somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলা বনাম উর্দূ !

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পৃথিবীর অষ্টম বৃহৎ ভাষা হল বাংলা । যে ভাষার আছে স্বতন্ত্র লিখনীর বর্ণমালা , যা বহু ভাষাতে নেই । বর্তমানে এই ভাষা বিশ্ব স্বীকৃত গৌরবময়তার একটি অংশ, ২১ শে ফেব্রুয়ারী আমাদের অহংকার । হাজার বছরের ইতিহাস এই বাংলার । হাজার হাজার বছর ধরে চলে আসা আমাদের এই ভাষা একটি বৃহৎ ভূখন্ড নিয়ে গৌরবের সাথে পৃথিবীর মাঝে বিরাজ করছে । এভাষার ইতিহাস ও ভান্ডার অত্যন্ত সমৃদ্ধ । প্রায় ৮৫ লক্ষ শব্দ আছে বাংলা ভাষাতে । বাংলার সাংস্কৃতি অত্যন্ত সমৃদ্ধ, ভাটিয়ালী, ভাওয়াইয়া, জারী, সারি, বাউল, মুর্শিদী, লোকগীতি, আধুনীক গল্প কবিতা উপন্যাস , হাজার বছরের পুরোতন চর্যাপদ তার সাক্ষার বহন করে । ভারতের ঝারখন্ডের রাচী শহর থেকে শুরু করে পশ্চিম বঙ্গ হয়ে বিহারের পাশ ঘেঁষে বাংলাদেশ, নেপালের কোল থেকে শুরু হয়ে গোহাটি নিয়ে ভারতের আসাম , ত্রিপূরা থেকে শুরু করে মিয়ানমারের আরাকান পর্যন্ত বাংলার বিস্তার । এতবড় সম্রাজ্য হল বাংলার ।
এই বিশাল সম্রাজ্যে লেখক গবেষক সাহিত্যিক কবি জন্মছে লক্ষ লক্ষ । বাংলার এত কবি সাহিত্যিক আছে যা অন্য কোন ভাষায় দেখা যায় না । বাংলার রয়েছে আলাদা স্বতন্ত্র বর্ষপঞ্জি, নিজস্ব দিন তারিখ হিসেব । বাংলার মাসের হিসেবে রয়েছে বার মাসে তের পার্বন যা বাংলাকে স্বার্থক করেছে । যাত্রা-মেলা পালাগান নবান্ন বৈশাখী সবকিছু মিলে বাংলার সমৃদ্ধ ভান্ডার ।
বাংলার ভান্ডার এতই রত্নময় যার উপমহাদেশে অন্য ভাষায় তা পরিলক্ষিত হয়না ।
অথচ, যে পাকিস্তান আমাদের উপর এই ভাষার বিলুপ্ত করে দিয়ে চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল এক উদ্বাস্তু ভাষা । উদ্বাস্তু ভাষা কেন বলছি তা উদাহরণ সহ লিখে প্রকাশ করছি ।
উর্দূ: এ ভাষার নামকরণ করা হয় ১৭৫০ সালে, এর আগে এই ভাষার কোন নামই ছিল না !! উর্দূর কোন নিজস্ব লিখনি বর্ণমালা নেই, পাশতু ভাষার অক্ষর ব্যবহার করে লিখে যা আরবী বর্ণমালার আদলে গঠিত । পাকিস্তানের জাতীয় ভাষা উর্দূ হলেও পাকিস্তানের এমন কোন প্রদেশ নেই যেখানে একখন্ড জমি আছে যা উর্দূ ভাষার মানুষ বসবাস করে আদিকাল থেকে , এমনটি নেই ! বরং পাকিস্তানে যারা উর্দূতে কথা বলে তারা হল ভারত থেকে আগত মুজাহের বা রিফিউজী । তাদের ভাষা হল উর্দূ, যারা ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে দেশ ভাগাভাগির সময়ে পাকিস্তানে গিয়ে আস্তানা গাড়ে, বেশিরভাগ উত্তর প্রদেশ মধ্যপ্রদেশ পাঞ্জাব, বিহার থেকে বিতারীত মুসলীম জনগোষ্ঠি । পাকিস্তানের প্রাদেশিক বা আঞ্চলীক ভাষাগুলোর মধ্যে হল, পাঞ্জাবী, পাশতু, সিন্ধি, বেলুচি, শিরকী ইত্যাদি ... কিন্তু উর্দূ হল রিফিউজীর ভাষা যা সংখ্যাধিক্কের তুলনায় সমস্ত পাকিস্তানের মাত্র ১.৫% (১৯৪৮ সালের হিসেবে) !! সর্ববৃহৎ জনগোষ্ঠি ছিল বাঙালী যা ৫৭ % (সমস্থ পাকিস্তান জুড়ে ) , আর ২৬ % পাঞ্জাবী , বাদবাঁকি সবাই বিভিন্ন ভাষী । দু:খের বিষয় এমন একটি ভাষাকে আমাদের বাংলার উপর চাপিয়ে দিয়ে বাংলাকে বিলুপ্ত করতে চেয়েছিল । এমন একটি ভাষাকে তারা বিলুপ্ত করতে চেয়েছিল যে ভাষার সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার এসেছে, সেই মহামানব রবীন্দ্রনাথের রচন সমগ্র বাদ দেয়ার শর্তে পাকিস্তানীরা বাংলা ভাষাকে মেনে নিতে চেয়েছিল, কিন্তু বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন ‘রবীন্দ্রনাথ কে বাদ দিলে বাঙলাতে আর থাকে কি ?’
উর্দূর জন্ম ইতিহাস দেখা যাক , উর্দূ পাকিস্তানী ভাষা নয় এটি ভারতের ভাষা । ভারতে বিভিন্ন সময়ে আফগান থেকে আসা পাঠান মুসলীম , জাজিয়াতুল আরব থেকে আসা মুসলীমরা বা তুর্কি শাসকের হাত ধরে আসা মুসলীমরা ভারতে এসে বিভিন্ন সময়ে রাজ্যের বিভিন্ন বড় বড় চাকুরী করতে থাকে । আর তারা ভারতে বিবাহ শাদী করতে থাকেন । তারা ভারতের হিন্দী ভাষা শিখতে থাকেন কিন্তু সাংস্কৃতি ভাষার অক্ষরে তারা লিখতে অপারগ হয়ে যায় ! তারা আরবী অক্ষরেই হিন্দী ভাষা লিখার চেষ্টা করের আর যেসকল আক্ষর আরবীতে নেই , সেই সকল অক্ষর পাশতু থেকে গ্রহণ করেন । এতে তারা হিন্দী ভাষাভাষীর মানুষ হলেও আলাদা লিখনী পদ্ধতিই রপ্ত করতে থাকেন । ফলে মুসলীম সমাজে এই পদ্ধতি ব্যপক সুবিধা এনে দিল , তারা ভাষাগতভাবে হিন্দী মুখে বললেও লিখনীতে পশতু অক্ষর ব্যবহার করেন, আর এই ভাষার অক্ষর আরও জনপ্রিয়তা পায় মুঘল বাদশাদের আমল থেকে । মুঘল রাজাদের সময়ে ফার্সী ছিল দাপ্তরিক ভাষা , আর এতে লিখনীটার পদ্ধতি ছিল পাশতু । তাই মুসলীমরা এতে ভাল সুবিধা করতে থাকেন । ধিরে ধিরে তারা আলাদা সমাজ আলাদা কালচার আলাদা সাংস্কৃতির ভান্ডার গড়ে তুলতে থাকেন । এভাবে উর্দূ হিন্দি ভাষা থেকে পৃথক হয়ে গেল । হিন্দী ভাষাকে বলা হয় উর্দূর পিতা । কারণ হিন্দি থেকেই উর্দূর সৃষ্টি আর উর্দূর অভিধানে ৯০% শব্দের উৎপত্তি হল হিন্দি, বাদবাঁকি আরবী, পাশতু, ফার্সী ইত্যাদি .........
দীর্ঘদিন এই ভাষার কোন নাম ছিলনা, অবশেষে ১৭৫০ সালে উর্দূর কবি সাহিত্যিকরা মিলে এই ভাষার নামকরণ করেন উর্দূ, উর্দূ মানে হল সৈনিক । যেহেতু মুসলীম এই ভাষার লোকেরা রাজার রাজ্য দরবারের বড় বড় যোদ্ধা ছিলেন , তাই সৈনিকদের ভাষা হিসেবে নাম দিলেন উর্দূ । উর্দূর ভান্ডার দূর্বল, কিছু ছন্দ সায়েরী, আর কাওয়ালী ছাড়া এর ভান্ডারে তেমন কিছু নেই !! উর্দূতে নিজস্ব কোন বর্ষপঞ্জিও নেই , আরবী বর্ষপঞ্জি হিসেব করে চলে । নেই উর্দূর সালের কোন পার্বন , সেই কোন ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠান ।
অথচ আমাদের দেশে এখনও উর্দূকে কিছু মাদ্রাসায় পুতপবিত্র ভাষা হিসেবে মেনে বড় বড় কিতাব শিক্ষা দেয়া হচ্ছে উর্দুতে !! বাংলার ভান্ডার যতবড় আর যত সমৃদ্ধতা আছে তার তুলনায় উর্দূর কোন স্থান নেই সমৃদ্ধতার দিক দিয়ে ।
আসুন আমরা বাংলাকে ভালবাসী , বাংলা আমাদের ভাষা , বাংলা দেশ আমাদের দেশ । আমরা একটি ভাষার নামে দেশ ও আলাদা জাতিসত্তা পেয়েছি , এটা আমাদের জন্য বড় গর্বের বিষয় ।
সর্বশেষ আমরা গর্বকরে বলি ‘আমার সোনার বাংলা , আমি তোমায় ভালবাসী’ ...
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:২২
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×