দারুণ একটা দিন কাটল আজ। যদিও অফিসেই ছিলাম সারাদিন তারপরেও। দু-দুটো ভোজনে অংশ নিলাম। প্রথমটা ছিল দুপুরে লাঞ্চ করতে যেয়ে, "দেশী" মুসলমানদের সাথে। "দেশী" শব্দটা এখানে ব্যাবহৃত হয় বাংলাদেশী, ইন্ডিয়ান আর পাকিস্থানীদের বুঝাতে। লাঞ্চটা করলাম পাকিস্থানী একটা রেস্টুরেন্টে। ভোজটা ভোজের মতোই হল। তবে খাওয়া হতে হতে চলতে থাকা কথাবার্তা গুলো বেশ চিন্তার উদ্রেক করলো। এই যেমন একজন প্রশ্ন করে বসলো, ভিন্ন ধর্মী কেও যখন জিজ্ঞেস করবে নামাজ পাচঁ ওয়াক্ত কেন বা এক এক ওয়াক্তে রাকাতের তারতম্য কেন?, তখন কি জবাবটা হবে। আমাদের মাঝে ধার্মিক বেশ কজন ছিল। তারা কেও এর সদুত্তর দিতে পারলোনা। একজন বললো, কোরানে বা হাদিসে কোথাও এই প্রশ্নগুলোর উত্তর নেই। আরেকজন বললো, এই কেন-এর উত্তর না খোজে আমাদের উচিত আমাদের উপর যা নির্দেশিত হয়েছে তা পালন করে যাওয়া। সাথে সাথে শুরু হলো তুমুল তর্কাতর্কি। গ্রুপটা দুই ভাগে হয়ে তর্ক করে যেতে লাগলো। অবশ্যই কাবাব আর নানরুটি চিবাতে চিবাতে। এক পক্ষ বলে, এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানলে আমাদের নিজেদের বিশ্বাস-ই মজবুত হবে, ভিন্ন ধর্মালম্বীরা যখন আমাদের ধর্ম নিয়ে প্রশ্ন করবে তখন এর উপযুক্ত জবাব দেয়া যাবে। অপেক্ষাকৃত ধার্মিক পক্ষ বলে, এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে জানতে জীবনটাই শেষ হয়ে যাবে তখন কিছু পালন করার আর সময় থাকবেনা। আমি অবশ্য প্রথম পক্ষকেই সমর্থন করে যাচ্ছিলাম। প্রথম পক্ষের একজন বললো, সে কয়েকদিন আগে কজন আরবের সাথে কথা বলছিল। তারা জানতে চাইল, "হজ্জ্ব না করেও আমরা কোরবান করি কেন?"। আমি নিজে অবশ্য এ কথা কখনো শুনিনি যে কোরবান করতে হলে হজ্জ্ব করে আসতে হবে। কিন্তু আমার সেই সহকর্মীর মতে অধিকাংশ আরবরা নাকি হজ্জ্ব না করলে কোরবান করে না। খাওয়ার টেবিলের কেও অবশ্য তার এই কথাটা মানতে পারলোনা। আগের কথার রেশ টেনে আরেকজন বললো, আমাদের মাঝে এই প্রশ্ন করার সংস্কৃতিটা গড়ে তুলতে হবে। ছোটোকাল থেকেই আমাদের শিখানো হয় যে, যা বলা হয়েছে তা পালন করতে হবে। কোনো "কেন" নয়। আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম যারা এখানে বড় হচ্ছে তাদেরকে যখন তাদের অমুসলিম বন্ধুরা এই প্রশ্নগুলো করবে তারা তখন আমাদের কাছেই তো আসবে এর সদুত্তর জানার জন্য। আমরা তখন তাদের কি জবাবটা দিব?
...
দ্বিতীয়টা ছিল আমার গ্রুপের কলিগদের সাথে। রাতের ডিনার। আমাদের একজন চাকরী থেকে ইস্তফা দিয়ে মানবসেবা করার জন্য ফিলিপাইন ফিরে যাচ্ছে। আমার সাথেই কাজে জয়েন করেছিল সে। মূলত তার খাতিরেই ডিনারটা। আমেরিকান একটা রেস্টোরেন্টে। চাকচিক্যময় হলে কি হবে খাবার গুলো মুখে দিয়ে পেটে নামানোর অযোগ্য। খাওয়া শেষে আমার ম্যানেজার বলছিল এরকম একটা আফটার ঈদ গেট টুগেদার করলে কেমন হয়। দুপুরের ভোজনে সেও আমার সাথেই ছিল। আমি বললাম আমাদের দরকার স্পাইচি ফুড। খাবার ভালো না হলে রেস্টোরেন্ট যতোই বাহারি হোক মন ভরবে না। পেটের কথা বাদই দিলাম। সে আমার সাথে একমত হলো। বেশ মজাই কাটলো সময়টা। কলিগকে আমারা বাকীরা সবাই মিলে একটা ট্রাভেল ব্যাগ কিনে দিলাম। উপহারটা তার হাতে তুলে দিয়ে বলা হল বিদায়ী একটা স্পিচ দিতে। আরেক হুলস্থুল হাসির পর্ব ছিল সেটা।
...
রাতে বাসায় ফিরে ছোটো ভাইটাকে তার জন্মদিনের উইশ জানিয়ে কিছু টাকা দিলাম। এরপর তাকে ভুলিয়া ভালিয়ে অন্য রুমে পাঠিয়ে দিলাম। নইলে যে আমাকে টিভির রিমোট-ই দিবে না। সে চলে গেলে বসে গেলাম এই কদিন আমার প্রিয় শো হয়ে উঠা "ইস জাঙ্গালচে মুঝে বাচাও" সিরিজ টা দেখতে। বেশ হচ্ছে সিরিজটা।
এখন শুনছি আনাইডার একটা গান। রিপিট দিয়ে দিয়ে।
...
হঠাৎ মনে পরলো একটা চিঠি ও লিখা শেষ করলাম আজ। এখুনি মেইল করতে হবে। ড্রাফট করাই ছিল কাজে বসে টাইপটা সারলাম খালি। যাই...
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে আগস্ট, ২০১১ সকাল ৭:২৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




