পহেলা বৈশাখে- বাংলা নববর্ষ
বেড়াই বাংলাদেশ এর সাথে একদিন
জাহাঙ্গীর আলম শোভন
বিশেষ দিনগুলো আমি সব সময় বিশেষভাবে কাটাতে চেষ্টা করি। তাও একটু অন্যরকমভাবে। গত ১লা বৈশাখ দিনটাও একটু অন্যরকমভাবে কাটালাম। এবার কাটালাম শিশুস্বর্গের শিশুদের সাথে। শিশুস্বর্গ, বাচচাদের একটা স্কুল। যারা দরিদ্র মা বাবার সন্তান। বিনামুল্যের স্কুলটি চালায় কয়েকজন তরুন। তেজগাও, বৌ বাজার, বেগুন বাড়ী বস্তি সঙলগ্ন, ভোর ৪টায় উঠে ৫টায় রওয়ানা দিয়ে ফার্গেট থেকে চকলেট এনে সকাল ৭টায় তাদের সাথে যোগ দিলাম ১লা বৈশাখ কাটাতে, সাড়ে ৯টা পযর্ন্ত ছিলাম। বাচ্ছাদের হাতে মেহেদী পরিয়ে দিলাম, আমাকে দিয়ে মেহেদী পরিয়েছে অন্তত ২০টি শিশু। সবার হাতে সুন্দর আ্লপনা সহ মেহেদী পরালাম। কোনো একটি সংস্থা তাদের জন্য টি শার্ট ও পান্তা ইলিশের ব্যবস্থা করেছে। দারুন। কয়েকজন বায়না ধরলো তাদেরকে নতুন ভাইয়া মানে আমি টি শার্ট পরিয়ে দিতে হবে। তাই তাদেরকে আমার হাতে টি শার্ট পরিয়ে আাসতে হলো। সাথে ছিলেন বেলাল ভাই, যিনি ছবিগুলো তুলেছেন। শুভ ছিলো। দেখলাম তাকে বাচ্ছারা খুব ভালোবাসে। ধন্যবাদ বেলাল ভাই, ধন্যবাদ শুভ। ধন্যবাদ ‘‘ শিশুস্বর্গ’’শিশুস্বর্গ । ধন্যবাদ Liton Soikot Neel / Liton DebNath Saikat/ .and coxsbazareshop.com এই শিশুদের জন্য ৩ প্যাক চকলেট দেয়ার জন্য। । এই প্রোগামে এসে আমি আমার আগের দিনগুলো্ দারুনভাবে মিস করেছি। প্রতিবছর ১লা বৈশাখের আগে বিভিন্ন স্কুলের বাচ্চাদের লোকজ বিলুপ্ত খেলাগুলোর প্রশিক্ষণ দিতাম। তারপর বছরের প্রথমদিন এসবখেলার প্রদশনী করতাম। শহরের চাকুরীজীবন সেসব থেকে আমাকে অনেক দূরে নিয়ে গেছে।
দিনের পরের অংশে আরেকটা প্রোগ্রামে ছিলাম, এটাও ১লা বৈশাখের অন্য পোগ্রামগুলোর চেয়ে ভিন্ন। Walletmix, (Payment Gateway Instigator in Bangladesh) আমন্ত্রনে সাড়া দিলাম। আগের দিন বলেছি শিশুস্বর্গের প্রোগ্রাম শেষ হলে আমি যেতে পারি। যদি সুযোগ থাকে । আমার কথায় Mr Humayun Kabir CEO of Walletmix , সকাল ৭টায় গ্রুপের সাথে যাননি। পরে ১১টায় আমরা দুজন গেলাম, হাসনাহেনা রিসোর্ট, পুবাইলে। গিয়ে দেখি মহা ধুমধাম। পরিবার পরজনসহ ২শ লোকের বিশাল জলসা। কে্উ সাকিব আল হাসানের নামে ব্যাটিং বোলিং চালাচ্ছে, কেউ মেসি রোনালদোকে উৎসর্গ করে বলের গায়ে লাথি মারছে। প্রচন্ড গরম কিন্তু সবার মনে আনন্দও চরম। ভরদুপুরে গাছের ছায়ায় ক্রিকেট ফুটবলের প্রদর্শনী। যাদের কাছে এসব আবার মহা হ্যাপা, তারা করছে কি, আয়তাকার বিশাল পুকুরকে সুইমিং পুল বানিয়ে নিয়েছে। ভাবখানা এমন দে‘রে পুকুর বাবা গা‘টা ভিজিয়ে দে, একটু শীতল হয়ে নিই। যাদের হাওয়া খাওয়ার বাতিক আছে, তারা বসেছে শুটিং এর জন্য তৈরী ছনের ঘরগুলোতে গ্রামীণ আবহে, কেউ বসেছে মাদুর বিছিয়ে দাওয়ায়। যেমন করে কৃষাণ ঘমাক্ত হয়ে ফিরলে কৃষানী কাছে গিয়ে তালপাতার পাখায় বাতাস করে আর হাতের কাছে পাখা না পেলে জামদানী সূতি শাড়ির আচল! তাতে কি কম বাতাস ধরে। আসলে তাই তেমন একটা বাতাস ছিলনা বলে হাশফাস করছিলো অনেকেই। কিছুটা গ্রামীণ আবহ আর গাছের ছায়া তাদের সে বাসনা কিছুটা পূর্ণ করছে বৈকি। বাতাস না থাকায় ঘুড়ি ওড়ানো গেলো চুলায়। ঘুড়ি নিয়ে কেবল সেলফি তোলাই হলো সার। আমি সেলফি কে বলি সেলফিস। বলুনতো কাউকে ছবি তোলার সুযোগ না দিয়ে নিজের প্রতিভা শুধু বিকাশ করলে তাকে কি বলবো?
কিন্তু সেলিফিস তত্ব মিথ্যে করে দিয়ে আমাকে ছবি তোলার অনুরোধ করলেন Mohammad Anowar Hussain, Administrative Assistant, Supply Chain Management, Chevron, সুন্দর জুটি একেকবারে রাজজোটক, ভাবীটা কিছুটা চুপচাপ আর ভাইয়াটা টুপটাপ মানে মিশুক। দুজনকেই ভালো লাগলো। বেশ কিছু ছবি তুলে দিলাম।পরে দেখলাম তাদের মিস্ট দুটি বাচ্চাও আছে।বয়সের ব্যবধান বেশী না হওয়ায় দুটোকে মানিকজোড় মনে হলে। আজকাল বুদ্ধিমানরা নাকি একসাথে দুটো বাচ্চা বড়ো করে থাকেন তাতে নাকি টেনশান একসাথে শেষ হয়ে যায়। যদি তিনি এই লেখা পড়ে থাকেন কিউট বাচ্চাগুলোর জন্য আদর থাকলো।
Humayun Kabir ভাই আমাকে ‘‘ভালো লেখক’’ হিসেবে সবার সাথে পরিচয় করান। হয়তো আমার কপেৃারেট পরিচয় নেই বলে। সেখানেতো সব দেখলাম সব কর্পোরেট হাউসের কর্তা আর তাদের বউরা। লোকে হয়তো ভাবে নিশ্চয় লোকটার খেয়ে দেয়ে কোন কাজ নেই। সারাদিন নিশ্চয় ছাইপাশ লিখে বেড়ায়। ভাগ্য ভালো কেউ জিজ্ঞেস করেনি। আমার কোন গল্প কবিতা উপন্যাস বের হয়েছি কিনা? তবে Mahmud Hasan Khan ভাই জিজ্ঞেস করলেন, আমার ব্লগ আছে কিনা? এডভান্স মানুষের এডভান্স প্রশ্ন। আমার ব্লগটার কথা বললাম। ভাগ্যিস বলতে পারলাম। কদিন আগে ডোমেইনটা নিয়েছিলাম বলে। http://www.rakahali.com এটা আমার ব্লগ লোকসাহিত্য নিয়ে তবে পার্সোনালটা আসবে পরে। আগে হাজার খানেক লেখা হোক। এখনতো আমি ই ক্যাব ব্লগে বিলীন হয়ে আছি। http://blog.e-cab.net/ এটা অবশ্য মাহমুদ ভাইকে বলেছি। বলা হয়নি আনোয়ার ভাইকে। কারণ তখন দেখিনি যে তিনি শেভরনে সাপ্লাই চেইন হ্যান্ডল করেন। তাহলে আমিও বলতোম এই গন্ডমূর্তের সাপ্লাই চেইন বিষয়ে গোটা পাঁচেক লেখা আছে। জীবনে এ বিষয়ে কোন ডিগ্রী না নিয়ে।
চল্লিশজন লোক একজায়গায় হলে নাকি সেখানে কমপক্ষে একজন ভালো মানুষ, একজন নেতা এবং একজন বুদ্ধিমান লোক থাকে। এখানে বেশকয়েকজন বুদ্মিমান ও বুদ্শিমতি আছেন। যারা কুটির শিল্পর দোকান দিয়েছেন মানে স্টল আরকি।নাম সততা স্টোর, কাগজে দোকানদার নেই। দাম দিয়ে পন্য নিয়ে যান আর পাশে পন্যের দাম লেখা। ভালো লাগলো আমার প্রযয়াজনীয় কিছু ছিলনা বলে কেনা হয়নি। একজন আস্ত ফ্রিজ এনে আইসক্রিক্ম, পানি, ড্রিংস সেল করলেন, আরেকজন মেয়েদের জামা। এক আপু আফসোস করলেন তিনি কেন বাসায় রাখা ৫০টি টি শার্ট নিয়ে আসলেন না। আনলে আজি সব বিক্রি হতো। হয়তো হতো কারণ বেলা ১টা মধ্যে ঠান্ডাআলমারীর দোকান মানে ফ্রিজওয়ালা সব বিক্রি করে খালি হয়ে গেছে। আমরাও আইসক্রিম মিছিলে শামিল হলাম। ওয়ালেট মিকস এর ম্যানেজার বাশার ভাই, ফারুকভাই, সাকিব সহ সবাই আইসক্রিম খেয়ে নিলো।
আর সবচে বুদ্ধিমান লোকটির কথাই বলা হলো না।বেড়াই বাংলাদেশ এর তিনি মাহমুদ ভাই। আমাকে লোকজনকে বুদ্ধি দিয়ে বেড়াই। বর্মানে সম্পতাহে কমপক্ষে দুইজন লোককে আমার কনসালটেন্সি হেল্প নেয়। আমার কাছে সবচে বুদ্মিমান মনে হলো মাহমুদ ভাইকে।হিংসাও হলো। লোকটা এমন একটা বিজনেস বেচে নিয়েছে যাতে প্রচুর ঘোরাও হয় আমার ব্যবসাও হয়। ইশ আমি যদি পারতাম।
বুদ্মিমান মাহমুদভাই ১ টার দিকে সবাইকে ঠান্ডা তরমুজ পরেবেশন করলেন। ও শান্তিরে, তরমুজ খেয়ে মনে হলো কেউ চৈত্রের খরতাপে বগুড়ার দই মিশাইয়া এক গ্লাস শরবত খাওয়ালো। ছোটবেলার দৌড়ে এসে মায়ের কোলে ৗটার আনন্দের চেয়ে একটু কম আরাম আরকি? আর শ্রান্ত সময়ে প্রিয়ার আঁচল বা ওড়নাদিয়ে মুখ মোছার কাছাকাছি আনন্দ। কথাটা রিস্ক নিয়ে লিখলাম। বউ লেখাটা না পড়লেই হলো। অন্তত ঠান্ডা আইসক্রিমের চেয়ে তরমুজ খেতে ভালো লেগেছে। কি হুমায়ন কবির ভাই, আশেপাশে আছেন নাকি? কথা কি ঠিক বলেছি?
যারা পুকুরে নেমে গা ভেজালো তাদের কেমন লেগেছে জানি না। ভরদুপুরে আমরা তরমুজকে এনজয় করলাম। পরে আমি আর হুমায়ন দিলাম রুমে গিয়ে ছোট একটা প্যাকেজের ঘুম। ঘুম থেকে উঠে দেখি লাঞ্চের লম্বা লাইন। আমি কিন্তু আশংকায় ছিলাম কোনো রিচ ফুড দেয় কিনা, গত বছর তিনেক ধরে আমি রিচ ফুড এভয়েড করি। কিন্তু মামহমুদ ভাই সেভুল করেনি। তাহলে আমার বিপদ হয়ে যেতো, আরামসে খাওয়া যেতনা, লোকে ভাবত ‘‘দুই দিনের বৈরাগী- ভাতেরে কয় অন্ন’’ অথবা হায়রে বাঙালী- পেটেতো আর ঘি সয়না।
খাবার পেয়ে আমার মনটা আবার ভালো হয়ে গেলো, দেশীয় আয়োজন ভাত ডাল, লতি, ভর্তা, সবজি, মাংশ। গাছের ছায়ায় বসে খেলাম। আমার মনে হয় আমি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশী খেয়েছি। রান্নাটাও ‘‘অসাম’’। বেশী যে খেলাম সেটা বুঝতে পেরে নৌকার বৈঠা হাতে নিলাম। কি আর করা। ফারুক ভাইর ছোট মিস্টি মেয়েটাকে নৌকা বেয়ে ঘুরয়ে আনলাম। সাথে তার মা বাপও ছিলো।
বিকেলে খেলাধলার আয়োজন করা হলো। ছোটদের দৌড়, মহিলাদের বলখেলা, কাপলদের কানের দুল পরানো আর পিলুরেস। ছোটখাটো মিস ম্যানেজমেন্ট ছিলো। অন্যসবকিছূ ভালো হওয়ায় কেউ আর ওসব গায়ে মাখলোনা। এ বিষয়টা আমার ভীষন ভালো লাগলো। সন্ধায় লটারি । ৫৩টি পুরস্কার। যদিও আমি একটিও পাইনি। তবুও ভালো লাগলো।৫৩টি পুরস্কার দিয়েছে বিভিন্ন স্পন্সর সংস্থা এর মধ্যে হুমায়ন ভাইর ওয়ালেটমিক্স একাই দিয়েছে ৩০টি।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১১:২৪