somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বাধীনতার ঘোষক কে ?

২৬ শে মার্চ, ২০১২ রাত ১:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের দেশে বহুল প্রচারিত একটি বিতর্ক আছে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা কে করেছেন ? দেশে বড় দুটি দল , একটি বিএনপি অপরটি মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বাধীন দল আওয়ামী লীগ । তাদের প্রত্যেকের দাবি তাদের নেতার পক্ষ্যে । এমন একটি বিষয় যা স্বাধীনতার বিশেষ একটি মান মর্যাদার সাথে জড়িত , এমন একটি বিষয় নিয়ে বিতর্ক করা কখনই উচিত নয় । কিন্তু আমাদের দেশে অনুচিত অনেক কিছু ঘটে যা বিশ্বে আর কোন দেশে ঘটে না । যেমন, স্বাধীনতার মহান নেতাকে গালি দেয়া , দেশ নিয়ে বিতর্ক করা , রাজাকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে বিতর্ক করা .। ইত্যাদি .।
এর সাথে স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে এই বিতর্ক কোন নূতন ঘটনা নয় । তবে আমাদের এই বিতর্কের ফলে জাতি দিন দিন পিছিয়ে পড়ছে । এই পিছিয়ে পড়া জাতি কি করে মাথা তুলে দাঁড়াবে যদি কোন একতা না থাকে ? জাতি বিভাজিত ।
এখন বলতে হয় জাতিকে বিভাতিত না রেখে এই সমস্যা সমাধানের কোন পথ আছে কিনা । আমি মনে করি আছে , আর তা হল আমাদের মহামান্য হাইকোর্টের রায় সবাইকে মেনে নিতে হবে । এই বিভাজন দুর করতেই হাইকোর্ট স্ব-প্রণদিত হয়ে শুনানির চেষ্টা চালায় জাতে একটি সঠিক রায় দেয়া যায়। তবে এখন প্রশ্ন হতে পারে স্বাধীনতার ঘোষক নির্ণয় কি হাইকোর্টের দায়িত্ব নাকি ঐতিহাসিকের ? আমার জবাব অবশ্যই ঐতিহাসিকদের তবে যেখানে সমস্যার সমাধান নেই সেখানেই সমাধান দেয় আদালত । পৃথিবীর বহুদেশেই এমন নজির আছে । যা হোক , ইতিহাস লেখার দায়িত্ব যেহেতু ঐতিহাসিকদের তাই হাইকোর্ট মুক্তিযুদ্ধের সাথে সম্পর্কিত অনেক ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব এবং বড় দুই দলের রাজনৈতিক ও আইনজীবিদের হাইকোর্ট তলব করে তাদের যার যা তথ্য প্রমান আছে তা নিয়ে হাজির হতে , নি:স্দেহে এটি ভাল উদ্দোগ । এই উদ্দোগে সাড়া পড়েছিল বলেই-না বিএনপি দলীয় নেতা মওদুদ আহম্মেদের মতো ব্যক্তিরা মামলাটি গুহণ করে যথাসাধ্য চেস্টা করে তাদের পক্ষ্যে রায় পেতে , কিন্তু রায় চলে যায় সত্যের ঘরে । কখনই ঠুঙ্কো প্রমাণ দিয়ে বৃহৎ ইতিহাস ঢেকে রাখা সম্ভব নয় ।
আমাদের এই হাইকোর্টের রায় মেনে নিতেই হবে এবং বলতেই হবে স্বাধীনতার ঘোষক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ।
এখন দেখি জিয়াকে কেন স্বাধীনতার ঘোষক বানানোর চেষ্টা করা হল ! এর জবাব পেতে হলে আমি সর্ব প্রথম বিএনপির সাবেক মহাসচিব মরহুম মান্নান ভুঁইয়ার এটিএন বাংলাকে দেয়া সাক্ষ্যের কথা বলব । তাকে মুন্নি সাহা এমনই এক প্রশ্ন করেছিলেন , যে জিয়াউর রহমানকে কেন স্বাধীনতার ঘোষক বলা হয় ? উনি (মান্নান ভুইয়া) জবাবে বল্লেন , “আমাদের এটা নিয়ে বিতর্ক করা ঠিক নয় , এর জন্য দায়ি আওয়ামী লীগ । কারণ , তারাই এই বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন জিয়াকে রাজাকার বলে । ১৯৯১ সালের নির্বাচনের পর আওয়ামীলীগ দলীয় এক সংসদ সদস্য জিয়া কে রাজাকার বলে গালি দেন , ঠিক তখনই আমাদের সাবেক মহাসচিব ডা বদরুদ্দোজা চৌধুরী সংসদে দাঁড়িয়ে বলেন জিয়াকে আপনারা রাজাকার বলছেন ? স্বাধীনতার ঘোষনা তো তিনিই দিয়েছেন , আপনারা কেন দিতে পারেন নি ? এমনই এক সময় থেকে জিয়াকে স্বাধীনতার ঘোষক বলে প্রচার পেতে থাকে ।“
জনাব মান্নান ভুঁইয়ার এই জবাবটিতে আমরা অনেক কিছুই খুঁজে পাই , ১. জিয়া নিজে ঘোষকের দাবিদার ছিলেন না !
২. ১৯৯১ সালের পরের এই বিতর্কের সৃষ্টি , ৩ , সংসদের কুতর্কের ফলাফল হচ্ছে এই বিতর্ক ,
আসলে জিয়াকে নিয়ে বা স্বাধীনতার ঘোষক নিয়ে বিতর্কের কোন কালেই সুজোগ ছিলনা, এখনও নেই । ১৯৯১ সালের পরে সৃষ্ট বিতর্কের জবাব ১৯৭২ সালের সংবিধানেই দেয়া হয়েছে , যেটি কিনা ১৯৭১ সালের ১০ই এপ্রিলের ঘোষনা পত্রের মাধ্যমে । সেই ঘোষনা পত্রে বঙ্গবন্ধুর স্বীকৃতি দৃঢ়ভাবে স্পষ্ট আছে , তাই আমরা বিতর্ক করতে চাইলেও বিতর্কের কোন স্থান নেই !
এখন আসি, ঘোষনা কে দিতে পারেন , যদিও পৃথিবীতে স্বাধীনতার ঘোষক নামের কোন দেশে দাবিদার বা কৃতিত্বের অধিকারি নেই তবু আমাদের দেশে এটি দেয়া হয় । তবে এমন ঘোষনা শুধু তিনিই দিতে পারেন যার প্রতি জনগণের আস্থা আছে , আর তিনি ত পরিক্ষিত আস্থাশীল , ৭০ এর নির্বাচনের বিজেতা , জাতির আশা আকাঙ্খার প্রতিক , জনগণের ভাগ্য-বিধাতা রুপে বাংলার জনগণ যাকে আস্থা প্রদান করেছিলেন শুধু তিনিই ১৯৭১ সালের এমন ঘোষন দিতে পারেন , তার কথাতেই জনগণ বেড় হতে পারে লড়াই করতে , তিনি হলেন আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ।
তার ইপিআর-এ দেয়া ঘোষনা পত্র ঐতিহাসিক ভাবে স্বীকৃত । যুক্তরাট্রের ডিফেন্স এজেন্সি তাদের প্রকাশিত দলিলে তুলে ধরেছেন শেখ মুজিবই ১৯৭১ সালে ২৬ মার্চ রাত ১২.৩০ মি: এ স্বাধীনতার ঘোষনা প্রদান করেন ! তাদের এই দলিলে বহুজন সিনেটের সাক্ষর আছে । ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ দিবাগত রাত ১২.৩০ মি: অর্থাৎ ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরেই শেখ সাহেব ইপিআরের ওয়্যারলেসের মাধ্যমে স্বাধীনতা ঘোষনা করার কিছুক্ষন পরই যুক্তরাট্রের নিউইয়োর্ক টাইম্স তাদের বৈকালিক সংস্করনে এই ঘোষনা পত্র ছাপিয়ে লিখেছিল “ পূর্বপাকিস্তানের নেতা শেখ মুজিবর রহমান যুক্তরাস্ট্র টাইম ২.৩০ মিনিট (দুপুর) এ স্বাধীনতা ঘোষনা করেছেন ।“ এই পত্রকাটি এখন আমাদের কাছে একটি বড় দলিল > দলিলটির লিঙক দেয়া হল : Click This Link
উল্লেখ্য , শেখ মুজিবুর রহমান গ্রপ্তার হন ৩.৩০ মি (রাত) আর তার কয়েক ঘন্টা আগে অর্থাৎ রাত ১২.৩০ মি: ঘোষনা প্রদান করেন । তার এই ঘোষনা ইপিআরের ওয়্যালেসের মাধ্যমে সারাদেশের সরকারি প্রশাসন ভবন ও ফ্যাক্সের মাধ্যমে লিখিত আকারে প্রচার করা হয় । ২৭ মার্চ সকাল থেকেই রেডিওতে বার বার এটি পরে শুনানো হয় । বঙ্গবন্ধুর ভাষনের কথা তৎকালিন পাকিস্তানের রাস্ট্রপতি ইয়াহিয়া সাহেব ক্রোধের সাথেই মিডিয়াতে তুলে ধরেছিলেন ।
তবে জিয়াউর রহমানের ভুমিকা কি ছিল ! আসুন জিয়ার একটি ভিডিও সাক্ষাৎকার দেখা যাক যেখানে তিনি নিজেই বলছেন তারা ২৭ মার্চ রেডিও স্টেশন দখল করে আর ঘোষনা পাঠ করে , তবে তো ২৬ মার্চ জিয়ার ঘোষনায় দেশ স্বাধীন হওয়া একটা অলীক ব্যাপার ! আসুন লিংকটি দিলাম এটি ক্লিক করুণ: http://www.youtube.com/watch?v=zDnAfMkF7gM
এখানে উল্লেখ্য, ২৬ মার্চ আমাদের স্বাধীনতা দিবস আর জিয়া ঘোষন করেছেন ২৭ মার্চ । তবে একদিন পরে ঘোষন করে কি করে একদিন আগের স্বাধীনতা দেয়া সম্ভব ??
এখন আসা যাক জিয়া কি বলেছিলেন : http://www.youtube.com/watch?v=oQQtCehd0PE এখানে ক্লিক করলেই বেড়িয়ে আসবে জিয়া স্বকন্ঠে ভাষন , যেখানে তিনি বলছে “ I major zia on behalf of our great national leader sheikh mujibur rahman , do hereby declare independence of Bangladesh” ভাষনটির শেষে তিনি জয় বাংলা শব্দটি উল্লেখ করেন । এই ভাষনটি ছিল ২৭ মার্চ সন্ধা ৭.৪৫ মিনি্টে ।
এখন ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকিয়ে দেখা যাক জিয়া কি করে অস্ত্র খালাস করতে গিয়ে রেডিও স্টেশনে আসলেন !
ঘটনাটি বিশ্লেষন করতে গিয়ে আমি সহায়তা নিচ্ছি কালুরঘাট বেতারের মহাপরিচালক জনাব বেলাল মোহাম্মাদের লেখা বই “স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র” তার সাক্ষাৎকার , শওকত ওসমান বীরপ্রতিক, মুক্তিযোদ্ধা অলির সাক্ষাৎকার (টিভিতে দেয়া) মেজর রফিকুলের সাক্ষাৎকার , বিভিন্ন ইতিহাস ও কলামনিস্টের লখার কলাম থেকে “ তুলে ধরছি ।
২৫ মার্চ পাকিস্তানের হানাদার বাহিনী রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স আক্রমণ করে , ঝাঁপিয়ে পড়ে নিরিহ ঘুমন্ত মানুষের উপরে । রাজারবাগ পুলিশ তাদের যেটুকু সম্বল ছিল তা দিয়েই পাক-আর্মিদের মোকাবেলা করে , তারা ২৫মার্চ রাতেই বিদ্রোহ করে পাকিস্তানী আর্মিদের সাথে যুদ্ধ করে , তারা কিন্তু জিয়াউর রহমান ২৭ মার্চ ঘোষন দিবে বলে বসে থাকেনি ! রাজারবাগ পুলিস যুদ্ধ করেছে তারা বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চ ভাষনের উপর ভিত্তি করেই কিন্তু বিদ্রোহ করেছে , কারণ সময়টা ছিল ২৫ মার্চ রাত ৯.৩০ টা , আর বঙ্গবন্ধু ঘোষনা দেন ১২.৩০ মি.এ . । ইপিআর-এর কথায় ধরুণ, পিলখানাতে যখন আক্রমণ হয়, তারাও ২৫ মার্চ রাতে তাদের অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে প্রতিরোধ গড়েতোলে পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে , অসংখ্য শহীদ হয়েছিল ! তারা ওয়্যারলেন্স দিয়ে সমস্থ বাংলাদেশে বার্তা পাঠিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলতে আহবান জানান । এমনকি পুলিশ হেডকোয়ার্টার থেকে অর্থাৎ রাজারবাগ পুলিশলাইনস থেকে সমস্ত বাংলাদেশের থানাগুলোতে বার্তা পাঠায় , জনগণ পাকিস্তানী বাহিনীর এই হামলা ও বাঙালিদের বিদ্রোহের কথা জানতে পারে । তারা কিন্তু জিয়ার ঘোষনাতে বিদ্রোহ করেনি , বিএনপি যে কথা বলে তা হল “ জিয়া ঘোষনা না দিলে কেউ যুদ্ধে যেতনা , তাহলে রাজারবাগ পুলিশ কেন ২৫ মার্চই বিদ্রোহ করেছে ? প্রশ্ন তাদের কাছে যারা স্বাধীনতার বিকৃতি ঘটান । !
এর পর আসি মেজর রফিকুলের কাছে , উনারা ২৫ মার্চই বিদ্রোহ করে চট্রগ্রাম রাস্তায় রাস্তায় বেড়িকেট দিয়েছিলেন যাতে কোন বাঙ্গালী অফিসার চিটাগং পোর্টে অস্ত্র খালাস করতে যেতে না পারেন ! জিয়া কিন্তু মেজর জেনারেল জাংজুয়ার নির্দেশে সেই রাতে পোর্টের দিকে জিপ নিয়ে রঙনা হোন অস্ত্র খালাস করতে , তিনি তখন্ও বিদ্রোহ করেন-নি যখন মেজর রফিকূলেরা বিদ্রোহ করেছিলেন ! তাহলে জিয়াই কিভাবে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে প্রথম বিদ্রোহী হলেন ??
কর্ণেল অলি আহম্মেদ টেলিফোন করে কর্ণেল শওকত কে বলেন “ আমাদের স্যার কোথাই ?” (অর্থাৎ মেজর জিয়া ছিলেন কর্ণেল অলি আর শওকতদের অফিসার আর মেজর জিয়া ছিলেন পাকিস্তানী মেজর জেনারেল জাংজুয়ার অধিনস্ত একজন অফিসার ! ) শওকত সাহেব কর্ণেল অলিকে বলেছিলেন “ স্যার (জিয়া) ত মেজর জেনারেলের নির্দেশে বন্দরে গেছেন অস্ত্র খালাস করতে “ অলি বলেছিলেন “ আরে করেছে কি ? এই অস্ত্র গুলো তো আমাদেরই উপর ব্যবহার হবে ! এটা কি স্যার (জিয়া) জানেন না ?? …. আর বাঙালি আফিসার রা তো বিদ্রোহ করেছে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে , তুমি (শওকত) এক্ষুনই রওনা দেও , স্যার-কে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করো “”
এটি শওকত সাহেবের দেয়া মিডিয়াতে সাক্ষ্যাৎকার ও কর্ণেল অলির মিডিয়াতে দেয়া সাক্ষাৎকার থেকে তুলে ধরলাম !
এখন দেখুন , জিয়াউর রহমান কিন্তু কর্ণেল অলি আর শওকত সাহেবের আগে বিদ্রোহ করেন নাই !!
এবার আসা যাক মেজর রফিকুল ইসলামেরা কি করছেন । যেসব বাঙালি অফিসার রা বিদ্রোহ করেছিলেন তাদের মধ্যে মেজর রফিকূল একজন , যিনি মেইন রোডের উপর গাছের গুড়ি ফেলে দিয়ে রাস্তায় বেরিকেট দিয়ে রেখে ছিলেন যাতে কোন বাঙালি অফিসার পোর্টে না যেতে পারে অস্ত্র খালাস করতে । মেজর রফিকুলের ভাষ্য অনুসারে উনারা রাস্তায় বেড়িকেট দিয়ে পাশেই জঙ্গলে বন্দুক নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন , এমন সময় একটি জিপ দেখতে পান , জিপটি রাস্তা বেড়িকেট থাকায় আর যেতে পারছিলনা , ভেতরে বসা একজন অফিসার তার পদস্থ সৈন্যদের নির্দেশ দিয়েছেন রাস্তার কাঠের গুড়িগুলো সড়িয়ে রাস্তা পরিস্কার করতে । তিনি আর কেউ নোন তিনিই হলেন জিয়াউর রহমান ! মেজর রফিকের একজন সাথি অনুমতি চাইলেই গুলি করতে কেননা জিয়া এবং তার সাথি সৈন্যরা নিরস্ত্র হয়ে রাস্তার কাঠ পরিস্কার করছিল , অস্ত্র ছিল জিপ গাড়িতে । মেজর রফিক বল্লেন “না”… আমরা প্রথমে তাদের কাছে গিয়ে প্রোপোজ করি , যদি তারা আমাদের দলে আসে তাহলে তো আমাদেরই শক্তি বৃদ্ধি পাবে । যাহোক , মেজর রফিকের নেতৃত্বে বাহিনীর সদস্যরা জিয়ার সৈন্যদের কাছে অস্ত্র তাক করে “হান্ডসৃ আপ বলে “ অস্ত্র ধরে তাদের গ্রফেতারের মত করে দাঁড় করিয়ে রাখলেন ! মেজর রফিক জিয়াকে প্রোপোজ করলেন বিদ্রোহ করতে , এতে জিয়া বলেছিলেন “তার নাকি জানা ছিলনা যে বাঙ্গালি অফিসার রা বিদ্রোহ করেছে , জানলে তিনিও করতেন , তাই তিনি পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে কাজ করতে সম্মতি প্রদান করলেন “ …
এবার জিয়াউর রহমান সহ মেজর রফিকূল ইসলাম কালুরঘাট এলাকাতে এসে আস্তানা গেড়েছেন । ২৬ মার্চ তারা রেডিও স্টেশনের দখল নিয়ে নেয় , এবং মেজর জিয়াকে স্টেশন পাহাড়া দিতে দিয়ে , মেজর রফিকূল ইসলামের সৈন্যরা অপারেশনে চলে যান । ঐ স্টেশনের ভেতরে চট্রগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা এম এ হান্নান , বেলাল মোহাম্মদ সহ আরও অনেকে ছিল , কিন্তু রেডিও স্টেশনটি কার্যকর ছিলনা , কারণ সেখানে কোন ট্রান্সফরমা ছিলনা ! অবশেষে চট্রগ্রাম সরকারি স্টেশনে হামলা চালিয়ে ২৬ মার্চ দুপুর পরে সেখান থেকে ট্রান্সফরমার খুলে এনে কালুর ঘাটে প্রতিস্থাপনের চেস্টা হতে থাকে । কিন্তু দক্ষ্য ইন্জিনিয়ার না থাকায় ২৬ মার্চ সারারাত চেস্টা করেও কোন লাভ হয় না । অবশেষে ২৭ মার্চ সকাল ১০টার দিকে রেডিও স্টেশনে ঐ ট্রান্সফরমারটি সেট হয় এবং বেতার তরঙ্গ প্রচারিত হয় । সেই সময়ে বেতারের পাওয়ার ছিল মাত্র ১‌০ মাইল চারেদিকে প্রচার সক্ষমতা !! ২৭ মার্চ সকাল ১০ টায় আওয়ামীলীগ নেতা প্রথম স্বাধীনতা ঘোষনা পাঠ করেন , এর পর বেলাল মোহাম্মদ বারংবার বঙ্গবন্ধুর ভাষনের কপিটি পড়ে শুনান । এর পর সেখানে উপস্থিত নেতৃবৃন্দের মাথায় একটা যুক্তি এ্যাঁটল , তা হল , যদি প্রচার করা হয় আমাদের সাথে বাঙালি সেনা অফিসাররাও যুদ্ধে যোগ দিয়েছে, তাহলে সাধারন জনতা ও বিদ্রোহীদের মনোবল চাঙা হতো ! এই সময় , একজন নেতা বলে উঠেন “এই সময়ে সেনা অফিসার কোথাই পাব ? সবাই তো যুদ্ধের ময়দানে । “ অবশেষে রনাঙ্গনে মেজর রফিকের কাছে গাড়ি পাঠানো হয় যাতে তিনি এসে একটা ঘোষনা দিয়ে যান , এতে রফিক সাহেব রাজি হোন নাই , কারণ রনাঙ্গন ছেড়ে আসা তার পক্ষে সম্ভব নয় , তাই রফিকুল ইসলাম প্রোস্তাব দিলেন ‘কোন টেপ রেকোর্ডার থাকলে তিনি ভাষন বা ঘোষনা রেকর্ড করে পাঠাতে পাবেন ।“
রফিকের কথার অনুমতি চেয়ে এমএ হান্নানের কাছে বেতার কর্তৃপক্ষ যাবার পর আর মেজর রফিকের কাছে ফিরে যান নি , কারণ বেতারের কাছেই মেজর জিয়াকে তারা পেয়েগিয়েছিলেন । মিজর জিয়াকে প্রস্তাব করা হয় একটি ঘোষনা দেবার জন্য , তাতে তিনি এক লাফেই রাজি হোন , মেজর জিয়াকে রেডিওতে ডেকে পাঠান এমএ হান্নান , তাতে দেখার আগে ঐ স্টেশনের কেউ জানতেন না তার নাম কি বা তার পদবি কি ! যেহেতু তিনি মেজর , আর নেতারা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন কোম পক্ষে একজন কর্ণেল গোছের অফিসার লাগবে , তাতে জিয়াউর রহমান কে কাছে পেয়ে তাকেই সুযোগটি দিয়ে দেয়া হল ।
জিয়াউর রহমান প্রথমে লিখলেন আর্মি পিফ প্রোভিশনঅল এন্ড এ্যাক্টিং প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষনা করতে , এতে এমএ হান্নান খেপে গিয়ে বল্লেন “ আপনি যদি আর্মি বিদ্রোহ হিসেবে ঘোষনা দেন তবে তো জাতিসংঘের অলোচন হবে পূর্ব পাকিস্তানে সেনা বিদ্রোহ চলছে , আর তাতে তারা বিদ্রোহ দমন কাতে জাতিসংঘের শান্তি রক্ষি মিশন পাঠিয়ে আমাদের স্বাধীনতা উল্টিয়ে দিবে !!” মেজর জিয়া জানান “ সারি আমি তো বুঝতে পারিনি ব্যাপারটা” । হান্নান বলেন “ আপনি কার পক্ষ্য থেকে ভাষণ দিবেন ?” জিয়া বলেন “ অবশ্যই বঙ্গবন্ধুর পক্ষথেকে “ , তখন হান্নান সাহবের নির্দেশে জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর নাম উল্লেখ করে ভাষন প্রদান করেন । আর সেই ভাষনটি ছিল ২৭ মার্চ সন্ধা ৭.৪৫ মিনিটে । (সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ) ..
এভাবেই স্বাধীনতার ঘোষনা চলে আসে । তাই বলতে হয় ২৭ মার্চ ঘোষনা দিয়ে কখনই ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস তৈরি করানো সম্ভব হয়না , তাই জিয়া নয় , বঙ্গবন্ধুই স্বাধীনতার ঘোষক । আর সেটাই ১৯৭২ সালের ঘোষনা পত্রে উল্লেখিত আছে যে ২৬ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ঘোষনাতেই দেশ স্বাধীন বলে গণ্য করা হয়েছে । আরও উল্লেখ করার মত বিষয় , তা হল বিএনপি যেভাবে বলে জিয়ার ঘোষনার জন্য যুদ্ধ হয়েছে আর জনগণ ঝাপিয়ে পড়েছে , দেশ স্বাধীন হয়েছে ! এগুলো একে বারেই ভুল , কেননা , এমএ হান্নান সাহেবের আশংকা তাহলে বাস্তব হতো , যদি জিয়ার ঘোষনাতেই যুদ্ধ হতো তবে , জিয়া একজন সেনা অফিসার আর তার ঘোষনাতে বিশ্ব জানতো পূর্ব পাকিস্তানের সেনা বিদ্রোহ হয়েছে , তাই জাতিসংঘ শান্তি মিশন পাঠিয়ে বাঙালি সৈন্যের বিদ্রোহ দোমন করতো । কিন্তু জিয়ার কোন যুগ্যতাই নাই যে তিনি সামরিক অফীসার হয়ে এমন ঘোষনা দিতে পারেন , তাইতো তিনি একটি ভাষনেই বারংবার জনগণের মান্ডেট পাওয়া নেতা “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের” নাম উচ্চারণ করে জাতিকে বুঝাতে চেয়েছেন এই দাবি জনগণের , আর আমরা সামরিক অফিসার জনগণের পক্ষে কাজ করছি । তাই মুক্তিযুদ্ধের প্রতিক হচ্ছে বঙ্গবন্ধু , তারই যোগ্যতা আছে এমন সিদ্ধান্ত দেবার । তার (শেখ সাহেবের) সিন্ধান্ত মানেই জনগণের অধিকার, আর তাতেই বিশ্ব নেতাদের স্বীকৃতি !!
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মার্চ, ২০১২ দুপুর ১২:৪৯
১৩টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×