somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাঁচ লাখ লোকের সমাবেশ .বনাম..মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ এর মহাসমাবেশ

২৪ শে মার্চ, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

স্টাফ রিপোর্টার: ঘোষণাই সার। বাস্তব অবস্থা সম্পূর্ণ ভিন্ন। এক কোটি টাকার বাজেটে গুটিকয়েক মানুষের ‘মহাসমাবেশ’ হয়ে গেল রাজধানীর মতিঝিল শাপলা চত্বরে। তা-ও আবার জাতীয় শোক দিবসে। এই সমাবেশকে ঘিরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ছিল ব্যাপক প্রস্তুতি। তিন স্তরের নিরাপত্তা বলয়। ছিল বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার বিরামহীন তৎপরতা। সংবাদ মাধ্যমের সরব উপস্থিতি। আশপাশের এলাকাজুড়ে লাগানো হয় ১০০ মাইক। দক্ষিণে টিকাটুলি মোড়, উত্তরে আরামবাগ আল হেলাল মোড়, পশ্চিমে দৈনিক বাংলার মোড়, পূর্বে কমলাপুর বাজার রোড পর্যন্ত তৈরি করা হয় নিরাপত্তা বলয়। তুলে দেয়া হয় ফুটপাথের সব দোকানপাট। বন্ধ করে দেয়া হয় সব ধরনের যান চলাচল। নিরাপত্তার জন্য বসানো হয় আর্চওয়ে। শাপলা চত্বরের মোড়ে তৈরি করা সুসজ্জিত মঞ্চ। পিচঢালা পথে বিছানো হয় কার্পেট। প্রায় দু’সপ্তাহ ধরে চলে প্রচার প্রচারণা। ঘোষণা দেয়া হয় পাঁচ লাখ লোকের মহাসমাবেশ করার। সকাল ১১টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত চলার কথা ছিল সমাবেশ। কিন্তু শুরু হয়েছে ২টায়। বেলা আড়াইটার দিকে পুলিশ পাহারায় একটি সাদা মাইক্রোবাসে চড়ে সমাবেশস্থলে যান মহাসমাবেশের উদ্যোক্তা মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ। ২০০৫ সালের ১৭ই আগস্ট জেএমবি’র সিরিজ বোমা হামলার আসামী হিসেবে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তিনি দেশের বৃহত্তম ঈদের জামাত শোলাকিয়ার ইমাম। তখন মঞ্চ এবং এর আশপাশ মিলে আড়াই শ’ থেকে তিন শ’ লোকের সমাগম। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লোকজনের উপস্থিতি খানিকটা বাড়ে। ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কিছু কর্মী মিছিল নিয়ে সমাবেশে যোগ দেন। তবু শেষ পর্যন্ত হাজারের কোটা অতিক্রম করেনি এমন অনুমান প্রত্যক্ষদর্শীদের। বিরোধীপক্ষের অপপ্রচার আর হুমকি-ধমকির কারণে লোকজন আসেনি বলে মন্তব্য করেন মাসউদের ঘনিষ্ঠ লোকজন। তারা বলেন, মহাসমাবেশ না বলে দোয়া মাহফিল অথবা প্রেসিডেন্টের মৃত্যুতে শোকসভা বললে ভাল হতো। একই রকম মন্তব্য করলেন আইন-শৃঙ্খলার দায়িত্বে নিয়োজিত মতিঝিল থানার ওসি হায়াতুজ্জামান। তিনি বলেন, মহাসমাবেশ নয়-দোয়া মাহফিল করলেই উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্য সফল হতো। সমাবেশ দেখতে গিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরীসহ অনেক পথচারী ও উৎসুক জনতা। তারা বলেন, গুটিকয়েক লোকের জন্য এভাবে রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র অচল করে রাখার কোন মানে হয় না। বেলা তিনটার দিকে মহাসমাবেশ লেখা ব্যানারের ওপর কালো কাপড়ে লেখা দোয়া মাহফিলের ব্যানার লাগানোর চেষ্টা করা হয়। কিন্তু আকার ছোট হওয়ায় ওই ব্যানার মঞ্চের সামনে ঝুলিয়ে দেয়া হয়। সমাবেশের উপস্থিতি দেখে হতাশ হন উদ্যোক্তাদের অনেকেই। তারা বলেন, বিরোধী আলেমদের প্ররোচনায় অনেকেই আসেননি। তারপরও মাওলানা মাসউদ তার বক্তৃতায় লাখ লাখ লোকের উপস্থিতির দাবি করেন। এ সময় উপস্থিত লোকজন এবং মিডিয়া কর্মীরা হাসাহাসি করেন অনেকটা প্রকাশ্যেই। সমাবেশে মিডিয়া কর্মীদের মাঝে বিলি করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বেশ ক’জন খ্যাতনামা আলেমের নাম যোগ করা হয় বক্তার তালিকায়। অথচ তারা সমাবেশে উপস্থিতই ছিলেন না।
শোকের দিনে মহাসমাবেশ: প্রেসিডেন্টের মৃত্যুতে দেশজুড়ে পালিত হয়েছে তিন দিনের শোক কর্মসূচি। শোকে মুহ্যমান দেশ। এই শোকে একাকার পুরো জাতি, সব দল। শুধু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগই নয়, বিপরীত মেরুর প্রধান বিরোধী দলও দলীয় কর্মসূচি বাতিল করে শোক পালন করে। বিরোধী নেত্রী তার কর্মসূচি একদিন পিছিয়েছেন। দলটির ডাকা হরতাল প্রত্যাহার করা হয়েছে। দেশবাসীর সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে বিরোধী দল তিন দিনের শোক কর্মসূচি পালন করছে। জাতীয় শোক ঘোষণার পর তিন দিন ধরে রাজনৈতিক ময়দান শূন্য। সভা-সমাবেশ নেই। একটি ধর্মভিত্তিক দল আগে হুঙ্কার দিয়েও শোক দিবস হওয়ায় কর্মসূচি বাতিল করার ঘোষণা দেয়। কিন্তু রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকায় দিনভর রাস্তা বন্ধ রেখে এই সমাবেশ করা হলো। জামায়াত নিষিদ্ধ, কোরান ও মহানবীর সম্মান রক্ষায় আইন করার দাবি এবং সামপ্রদায়িক সমপ্রীতি বিনষ্টকারীদের শাস্তির দাবিসহ বেশ কয়েকটি দাবিতে এ সমাবেশের ডাক দেয়া হয়। বাদ জোহর সমাবেশ শুরু হলেও সকাল থেকে মতিঝিল শাপলা চত্বরের চার দিকের রাস্তা বন্ধ রাখা হয়। সমাবেশ স্থলের নিরাপত্তা রক্ষায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য সেখানে মোতায়েন করা হয়। প্রশ্ন দেখা দেয় জাতীয় শোক দিবসে এই কর্মসূচি পালন নিয়ে। একই স্থানে পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা ছিল খেলাফত যুব আন্দোলনের। শোক দিবসের কারণে একদিন আগেই তারা কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেয়। কিন্তু আগের অবস্থানে অনড় থেকে কর্মসূচি পালন করলেন তিনি। সমাবেশের পুরোটা জুড়ে রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়েছেন নেতারা। জামায়াত ইসলামিকে নিষিদ্ধ করার দাবি তুলেছেন। যুদ্ধাপরাধীেেদর সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করা হয়েছে। আগে ঘোষণা দেয়া হয়েছিল ওলামা মাশায়েখ সংহতি পরিষদের মহাসমাবেশ হবে এটি। আয়োজনও ছিল ব্যাপক। সমাবেশ শুরুর কথা ছিল দুপুরে। চিত্র দেখা গেলো ভিন্ন। সমাবেশ শুরু হলো জোহরের নামাজের পর। অপেক্ষা করা হলো জনসমাগম বাড়ানোর। কিন্তু যখন সমাবেশ শুরু হয় তখন দেখা গেলো গুটিকয়েক মানুষের ‘মহাসমাবেশ’।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জামায়াত-শিবিরকে সন্ত্রাসী সংগঠন আখ্যা দিয়ে তাদের প্রতিহত করার আহ্বান জানিয়েছেন ফরিদ উদ্দিন মাসউদ। তিনি বলেন, জামায়াত-শিবিরের মূল গুরু (মওদুদী) আলেম ছিলেন না। ছিলেন সাংবাদিক। সে গুছিয়ে গুছিয়ে কথা লিখে পীর আওলিয়া আল্লাহ রাসুলের ওপর জুলুম করেছে। আল্লাহ-রাসুলকে অবমাননা করেছে মওদুদী। জামায়াত তার আদর্শ লালন করছে। জামায়াত-শিবির কোন রাজনৈতিক দল নয়, তারা সন্ত্রাসী ও উগ্রবাদী সংগঠন। আল্লাহ ও রাসুলকে অবমাননা করে তারাই আজ বড় নাস্তিক ও মুরতাদে পরিণত হয়েছে। তাই তাদেরকেও প্রতিহত করতে হবে। জামায়াত-শিবিরকে উদ্দেশ্য করে ফরিদ উদ্দিন মাসউদ বলেন, আমরা আদবের সঙ্গে বলতে চাই, তওবা করে সঠিক পথে আসুন। আল্লাহ ক্ষমা করে দিলেও দিতে পারে। আর অন্যায়ের সঙ্গে থাকবেন না। তিনি বলেন, যারা ইসলামী ব্যাংকে একাউন্ট করেছেন তারা শয়তানকে সাহায্য করেছেন। তারা বিধর্মীদের সহায়তা করছেন। ইসলামী ব্যাংক ইসলামের কথা বলে সুদ খায়, ঘুষ দেয়। ইসলামী ব্যাংকে যারা টাকা রাখেন তারা জাহান্নামে পুড়ে মরবেন। আমি তাদের বলবো ইসলামী ব্যাংক থেকে একাউন্ট তুলে নেন। মাওলানা মাসউদ অভিযোগ করেন, এই মহাসমাবেশ না করার জন্য নানা ধরনের হুমকি-ধমকি দেয়া হয়েছিল। প্রতিহত করারও হুঙ্কার দিয়েছে কয়েকটি সংগঠন। মহাসমাবেশে আসার সময় বিভিন্ন জায়গায় হামলার শিকার হয়েছে অনেক কর্মী। হাসপাতালে তাদের অপারেশন চলছে। নানা রকম হুমকি-ধমকি উপেক্ষা করে এই সমাবেশ প্রমাণ করে, জামায়াতের দিন শেষের দিকে। তিনি বলেন, ইসলাম কোন ধর্মের অবমাননা সহ্য করে না। সরকার ব্লগের অবমাননার বিচার করতে কমিটি করেছে। আমরা সাধুবাদ জানাই। তবে যাদের দিয়ে কমিটি করা হয়েছে তারা এ বিষয়ে সঠিক জ্ঞান রাখেন না। তারা কি করে বুঝবেন ব্লগে অবমাননা করা হয়েছে। তিনি বলেন, সুষ্ঠুভাবে বিচার করতে হলে আলীয়া মাদরাসা, কওমী মাদরাসা ও পীর-মাশায়েখদের প্রতিনিধিদের সংযুক্ত করতে হবে। তবেই প্রকৃত বিচার সম্ভব হবে। মওলানা মাসউদ বলেন, সরকারের অন্যতম দু’টি ওয়াদা ছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে কোন রকম টালবাহনা বরদাশত করা হবে না। ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের পুলিশি হয়রানির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, মওদুদীরা দাড়ি রাখে না, পাগড়ি পরে না। তারা পাঞ্জাবির সঙ্গে প্যান্ট পরে। দাড়ি টুপি দেখলেই ধরবেন না, ধরলে আল্লাহর গজব পড়বে।

তথ্য সুত্র: মানবজমিন
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মার্চ, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:২৬
১১টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগ কি শিখিয়েছে?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:০৬






অপমান, অপদস্থ থেকে বাঁচার উপায় শিখাইনি? ওস্তাদ মগা শ্যামী পাহাড়ে বসেও এসবের সমাধান করতে পারে, আপনি সামান্য অসুস্থতার জন্যও ব্লগে মিলাদ দেননি, দোয়া করেছেন কার জন্য? খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোরআন হাদিসই যদি মানতে হবে তবে আল্লাহ ফিকাহ মানতে বললেন কেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:৪৬




সূরাঃ ৫ মায়িদা, ৬৭ নং আয়াতের অনুবাদ-
৬৭। হে রাসূল! তোমার রবের নিকট থেকে তোমার প্রতি যা নাযিল হয়েছে তা’ প্রচার কর। যদি না কর তবে তো তুমি তাঁর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ওরা দেশের শত্রু; শত্রু দেশের মানুষেরও...

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৮

ওরা দেশের শত্রু; শত্রু দেশের মানুষেরও...

অন্তর্জাল থেকে নেওয়া সূর্যোদয়ের ছবিটি এআই দ্বারা উন্নত করা হয়েছে।

ইসলামের পবিত্র আলো ওদের চোখে যেন চিরন্তন গাত্রদাহের কারণ। এই মাটি আর মানুষের উন্নয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তারেক রহমানের হঠাৎ ‘জামায়াত-বিরোধী’ উচ্চারণ: রাজনীতির মাঠে নতুন সংকেত, নাকি পুরোনো সমস্যার মুখোশ?

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৯

তারেক রহমানের হঠাৎ ‘জামায়াত-বিরোধী’ উচ্চারণ: রাজনীতির মাঠে নতুন সংকেত, নাকি পুরোনো সমস্যার মুখোশ?

বিএনপি রাজনীতিতে এক অদ্ভুত মোড়—অনেক বছর পর হঠাৎ করেই তারেক রহমান সরাসরি জামায়াতকে ঘিরে কিছু সমালোচনামূলক কথা বললেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

এমন থাপ্পড় খাবি!

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৩৩



ঘটনাঃ ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দামের পতনের সময়।
চৈত্র মাস। সারাদিন প্রচন্ড গরম। জামাই তার বউকে নিয়ে শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছে। সুন্দর গ্রামের রাস্তা। পড়ন্ত বিকেল। বউটা সুন্দর করে সেজেছে। গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×