somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশে সোয়াইন ফ্লু : মৃত্যু, আতংক নাকি সচেতনতা ???

৩১ শে আগস্ট, ২০০৯ রাত ৯:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশে সোয়াইন ফ্লুতে একজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চত হওয়া গেছে। অথচ গনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষে সরকারী পদক্ষেপ এখনো উল্লেখ করার মত কিছু নয়। তাই সমসাময়িক এই বিষয়ে একটি বিস্তারিত পোস্ট দেয়ার গুরুত্ব অনুভব করছি। চলুন জেনে নেই সোয়াইন ফ্লু সম্পর্কে ।

সোয়াইন ইনফ্লুয়েঞ্জা শূকরের ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস। ২০০৯ সালের এপ্রিল মাসে পৃথিবীর কয়েকটি দেশে মানব মৃত্যুর কারন বলে চিহ্নিত হয়েছে। এটি মূলত শূকরের মাঝেই পাওয়া যেত যা কিনা শূকরকে ইনফ্লুয়েঞ্জাতে আক্রান্ত করত। অন্যান্য ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের মতই এটি শ্বাসনালীতে সংক্রমন করে থাকে। পূর্বে সোয়াইন ইনফ্লেঞ্জা ভাইরাস মানুষকে আক্রান্ত না করলেও ধারনা করা হচ্ছে, ২০০৯ সালের এপ্রিলে উদ্ভব হওয়া ভাইরাসটি মানুষ, শূকর ও পাখির ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের সংমিশ্রনে। এটি ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস টাইপ A (H1N1)।

বাংলাদেশে সোয়াইন ফ্লু
২০০৯ সালের ১৮ জুন বাংলাদেশে প্রথম সোয়াইন ফ্লু সনাক্তকরা হয়। ১৭ বছর বয়স্ক রোগী যুক্তরাষ্ট্র সফর করে দেশে ফিরে অসুস্থ হয়ে পড়েন। বাংলাদেশ সরকারের আইডিসিআর, আসিডিডিআর,বি ও সিডিসির সম্বন্নিত সার্ভাইলেন্স কার্যক্রমে রোগীর দেহে সোয়াইন ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের উপস্থিতি নির্নয় করা হয়। তবে রোগী ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠেন। বাংলাদেশে এই যাবৎ প্রায় দেড় শতাধিক ব্যক্তির মাঝে সোয়াইন ফ্লু ভাইরাস পাওয়া গেছে এবং একজনের মৃত্যু হয়েছে।
পার্শবর্তী দেশ ভারতে সোয়াইন ফ্লু ব্যাপক ছড়িয়ে পড়ায় বাংলাদেশেও সোয়াইন ফ্লু মহামারী আকার ধারণ করতে পারে বলে বিশেষজ্ঞ মহল মনে করেন। তবে সোয়াইন ফ্লু নিয়ে আতংকিত হবার কিছু নেই, দরকার সচেতনতা। যদিও বাংলাদেশ সরকার ব্যাপক গনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ ব্যাপারে এখনো উল্লেখযোগ্য কোন পদক্ষেপ নেয়নি। তাই বাসায় আমাদের ব্যাক্তিগত এবং পারিবারিক সচেতনতা খুব বেশি প্রয়োজন। চলুন জেনে নেই সোয়াইন ফ্লুর লক্ষণগুলো কী কী ???

সোয়াইন ফ্লুর লক্ষণ
=> হঠাৎ করে ২/৩ দিন প্রচণ্ড জ্বর ওঠা এবং এই জ্বর ১০০-১০৩ পর্য়ন্ত হবে, এমন কি আরও বেশিও হতে পারে।
=>ওষুধ সেবনের পরেও জ্বর কখনোই ১০০ এর নিচে নামবে না।
=>সারা শরীরে ব্যাথা হওয়া।
=> প্রচুর হাঁচি এবং শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
=>ক্ষুদামন্দা ও আলস্যবোধ করা।

আক্রান্ত হলে করণীয়

ভয় পাবার কোন কারণ নেই। যদিও এখন পর্যন্ত এ রোগের সরাসরি কোন Medicine আবিস্কার হয়নি, তবুও আপনার সচেতনতা এবং নিয়মিত চিকিৎসার মাধ্যমে সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়া সম্ভব। এ ক্ষেত্রে নিচের বিষয়গুলোতে নজর দিন:
=> উপরের লক্ষণগুলো অনুভব করলে দ্রুত কোন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে যান।
=> প্রচুর পরিমানে পানি এবং পানি জাতীয় ফল খান।
=> খুব বেশি বিশ্রাম নিন এবং যতটা সম্ভব ঘুমের চেষ্টা করুন।
=> পাবলিক প্লেসে যাতায়াত একদম ব্নধ করতে হবে।
=> কমপক্ষে ৭ দিনের জন্যে Complete BED REST এ চলে যান।
=> প্রচুর পরিমানে মানসম্পন্ন খাদ্যগ্রহণ করুন ।

চিকিৎসার জন্যে কোথায় যাবেন?
নিচের হাসপাতালগুলোতে সরকারীভাবে সোয়াইন ফ্লুর স্বাস্থ্যসেবা পাবেন:
১. ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
২.স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
৩.সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
৪. স্বাস্থ্য অধিদফ্তর, মহাখালী, ঢাকা

সরকারীভাবে ফ্রি H1N1 টেস্ট করাতে স্বাস্থ্য অধিদফ্তরের "রোগ নিয়ন্ত্রন কেন্দ্র (IEDCR) "তে যোগাযোগ করতে পারেন নিচের নম্বরে: +8801937000011



সোয়াইন ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রতিরোধে করনীয়

সোয়াইন ফ্লু থেকে নিজেকে দূরে রাখতে শরীর সুস্থ রাখার সব রকম চেষ্টা করতে হবে। সেই সাথে নিজের ফ্লু হলে তা যেন অন্যকে আক্রান্ত না করে সেই ব্যাপারে সচেতন থাকা আবশ্যক। যে সমস্ত কাজ সোয়াইন ফ্লু প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে,

* অসুস্থতার সময় হাচি বা কাশির সময় মুখে রুমাল ব্যবহার করুন।
* ফোমাইট (Fomite) বা নির্জীব বস্তু যেমন দরজার নব, কম্পিউটারের কী বোর্ড, মাউস প্রভৃতি নিয়মিত জীবানুনাশক দিয়ে পরিস্কার রাখুন।
* কফ ও শ্লেষ পরিস্কার করার জন্য টিস্যু পেপার ব্যবহার করা এবং ব্যবহারের পরে নিরাপদ স্থানে ফেলুন।
* সব সময় সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে পরিস্কার রাখা বিশেষ কফ ও শেষ পরিস্কার করার পর অবশ্যই সাবান দিয়ে হাত পরিস্কার করুন। সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার সময় অবশ্যই অন্তত ২০ সেকেন্ড ব্যাপি সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। তারপর ভাল মত পানি দিয়ে সাবান সরাতে হবে।
* রোগাক্রান্ত ব্যক্তি থেকে দূরে থাকুন।
* আক্রান্ত হলে জরুরী স্বাস্থ্যসেবা গ্রহন করুন।
* আক্রান্ত হলে স্কুল, কলেজ অথবা কর্মস্থলে না গিয়ে বাড়ীতে, অন্যদের থেকে নিরাপদ দুরত্বে থাকুন, যাতে অন্যরা আক্রান্ত না হয়।


পরিশেষ
সোয়াইন ফ্লু নিয়ে ভয়ের কিছু নেই। আমাদের সচেতনতাই পারে আমাদের বিপদমুক্ত রাখতে। তাই নিজে সচেতন থাকুন এবং প্রিয়জনকে সচেতন করুন।
১০টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিকে গুলি করলো কে?

লিখেছেন নতুন নকিব, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৬

হাদিকে গুলি করলো কে?

ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজপথের অকুতোভয় লড়াকু সৈনিক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জীবনের চেয়ে তরকারিতে আলুর সংখ্যা গণনা বেশি জরুরি !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:১৭


বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশবাসী একটা নতুন শব্দ শিখেছে: রুট ভেজিটেবল ডিপ্লোম্যাসি। জুলাই আন্দোলনের পর যখন সবাই ভাবছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইতিহাসের সেরা ম‍্যাটিকুলাস ডিজাইনের নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ চলছে। দলে দলে সব সন্ত্রাসীরা যোগদান করুন‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৪



বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ব নিকৃষ্ট দখলদার দেশ পরিচালনা করছে । ২০২৪-এর পর যারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী দিয়ে দেশ পরিচালনা করছে । তাদের প্রত‍্যেকের বিচার হবে এই বাংলার মাটিতে। আর শুধুমাত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×