ক্ষণে ক্ষণে। আমাদের এই পশুত্বকে দূর করে মনুষ্যত্বকে জাগ্রত করতে যদি না পারি তবে মানুষ পরিচয় দেয়াটা বোকামী বৈ আর কি? সত্যিকারের মানুষ হিসাবে গড়ে উঠতে হলে প্রথমেই হুজুকে ভাবসাব বন্ধ করে বিবেক দিয়ে ভাবতে হবে, কাজ করতে হবে। আর ভাল মানুষের সান্নিধ্যে থাকতে হবে। ভালতে বিসর্জন আর মন্দতে পলায়ন করতে হবে।
[একই ছাদের নিচে যখন সাপোর্টার দুইজন দুই দলের হয়]
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ৯:০৫