somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিয়ের দিন

০৪ ঠা জুলাই, ২০১৪ রাত ৩:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সকাল কখন হবে সে টেনশনে রাতে ঘুম আসছিল না, চাচ্ছিলাম না ঘুমাতে আজ রাতে। একটু আগে ফোনটা রাখলাম ওর সাথে কথা বলে। বেশি পন্ডিত আমি, ফোনটা রাখতে বললাম, আর সেও রেখে দিলো! ধুর! আরেকটু কখা বলে রাখতাম! আসলে ওকেতো অনেক কষ্ট পোহাতে হচ্ছে এই কটা দিন, তার উপর আজ গায়ে হলুদ হলো, খুব ক্লান্ত ও, তাই ঘুমাক। কাল থেকেতো আমরা... ইস ভাবলে ঘুম আরো দূরে চলে যাবে, নাহ ভাবনা দূরে থাক। অবশ্য ওকে কথাও দিয়েছি দ্রুত ঘুমাবো। আবারো ফোনটা চেক করলাম ও যদি কল দেয়, না ঘুমাচ্ছে, আমাকেও বলেছে ঘুমাতে। চোখের নীচে কালি পড়ে গেলে কাল বরকে দেখতে কেমন লাগবে! ঘুমাবো ঘুমাবো করেও ২টা বেজে গেল, তাও যদি আসতো ঘুম, অনেকক্ষন যাবৎ ভাবছিলাম ওকে একটা কল দিয়েই দিই, একটু বকা দিবে জানি, তাও বকা খাই, তবুও একটু ওর গলার স্বরটা শুনিয়ে দিক, তাতেই ঘুম চলে আসবে। ভয়ে ভয়ে দিলাম ওকে কল, প্রথম রিং-এর সাথে সাথেই রিসিভ করে বলল, ‘হ্যালো’ আহ! কি যে শান্তি এই হ্যালো ডাকে, কেমন যে লাগে ওর এই ডাকটা শুনতে, বুঝাতে পারবো না। আমি ইচ্ছা করে মাঝে মাঝে চুপ করে থাকি, তাহলে ও আবার হ্যালো বলবে তাই।

হ্যালো, তুমি ঘুমাওনি!
জানতাম জিজ্ঞেস করবে
ঘুম আসছেনাতো!’
কিভাবে আসবে, নিশ্চই কালকের চিন্তায় আছো, দুষ্ট ছেলে!’
তুমিওতো ঘুমাওনি দুষ্ট মেয়ে! তুমি ঘুমাওনি কেনো?
আমিতো রূপচর্চা নিয়ে ব্যস্ত, কাল তোমাকে পাগল করতে হবে না!
এই কি বল! আমিতো এমনিতেই পাগল হয়ে আছি আপনার জন্যে, জান। এই তিন বছরে যাবৎ অপেক্ষা এই দিনটার জন্যে...
তিন বছর হতে ২ মাস বাকি।
এই…
হুমম?
কি কর? শুবা কখন?
শুয়েই আছি, শেষ আমার কাজ।
চোখ বন্ধ?
হুমম, তোমার?
আমি বারান্দায়, তোমাকে দেখছি...
কিভাবে?
জানো না?
হুম, চাঁদ?
হুম
এই!
হুম?
আসো, শুবা
একটু পর শুই?
না, আসো!
হুম।
এবার ঘুম, কাল সকালে উঠে তোমার অনেক কাজ আছে না! আর ঘুম না হলে আমার জামাইটা বিয়ের মধ্যে ঘুরে পড়ে গেলে?
এইতো শুয়ে পড়লাম, এখন ঘুমা আসবে।
সত্যি?
হুম, সত্যি।
এই শোনো
বলো..
কালকে আমাকে নিয়ে যাবাতো??
আর 'কাল’ বোলোনা জান, বলো আজ। আজ নিয়ে আসছি তোমাকে, মাঝে শূধু আজ এই রাতটা বাকি, তারপর তুমি আমার কাছে বাকি জীবনের জন্যে, আর দূরে থাকতে পারবে না, আজ রাতই শেষ দূরে থাকা...
এই, রাতটা আজ কেন শেষ হচ্ছে না? বিয়ের তারিখটা একটা দিন আগে ফেলতে পারলে না??
চেয়েছিলামতো, বড় আপুরাইতো দেরি করলো আসতে। জান..
হুম?
তোমার হাতটা দাও
হুমম
এবার ঘুমাবো।
এই ঘুমাবাতো?
হুমম জান। love you
love you too jaan, কাল তাড়াতাড়ি এসো
জান…আর বোলোনা এখনি নিয়ে আসতে ইচ্ছে হচ্ছে তোমাকে
এই দুষ্ট! ঘুমাও এবার, কাল বকা খাবা নয়তো!
জ্বী ম্যাম, ঘুমাচ্ছি
হুম, রাখো
love you
love you too…

রেখে দিতে হলো ফোনটা কালকের কথা ভেবে। মোবাইলে এলার্ম ৬ টায় সেট করে ঘুমিয়ে পড়লাম। এখন আসছে ঘুম, গভীর ঘুম। বালিশটার দিকে খুব লোভ নিয়ে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কখন যে ঘুম চলে আসলো।

এলার্ম বাজছে আমার টেবিল ঘড়িতে, ১১টার এলার্ম। কিন্তু ১১টা কেন?? আজতো আমার অনেক কাজ! দুপুরে বিয়ে, সন্ধ্যায় পার্টি, আর আমি কিনা এত দেরী করলাম! ফোনটা কই, নিশ্চই মিতি অনেকবার কল করেছে, কি যে আমি! কখনোই সিনসিয়ার হতে পারলাম না কোন কাজে। ভীষন রাগ করবে ও আজ। ফোনটা পাচ্ছি না, কোথায় রাখলাম রাতে কথা বলে! বালিশের নীচে, বেডের পাশে, নীচে পড়ে গেলো কিনা, না কোথাও নেই ফোন! আম্মা!! আম্মা!! আমার ফোন কই? সব খুজতে খুজতে শেষে ড্রয়ার চেক করছি, নাহ ড্রয়ারেও আমার ফোন পেলাম না, ভালো করে খুজলাম, নাই। শুধু ভাঙা কিছু পিস আছে পুরনো কোন ফোনের। আরে এইটাতো পুরনো ফোন না, এটা আমার ফোন, কে ভাঙলো?? আম্মা!! এবারও আম্মু আসেনি আমার চিৎকারে। আরে মনে পড়েছে সব, ফোনটা আমিই ভেঙেছিলাম কয়েক দিন আগে। শেষ যেদিন আমাদের কথা হয়, না রাগ করে ভাঙিনি। তাহলে, রাতের সবগুলো কথা আমার স্বপ্নই ছিল শুধু!

গত সপ্তাহের কথা। আমার গ্রেজুয়েশন শেষ গত মাসে, মিতিরটাও শেষের পথে। তিন বছর ধরে একটা স্বপ্ন ছিল আমাদের। এবার ভাবলাম দু’জনের পরিবারকে জানাই। চাকরি পেতে খুব একটা বেগ পেতে হবে না আমাকে, যোগ্যতায়ও ঠিক আছি। আর, মিতি ওর বাসায় যেভাবেই হোক রাজি করাবে, আর ওর বাবা-মা আমাকে খুব ভালো জানেন। মোটকথা সব ঠিকঠাক প্ল্যানমতই হচ্ছে। পরশু মিতিকে বললাম, 'আমি আম্মুকে বলি তাহলে প্রস্তাবের কথাটা তোমার বাবা-মাকে জানাতে।' এতে আমি কি ভুল বললাম সেদিন বুঝিনি। কেন জানি সেদিন থেকে মিতি আমাকে এড়িয়ে চলতে শুরু করলো, কথা বলে কিন্তু বিয়ের ব্যাপারটা এড়িয়ে যায়। আমি ওকে বলেছি ও মানষিকভাবে প্রস্তুত না থাকলে আমরা পরে বিয়ে করবো, কোন সমস্যা নেই আমার। ও যখন চায়, তখন হবে সব। কিন্তু তারপরও ও আমাকে এড়িয়ে চলা শুরু করলো, ফোন অনেকবার দেবার পর মাঝে মাঝে রিসিভ করে, আর রিসিভ করেও দু’একটা ফরমাল কথা, তারপর ব্যস্ত বলে রেখে দেয়। না, ওরতো পরীক্ষা নেই, তাহলে? হয়তো ও কোন কিছু নিয়ে খুব টেনশন করছে। আমি বার বার জানতে চাওয়াতে ফোনটাই বন্ধ করে দিলা! আমিতো সরিও বলেছিলাম যদি ভুলে না জেনে কোন সমস্যা হয়ে থাকে আমার জন্যে।

কি হলো আমাদের এত দিনের সব প্ল্যানিং-এর! এইতো সেদিনই আমাকে বকা দিয়ে বলছিল কেনো তাড়াতাড়ি পড়াশুনা শেষ করছিনা, আর কেনই বা ওকে নিয়ে যাচ্ছিনা!! সবকিছুইতো ভেবে রেখেছিলাম দু’জন মিলে, কি হয়ে গেল! অনেক ট্রাই করলাম, ওর ফোন আর আন করেনি। কয়েকদিন পর জানতে পারলাম নতুন নাম্বার ব্যবহার করছে। নাহ বিশ্বাষ করিনি, তারপরেও ফোন দিলাম সেখানে, ও রিসিভ করেছে তিনবার কল করার পর। খুব বিরক্তি নিয়ে। আমি জানতাম না তুমি এত বিরক্তি নিয়ে কথা বলবা, আর ভাবতেও পারিনি এই ধরনের কথা বলবা, তাহলে কসম ফোন করতাম না। আমিতো সবেমাত্র পড়া শেষ করলাম, কিভাবে এর মাঝে এত কিছু করব? তোমাদের গাড়ি আছে, ঢাকায় প্রপার্টিও আছে জানি, সেটা আমাকে কেন বললা বুঝলাম না। আমারতো বাবা ছোটবেলা মরে গেছেন, আমাদের কত কষ্ট করে চলতে হয়েছে তুমিতো জানো, তাহলে এইভাবে কেন বললা? আমিতো বসে নেই, ভাল চাকরি পাচ্ছি না সত্যি, একটু সময়তো লাগবেই। আচ্ছা সময় বেশি নিচ্ছি? বলতে আমাকে! আমি কিছু একটা উপায় বের করতাম যেভাবেই হোক। তাই বলে এভাবে বললা! আমার যোগ্যতা কোনদিন হবে না এতদিন পরে এসে বুঝলে? আমরা মিডল ক্লাশ জানি, তুমিতো আগে থেকে জানতে আমাদের কথা, তাহলে? তারপরেও এইভাবে তিরস্কার করলা সেদিন? এইভাবে না বললেও পারতে। একটু সময় চাইলাম, তুমি দিতে পারবেনা, কেন যে তোমার মাঝে এত তাড়া চলে আসলো হঠাৎ! শেষে বলেই ফেললে, অন্য একজনের কথা। অবাক আর কি হব, তার আগেই আমার সাথে তার তুলনাটাও করে ফেললা, জানিয়ে দিলা কি কি আছে সেই মানুষটার, না জানালেও বুঝতাম আমি। আচ্ছা থাকো তাহলে। আমি রাগ করিনি জানো, একটুও রাগ করিনি তোমার উপর, কিছু বলিনি তোমাকে, বলেছি বল?

এইতো কল ঢুকেছে মিতির ফোনে। “এই মিতি, সকাল হয়ে গেছে জান, তোমার ঘুম ভেঙেছে? দেখো আমি উঠে গেছি। আজ না বিয়ের দিন, কই?" ফোন বেজেই চলছে, রিসিভ করো বোকা! আরে একি!! তুমি আমার বাসায় এসে পড়েছো কেনো? কনে আগে আসলে হয়! এই কাঁদছো কেনো বলোতো? নিজের ভুল বুঝেছো? আচ্ছা, তাতেই হবে, কাঁদবা না! তুমি আমার জান না? আমি কি রাগ করে থাকবো আমার জানটার উপর বলো! আসো, সব ঠিক হয়ে যাবে। আবার সব প্ল্যান করব দু’জন মিলে। জানো আমার শরীরটা না ভালো নাই, রাতে একটু বুকে ব্যথা হয়েছিল, আম্মাকে ডাকতে পারিনি, তোমাকে কল দিবো, ফোনটাও ভাঙা। আচ্ছা বাদ দাও। এই! শোনো, আজ করবা বিয়ে?? কি, কিছু বলছোনা কেন?? আর দাঁড়িয়ে কেনো? তোমরা সবাই দাঁড়িয়ে কাঁদছো কেন?? আম্মা কিছু বলছে না যে! আচ্ছা এভাবে তাকিয়ে কেনো তোমরা আমার দিকে?? এই! এই!!! আমার মুখটা কে ঢেকে দিলো, আমিতো কাউকে দেখছি না, এই! আমাকে কেন ঢেকে দিলা সাদা কাপড়ে??? আজ না বিয়ে?
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৪ সকাল ৯:৪৩
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×