somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভ্রমণ বিত্তান্ত (নায়াগ্রা ফলস্‌)

১৯ শে জানুয়ারি, ২০০৯ রাত ১১:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আটটার বাস কয়টায় ছাড়ে কে জানে। এখন বাজে ৮:০৫am...ও ছেড়েছে। ভালই হল। শীতে জমে যাচ্ছিলাম। যাচ্ছি নায়াগ্রা ফলস্‌ দেখতে। টুর গাইড লেকচার শুরু করেছে। আমার সামনের সীটে এক ইন্ডিয়ান জুটি। নব বিবাহিত মনে হচ্ছে। মেয়েটার দিকে টাহর করতে পারলাম না ভালো করে। তবে খুব সুন্দর একটা গন্ধ বেরুচ্ছে চুল থেকে। ভ্রমণটা উপভোগ্যই হবে মনে হচ্ছে। ;)

বাসটা এখনো ম্যানহাটানেই আছে।

৮:১০am - এখন টানেল এর ভেতর।

৮:৩৫am - টুর গাইড জানালো যে ভ্রমণটা হবে ৮ ঘন্টার (হে খোদা!)...একটু পরে একটা স্টপ এ থামবে আরো কয়েকটা যাত্রী তোলার জন্য।

...ইন্ডিয়ান মেয়েটা তার স্বামীর ঘাড়ে মাথা রেখে বসেছে। কিছুক্ষণ পরপর স্বামীটা চুমু খাচ্ছে তার মুখে। আর ফিসফিস করে কথা বলছে। সারাপথ মিয়াবিবির ফুসুর ফাসুর আর খিলখিল হাসির শব্ধেই কাটাতে হবে মনে হচ্ছে। হিন্দি যদিও খুব একটা খারাপ বুঝিনা, বলতেও পারি টুকিটাকি কিন্তু এদের কথাবার্তা কিছুই টাহর করতে পারছিনা। হিন্দিতেই বলছে। কি এত রাজ্যের কথা কে জানে। আমি নিশ্চিত এই ৮ ঘন্টা ফিসফিসানির পরও এদের কথা ফুরোবে না। দুজনের দুটো নাম দিতে পারলে ভাল হত।

আকাশটা আজ বেশ পরিস্কার। নির্মেঘ নীলাকাশ। কিন্তু বাসের বাইরে -১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। একগ্লাস পানি বাইরে রাখলে মুহুর্তেই বরফ হয়ে যাওয়ার সমুহ সম্ভাবনা।

৯:৪৫am - পথের মধ্যে কয়েকটা নদী পরেছে। জমে বরফ হয়ে আছে।

ইন্ডিয়ান মেয়েটি এখন তার পতিদেবের কোলে অর্ধশায়িত। দুজনে জড়াজড়ি হয়ে আছে। এরা পারেও। কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে ছিলাম। ঘুম আসি আসি করছিল কিন্তু দুজনের কথার শব্ধে ঘোর কেটে গেল। এখন বেশ জোড়েই বলছে।

১০:৫৫am - শেষের কবিতা শুনছি। আমিত আর লাবণ্য দুজনকে জড়িয়ে ঘুমে ঢলে পড়েছে। ভাবছি আমার সামনে বসা দুজনকে এই দুনামেই না হয় এখন থেকে সম্বোধন করি।

১১:৪৫am - লাঞ্চের জন্য ৫০ মিনিটের যাত্রাবিরতি চলছে। থেমেছে ম্যাকডোনাল্ডস-এ প্যানসেলভেনিয়ার কোনো একটা জায়গায়। খাওয়া সেরে বাস এ বসে আছি। মিয়াবিবির তামাশা চলছেই। মান অভিমানের পালা চলছে এখন। লাবণ্যের আসল নামটা জানা গেল...শীতল।

১:৩০pm - আমাদের একটা গ্লাস মিউজিয়ামে নিয়ে এল। এটি অবশ্য টুর প্যাকেজেরই একটা অংশ। গরমগরম গ্লাস বানানোর একটা শো দেখতে ঢুকলাম বাসের সবাই মিলে। আমি যেখানে বসেছি আমার পাশেই একটু পরে একটা আমিশ ফ্যামিলি এসে বসলো। ৩/৪ জেনারেশেনের সবাই মিলে ৮/৯ জন হবে। আমিশ অবশ্য নিয়ইয়র্কেই দেখেছিলাম বেশ কবার কিন্তু এমন নতুন চোখে নয়। মিউজিয়ামে আসার পথে আমাদের টুর গাইড আগে থেকেই আমাদের আমিশদের সম্পর্কে ধারণা দিয়ে রেখেছিল। এরা বাইরের কোনো সাহায্য নাকি নেয় না। প্রযুক্তিতে বিশ্বাস করে না। এই যুগে এসেও নাকি ঘোড়াগাড়ি ছাড়া চলাপেরা করে না (যদিও এসব জানা কথা)। আরো কিছু তথ্য দিল, যেমন আমিশ মেয়েরা মাথায় টুপি পরে থাকে। সে টুপির বৈশিষ্ট হচ্ছে, টুপির রঙ যদি সাদা হয় তাহলে সেই মেয়ের জীবনসঙ্গী আছে এবং সে আর কারো প্রতি ইন্টারেস্টেড নয়। টুপির রঙ যদি সাদা এবং তার উপরে একটা ribbon থাকে তাহলে সে জীবনসঙ্গী খুজঁছে। রঙ যদি কালো হয় তার মানে হচ্ছে তার জীবনসঙ্গী ছিল কিন্তু এখন নেই এবং সে নতুন করে জীবনসঙ্গী চাইছেনা। কালোটুপির উপরে যদি ribbon থেকে তাকে তাইলে তার মানে কি হতে পারে আন্দাজ করে নিতে পারেন। আমার পাশে যারা বসেছিল তাদের একজনের টুপি সাদা আর একজনের টুপির রঙ কালো ছিল। টুর গাইড মজা করে বলছিল বাসে যারা এখনো সিঙ্গেল আছে তারা ribbon সহ কাঊকে যদি দেখে তাইলে যেন ভাব জমানোর চেষ্টা করে। যদিও মিউজিয়ামে সেরকম কাউকে নজরে পরলোনা।

৫:১৫pm - এখন বাজে ৫:১৫...বিরক্তি এসে যাচ্ছে বসে থাকতে থাকতে। মাঝে মাঝে অবশ্য মুভি চালাচ্ছিল এরা। কিন্তু এতোই নিকৃষ্টমানের সে মুভি যে গা রিরি করে উঠে তাকাতে গেলে। অগত্যা বাইরের প্রকৃতির দিকে মনোনিবেশ করার চেষ্ঠা করলাম। অবশ্যি দেখার তেমন কিছু নেইও। তুষাড়ে পথঘাট সব ঢেকে আছে। আকাশটাও সাদা মেঘে ছেয়ে আছে। এখানে মানুষ জীবনযাপন করে কি করে ভেবে আর্শ্চয্য হচ্ছি। এক একটা বাড়ি বেশ অনেক অনেক দূরে।

আমিত লাবণ্য এখন পুরোপুরি মত্ত। বাইরেটা অন্ধকার হয়ে যাওয়াটে এখন অনেক বেশি উগ্র হয়ে গেছে দুজন। কিছুক্ষণ পর দেখলাম দুজন চাইনীজ ছেলেমেয়ে নিরালা দেখে বাসের পেছন দিকে চলে গেল।

৬:০০pm - নায়াগ্রার তিনটা ফলস্ এর একটা আমেরিকান ফলস্ দেখাতে নিয়ে যাওয়ার কথা আমাদের। আমেরিকার সাইডে পরেছে বলে এর নাম আমেরিকান ফলস্। কিন্তু লাইট ৭টায় জল্বে বলে আমাদের নিয়ে যাওয়া হল একটা চাইনীজ রেষ্টোরেন্টে ডীনারটা সকাল সকাল সেরে নেয়ার জন্য।

৭:১০pm - খাওয়া শেষে সবাই গেলাম আমেরিকান ফলস্ দেখতে। চলার পথটা ৫/৬ ইঞ্চি বরফের নিচে ঢাকা পড়ে আছে। আর সে কি হাড়কাপুনি ঠান্ডা! বরফে ঢাকা পায়েচলা পত্থটা কোনোরকমে পেড়িয়ে অবশেষে পৌছালাম কাঙক্ষিত লক্ষ্যে। প্রপাত এর পানি পরার জায়গাটুকুন ছাড়া বাকি নদীটা বরফে জমাট বেধে আছে। ঠান্ডায় হাত পা সব জমে যাচ্ছিল বিধায় কয়েকটা ছবি উঠিয়ে বাসে ছুট লাগাল সবাই। এখান থেকে আমাদের সোজা নিয়ে যাওয়া হবে হোটেলে। সকালে যাব হর্স-সো ফলস দেখতে। কানাডার সাইডে পড়েছে বলে একে কানাডিয়ান ফলসও বলে। আমেরিকান ফলস্, হর্স-সো ফলস আর আরেকটার নাম কি যেন, এই তিনটা নিয়েই নায়াগ্রা ফলস।

এই ফাঁকে নায়াগ্রা শব্ধের মানেটা বলে রাখি। টোর গাইড থেকে যা শুনেছি আর কি। নায়াগ্রা শব্ধটা নেটিভ আমেরিকানদের দেওয়া। এর অর্থ হচ্ছে "thunder of water"। জল পরার শব্ধটা নাকি তাদের কাছে মনে হয়েছিল বজ্রপাতের মতন।

৮:৩০pm - যে হোটেলে আমাদের নিয়ে যাওয়া হল তার নাম হলিডে ইন। বেশ নামকরা হোটেল এখানে। এতটা আশা করিনি। বাস থেকে নেমে কোনো বয়বেয়ারার ছুটোছুটি লক্ষ্য করলাম না। বেশ নিরিবিলি। শুধু কাউন্টারে একজন রিসিপ্সনিস্ট। হোটেল ভাড়া আগেই পে করা হয়েছিল। তো আমাদের টোর গাইড রিসিপ্সনিস্ট এর কাছ থেকে চাবি নিয়ে আমাদের হাত গুছিয়ে দিলেন। ঠিক চাবি না অবশ্য। একটা কার্ড। কার্ড এর উপর লেখা নাম্বার অনুযায়ী রুমে প্রবেশ করে দেখলাম ডাবল বেড রুম, যদিও পে করেছিলাম সিঙ্গেল বেড এর। যাই হোক জিনিসপত্তর এককোণে রেখে রুমটা ভালো করে দেখতে লাগলাম। এক কোণে হিটার কাম এসি। একটা পড়ার টেবিল তার উপর একটা নোটপেড আর একটা কলম রাখা। পাশে কফিমেকার। একটা সোফা, তার সামনে পাদানি। দু'বেডের মাঝখানে একটা ছোট টেবিল। তার উপর টেবিল লেম্প। পড়ার টেবিলের উপরও একটা টেবিল লেম্প রাখা। সোফার পেছনে স্টেন্ডিং লেম্প। বেডের উল্টোদিকে টিভি। বেলকনিও আছে দেখলাম। তবে এই শীতে বাইরে দাড়ানোর প্রশ্ন অবান্তর। বাথরুমে ঢূ মেরে দেখলাম টাওল, সাবান, শ্যাম্পো সব সাজানো আছে। বাহবা এতো আয়োজন। অবাক হচ্ছিলাম কারণ বাড়ার তুলনায় সার্ভিসের কোনো তুলনা চলেনা। হয়তো টুর কোম্পানীর সাথে কোনো চুক্তি থেকে থাকবে।

শাওয়ার সেরে নিয়ে টিভি দেখতে দেখতে কিছুক্ষণ বই পড়লাম। সারাদিনের ভ্রমণের ক্লান্তির জন্যই হয়তোবা একটু পড়েই ঘুম চলে এল। বইটা বন্ধ করে টেবিল ল্যাম্পটা নিভিয়ে দিয়ে চলে গেলাম ঘুমরাজ্যে।

পরের দিন, সকাল ৮:১৫am - ঘুম থেকে ঊঠে নাস্তা সেরে এখন বাস ছাড়ার অপেক্ষায় বসে আছি। ঘুমটা ভালোই হয়েছে।

৮:২০am - বাস ছেড়েছে। অমিত লাবণ্যকে বেশ ফ্রেশ দেখাচ্ছে। লাবণ্য ঠোঁটে কড়া লিপস্টিক লাগিয়েছে। বাসে ঊঠেই দুজনের খুনসুটি শুরু হয়ে গেছে সেই সঙ্গে হাসাহাসি। এরি এক ফাঁকে পতিদেব টুক করে চুমু খেয়ে লাবণ্যের লিপস্টিক খানিকটা নিজের ঠোটে মাখিয়ে নিলে। লাবণ্য আদর করে তা মুছে ও দিয়েছে। এখন বেশ আমোদ করে ছবি ঊঠানো হচ্ছে দুজনের।

পৌছালাম অবশেষে সেই হর্স-সো ফলস এ। নয়নাভিরাম এই স্থানে ঘন্টাখানিক কাটিয়ে অন্য দুটো ফলস দেখে অবশেষে ফিরে গেলাম নিয়ইউর্ক-এ।

নায়াগ্রার সুন্দর্য বর্ণনা করি সে ভাষা আমার নেই। আমার ক্যামেরাই না হয় সে কাজটা করুক।







সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে আগস্ট, ২০১১ ভোর ৬:৩৪
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×