পিরামাস্ ও থিসবিঃ গ্রীক পুরাণকথার এক করুণ প্রেম কাহিনী
এমন এক সময়ের কথা, যখন মাল্বেরি গাছের গভীর লালবর্ণ ফলগুলো ছিল বরফের মতো সাদা। রঙের এই পরিবর্তনের পেছনে রয়েছে অদ্ভুত এবং করুণ এক কাহিনী। এক তরুণ প্রেমিকযুগলের মৃত্যু হলো এর কারন।
পিরামাস ও থিসবি বাস করত রানী সামিরামিস্-এর রাজধানী ব্যাবিলনে। পিরামাস ছিল প্রাচ্যের সবচেয়ে সুদর্শন তরুণ; থিসবি সবচেয়ে সুন্দরী তরুনী। তারা থাকতও পাশাপাশি দুটো বাড়িতে__ মাঝখানে শুধু একটি দেয়াল। পাশাপাশি বাড়িতে বড় হওয়ার কারণে দু’জন ভালোবেসে ফেলে দু’জনকে। তারা বিয়ে করতে চায়, কিন্তু দুপক্ষের অভিভাবকরা রাজি হয় না। কিন্তু প্রেমকে তো নিষিদ্ধ করা যায় না। প্রেমের অগ্নিশিখা জতই ঢেকে রাখা যাক, ততই উষ্ঞ হতে থাকে তার উত্তাপ। আর প্রেমও কোনো-না-কোনো ভাবে নিজের পথ ঠিকই বের করে নেয়। তাই পিরামাস ও থিসবির হৃদয়ের জ্বলন্ত ভালোবাসাকেও চেপে রাখা গেল না।
তাদের দুজনের বাড়ির মাঝখানের দেয়ালে ছিল একটি ফুটো। সেটি কারো নজরে পড়েনি, কিন্তু প্রেমিক প্রেমিকার চোখ কিছু এড়ায় না। পিরামাস আর থিসবি সেই ফুটো দিয়ে ফিসফিস করে নিজেদের কথাবার্তা বলে। যে দেয়াল বানানো হয়েছে তাদের পৃথক করবার জন্যে, সেই দেয়ালই হয়ে দাঁড়ায় পরস্পরকে পাওয়ার যোগসূত্র। তারা দেয়ালকে উদ্দেশ্য করে বলে, “তুমি না থাকলে আমরা পরস্পরকে স্পর্শ করতে পারতাম, চুমু খেতে পারতাম। তবে তুমি আমাদের কথা বলার সুযোগ করে দিয়েছ। আমরা অকৃতজ্ঞ নই”। এভাবে তারা কথা বলতো, রাত্রি নামা পর্জন্ত। সন্ধ্যা হলে তারা দেয়ালের দুধারে চুম্বন করে দুদিকে বিদায় নিত।
প্রতিদিন সকালে যখন পুর্ব আকাশে রঙিন হয়ে উঠত, গাঢ় সূর্জের আলোকে ঘাসের উপরকার শিশিরবিন্দুগুলো শুকিয়ে উঠত, তখন তারা চুপিচুপি এসে ফাটলের পাশে দাঁড়াত। তারপর ফিসফিস করে উত্তপ্ত প্রেমের সংলাপ বিনিময় করত অথবা নিজেদের দুর্ভাগ্য নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করত। অবশেষে একদিন তারা আর সহ্য করতে পারল না। তারা স্থির করল সেই রাত্রেই তারা নগরী থেকে গোপনে পালিয়ে যাবে। খোলা প্রান্তরে অন্তত স্বাধীনভাবে মেলামেশার কোন বাধা থাকবে না। তারা ঠিক করল নাইনাসের সমাধি মন্দিরের পাশে দুজনের দেখা হবে। সেই স্থানে নম্বা একটি মালবেরি গাছ, তাতে বরফের মত সাদা ফল, কাছেই একটি শীতল জলের ঝর্না। পরিকল্পনাটি ভালোই লাগল তাদের। দিন শেষ হয়ে কখন রাত্রি নামবে, সেই আশায় রইল তারা।
অবশেষে সূর্জ অস্ত গেল, রাত্রির অন্ধকার ঢেকে নিল চারপাশ। থিসবি ঘর থেকে বেরিয়ে সমাধিস্থলে গিয়ে পৌছাল। পিরামাস তখনও পৌছায়নি। থিসবি অপেক্ষা করতে থাকল। হঠাৎ চাঁদের আলতে সে দেখতে পেল একটি সিংহ। হিংস্র প্রাণিটি একটি শিকার করেছে; তার চোয়াল রক্তমাখা। পিপাসা নিবৃত্তির জন্য সে আসছিল ঝর্নার দিকে। সিংহটি তখনও কিছুটা দূরে। থিসবি পালাতে গেল। তার লম্বা ওড়না পড়ে রইল পেছনে। ঝর্না থেকে ফেরার পথে সিংহ ওড়নাটি দেখে মুখে তুলে নিল এবং ছিঁড়ে ফেড়ে রেখে অদৃশ্য হয়ে গেল বনের মধ্যে। কিছুক্ষণ পর পিরামাস এসে দেখে থিসবির রক্তমাখা উত্তরীয় পড়ে আছে; পাশেই মাটিতে সিংহের পায়ের ছাপ। পিরামাস ধরে নিল, থিসবিকে সিংহ খেয়ে ফেলেছে। এই বিপজ্জনক স্থানে সে-ই থিসবিকে আসতে বলেছিল, তার সুন্দরী প্রিয়তমার মৃত্যুর জন্য সে ছাড়া আর কেউ দায়ী নয়, এই ভেবে দারুন মর্মপীড়া হতে লাগল তার। “আমিই তোমাকে খুন করেছি”- এরকম বিলাপ করতে করতে থিসবির রক্তাক্ত ওড়নাটি ধুলো থেকে তুলে নিল সে। বারবার চুম্বন করতে করতে সে ওড়নাটি নিয়ে গেল মালবেরি গাছের কাছে। তরবারি বের করে সোজা বসিয়ে দিল নিজের বুকে। তার রক্ত ফিনকি দিয়ে বেরিয়ে এসে পড়ল সাদা মালবেরি ফলের উপর। রক্তবর্ন হয়ে উঠল ফলগুলো।
এদিকে থিসবি সিংহের ভয়ে পালিয়ে গেলেও বেশিক্ষন দূরে থাকতে পারল না। সে ভাবল, পিরামাস নিশ্চয়ই এসে ফিরে যাবে। সাহস সঞ্চয় করে সে ফিরে এল মালবেরি গাছের কাছে। কিন্তু সাদা ফলওয়ালা সেই মালবেরি গাছটা তো কোথাও নেই! একটা গাছ আছে বটে সেখানে, তবে তার শাখায় তো একটি সাদা ফলের চিহ্নও নেই! থিসবি যখন একদৃস্টিতে গাছের দিকে তাকিয়ে, তখন হঠাৎ করে তার পায়ের নিচের মাটিতে কি যেন নড়ে উঠল। ভয় পেয়ে পিছিয়ে গেল থিসবি। কিন্তু একটু পরেই অন্ধকারের মধ্যেও সে পরিস্কার দেখতে পেল পিরামাস শুয়ে আছে। মুমুর্ষু, সারা শরীর রক্তে মাখামাখি। থিসবি ঝাপিয়ে পড়ল তার উপর, আলিঙ্গনে আবদ্ধ করলো তাকে, ঠাণ্ডা ঠোঁটে চুমু খেতে লাগল এবং বলতে লাগল, “এই দেখ আমি এসেছি। আমি থিসবি, তোমার প্রিয়তমা”। থিসবির নাম শুনে মুহুর্তের জন্য ভারী চোখ খুলল পিরামাস। তারপর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল।
থিসবি দেখল, পিরামাসের হাত থেকে গড়িয়ে পড়ল তার তরবারি। তারপাশেই তার রক্তমাখা ছেঁড়া ওড়না। সব বুঝতে পারল সে। “তুমি নিজেকে নিজে হত্যা করেছ”, থিসবি বলল। “আমিও তোমার মত সাহসী হব। আমি দেখাব, ভালোবাসতে পারি। মৃত্যুই আমাদেরকে বিছিন্ন করতে পারত। কিন্তু এখন মৃত্যুর সে ক্ষমতা নেই”। পিরামাসের রক্তমাখানো তরবারি নিজের হৃদপিণ্ডে আমুল বসিয়ে দিল থিসবি।
অবশেষে দেবতারা সদয় হলেন। প্রেমিকযুগলের পিতামাতারাও। মালবেরি গাছের গভীর রক্তবর্ন ফলগুলো এই প্রকৃ্ত প্রেমিকযুগলের চিরন্তন স্মারক হয়ে রইল। আর তাদের চিতাভস্ম ঠাই পেল একই ভস্মাধারে। মৃত্যুও তাদেরকে বিছিন্ন করতে পারলনা।
এডিথ হ্যামিল্টনের কালজয়ী গ্রন্থ ‘মিথলজি’র ছায়ানুসরণে…………..
সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন
রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো
রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন
যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে
ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন
আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন
মসজিদ না কী মার্কেট!
চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷
আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন